ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

নির্বাচন নিয়ে পাকিস্তানিদের মাথাব্যথা নেই কেন?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৫ এএম | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৫ এএম

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক কেন্দ্র করাচিতে নির্বাচনপূর্ব কোনো আয়োজন নেই। এটা এখন প্রায় নিশ্চিত যে 8 ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত নির্বাচন পেছানো হবে না। আসন্ন সাধারণ নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে আগ্রহ না থাকার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ-পিটিআই এর বিরুদ্ধে চলমান দমনমূলক কর্মকাণ্ড এর অন্যতম।

 

ইমরান খান এবং তার অনেক সহযোগী বেশ কয়েকটি মামলায় কারাগারে রয়েছেন এবং নির্বাচনের আগে তাদের মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন না কেউ। এই পদক্ষেপগুলো আসন্ন ভোটকে বেশ বিতর্কিত করে তুলেছে। এছাড়াও, পাকিস্তান প্রায় দুই বছর ধরে অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতির কারণে খাদ্যসামগ্রী এবং বিদ্যুতের দামও অনেকের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। বেশিরভাগ নাগরিকই জীবনধারণের উপায় খুঁজতেই ব্যস্ত, ফলে পরবর্তী সরকার কে গঠন করবে তা নিয়ে তারা কম চিন্তিত।

 

আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী বালুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে জঙ্গি হামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে পাকিস্তানের নিরাপত্তাও দেশটির সামরিক নেতৃত্বের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইমরান খানের সমর্থকেরা ৯ মে সামরিক স্থাপনা এবং আবাসিক এলাকায় আক্রমণ করেছিল। এমন ঘটনা ভবিষ্য়তে আরো ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না জেনারেলরা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস এতটাই বেশি যে আগামী নির্বাচনে কোন দল পরবর্তী সংসদে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হবে তা নিয়ে আর কিছু বলা যাচ্ছে না। বরং আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তানের টিকে থাকা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে অনেকের মনে।

 

ইমরান খান ফ্যাক্টর

 

আসন্ন নির্বাচনে মূল আগ্রহ এক ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে, আর তিনি হচ্ছেন সাবেক ক্রিকেট তারকা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বর্তমানে তিনি দুর্নীতি এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ফাঁসের অভিযোগে কারাগারে রয়েছেন। গত বছর সংসদীয় অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার পর ইমরান খান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু জেনারেলকে ষড়যন্ত্রের জন্য দায়ী করেছিলেন।

 

অনেক জরিপ অনুসারে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এখনও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। তিনি এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে এই বছরের শুরুতে তাকে কেন্দ্র করে এক পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। জনসাধারণের কিছু অংশ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়ায়, যা দেশটিতে অতীতে কখনও ঘটেনি।

 

কেউ কেউ মনে করেন, ক্ষমতায় জেনারেলদের প্রভাব খর্ব করার জন্য ইমরান খানের এই বিশৃঙ্খলামূলক রাজনীতি প্রয়োজন ছিল। অন্যরা মনে করেন এমন কর্মকাণ্ড অর্থনৈতিক পতনের দ্বারপ্রান্তে থাকা এবং অনেক ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া পাকিস্তানকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারে।

 

ইসলামাবাদ-ভিত্তিক সাংবাদিক ও বিশ্লেষক আদনান রেহমাত ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘মেরুকরণের রাজনীতি যেকোনো দেশেই ক্ষতিকর। কারণ এটি মৌলিক সংস্কার ও উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ইমরান খান ঘৃণা ও উস্কানিমূলক বক্তব্যের রাজনীতিতে পারদর্শী। পাকিস্তানের মতো রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বহুমতের দেশে রাজনৈতিক মেরুকরণ, দীর্ঘস্থায়ী কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করে।’

 

রেহমাত মনে করেন, ইমরান খান নিজেই ‘তার নিজের ঘৃণার রাজনীতির’ শিকার হয়েছেন এবং এখন কেউ তার অধিকার আর রক্ষা করতে চায় না।

 

অর্থনৈতিক সংকট

 

দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে পাকিস্তানের অর্থনীতি। ইমরান খানের মেয়াদে (২০১৮-২০২২) অর্থনৈতিক সূচকগুলো খুব ইতিবাচক ছিল না। কিন্তু তাকে অপসারণের পর সূচকগুলোর দ্রুত পতন ঘটেছে।

 

সেপ্টেম্বরে ল্যান্সেট জার্নালে বলা হয়েছে, ‘নিম্ন আয়ের মানুষ অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন, অনেকের উপার্জন কমে গিয়েছে। এর ফলে তাদের খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ এবং গুণগত মান কমাতে হয়েছে, কম ব্যয়বহুল পরিবহণের সন্ধান করতে হয়েছে। অনেকে উপার্জনের জন্য একাধিক কাজ করছেন।’ জার্নালটিতে আরো বলা হয়, ‘সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে আর্থিক অব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সংকটকে আরও খারাপ করে তুলেছে।’

 

রুটির দোকান, সুপারমার্কেটের বাইরে অপেক্ষমান মানুষের দীর্ঘ সারি এবং করাচিতে রাস্তার ধারে অনেক গৃহহীন মানুষকেও ঘুমোতে দেখেছে ডিডাব্লিউ। সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছেছে রেকর্ড ৩১ দশমিক চার শতাংশে। কেউ কেউ মনে করেন, একটি জনপ্রিয়তার ম্যান্ডেটসহ একটি নির্বাচিত সরকারই এই অর্থনৈতিক সমস্যার প্রতিকার করতে পারে। কিন্তু করাচির তারিক রোড এলাকার চা বিক্রেতা আখতার মোহাম্মদী বলেছেন, দেশটির রাজনৈতিক সংস্কৃতি আগে সঠিক পথে নিয়ে আসতে হবে। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমি অবশ্যই ভোট দেব। আমি মাওলানা ফজল-উর-রহমানকে (একজন ইসলামিক ধর্মগুরু) ভোট দেব কারণ পাকিস্তান রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল হলেই অর্থনীতি ঠিক করা যাবে।"

 

খানের প্রত্যাবর্তন সম্ভব?

 

রেহমাত মনে করেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হলে পিটিআই যে বড় জয়লাভ পাবে তাতে সন্দেহ নেই। এই কারণেই ক্ষমতারে পেছনে থাকা ব্যক্তিরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চায় না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোটে জয় নয় বরং আইনসভায় আসনগুলো যারা সুরক্ষিত রাখতে পারবে, তারাই আসতে পারবে ক্ষমতায়। পিটিআই-এর বিরুদ্ধে এরই মধ্য়ে নানা কিছু তৈরি করে রাখা হয়েছে।’

 

বিশেষজ্ঞদের ধারণা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হবে, এমনকি পাকিস্তানের নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বনিম্ন হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। রেহমাত বলেন, ‘ভোটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হবে খানের সমর্থকেরা নির্বাচনের দিন ভোট দিতে আসবে কি না।’ পরিস্থিতি বিবেচনায় এই মুহূর্তে এটি হবে না বলেই মনে হচ্ছে। সূত্র: ডিডাব্লিউ।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়

গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়

সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫

ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫

লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি

লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি

দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ

দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ

সিলেটে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার, নারী গ্রেফতার

সিলেটে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার, নারী গ্রেফতার

আশ্বিনকেও ফেরালেন তাসকিন

আশ্বিনকেও ফেরালেন তাসকিন

কক্সবাজার পাহাড়তলীতে অনৈতিক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ, বাধা দেয়ায় বাসার মালিকের উপর হামলা

কক্সবাজার পাহাড়তলীতে অনৈতিক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ, বাধা দেয়ায় বাসার মালিকের উপর হামলা

অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ

অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ

তাসকিনের জোড়া আঘাত, লিটনের রেকর্ড

তাসকিনের জোড়া আঘাত, লিটনের রেকর্ড

ডিবির আলোচিত ডিসি মশিউর গ্রেপ্তার

ডিবির আলোচিত ডিসি মশিউর গ্রেপ্তার

১৯৯ রানের জুটি ভাঙলেন তাসকিন

১৯৯ রানের জুটি ভাঙলেন তাসকিন

গণপিটুনিতে দুই মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু

গণপিটুনিতে দুই মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়

মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ

মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ

বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই

বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ