ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় নিহত শিশুর সংখ্যা ছাড়াল ৪ হাজার

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:০৪ পিএম | আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:০৪ পিএম

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯ হাজার ৭০০। নিহতদের মধ্যে ফিলিস্তিনি শিশুর সংখ্যাই চার হাজারের বেশি। ইসরায়েলের এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো।

তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরসহ বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে আসছে। সোমবার (৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় চলমান যুদ্ধে অন্তত ৪ হাজার ৮ শিশু নিহত হয়েছে এবং গত প্রায় এক মাসে ইসরায়েলি বোমা হামলায় মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ৭৭০ জনে পৌঁছেছে বলে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

গাজার আল-আকসা হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, রোববার বিকেলে মধ্য গাজার বুরেজি শরণার্থী শিবিরে একটি স্কুলের কাছে কয়েকটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হয়।

বুরেজ ক্যাম্পটি তুলনামূলকভাবে ছোট শরণার্থী শিবির যা গাজা উপত্যকার মাঝখানে অবস্থিত। ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর নিবন্ধিত প্রায় ৪৬ হাজার ফিলিস্তিনি শরণার্থীর আবাসস্থল হচ্ছে এই শিবির।

গত বৃহস্পতিবারও এই শিবিরে ইসরায়েলি হামলার ঘটনা ঘটে এবং তাতে ১৫ জন নিহত হন। মূলত গত সপ্তাহে ইসরায়েল গাজার অভ্যন্তরে শরণার্থী শিবিরগুলোতে অসংখ্য হামলা চালিয়েছে। সেগুলোও আবার প্রায়শই এমন সব এলাকায় যা অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ কিছু এলাকা বলে পরিচিত।

ইসরায়েল বলেছে, সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের কমান্ডারদের লক্ষ্যবস্তু করছে তারা। যদিও ইসরায়েলের হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

গত শনিবার রাতে গাজা ভূখণ্ডের মাগাজি শরণার্থী শিবিরে হামলা চালায় ইসরায়েল। আল-মাগাজি ক্যাম্পের বাসিন্দা আরাফাত আবু মাশাইয়া বলেন, ইসরায়েলি বিমান হামলায় ক্যাম্পের বেশ কয়েকটি বহুতল বাড়ি চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। সেখানে গাজার অন্যান্য অংশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত লোকজন আশ্রয় নিয়েছিলেন।

ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির ধ্বংসাবশেষের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে সত্যিকারের গণহত্যা চালানো হয়েছে। এখানে সবাই শান্তিপ্রিয় মানুষ। যারা বলে এখানে প্রতিরোধ (যোদ্ধা) ছিল, আমি তাদের যে কাউকেই চ্যালেঞ্জ জানাব।’

৫৩ বছর বয়সী সাইদ আল-নেজমা বলেছেন, হামলার ঘটনার সময় তিনি তার পরিবারের সাথে ঘুমিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সারা রাত, আমি এবং অন্যান্য লোকেরা ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদের তোলার চেষ্টা করছিলাম। নিহতদের মধ্যে আমরা বাচ্চাদের পেয়েছি, টুকরো টুকরো, ছিন্নভিন্ন দেহাবশেষ পেয়েছি।’

আল জাজিরা বলছে, রোববার চার ঘণ্টার বিরতি চলাকালীন ইসরায়েলি বিমানগুলো গাজায় আবারও লিফলেট ফেলে। সেখানে লোকদের গাজার আরও দক্ষিণে চলে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। পরে উপত্যকার উত্তর থেকে দক্ষিণে যাওয়ার প্রধান মহাসড়কে বহু মানুষকে পায়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে। অনেকে গাধার-টানা গাড়িতে করে চলে গেছেন।

এক ব্যক্তি বলেছেন, ইসরায়েলি সৈন্যদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে হাত তুলে ৫০০ মিটার হাঁটতে হয়েছিল। অন্য একজন রাস্তার পাশে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িতে মৃতদেহ দেখার কথা বর্ণনা করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফিলিস্তিনি বলেছেন, ‘বাচ্চারা প্রথমবার ট্যাংক দেখেছে। হে বিশ্ব, আমাদের প্রতি করুণা করো।’

আল জাজিরার হানি মাহমুদ গাজার খান ইউনিসের কাছ থেকে বলেছেন, গাজার শরণার্থী শিবিরগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলাকে ‘পরিকল্পিত আক্রমণ’ বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মধ্য ও দক্ষিণ গাজার শরণার্থী শিবিরে বারবার এই ধরনের বিমান হামলার কারণেই মানুষ এখন আর ইসরায়েলি ঘোষণাকে গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে না।’

জাতিসংঘের মতে, গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ১৫ লাখ মানুষই এখন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। একইসঙ্গে গত ৮ অক্টোবর থেকে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধও আরোপ করে রেখেছে ইসরায়েল। এতে করে ফিলিস্তিনি নাগরিকরা খাদ্য, জ্বালানি, খাবার পানি ও ওষুধের সংকটে পড়েছেন।

তবে এতো কিছুর পরও সারা বিশ্বের আবেদন ও প্রতিবাদ উপেক্ষা করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজায় হামলা বন্ধের কোনও সম্ভাবনা আবারও প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমাদের বন্দিদের প্রত্যাবর্তন ছাড়া কোনও যুদ্ধবিরতি হবে না, আমরা আমাদের শত্রু এবং আমাদের বন্ধু উভয়কেই এটি বলছি। আমরা তাদের পরাজিত না করা পর্যন্ত আমরা হামলা চালিয়ে যাব।’


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ