অসুস্থ অর্থনীতির সমালোচকদের চুপ করানোর জন্য বিশিষ্ট চীনা ব্যবসায়িক বিশ্লেষকদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলি সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের বিশিষ্ট ব্যবসায়িক বিশ্লেষকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। দেশটির অসুস্থ শেয়ার বাজার এবং সংকটাপন্ন অর্থনীতি নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষমতা সীমিত করার জন্য এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি বাক স্বাধীনতা সীমিত করে এবং সরাসরি সমালোচনার অনুমতি দেয় না। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে চীনা সরকারের কোভিড-১৯ নীতিমালার সমালোচনা করা এমন এক হাজারেরও বেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট স্থগিত বা বন্ধ করে দেয় চীনা কতৃপক্ষ।
সিএনএন-এর পর্যালোচনা অনুযায়ী, কমপক্ষে ছয়জন জনপ্রিয় বিশ্লেষক সামাজিক নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মগুলিতে নতুন পোস্ট আপলোড করতে পারছে না।
তাদের মধ্যে একজন চীন সরকারের উপদেষ্টা লিউ জিপেং। তিনি সম্প্রতি দেশের খুচরা বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। ডিসেম্বরের শুরু থেকে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেননি এবং তার অ্যাকাউন্টে আরোপিত বিধিনিষেধের পরে ব্যবহারকারীরা আর তার অ্যাকাউন্ট পোষ্টগুলি অনুসরণ করতে পারছে না।
সিএনএন যখন শর্ট-ভিডিও অ্যাপ ডুয়িন এবং নিউজ অ্যাগ্রিগেটর অ্যাপ টুটিয়াওতে তার অ্যাকাউন্টগুলি অনুসরণ করার চেষ্টা করেছিল, তখন তারা লিখেছিল, প্ল্যাটফর্মের নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে এই ব্যবহারকারীকে অনুসরণ করা যায় না। সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমালোচকদের চুপ করানোর জন্য পরিচিত। তবে ব্যবসায়িক বিশেষজ্ঞরা চীনের অর্থনীতি সম্পর্কে খোলাখুলি মতামত প্রকাশের জন্য পরিচিত।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আগামী বছরের অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা ও নীতি নিয়ে আলোচনার জন্য একটি বড় সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন।
সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা অর্থনৈতিক প্রচার এবং জনমত নির্দেশিকা জোরদার করবে। চীনা অর্থনীতির উজ্জ্বল সম্ভাবনা সম্পর্কে একটি ইতিবাচক বিবরণ প্রচার করবে।
সিএনএন-এর মতে, গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে যে অর্থনীতির খারাপ কথা বলা বাজারের প্রত্যাশাকে ব্যাহত করবে এবং প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে, যার ফলে নিরাপত্তা বিপন্ন হবে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ ফেলো উইলি ল্যাম বলেন, চীনা অর্থনীতি মন্দার মধ্যে রয়েছে এবং শি জিনপিং নেতৃত্বে অজ্ঞ। তিনি বলেন, যে বার্তাবাহক সুসংবাদ নিয়ে আসে তাকে হত্যা করা অথবা তাদের চুপ করিয়ে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, বেইজিং আশঙ্কা করছে যে নেতিবাচক মনোভাব ছড়ানো ভোক্তাদের আস্থা কেড়ে নেবে।
এদিকে, অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে, চীনা নীতিনির্ধারকরা এখন মুদ্রাস্ফীতির হুমকির সাথে লড়াই করছেন।
সিএনএন-এর মতে, তিন বছর আগে নভেম্বরে মহামারীর গভীরতার পর ভোক্তা মূল্যের সবচেয়ে বড় পতন দেখা গেছে, যা অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে দুর্বল করার ইঙ্গিত দেয়।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, চীনা অর্থনীতিতে স্বচ্ছতার অভাব বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের বিনোয়োগে বাধা হতে পারে।
এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, নভেম্বরে চীনে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের মূল পরিমাপ প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
লন্ডনের এসওএএস ইউনিভার্সিটির চায়না ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও পরিচালক স্টিভ সাং বলেন, চীন সরকার চীনের সমালোচনামূলক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণকে যত বেশি সেন্সর করবে, পশ্চিমা বিনিয়োগকারীরা চীনের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে তত বেশি উদ্বিগ্ন হবে।