ভারতে ইসরাইল-হামাস সংঘাত নিয়ে ভিন্নমত কি ধর্মীয় কারণে?
১১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৫২ এএম | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৫২ এএম
ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে সংঘাত নিয়ে ভারতে দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। একপক্ষ সম্পূর্ণভাবে ইসরাইলের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, আরেক পক্ষকে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের আর লড়াইয়ের প্রশ্ন তুলছেন। বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন এটা রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণমনস্কতা।
তবে তারা এটাও মনে করেন, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের এই হামলা নিয়ে মতামতের যে মেরুকরণ হয়েছে, সেটাই স্বাভাবিক কারণ হামাস স্পষ্টভাবেই তাদের লড়াইটাকে ‘ইসলাম’-এর সংগ্রাম হিসাবে তুলে ধরে এসেছে দীর্ঘদিন ধরেই। তাই হিন্দুত্ববাদীরা যখন ইসরাইলের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তখন মুসলিম রাজনৈতিক নেতারা ফিলিস্তিনিদের অধিকারের কথা বলছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ইসরাইলে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে এবং এই কঠিন সময়ে ভারত ইসরাইলের পাশে রয়েছে।
ইসরাইলে হামাসের হামলার পরের দিনই সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ (আগেকার টুইটারে) বিজেপি লিখেছে, ‘গতকাল ইসরাইল একটি কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলার মুখোমুখি হয়েছে। ২০০৮ সালের ২৬/১১/২০০৮ তারিখে মুম্বাইকে টার্গেট করা হয়েছিল। ইসরাইল যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং তাদের সেনাবাহিনী পাল্টা জবাব দিয়েছে।’ বিজেপি লিখেছে ‘দুর্বল কংগ্রেসের নেতৃত্বে ভারত কী করেছে? না কিছু না। তিনি নথিপত্র পাঠিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, কংগ্রেসের সিনিয়র নেতারা হিন্দু সংগঠনগুলিকে দোষারোপ করার চেষ্টা করেছিলেন এবং পাকিস্তানকে নির্দোষ ঘোষণা করেছিলেন। কখনো ক্ষমা করবেন না, ভুলবেন না।’
কংগ্রেস দল হামলা নিয়ে প্রথমে বিবৃতি দিতে গিয়ে ইসরাইলের ওপরে হামলার তীব্র নিন্দা করেও বলেছিল যে ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকারের দাবীগুলিকে ইসরাইলের বৈধ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে কেবলমাত্র আলোচনার মধ্যে দিয়েই সমাধান করা উচিত। যে কোনও ধরনের সহিংসতা কখনই সমাধান দিতে পারে না, একথাও বলেছিলেন কংগ্রেস মুখপাত্র। তবে সোমবার কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যে প্রস্তাব নেয়া হয়েছে, সেখানে তারা না করেছে হামাসের নাম, না বলেছে ইসরাইলের কথা, না হামলাটিকে আখ্যা দিয়েছে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে।
অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন, এআইএমআইএম সভাপতি এবং হায়দ্রাবাদের সংসদ সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়েইসি হামাসের হামলার বিষয়ে এক্স-এ লিখেছেন, ‘আমি ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চলে শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি।’ আবার মহারাষ্ট্রের এআইএমআইএম বিধায়ক এবং মুখপাত্র ওয়ারিস পাঠান অটল বিহারী বাজপেয়ীর ভিডিও শেয়ার করার পাশাপাশি কয়েকজন ফিলিস্তিনির ছবিও পোস্ট করে প্রশ্ন তুলেছেন যে ‘তারা কি সন্ত্রাসবাদী ছিলেন যে তাদের মেরে ফেলা হল?’
আবার নিজেকে ‘সনাতনী’ বলে দাবী করা চন্দন কুমার শর্মা সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ লিখেছেন যে তিনি ‘ইসরাইলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। ভারত সরকার আদেশ দিলে ভারতের প্রতিটি জাতীয়তাবাদী হিন্দু ইসরাইলে গিয়ে তাদের সমর্থনে যুদ্ধ করবে। হিন্দুরা, আপনারা কি তৈরি? ইসরাইলের সঙ্গে ১০০ কোটি হিন্দু রয়েছে। ভারত ও ইসরাইল দীর্ঘজীবী হোক।’ এধরনের প্রতিক্রিয়া দেখে ভারতে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত নওর গিলন লিখেছেন যে, ভারতের অভ্যন্তর থেকে ইসরাইল জোরালো সমর্থন পাচ্ছে এবং এর জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।
মতামতের বৈপরীত্য কি ধর্মীয় কারণে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরাইলের পক্ষে এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার আন্দোলনের পক্ষে যে দুটি বিপরীত মেরুর মতামত উঠে আসছে ভারতের অভ্যন্তরে, তার একটা ভিত্তি নিঃসন্দেহে ধর্মীয়। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং পশ্চিম এশিয়া বিশেষজ্ঞ এ কে পাশা বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “যেখানে হামাসের এই হামলায় যেভাবে নিরীহ ইসরাইলিদের ওপরে হামলা হয়েছে, আবার সাধারণ ফিলিস্তিনিরাও নিহত হয়েছেন, সেখানে বড় হয়ে ওঠা উচিত ছিল মানবাধিকারের প্রশ্নটা। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা তাদের নিজেদের সমর্থকদের কাছে নির্দিষ্ট বার্তা দিতে গিয়ে একটা পক্ষ নিয়ে ফেললেন।''
“এটা তাদের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা হয়তো, কিন্তু এই ভিন্ন ভিন্ন, বিপরীত মতামতের মাধ্যমে একটা বিষয় পরিষ্কার হল যে তারা খুবই রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণমনস্কতার পরিচয় দিলেন,” বলছিলেন মি. পাশা। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ওয়েস্ট এশিয়া স্টাডিজের অধ্যাপক অশ্বিনী কুমার মহাপাত্র বলছিলেন ভারতের অভ্যন্তরে যে দুটি মতামত উঠে আসছে একটা ইসরাইলকে সমর্থন করে আর অন্যটা ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রশ্নটিকে সামনে এনে, এটাই তো আশা করা গিয়েছিল।
তার কথায়, “হামাস তো অনেক দশক ধরেই তাদের লড়াইটাকে ইসলামের লড়াই বলে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। যেন এটা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের তাদের নিজেদের লড়াই হিসাবে বিবেচনা করে, সেই চেষ্টা করে এসেছে। সেজন্যই যখন ইসরাইলের ভেতরে হামাস ঢুকে পড়ে আক্রমণ চালায়, সেটাতে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা উল্লসিত হচ্ছে। একটা সময়ে যে ইসরাইলকে অপ্রতিরোধ্য বলে মনে করা হত, সেখানে হামাস ঢুকে পড়েছে মানে মুসলমানদের বিরাট বড় একটা সাফল্য এটা।
“আবার উল্টোদিকে হিন্দুত্ববাদীরা যে ইসরাইলের পাশে দাঁড়াচ্ছে তার কারণটাও ওই হামাস। ধরে নেওয়া যাক এ ধরনের হামলা পিএলও করত, তাহলে কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরা এভাবে মতামত ব্যক্ত করত না। সংগঠনটা হামাস, তাই হিন্দুত্ববাদীরা ইসলাম-বিরোধী জায়গা থেকে ইসরাইলের পাশে দাঁড়াচ্ছে,” বলছিলেন অধ্যাপক মহাপাত্র। তবে ফিলিস্তিন নিয়ে ভারতের নীতিতে কোনও পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করেন না বিশ্লেষকরা। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়
কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার
মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন