ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

ইরানের দিকে অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়াই কাল হলো ইসরায়েলের!

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১১ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৩৮ পিএম | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৩৮ পিএম

 

 

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আচমকা আক্রমণের পর ইসরায়েলের সামরিক ও রাজনৈতিক কৌশলের সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন দ্য ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসি-এর লিন্ডা অ্যান্ড টনি রুবিন প্রোগ্রাম অন আরব পলিটিক্স-এর পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ ফেলো এবং ট্রাম্প প্রশাসনের নিয়ার ইস্ট অ্যাফেয়ার্স-এর সাবেক অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি ডেভিড শেঙ্কের।

 

ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এ হামলার গোয়েন্দাব্যর্থতা সেই ১৯৭৩ সালের গোয়েন্দাব্যর্থতার সমতুল্য। আর এ সংঘাতের দীর্ঘকালীন প্রভাবও ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের মতোই হবে। ইরানি প্রক্সি শত্রুদের দমিয়ে রাখার জন্য ইসরায়েলের যে দীর্ঘকালীন কৌশল ছিল, সেটা যে অপর্যাপ্ত তা হামাসের এ হামলা প্রমাণ করে দিলো। এছাড়া গাজা উপত্যকায় শান্তি বজায় রাখার জন্য ইসরায়েলের আর্থিক সহায়তার পর হামাস গাজা শাসন করতে ইচ্ছুক — এমন ধারণা ত্রুটিপূর্ণ বলেই প্রমাণিত হলো।

তাই ৭ অক্টোবরের হামলার পর ইসরায়েলের নিরাপত্তা প্যারাডাইমে এখন বদল আসা উচিত। প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পের হুমকির ওপর মনোযোগ নিবদ্ধ রেখেছিল। আইডিএফ (ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স) মাঝেমধ্যে হামাস যোদ্ধা ও সংগঠনটির সম্পদের ওপর এবং সিরিয়ায় ইরানের বিভিন্ন অবস্থানে মিশন পরিচালনা করেছিল বটে।

তবে হামাস ও লেবানিজ হিজবুল্লাহর ওপর বড় ধরনের কোনো অপারেশন পরিচালনা থেকে বিরতই ছিল দেশটি। কারণ ইসরায়েল হিজবুল্লাহ ও হামাসকে মারাত্মক তবে ট্যাকটিক্যাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করত। অন্যদিকে ইরানের পারমাণবিক প্রোগ্রাম ইসরায়েলের কাছে সবসময় এর অস্তিত্বের বিরুদ্ধে বড় হুমকি হিসেবে বিবেচিত ছিল। ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধের পর ইসরায়েল বেশ শান্ত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সময় উপভোগ করেছে। জেরুজালেম যখন ইরানের পারমাণবিক প্রোগ্রামকে সামলানোয় অগ্রাধিকার দিয়েছিল, তখন হামাস ও হিজবুল্লাহ উভয়ই নাটকীয়ভাবে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।

ওবামা প্রশাসনের সময় একটা পর্যায়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে সফর করা প্রতিটি ইসরায়েলি কর্মকর্তাই হিজবুল্লাহর প্রিসিশন গাইডেডে মিউনিশনস (পিজিএম) প্রোগ্রাম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতেন। কিন্তু অতি সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিপাক্ষিক এজেন্ডায় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ঝিমিয়ে গিয়েছিল। আর হিজবুল্লাহর অগ্রগতি থামাতে আইডিএফও আপাতদৃষ্টিতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

এদিকে ইরানের ছায়ায় এ দুই সংগঠন নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। হামাসকে এখন ইরানের প্রক্সি হিসেবে দিব্যি বিবেচনা করা যায়। এটি তেহরান আর হিজবুল্লাহর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে নিজেদের কার্যক্রম সমন্বয় করছে। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর খবর অনুযায়ী, গত আগস্ট থেকে ইরানিয়ান রেভল্যুশনারি গার্ড-এর কমান্ডার ইসমাইল কানি ৭ অক্টোবরের হামলার পরিকল্পনার জন্য দুই সপ্তাহ অন্তর একবার করে বৈরুতে হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইসলামিক জিহাদ-এর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।

শোনা যাচ্ছে, কানি এখন লেবাননে অবস্থান করছেন, সেখান থেকে তিনি হামাসের কার্যক্রমকে সম্মুখভাগ থেকে সমন্বয়ে সাহায্য করছেন। ২০০৬ সালে আইডিএফ সেনা গিলাদ শালিতকে অপহরণ করার পর হামাস হিজবুল্লাহর সমর্থন পেয়েছিল। দু-পক্ষের নিবিড় সম্পর্কের কথা বিবেচনায় নিলে, হামাস যে এবারও হিজবুল্লাহ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি পায়নি তা মানা কঠিন।

দুঃখজনকভাবে, এ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ক্ষমতার ক্রমবিকাশ আর ইসরায়েলের বাধা দেওয়ার সক্ষমতা হ্রাসের সময় কাকতালীয়ভাবে এক হয়ে গেছে। গত সাত মাসে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন সংগঠন দক্ষিণ লেবাননের হিজবুল্লাহ-নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে মিসাইল ছুঁড়েছে। হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে ড্রোন পাঠিয়েছে, দেশটির সীমান্তে একটি ট্যাংকবিধ্বংসী মিসাইলও নিক্ষেপ করেছে। হিজবুল্লাহর সদস্যরা ইসরায়েল সীমান্তের বেড়া ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। লেবানন থেকে ৬৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ইসরায়েলের মেগিদ্দো শহরে রাস্তার পাশে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে এটি।

এ ধরনের উসকানিমূলক হামলার বিরুদ্ধে আইডিএফ সবসময় কেবল আনুপাতিক শক্তিতে জবাব দিয়েছে। পাশাপাশি বিচারিক সংস্কার নিয়ে ইসরায়েলের অভ্যন্তরের রাজনৈতিক দ্বিধাবিভক্তিকেও দুর্বলতা হিসেবে দেখেছে হামাস-হিজবুল্লাহর মতো দলগুলো। এ বছর পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের হতাশাবৃদ্ধি এবং একই সঙ্গে তেহরানের সমর্থন ইসরায়েলে সন্ত্রাসবাদের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। গণমত জরিপ অনুযায়ী, গাজাবাসী কর্তৃত্ববাদী হামাস শাসক এবং ইসরায়েল দুটোকে নিয়েই তীব্র বিতৃষ্ণা পোষণ করে। তবে হামাসের এ আক্রমণ ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণকে থমকে দিতে স্পষ্টভাবে ইরানের চালের অংশ।

তেহরান ইতোমধ্যে সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক উদ্যোগের নিন্দা জানিয়েছে। দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের আগে ইরানের প্রক্সি হুতি মিলিশিয়ারা সৌদি আরবে মিসাইল নিক্ষেপ করেছে। ওই হামলায় কয়েকজন বাহরাইনি সৈন্যও নিহত হন। গত কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রথমবার হওয়া ওই হামলা ছিল ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিস্থাপন না করতে রিয়াদকে স্পষ্ট বার্তা। আসন্ন সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে ইসরায়েল যখন নিহতদের জন্য শোক এবং বন্দিদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাবে, তখন জেরুজালেমকে ইরান নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। ইরান হামাস, পিআইজে এবং পাশাপাশি হিজবুল্লাহকে নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করে।

ইরানের এ প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর স্বদেশে খুব বেশি জনপ্রিয়তা নেই। আবার এগুলো নিজের দেশের মানুষের ভালো-মন্দ নিয়েও খুব একটা ভাবে না। ইসরায়েলের পালটা জবাবের কৌশল 'দাহিয়া ডকট্রিন'-এর মতো লেবানন ও গাজায় বোমাবর্ষণ করে সমতল করে দেওয়ার হুমকির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এখন ইসরায়েলকে এ কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘর্ষ তীব্র হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সীমান্তে ইরানি প্রক্সিদের সঙ্গে বোঝাপড়ার জন্য ইসরায়েলকে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক ক্যাম্পেইন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চালু রাখতে হবে, তবে এতে নিখুঁত লক্ষ্যভেদী অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে যাতে বেসামরিক মানুষ হতাহত না হন। এছাড়া লেবাননের সীমানায় চলমান শক্ত সামরিক অপারেশনগুলোর নিয়মনীতিতে বদল আনার কথাও ভাবতে হবে জেরুজালেমকে।

এক দিনের মাথায় ৯০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। জনসংখ্যার অনুপাতে চিন্তা করলে, এ সংখ্যা আমেরিকায় ৩২ হাজারের সমান যা নয়-এগার'র হামলায় নিহতের সংখ্যার চেয়ে ১০ গুণ বেশি। আর মনে রাখতে হবে, এ সংখ্যা সামনের দিনগুলোতে বৃদ্ধির দিকে এগোতে পারে। ৭ অক্টোবর প্রক্সি সমস্যা ইসরায়েলের জন্য স্ট্র্যাটেজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্থায়ী শান্তির আশা তুরস্কের: এরদোগান
৩০ যুদ্ধবন্দির বিনিময়ে ২৪৬৬ সেনা ফেরত পেল রাশিয়া
বিদায়ী ভাষণে যা বললেন বাইডেন
চীনের আধিপত্য রুখতে ট্রাম্পের পদক্ষেপ
রোববার কার্যকর হবে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি, জানালেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী
আরও

আরও পড়ুন

বিএনপিকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে: ইঞ্জিনিয়ার সহিদুজ্জামান

বিএনপিকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে: ইঞ্জিনিয়ার সহিদুজ্জামান

যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ

যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ

নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন

ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন

গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা

গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা

ফরিদপুরে প্রিন্সিপালের ওপর অতর্কিত হামলা

ফরিদপুরে প্রিন্সিপালের ওপর অতর্কিত হামলা

প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা পুনর্মূল্যায়নে ১৭ সদস্যের কমিটি গঠিত

প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা পুনর্মূল্যায়নে ১৭ সদস্যের কমিটি গঠিত

‘সম্মিলিতভাবে কাজ করলে পুলিশের প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা ফিরে আসবে’

‘সম্মিলিতভাবে কাজ করলে পুলিশের প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা ফিরে আসবে’

অসহায় শীতার্তদের মাঝে রূপালী ব্যাংকের কম্বল বিতরণ

অসহায় শীতার্তদের মাঝে রূপালী ব্যাংকের কম্বল বিতরণ

জনগণের সেবক হয়ে কাজ করতে চাই: ফখরুল ইসলাম

জনগণের সেবক হয়ে কাজ করতে চাই: ফখরুল ইসলাম

মীরসরাইয়ে অবৈধ বেহুন্দি ও মশারি জাল জব্দ

মীরসরাইয়ে অবৈধ বেহুন্দি ও মশারি জাল জব্দ

গণঅভ্যুত্থানে সংবাদমাধ্যমের চিত্র প্রদর্শনী করছে তরুণ কলাম লেখক ফোরাম

গণঅভ্যুত্থানে সংবাদমাধ্যমের চিত্র প্রদর্শনী করছে তরুণ কলাম লেখক ফোরাম

মারা গেলেন আসামি ধরতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ এসআই মেহেদী

মারা গেলেন আসামি ধরতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ এসআই মেহেদী

নালিতাবাড়ীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড

নালিতাবাড়ীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড

ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর ১৩ হত্যার নির্দেশদাতা নাসিমের খুঁটির জোর কোথায়?

ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর ১৩ হত্যার নির্দেশদাতা নাসিমের খুঁটির জোর কোথায়?

যে কারণে ছাত্রদের ঘোষণাপত্র দিতে মানা করেছিলেন ড. ইউনূস

যে কারণে ছাত্রদের ঘোষণাপত্র দিতে মানা করেছিলেন ড. ইউনূস

মানিকগঞ্জে এলজিইডির উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ

মানিকগঞ্জে এলজিইডির উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ

বাংলাদেশে কখনো স্বৈরাচারের শাসন জনগণ মেনে নিবেনা: আমিনুল হক

বাংলাদেশে কখনো স্বৈরাচারের শাসন জনগণ মেনে নিবেনা: আমিনুল হক

প্রতিনিয়ত মোশাররফ করিমের থেকে শিখি: মম

প্রতিনিয়ত মোশাররফ করিমের থেকে শিখি: মম

অবৈধ ৭টি কয়লা তৈরির চুল্লি গুড়িয়ে দিয়েছে বরগুনার জেলা প্রশাসন

অবৈধ ৭টি কয়লা তৈরির চুল্লি গুড়িয়ে দিয়েছে বরগুনার জেলা প্রশাসন