মোদীর ইসরাইল নীতি কি আরব দেশগুলোকে আরও ক্ষুব্ধ করবে?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০২ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:২৩ পিএম | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:২৩ পিএম

 

 

 

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সময়, ভারত নিজেকে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল এবং জি -২০ শীর্ষ সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস করাতেও সফল হয়েছিল। অথচ ইসরাইল-হামাসের যুদ্ধে যখন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, তখন কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্রনীতি প্রশ্নের মুখে।

 

বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় মোদী সরকার যে অবস্থান নিয়েছিল, হামাস- ইসরাইলের যুদ্ধে ঠিক তার উল্টো নীতি অনুসরণ করছে। তাদের মতে প্রথম ক্ষেত্রে ভারত পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ালেও ইসরাইল-গাজার যুদ্ধের ক্ষেত্রে খোলাখুলিভাবে তাদের (পশ্চিমের) পক্ষে রয়েছে মোদী সরকার। বিষয়টিকে কেউ কেউ দ্বিচারিতা বলেও মন্তব্য করেছেন। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সমস্ত প্রশ্ন নস্যাৎ করে জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে ভারত কোনও ধরনের নমনীয়তা দেখায় না। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে ভারত দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়াবে।

 

গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তা অবিলম্বে পৌঁছে দেয়ার বিষয়ে গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ওই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি ভারত। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘে উত্থাপিত প্রস্তাবেও ভোটদানে বিরত ছিল ভারত। আমেরিকা-সহ পশ্চিমা দেশগুলো জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাবে ভোট দেয়ার বিষয়ে চাপ দিলেও ভারত মাথা নত করেনি। এমনকি পাকিস্তানেও ভারতের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি প্রশংসিত হয়েছে। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান খোলাখুলিভাবে ভারতের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করেছিলেন।

 

কিন্তু এবার ইসরাইল ও ফিলিস্তিন সংকটে ভারতের অবস্থানকে নিরপেক্ষ বলে মনে করা হচ্ছে না। অন্যদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে ভারতের নিরপেক্ষতার পক্ষে অনেক যুক্তি ছিল। রাশিয়ার ওপর ভারতের প্রতিরক্ষা বিষয়ক নির্ভরতা, সোভিয়েত আমল থেকেই কাশ্মীরের ব্যপারে ভারতের পক্ষ নেয়া বা আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্য বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল পাওয়া- এমন অনেক যুক্তি ছিল। এরই মাঝে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সামনে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, এটা যুদ্ধের যুগ নয়। ভারতের এই মনোভাবের কারণেই, জি -২০ শীর্ষ সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে ভারত তার প্রস্তাবটি পাশ করাতেও সফল হয়েছিল।

 

কিন্তু হামাস-ইসরাইলের যুদ্ধে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিকের প্রতিনিয়ত মৃত্যু হচ্ছে। ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলায় যত বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনি মারা গিয়েছে ইসরাইলি সৈন্যের হানায়। এবং এটা এখনও অব্যাহত। এ পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা দেয়ার জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনা হয়েছিল তাতে ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল ভারত। অনেকে মনে করেন ভোটপ্রদান থেকে বিরত থাকার পিছনে ভারতের কাছে তেমন কোনও যুক্তিযুক্ত কারণ ছিল না। অন্য দিকে, ভারতের যুক্তি, জাতিসংঘের প্রস্তাবে হামাসের হামলার উল্লেখ করা হয়নি। ভারত চেয়েছিল ওই প্রস্তাবে হামাসের হামলার কথা উল্লেখ করা হোক এবং এর সমালোচনা করা হোক।

 

জাতিসংঘে ভারতের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্তি ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে ভারতের অবস্থান সম্বন্ধে ইংরেজি সংবাদপত্র ‘দ্য হিন্দু’তে লিখেছেন, "ভারত সবসময় ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান দ্বি-রাষ্ট্রীয় তত্ত্বের ভিত্তিতে দেখে এসেছে। ইসরাইলে সহিংস হামলার বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।" ‘আরব বিশ্ব যখন ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিল, তখন ভারত এই পদক্ষেপের বিপক্ষে ছিল না। 'আই-টু-ইউ-টু' গ্রুপও (ভারত, ইসরাইল, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ওই একই দৃষ্টিভঙ্গি মেনে চলে। ভারতের জন্য শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেই নয়, গাজার মানবিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়ানো উচিত।"

 

তিরুমূর্তি আরও লিখেছেন, "ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকটে পশ্চিমা দেশগুলিকে তাদের ভণ্ডামি এবং দ্বিচারিতার বিষয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে কিন্তু আরব দেশগুলি কি একেবারেই নির্দোষ? আরব দেশগুলো কি ফিলিস্তিনিদের এক কোণে ঠেলে দেওয়ার জন্য দায়ী নয়?" "ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দৌড়ে আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছে, ইসরাইল এখন ফিলিস্তিনের অন্য কোনো অঞ্চলকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবছে না। কিন্তু বাস্তবে ইসরাইল ঠিক তার উল্টো কাজ করছে।"

 

তিনি আরও বলেন, "ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে ইস্যু করার চেষ্টা করছেন, ফিলিস্তিনকে নয়। এই মুহূর্তে ইসরাইলের বিষয়ে আরব দেশগুলোয় যে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে তা রাস্তায় রাস্তায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ বন্ধ করার জন্য।" "গাজায় ইসরাইলি হামলা রুখতে আরব কি তাঁদের তেলের ভাণ্ডারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারত না? ফিলিস্তিনিদের অধিকার উপেক্ষা করে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইলে তাদের শেষরক্ষা হবে না, বিশেষত এমন একটা সময়ে যখন উপসাগরীয় দেশগুলোতে উদার সরকার গঠনের কথা বলা হচ্ছে।"

 

আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ নিরুপমা সুব্রহ্মণ্যম লিখেছেন, ‘জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি ভোটদানে বিরত থাকার পক্ষে যে যুক্তি দিয়েছেন, তা থেকে এটাই বেশি মনে হচ্ছে ঠিক কেন ভারতের এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়া উচিত ছিল।' ভারতের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি যোজনা পটেল জাতিসংঘে ভারতের তরফে যে বিবৃতি দেন তাতে বলা হয়েছিল-"গাজায় শিশু, নারী ও বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানি উদ্বেগজনক এবং এই মানবিক সঙ্কটের সমাধান শীঘ্রই করতে হবে। গাজায় আটকা পড়া বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত।" "মানবিক সহায়তাও পাঠানো হয়েছে ভারতের পক্ষ থেকে। গাজায় যে যুদ্ধ এখনও চলছে তা মানবিক সঙ্কট আরও বাড়িয়ে তুলবে। ভারত মনে করে ইসরাইল-ফিলিস্তিনের সমস্যার দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান হতে পারে।“

 

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মোট ৪৫টি দেশ এই প্রস্তাবের ভোটদানে যোগ দেয়নি। ১২০টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে এবং ১৪টি দেশ বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। যেসব দেশ ভোটদানে বিরত ছিল, তাদের বেশির ভাগই ছিল পশ্চিমা দেশ। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও জাপান ভোটদান থেকে বিরত ছিল। প্রসঙ্গত, চীন ও রাশিয়া এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ভোটদানে যে ৪৫টি দেশ অংশ নেয়নি, তাদের বক্তব্য ছিল, প্রস্তাবে ৭ই অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের 'সন্ত্রাসী হামলার' কথা উল্লেখ করা হয়নি। কানাডা প্রস্তাবে হামাস হামলার উল্লেখ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সংশোধনের বিষয় উত্থাপন করেছিল এবং ভারত তা সমর্থনও করে। তবে সংশোধনটি পাশ করানো যায়নি।

 

ভারত তার বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদের সমালোচনা করে বলেছিল যে সন্ত্রাসবাদের কোনও সীমানা, বা জাতি নেই। ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার আহ্বান জানালেও হামাসের নাম উল্লেখ করেনি। দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) সেন্টার ফর ওয়েস্ট এশিয়া স্টাডিজের প্রাক্তন অধ্যাপক এ কে পাশা মনে করেন ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে ভারত যে মনোভাব দেখিয়েছে তা মোদী সরকারের দ্বৈত নীতির প্রতিফলন।

 

অধ্যাপক পাশা বলেন, “ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে গ্লোবাল সাউথের কন্ঠস্বর হওয়ার প্রচেষ্টা ভারতের ব্যর্থ হয়েছে। গাজায় প্রতিদিন ফিলিস্তিনি, শিশু ও নারীদের হত্যা করা হচ্ছে। এটি বন্ধ করার জন্য যখন জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব আসে, তখন ভারত ভোটদান থেকে বিরত ছিল। ভারত কোন মুখে বলবে সে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর?"

 

অধ্যাপক পাশা আরও বলেন, “গত ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলার পর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ভারত ইসরাইলের পাশে রয়েছে। তিনি এটিকে সন্ত্রাসী হামলা বলে আখ্যা দিলেও হামাসের নাম উল্লেখ করেননি।" "পাঁচদিন পর যখন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি আসে, তখন তারা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলে। সারা বিশ্বে ঢাক বাজিয়ে ভারত গাজায় মানবিক ত্রাণ সামগ্রী পাঠায়। কিন্তু গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উঠলে ভোট দিতে অসম্মত হয়।”

 

মোদী সরকারের এই অবস্থানের পিছনে কারণ কী? এ বিষয়ে অধ্যাপক পাশা বলেন, “ওদের নির্বাচনে জিততে হবে। বিজেপি জানে ভারতের জনসাধারণের আবেগ ইসরাইলের পক্ষে। এটা স্পষ্ট যে জনসাধারণের অনুভূতি ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত।" "কিন্তু আমি মনে করি, মোদী সরকার নির্বাচনে জেতার জন্য ভারতের স্বার্থ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতিকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।” অধ্যাপক পাশার কথায়, "এটি মোদী সরকারের গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হওয়ার প্রচেষ্টায় বাধা তৈরি করেছে এবং উপসাগরীয় ইসলামিক দেশগুলিতেও তার অবস্থানে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।" "গাজায় নেতানিয়াহু সামরিক পদক্ষেপ এখনই থামবে না বরং দীর্ঘদিন চলবে। আরব দেশগুলো খুব বেশিদিন চুপ করে এসব দেখবে না। হয়ত তারা জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এবং যদি তা হয় তাহলে ভারতও ভীষণভাবে প্রভাবিত হবে।”

 

অধ্যাপক পাশা আরও জানিয়েছেন, কাতারে আটজন ভারতীয়র মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা ইসরাইলের বিষয়ে ভারতের অবস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত। শুধু তাই নয়, আগামী সময়ে উপসাগরীয় দেশগুলিতে কর্মরত ৯০ লাখ ভারতীয়ের ভবিষ্যতের উপরও এর প্রভাব পড়বে। "ভারত যুক্তি দিয়েছিল যে ভারতীয়রা রাশিয়ার তেল থেকে উপকৃত হচ্ছে তাই এর আমদানি বন্ধ হবে না। কিন্তু ইসরাইলের পাশে দাঁড়ালে আরব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে না ভারত। আবার আরব দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলে ভারতীয়রা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।”

 

অন্যদিকে নিরুপমা সুব্রহ্মণ্যম লিখেছেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের প্রস্তাবটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না কারণ এটি বাধ্যতামূলক ছিল না। তিনি লিখেছেন, "জাতিসংঘে ইসরাইল বিষয়ক এই প্রস্তাবটি কোন দেশ কার পক্ষে রয়েছে তার প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একটা সংকীর্ণ ভূখন্ডে বসবাসরত লক্ষ লক্ষ অসহায় জনগোষ্ঠীর ওপর ইসরাইলের আক্রমণের বিষয়ে ভারত কোন দিকে, তা স্পষ্ট ছিল।"

 

"ফ্রান্স গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ইউরোপে সবচেয়ে বেশি ইহুদি জনসংখ্যা রয়েছে ফ্রান্সে। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের পর তৃতীয় বৃহত্তম ইহুদি জনসংখ্যা রয়েছে ফ্রান্সে। ইউরোপে সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যাও রয়েছে ফ্রান্সে।" "ফ্রান্স ও ইসরাইলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তার বন্ধু হিসেবেই মনে করেন। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর মতো ভোটদানে বিরত থাকার পরিবর্তে ফ্রান্স এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।"

 

জেএনইউ-তে পশ্চিম এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অশ্বিনী মহাপাত্র মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যে এখন যা ঘটছে, তা ভারতের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়িয়ে দিয়েছে। অধ্যাপক মহাপাত্র বলেন, “কাতারে আট জন ভারতীয়কে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি ইসরাইলের প্রতি ভারতের অবস্থানের উপর নির্ভর করে। অন্যদিকে, ইসরাইল সম্পর্কে ভারতের অবস্থান উপসাগরীয় ইসলামিক দেশগুলির সঙ্গে তার সম্পর্কে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।”

 

হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের প্রেক্ষিতে মোদী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি মনে করি ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে ভারতের অবস্থান ভুল নয়। ভারত জাতিসংঘে এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ছিল না।" "ভারতের যুক্তি ছিল, প্রস্তাবে হামাসের সন্ত্রাসী হামলার সমালোচনাও করা উচিত। ভারতের এই দাবি পুরোপুরি ন্যায়সঙ্গত ছিল। সন্ত্রাসবাদকে উপেক্ষা করে ভারত গ্লোবাল সাউথ নিয়ে কথা বলতে পারে না।”

 

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক দ্য উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কাগলম্যান মনে করেন, গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযানকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে দেখছে ভারত। তিনি বলেন, “জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে ভারতের বিরত থাকা ইঙ্গিত দেয় যে তারা গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযানকে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান হিসেবে দেখছে।" "ভারত বিশ্বাস করে যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনও যুদ্ধবিরতি হতে পারে না। ভারত ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা সমর্থন করছে কিন্তু ইসরাইলের সামরিক পদক্ষেপেরও বিরোধিতা করছে না!"

 

ফ্রান্সের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দমিনিক দ্য ভিলপ্যাঁ তার সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে গাজায় ইসরাইলি হামলার জন্য পশ্চিমা দেশগুলিকে আক্রমণ করেছেন। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইউক্রেনে কী ঘটছে এবং গাজায় কী ঘটছে তা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলির দ্বৈত নীতি প্রকাশ্যে এসেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমি মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকা ভ্রমণের সময় উপলব্ধি করেছি, পশ্চিমা দেশের দ্বৈত নীতি সম্পর্কে অনেক অসন্তোষ রয়েছে।" "ইউক্রেনে যা ঘটছে তা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলি সংবেদনশীলতা এবং মানবতার কথা বলছে, কিন্তু গাজায় ইসরাইল যা করছে তা ভণ্ডামি। গ্লোবাল সাউথে পশ্চিমা মনোভাবের প্রতি বেশ অবিশ্বাস রয়েছে।

 

ফ্রান্সের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “রাশিয়া যখন ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল, তখন আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলাম। রাশিয়া যখন জাতিসংঘের প্রস্তাব লঙ্ঘন করেছে, তখন আমরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি।" "গত ৭০ বছর ধরে ইসরাইল জাতিসংঘের প্রস্তাবগুলো মেনে নিচ্ছে না কিন্তু এর বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞাও নেই। ইসরাইলের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কর্মসূচীতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানঅর্থাৎ ইসরাইলের সঙ্গে একটি স্বাধীন দেশ ফিলিস্তিনের কথা বাদ দেয়া হয়েছে”, মন্তব্য করেছেন তিনি। সূত্র: বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

‘ন্যায়বিচারকে হত্যা’ করা হয়েছে: পিটিআই
নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের
রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে অনেক আফ্রিকান সেনা
কয়েক মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নিতে পারে ভারত: শুভেন্দু অধিকারী
ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলি বিমানবন্দর বন্ধ
আরও

আরও পড়ুন

এমবাপ্পের জোড়া গোলে জিতে শীর্ষে রিয়াল

এমবাপ্পের জোড়া গোলে জিতে শীর্ষে রিয়াল

ব্রাইটনের বিপক্ষেও বিপর্যস্ত ইউনাইটেড

ব্রাইটনের বিপক্ষেও বিপর্যস্ত ইউনাইটেড

‘ন্যায়বিচারকে হত্যা’ করা হয়েছে: পিটিআই

‘ন্যায়বিচারকে হত্যা’ করা হয়েছে: পিটিআই

নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের

নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে অনেক আফ্রিকান সেনা

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে অনেক আফ্রিকান সেনা

পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি

পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি

বাংলাদেশি কর্মী নিতে প্রস্তুত রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশি কর্মী নিতে প্রস্তুত রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত

রাজনৈতিক দলগুলো বেশি কিছু সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন: প্রেস সচিব

রাজনৈতিক দলগুলো বেশি কিছু সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন: প্রেস সচিব

এবার ওলমোর ইনজুরি দুঃসংবাদ বার্সার

এবার ওলমোর ইনজুরি দুঃসংবাদ বার্সার

কুড়িগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ইমন ও আলামিন

কুড়িগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ইমন ও আলামিন

এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারপার্সন মো. মুশফিকুর রহমান

এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারপার্সন মো. মুশফিকুর রহমান

বিয়ের ওপর কর বাতিলের দাবি

বিয়ের ওপর কর বাতিলের দাবি

শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে আ.লীগ : মির্জা ফখরুল

শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে আ.লীগ : মির্জা ফখরুল

নামাজের প্রথম কাতারে জামাত পড়াবস্থায় অজু ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে।

নামাজের প্রথম কাতারে জামাত পড়াবস্থায় অজু ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে।

কয়েক মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নিতে পারে ভারত: শুভেন্দু অধিকারী

কয়েক মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নিতে পারে ভারত: শুভেন্দু অধিকারী

নরসিংদীতে নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে পাওয়া গেল স্কুল ছাত্রের লাশ

নরসিংদীতে নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে পাওয়া গেল স্কুল ছাত্রের লাশ

বিএনপি : দেশবাদ যার রাজনীতির মূল কথা

বিএনপি : দেশবাদ যার রাজনীতির মূল কথা

পাহাড়ি উপজাতিরা আদিবাসী নয়

পাহাড়ি উপজাতিরা আদিবাসী নয়

সংস্কার প্রতিবেদন : জাতির নতুন অধ্যায়ে অভিযাত্রা

সংস্কার প্রতিবেদন : জাতির নতুন অধ্যায়ে অভিযাত্রা

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগে জোর দিতে হবে

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগে জোর দিতে হবে