পাকিস্তানের নির্বাচনে রোষ ঝাড়ছেন অন্তরালের প্রভু
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:২৭ পিএম | আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:২৭ পিএম
পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা নির্ধারণের ক্ষেত্রে নির্বাচন চক্রই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া নয়। দেশটির সেনাপ্রধানের নিয়োগ এবং মেয়াদ বৃদ্ধির চক্রটিও সমান এবং কখনও কখনও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাকিস্তানের রাজনৈতিক উত্থান-পতনের ইতিহাস বেসামরিক রাজনীতিবিদ এবং সামরিক সংস্থার মধ্যকার ধারাবাহিক সঙ্ঘাতে জর্জরিত।
অনিবার্যভাবে, একটি পতন ঘটতে থাকে এবং এর কারণ হল পাকিস্তানের রাজনীতিতে টলকিনের মধ্য-পৃথিবীর মতো শুধুমাত্র একজন লর্ড অফ দ্য রিংস বা প্র্রভু বিরাজ করেন এবং তিনি ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে পছন্দ করেন না। তার প্রভাব মাঝেমধ্যে হ্রাস পেতে পারে, এবং এমনকি তিনি কয়েক বছরের শীত নিদ্রায় চলে যেতে পারেন, কিন্তু অবশেষে, তিনি প্রকৃত রূপে ফিরে আসেন এবং সাধারণত প্রতিশোধের রোষানল নিয়ে।
এই মুহুর্তে পাকিস্তানে টলকিনের সেই প্রতিহিংসার গল্পের প্রায় প্রতিটি কৌশলের সম্পূর্ণ এবং নগ্ন প্রদর্শন ঘটছে, যা দেশটির প্রাক্তন শাসক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) কে ধ্বংস করার জন্য ঐতিহ্যগতভাবে এবং একেবারে নতুন ধারায় ব্যবহার করা হয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পরপর দুটি মামলায় ১০ বছর এবং ১৪ বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে এবং এক দশকের জন্য সরকারী পদে আসীন হওয়ার সুযোগ কেড়ে নেয়া হয়েছে।
অনেক আইন বিশেষজ্ঞ ইমরান থান ও পিটিআই এর বিরুদ্ধে মামলার এই রায়কে তাড়াহুড়ো ও যথাযথ প্রক্রিয়া লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, শাস্তিগুলি কঠোর এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। পিটিআইয়ের অন্যান্য অনেক নেতাকেও অনেক দলীয় কর্মীদের সাথে কারারুদ্ধ করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগকে ২০২৩ সালের ৯ মে’তে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় সামরিক স্থাপনায় হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
পিটিআই দাবি করে যে, এটি একটি মিথ্যা অভিযোগ। যাই হোক না কেন, দলটির নেতা-কর্মীরা একই সময়ে একাধিক মামলার মুখোমুখি হচ্ছেন, একটিতে খালাস পেলেও অন্যটিতে আটক বা কারাদ- ভুগছেন। এটি যেন ন্যায়বিচারের একটি উল্টোমুখি দরজা, যা ইচ্ছা-শক্তি গুড়িয়ে দেয়ার জন্য এবং কথিত নেতাদের প্রচারণা ও তাদের ভোটারদের সংগঠিত করতে বাধা দেওয়ার জন্য নকশা করা হয়েছে।
যারা পাকিস্তানের রাজনীতির অন্তরালের সামিরক প্রভুর কাছে মাথানত করে, তাদের স্বীকারোক্তিমূলক সংবাদ সম্মেলন বা স্পষ্টভাবে মঞ্চস্থ সাক্ষাৎকারের পরে ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং তারপরে সাধারণত অন্যান্য দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বা পুরোপুরি রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
পিটিআই-এর পক্ষে বিপুল সংখ্যক জনসমাবেশ করা, রাজনৈতিক পদযাত্রা এবং বৈঠক, যা যেকোনও নির্বাচনের বৈশিষ্ট্য, তা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। অধিকন্তু, দলটির পতাকা, পোস্টার এবং ব্যানারগুলি পাকিস্তানের রাস্তাগুলি থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উধাও হয়ে গেছে। এবং বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া তথ্যগুলি ইঙ্গিত করে যে, প্রচার মাধ্যমকে এই ধরনের সংবাদগুলিতে কাজ না করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইমরান খান তার দৈনিক বক্তৃতা প্রচার করতে না পারায় ভোটারদের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং টেলিভিশনে তার ছবি প্রদর্শনও নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু পিটিআই সমাবেশে প্রচার করার লক্ষ্যে খানের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-উৎপাদিত অবতার তৈরি করেছে, যা শুধুমাত্র পাকিস্তানে নয়, সম্ভবত বিশ্বের যেকোনো স্থানেই প্রথম।
তবে, পিটিআইকে রুখতে শুরু হয়েছে ডিজিটাল ইঁদুর-বিড়ালের খেলা। যখনই পিটিআই একটি অনলাইন সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়, পাকিস্তানের ইন্টারনেট ব্যবস্থা তখনই একটি রহস্যময় মন্থরতার সম্মুখীন হয়। সফ্টওয়্যারটির ব্যাখ্যাহীন উন্নয়নের উছিলায় কর্তৃপক্ষ এটিকে প্রযুক্তিগত ত্রুটি হিসাবে ব্যাখ্যা করে থাকে।
পিটিআই প্রার্থীদের এখন স্বতন্ত্র হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে, যার অর্থ হল দলটি ৭০টি জাতীয় পরিষদের আসন পেতে পারবে না যা নারী এবং সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে, যা ৫ শতাংশের বেশি ভোট পেতে পরিচালিত সমস্ত দলের মধ্যে আনুপাতিকভাবে বিতরণ করা হয়েছে।
পিটিআই স্পষ্টতই খানের প্রতি সহানুভূতি পাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের মধ্যে, যাদের সংখ্যা এখন ৫ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি এবং ভোটারদের প্রায় ৪৪ শতাংশ। তারা আশা করছে যে, রাজনৈতিক প্রকৌশলের অগণিত ম্যাচে বিরক্ত নাগরিকদের কাছ থেকে প্রতিবাদ ভোট পাবে।
অবশ্যই, পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস জুড়ে বেসামরিক রাজনীতিবিদরা সেই সময়ের প্রভু বা সামরিক নেতাদের সামনে নতজানু হয়েছেন (জোরপূর্বক বা স্বেচ্ছায়) এবং অন্য সময়ে তাদের বিরোধীদের পরাজিত করতে সেই একই অধিপতিদের সমর্থন বা সহযোগিতা করেছেন। এখন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ইমরান খানকে ছুঁড়ে ফেলে একটি ভিন্ন ঘোড়ায় বাজি ধরেছে বলে মনে হচ্ছে।
শরীফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ), কৌশলগতভাবে এবং সাময়িকভাবে ভুট্টো পরিবার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পাকিস্তান পিপলস পার্টির সাথে হাত মিলিয়েছে শুধুমাত্র খানকে সরিয়ে দেয়ার জন্য, যদিও তারা নিজেরা কখনও ভাল অবস্থানে ছিল না এবং তাদেরও একে একে সামরিক অধিপতিদের রোষনালের সম্মুখীন হয়েছে। হয়তো একদিন এর পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু আপাতত, প্রভু দেন এবং প্রভুই ফিরিয়ে নেন।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত ম্যাচ,গুজরাটের বিদায়
জর্ডানে যৌথ সামরিক মহড়া
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে চীন-রুশ প্রেসিডেন্টের বিনিময় খুব গুরুত্বপূর্ণ
টোলের নামে চাঁদাবাজিতে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সাঈদ খোকন
মাইজিপি অ্যাপেই খোলা যাচ্ছে বিকাশ অ্যাকাউন্ট
আ.স.ম আবদুর রবকে দেখতে গেলেন মির্জা ফখরুল
২৫ দিনেও ধরতে পারেনি সেই ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার
ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যবসায় প্রবেশপথ হবে বাংলাদেশ-তুরস্ক
লৌহজংয়ে সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের মাধ্যমে ধান কর্তন উদ্বোধন
মোরেলগঞ্জে যুবকের গলায় রশি পেচানো লাশ উদ্ধার
ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে মুসলিম জাতিসংঘ গঠন করতে হবে
অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগ
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক
সকল শ্রেণির মানুষের জীবনমান উন্নয়নই এ সরকারের লক্ষ্য
ইবিতে শিক্ষক হেনস্তার অভিযোগ, ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি শিক্ষক সমিতির
ইন্দুরকানী উপজেলা যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা
শোক সংবাদ
পটিয়ায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি
ইসরায়েলি ও ভারতীয় পণ্য আমদানি বন্ধের দাবি ইসলামী আন্দোলনের
জেগে উঠল আগ্নেয়-দানব মাউন্ট ইবু! আকাশে পাঁচ কিলোমিটার ছড়াল ছাই