হিন্দুত্ব বনাম সংরক্ষণ, ভারতে তীব্র হচ্ছে বিভাজনের রাজনীতি
১০ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:২৮ এএম | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:২৮ এএম
ভারতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে লড়াইটা ক্রমশ বিজেপি-র হিন্দুত্ব বনাম বিরোধীদের সংরক্ষণ বা কোটার লড়াইয়ে পরিণত হচ্ছে। ২০১৪-র পর থেকে বিজেপি যে লোকসভা নির্বাচন হিন্দুত্ববাদের ভিত্তিতে লড়ে, সেটা আর নতুন কোনো কথা নয়। এবারও লোকসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই বিজেপি হিন্দুত্বের কর্মসূচি সামনে আনছে। আগামী ২১ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধনের পর যা রীতিমতো গতি পাবে।
কিন্তু এর জবাবে বিরোধীরা এবার নতুন বিষয় সামনে এনেছে। সেটা হলো, জাতিগত সংরক্ষণ। আরো সহজ করে বললে, ওবিসি বা অন্য অনগ্রসর জাতির জন্য আরো বেশি করে সংরক্ষণ। এর প্রথম পরীক্ষাটা হচ্ছে বিহারে। সেখানে ঝানু রাজনীতিক নীতীশ কুমার এ বিষয়টিকে সামনে আনাই নয়, তার উপর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এর জন্য তিনি প্রথমে জাতিগত সমীক্ষার ফলাফল সামনে এনেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বিহারে ৯৪ লাখ পরিবারের আয় মাসে ছয় হাজার রুপি বা তার থেকে কম। দলিত ও আদিবাসীদের মধ্যে প্রায় ৪৩ শতাংশ গরিব। অন্য অনগ্রসরদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ গরিব। অতি অনগ্রসরদের মধ্যে প্রায় ৩৪ শতাংশ গরিব। অনগ্রসরদের মধ্যে যাদবদের অবস্থা খুব খারাপ। তিনটি যাদব পরিবারের মধ্যে একটি গরিব।
মুসলিমদের মধ্যে শেরশাহবাদি ও ধুনিয়ারা অতি অনগ্রসরদের মধ্যে পড়ে। তাদের প্রায় ৩২ শতাংশ গরিব। মোমিনদের মধ্যে ২৮ শতাংশ ও কুঞ্জরাদের মধ্যে ৩০ শতাংশ গরিব। অনগ্রসর তালিকায় থাকা সূর্যপূরি মুসলিমদেরও প্রায় ৩০ শতাংশ গরিব। এর বাইরে শেখদের মধ্যে ২৬ শতাংশ, পাঠানদের মধ্যে ২২ শতাংশ, সৈয়দদের মধ্যে প্রায় ১৮ শতাংশ গরিব। বিহারে উচ্চবর্ণের সংখ্যা ২০ লাখ ৪৯ হাজার। তার মধ্যে ছয় লাখ ৪১ হাজার জন সরকারি কর্মী। ফলে জনসংখ্যার তুলনায় তারা অনেক বেশি সংখ্যায় সরকারি চাকরিতে আছেন।
মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এ পরিস্থিতিতে দুইটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রথমটি হলো, ৯৪ লাখ পরিবারকে দুই লাখ রুপি দেয়ার সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হলো, তিনি ঘোষণা করেছেন, দলিত, আদিবাসী, অনগ্রসর, অতি অনগ্রসরদের জন্য সংরক্ষণের পরিমাণ ৬৫ শতাংশ করে দেয়া হবে। এছাড়া আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়াদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ চালু আছে। সবমিলিয়ে তাহলে সংরক্ষণের পরিমাণ হয়ে যাবে ৭৫ শতাংশ। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায় হলো, ৫০ শতাংশের বেশি সংরক্ষণ দেয়া যায় না। কিন্তু নীতীশ কুমার বলেছেন, তিনি পথ বের করবেন। প্রথমে বিধানসভায় সংরক্ষণের প্রস্তাব পাশ করবেন। তারপর তা চালুর ব্যবস্থা করবেন। তবে কীভাবে তা তিনি জানাননি।
একই পথ নিয়েছে কংগ্রেসও। কংগ্রেস এবার রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ক্ষমতায় এলে তারা জাতিগত সমীক্ষা করবে এবং সেইমতো ব্যবস্থা নেবে। ফলে কংগ্রেসও যে নীতিশের পথে চলতে চাইছে, সেটা তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, সংরক্ষণের উপর থেকে ৫০ শতাংশের সীমা তুলে নিতে হবে। গরিবদের ও পিছিয়ে পড়া মানুষের ক্ষমতায়ণ নিয়ে ফাঁকা বুলি দিলে হবে না, তাদের জন্য সত্যিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ বিষয়ে প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র বলেছেন, ‘২০১৪ থেকে মোদী সমানে জাতপাতের বেড়া ভাঙার জন্য হিন্দুত্বকে সামনে এনেছেন। তিনি উত্তরপ্রদেশে এ কাজে সফল হয়েছেন। অন্য কিছু রাজ্যেও সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু তাই বলে জাতপাতের বিষয়টি তো হারিয়ে যায়নি।’ তার মতে, ‘নীতীশ ও রাহুলরা চেষ্টা করছেন জাতিগত বিষয়টাকে উসকে দিতে। না হলে মোদীর হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইটা কঠিন হয়ে যাবে। তারা কতটা সফল হবেন, সেটা অন্য প্রশ্ন, তবে এই কৌশল লোকসভার লড়াইটাকে কৌতূহলকর জায়গায় নিয়ে এসেছে।’ সূত্র: ডয়চে ভেলে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নিউইয়র্কে বৈঠকে বসছেন তৌহিদ-জয়শঙ্কর
ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আউট মুশফিক
ঝাড়খন্ডে কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য অমিত শাহের
মুমিনুলকেও হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ
রাবির মাদার বখ্শ হলের পানির ট্যাংক থেকে উদ্ধার হলো দেশীয় অস্ত্র
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ড. ইউনূসের ভাষণ ২৭ সেপ্টেম্বর
ঢাবির হত্যার ঘটনায় প্রভোস্টকে অব্যাহতি
আইন-শৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না: রাঙামাটিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
মেক্সিকোতে মাদক কারবারিদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই সপ্তাহে নিহত ৫৩
বিদ্যুৎ সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত গ্রামে থাকে না
দুর্গাপূজায় ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত
জাকিরের পর ফিরলেন সাদমানও
খুবিতে ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার শীর্ষক সেমিনার
জাতিসংঘে যাওয়ার আগে হুঙ্কার দিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান
ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বিচারবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল
গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প থেকে ভারতীয়দের অপসারণের দাবি গণঅধিকার পরিষদের
পঞ্চগড়ে তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস বিপর্যস্ত জনজীবন
দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে তালতলীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন
আমরা ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি - মুশফিকুর রহমান
ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা