অবশেষে খোঁজ মিললো পুতিনের কট্টর সমালোচক নাভালনির
২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১১ পিএম | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১১ পিএম
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত দেশটির বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির খোঁজ পাওয়া গেছে। তার মুখপাত্র জানিয়েছেন, তিনি জীবিত আছেন এবং তাকে সাইবেরিয়ার একটি পেনাল কলোনি বা কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।
গতকাল অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর কিরা ইয়ারমিশ বলেছেন, “আমরা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে পেয়েছি।” তিনি আরো জানান, বর্তমানে রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলে রয়েছেন তিনি। এর আগে গত ছয় ডিসেম্বরের পর থেকে নিজের দলের সাথে কোন যোগাযোগ ছিল না নাভালনির। সেদিন তাকে আগের একটি কারাগার থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। নাভালনিকে রাশিয়ায় ভ্লাদিমির পুতিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা মনে করা হয়। তিনি ২০২১ সাল থেকে কারাগারে আটক রয়েছেন।
টেলিগ্রাম নামে বার্তা আদান-প্রদানের একটি অ্যাপে ইয়ারমিশ লেখেন, “তার আইনজীবী আজ তার সাথে দেখা করেছে। তিনি ভাল আছেন।” ইয়ারমিশ বলেছেন, নাভালনিকে রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলের স্বায়ত্তশাসিত জেলা ইয়ামালো-নেনেটস এর খার্পে অবস্থিতি আইকে-৩ নামে একটি পেনাল কলোনিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। পেনাল কলোনি হচ্ছে এক ধরণের বসতি যেখানে কারাবাসীদের নির্বাসনে দেয়া হয় এবং তাদেরকে একটি দুর্গম জায়গা বা দ্বীপে রাখার মাধ্যমে বাকি জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা করা হয়।
এর আগে নাভালনিকে মস্কো থেকে ২৩৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত মেলেখোভো নামে একটি জায়গায় রাখা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, নাভালনির খোঁজ পাওয়ার খবরকে তারা স্বাগত জানালেও তার শারীরিক অবস্থা এবং তার আটকাবস্থা নিয়ে “গভীরভাবে উদ্বিগ্ন”। তাকে যে নতুন কারাগারে নেয়া হয়েছে সেটি সংক্ষেপে ‘পোলার উলফ’ বা ‘বরফের হায়েনা’ নামে পরিচিত এবং সেটি পুরো রাশিয়া সবচেয়ে কঠোর জেলখানাগুলোর অন্যতম।
সেখানে থাকা বেশিরভাগ বন্দিই মারাত্মক ধরণের অপরাধের সাথে জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত, এবং বন্দিদের সেখানে কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হয়। ইয়ারমিশ বলেন, রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ নাভালনিকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে চায় এবং “তার জীবনকে যতটা সম্ভব কঠিন করে তুলতে চায়”। তিনি আরো বলেন, “এই কলোনিটি অনেক দূরে, এতে প্রবেশাধিকার পাওয়াটা খুব দুরূহ এবং আইনজীবীদের জন্য সেখানে গিয়ে আলেক্সেইয়ের সাথে দেখা করাটা কঠিন হয়ে পড়বে।”
নাভালনির উপদেষ্টা ইভান ঝাদভ বলেন, নাভালনির অবস্থা প্রমাণ করে যে, “রাজনৈতিক বন্দিদের সাথে পুরো ব্যবস্থা কী ধরণের আচরণ করে, এবং তারা তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দমিয়ে রাখতে চায়।”
গত বেশ কয়েকটি শুনানিতে তাকে আদালতে হাজির হতে না দেখে, বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছিল তার দল। নাভালনি রাশিয়ার দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন এবং সামাজিক মাধ্যমে তার তদন্ত সংক্রান্ত ভিডিও গুলো লাখ লাখ মানুষ দেখেছেন। তাকে একজন 'অনুপ্রেরণাদায়ক রাজনীতিক' এবং রাশিয়ার 'একমাত্র বিরোধী নেতা' হিসেবে দেখা হয়, যিনি সরকার বিরোধী বিক্ষোভে রাশিয়ার যেকোন প্রান্ত থেকে ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাতে সক্ষম।
কিন্তু ২০২০ সালে সাইবেরিয়ায় তাকে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল, যেটি নার্ভ এজেন্ট ছিল বলে পশ্চিমা ল্যাবরেটরিগুলোতে প্রমাণিত হয়েছে। তখন তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। এরপর ২০২১ সালে রাশিয়ায় ফিরলে তাকে সাথে সাথে গ্রেফতার করা হয়।
কে এই অ্যালেক্সেই নাভালনি?
প্রেসিডেন্ট পুতিনের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত আলেক্সেই নাভালনি। সরকারের দুর্নীতি প্রকাশ করে দেবার মধ্যে দিয়ে রাজনীতিতে তার নাম উঠে আসে। তিনি পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া দলকে উল্লেখ করেছিলেন "অসৎ ও চোরেদের দল" বলে। এজন্য বেশ কয়েকবার তাকে জেলে যেতে হয়েছে। পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া সংসদীয় নির্বাচনে ভোট কারচুপি করেছে বলে প্রতিবাদ করার পর তাকে ২০১১ সালে ১৫ দিনের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়।
নাভালনিকে ২০১৩ জুলাইয়ে তছরূপের অভিযোগে অল্পদিনের জন্য জেলে পাঠানো হয়, তবে তিনি বলেন, এই দণ্ডাদেশ ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তিনি ২০১৮র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু প্রতারণার দায়ে তিনি আগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এই কারণ দেখিয়ে তাকে প্রার্থিতা দেয়া হয়নি। নাভালনির মতে, এটাও ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
এরপর ২০১৯ জুলাইতে নাভালনিকে আবার কারাগারে পাঠানো হয় অনুমোদন না থাকার পরও প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংগঠনের জন্য। সেসময় তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকরা বলেন তার "কোন কিছুর স্পর্শ থেকে চামড়ার প্রদাহ" হয়েছে। কিন্তু নাভালনি বলেন, তার কোনদিন কোন কিছু থেকে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া আগে হয়নি। তার নিজের চিকিৎসক বলেন তিনি "কোন বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে'' এসেছিলেন। নাভালনিও বলেছিলেন তার ধারণা তাকে বিষ দেয়া হয়েছে।
নাভালনির ওপর ২০১৭ সালে অ্যান্টিসেপটিক রং দিয়ে হামলা চালানো হলে তার ডান চোখ রাসায়নিকে গুরুতরভাবে পুড়ে যায়। গত বছর মানে ২০২২ সালে তার দুর্নীতি বিরোধী ফাউন্ডেশনকে সরকারিভাবে "বিদেশি গুপ্তচর সংস্থা" বলে ঘোষণা করা হয়। ফলে এই সংস্থার কর্মকাণ্ডের ওপর সরকার কঠোর নজরদারি শুরু করে। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল