ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

নতুন প্রেসিডেন্ট চীন বিরোধী উইলিয়াম লাই, তাইওয়ানের ভাগ্যে কী ঘটবে?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৪৯ পিএম | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৪৯ পিএম

চিকিৎসক থেকে রাজনীতিকে পরিণত হওয়া ৬৪ বছর বয়সী উইলিয়াম লাই

বেইজিংয়ের দৃষ্টিতে তিনি একজন ট্রাবলমেকার বা সমস্যা সৃষ্টিকারী এবং বিপজ্জনক বিচ্ছিন্নতাবাদী। এখন তিনিই হবেন তাইওয়ানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ডের অংশ মনে করে এবং তাইওয়ান বিষয়ে চীনের এ দাবি নতুন কিছু নয়। বরং শি জিনপিং এই একত্রীকরণের বিষয়টিকে একটি লক্ষ্যে পরিণত করেছেন। যদিও এই হুমকি বিগত বছরগুলোতে খুব একটা কাজে আসেনি।

 

বরং ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক প্রগেসিভ পার্টি বা ডিপিপি’কে ভোট না দিতে চীনের বারবারের হুমকি সত্ত্বেও শনিবার উষ্ণ ও রৌদ্রজ্বল আবহাওয়ায় তাইওয়ানের লাখ লাখ মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন। তারা চিকিৎসক থেকে রাজনীতিকে পরিণত হওয়া ৬৪ বছর বয়সী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই চিং-তে কে বেছে নিয়েছেন তাইওয়ানকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য। ডিপিপির জন্য এটা টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা, যে দলটিকে চীন তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষের বলে মনে করে। এখন লাই কীভাবে বেইজিংকে ম্যানেজ করেন কিংবা বেইজিং বিষয়টি কীভাবে নেয়- মূলত এটিই তার শাসন বা প্রেসিডেন্সিকে নির্ধারণ করবে।

 

সাই ৩.০ নাকি একটি নতুন শুরু

লাই অঙ্গীকার করেছেন যে তার মেয়াদ হবে পূর্বসূরি সাই ইং-ওয়েনের আট বছরের শাসনের ধারাবাহিকতা। এমনকি তিনি শনিবার যে ভাষণ দিয়েছেন তিনি সেখানে বেশ সতর্ক হয়েই কথাবার্তা বলেছেন এবং সংলাপ ও সহযোগিতার ডাক দিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারে পূর্বসূরি সাই ইং-ওয়েনের কথাই তিনি পুনর্ব্যক্ত করেছেন- ‘স্বাধীনতা ঘোষণার প্রয়োজন নেই কারণ তাইওয়ান এখন একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র- এর নাম চীন প্রজাতন্ত্র-তাইওয়ান’।

 

যদিও লাই অনেক বেশি সতর্ক প্রেসিডেন্ট সাইয়ের চেয়ে, তাকে বেশী স্পষ্টভাষী বলেই বিবেচনা করা হয়। তিনি ডিপিপির কমিটিতে উঠে এসেছিলো ‘নিউ ওয়েভ’ অংশের সদস্য হিসেবে যারা তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে। লাই ও তার রানিং মেট সিয়াও বি-খিম দুজনই বেইজিংয়ের কাছে খুবই অপছন্দের ও অবিশ্বস্ত। তাদের দুজনের মূল চীনা ভূখণ্ড ও হংকং ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে চীন।

 

সিয়াও এর বাবা তাইওয়ানিজ এবং মা আমেরিকান। তিনি নিজেও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে তাইওয়ানের প্রতিনিধি ছিলেন। এসব কারণে চীন নতুন প্রেসিডেন্টের সাথে সংলাপে যাবে-এটা খুবই অনিশ্চিত। উভয় পক্ষের মধ্যে ২০১৬ সাল থেকে আনুষ্ঠানিক কোন যোগাযোগও নেই। তাইওয়ান মূল চীনের অংশ-এটা মানতে মিজ সাই অস্বীকৃতি জানানোর কারণে চীন ক্ষুব্ধ হয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

 

শনিবারের ভোটের রায়ের আরেকটি মানে হলো তাইওয়ানকে ঘিরে উত্তেজনা অব্যাহত থাকা এবং প্রতিদিনই চীনা জাহাজ এবং সামরিক বিমানের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটতে থাকা। চীন সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে তার অসন্তুষ্টির বার্তা দিতে পারে, যেমনটি তারা করেছিলো ২০২২ সালে তখনকার যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইপে সফরের সময়। তাইপে তখন চীনের বিরুদ্ধে দ্বীপরাষ্ট্রটিকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ এনেছিলো।

 

চীন অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপও বাড়াতে পারে। তাইওয়ানের বিভিন্ন কোম্পানি, পণ্য ও ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিতে পারে। চীনা সামরিক বাহিনীকে মোকাবেলার জন্য লাইয়ের কৌশল হতে পারে সাই যা করে গেছেন তাকে অনুসরণ করা। তিনি তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীর জন্য আরও ব্যয়, সাবমেরিন তৈরির কর্মসূচি চালু রাখা এবং যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সাই বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন।

 

তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কিছু বিষয় উদ্বেগের হতে পারে যে লাইয়ের শাসনকাল তার স্বাধীনতাকামী রাজনীতির অভিজ্ঞতার কারণে কোন উস্কানির তৈরি করে কি-না। যদিও তার রানিং মেট সিয়াও বাইডেন প্রশাসনের কাছে আশ্বাসমূলক। হয়তো তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিবেন যে লাই বেইজিংকে কোন উস্কানি দেবেন না বলে বিশ্বাস করা যায়।

 

শি জিনপিংকে চুপ থাকা শিখতে হবে

লাই যতই সতর্কতার সাথেই খেলুন না কেন বেইজিং তার জয়ের মধ্যে যে বার্তা পেয়েছে সেটি উপেক্ষা করতে পারে না। নির্বাচনটি বলছে প্রতিযোগিতাটি ছিলো খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতার কিন্তু ডিপিপি জিতেছে বড় ব্যবধানে। ‘তারা চীনকে বলেছে যে আমরা আর তোমার কথা শুনবো না। আমাদের ভবিষ্যৎ আমরাই ঠিক করবো। সুতরাং আমাদের নির্বাচনের সময় শি জিনপিংকে চুপ থাকা শেখা প্রয়োজন ‘ নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর ডিপিপির একজন সমর্থক বিবিসিকে বলছিলেন।

 

হউ ইউ-ই এবং প্রধান বিরোধী দল কেএমটি তাদের প্রচারে যে ভয়টি তুলে ধরেছে তাহলো চীন তাইওয়ানে আক্রমণ করতে পারে। কেএমটির জয় হলে সেটি সম্ভবত তাইওয়ানে সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়টিকে সরিয়ে দিতো বরং বেইজিং তখন হউ এর সাথে সংলাপ হতো। শি তাইওয়ানে কেএমটির সবশেষ প্রেসিডেন্ট মা ইং জেও এর সাথে সাক্ষাত করেছিলেন ২০১৫ সালে। ১৯৪৯ সালে চীনের গৃহযুদ্ধের পর এটাই ছিলো চীন ও তাইওয়ানের নেতাদের মধ্যে প্রথম সাক্ষাত।

 

যারা কেএমটির বিরোধিতা করে তাদের অভিযোগ হলো দলটি চীনের কাছে আত্মসমর্পণকারীর মতো আচরণ করে এবং প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় আটকে দেয়া ও সামরিক সেবা কমিয়ে দেয়ার মাধ্যমে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষাকে গুরুত্ব দেয় না। এই ভয়ও আছে কেএমটি সরকার তাইওয়ানকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো সহযোগী দেশগুলো প্রশ্ন তুলতে পারে যে তাইওয়ান যেখানে নিজেই তার প্রতিরক্ষাকে গুরুত্ব দেয় না সেখানে তারা কেন এগিয়ে আসবে।

 

তাইওয়ান এখন জিডিপির আড়াই শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করে। যা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলো বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক কম। এসব কারণে ভোটারদের পছন্দ করার সুযোগ ছিলো অনেকটাই পরিষ্কার। তার বেইজিংয়ের দিক থেকে আসা সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সচেতন এবং তারা চায় সংলাপ।

 

কেএমটি অবশ্য তাইওয়ানের তরুণ ভোটারদের কাছে কোন আবেদন নিবেদনই করেনি, যারা নিজেদের চীনা না ভেবে তাইওয়ানিজ ভাবতে পছন্দ করে।

 

গত কয়েক মাসে তাইওয়ানের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। এর নির্বাচনটি ছিলো ব্যাপক আলোচনার বিষয় এবং এর গণতন্ত্র অল্প দিনের। তবে ভোটারদের উৎসাহ ছিলো স্পষ্ট। যদিও একই সময়ে বাড়ির দাম বেড়ে যাওয়া, বেতন না বাড়ানো ও চাকুরী সুযোগ কমে যাওয়ার কারণে ডিপিপির ওপর থেকেও দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছিলো অনেক ভোটার। এসব কারণে ডিপিপি জিতলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। কেএমটিকে সাথে নিয়ে তাইওয়ান পিপলস পার্টির অবস্থান শক্ত হয়েছে আইনসভায় যা লাইয়ের এজেন্ডাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। প্রেসিডেন্ট লাইয়ের পথ খুব একটা সহজ ছিলো না। এখনো তাকে প্রস্তুত থাকতে হবে হোয়াইট হাউজে যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিরে আসে, সেজন্যও। সূত্র: বিবিসি।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আওয়ামীলীগ শাসনামলে যশোরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রদর্শিত অস্ত্রের কোনো হদিস নেই

আওয়ামীলীগ শাসনামলে যশোরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রদর্শিত অস্ত্রের কোনো হদিস নেই

যে আইন বাংলাদেশে চলে, সেই আইনে পার্বত্য অঞ্চলেও চলবে -কুমিল্লার সমাবেশে ফয়জুল করিম চরমোনাই

যে আইন বাংলাদেশে চলে, সেই আইনে পার্বত্য অঞ্চলেও চলবে -কুমিল্লার সমাবেশে ফয়জুল করিম চরমোনাই

সীতাকু-ের বিতর্কিত সাবেক সহকারী কমিশনার চট্টগামের এডিসি হলেন

সীতাকু-ের বিতর্কিত সাবেক সহকারী কমিশনার চট্টগামের এডিসি হলেন

ফরাজীকান্দি নেদায়ে ইসলাম ওয়েসীয়ান ছাত্রদের উদ্যোগে  ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) উপলক্ষে আনন্দ র‌্যালি

ফরাজীকান্দি নেদায়ে ইসলাম ওয়েসীয়ান ছাত্রদের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) উপলক্ষে আনন্দ র‌্যালি

ব্রুনাইয়ে ভবন থেকে পড়ে গফরগাঁওয়ের প্রবাসী নিহত

ব্রুনাইয়ে ভবন থেকে পড়ে গফরগাঁওয়ের প্রবাসী নিহত

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক আওয়ামী লীগ তা কখনও চায়নি : শিমুল বিশ্বাস

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক আওয়ামী লীগ তা কখনও চায়নি : শিমুল বিশ্বাস

এনপি জনগণকে নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম ডাঃ জাহিদ হোসেন,

এনপি জনগণকে নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম ডাঃ জাহিদ হোসেন,