ঢাকা   শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪ | ১০ কার্তিক ১৪৩১

নেতানিয়াহু বিরোধী বিক্ষোভ, ইসরাইলে রাজনৈতিক বিভাজন প্রকাশ্যে

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০১ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৬ পিএম | আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৬ পিএম

 

 

 

ইসরাইলে গভীর রাজনৈতিক বিভাজন আবারো প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে। গত ৭ অক্টোবর হামাসের সাথে যুদ্ধ শুরুর পর এই বিরোধ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকলেও এখন ইসরাইলের রাস্তায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী নেমে এসেছে।

 

ইসরাইলের দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিক্ষোভকারীরা এক ধরনের অনড় অবস্থান নিয়েছে। জেরুজালেমের রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশকে জল কামান থেকে গুলি ও স্প্রে করতে দেখা গেছে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা সরকার বিরোধী বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিচ্ছিলো। গাজায় বন্দি ১৩৪ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করতে চুক্তির করার জন্যও তারা আহবান জানান। যদিও তাদের মধ্যে অজ্ঞাত সংখ্যক এরই মধ্যে মারা গেছে।

 

তাদের বন্ধু ও পরিবারগুলোর আশঙ্কা হচ্ছে, চুক্তি ছাড়া এই যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে বন্দিরা তত বেশি মারা যাবে। রবিবার সন্ধ্যায় ইসরাইলি পার্লামেন্টের চারপাশে হাজার হাজার মানুষকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। যার মধ্যে একজন ছিলো কাতিয়া অ্যামোরজা। যার ছেলে ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন, এখন যে গাজায় দায়িত্ব পালন করছেন। এই বিক্ষোভের সময় তিনি হ্যান্ড মাই রাখলেন এই বলে,

 

‘আজ সকাল আটটার পর থেকে আমি এখানে রয়েছি। আমি নেতানিয়াহুকে বলতে চাই, দেশ ছাড়ার জন্য আমি তোমাকে একটি প্রথম শ্রেণির টিকেট দিতে পারলে খুশি হবো। তুমি চলে যাও, আর এদেশে ফিরো না”।

 

“এবং আমি তাকে এটিও বলছি যে, সেই সমস্ত লোকদের সাথে নিয়ে যান, যাদেরকে আপনি সরকারে বসিয়েছেন। তারা আমাদের সমাজের সবচেয়ে খারাপ মানুষ”।

 

কাটিয়া যখন মাইকে কথাগুলো বলছিলেন, তখন তার পাশ থেকে ইয়েহুদাহ গ্লিক নামের একজন ইসরাইলি ধর্মযাজক যাচ্ছিলেন। যিনি ইসরাইলি টেম্পল মাউন্টে ধর্ম প্রচার করে থাকেন। জেরুজালেমের এই টেম্পল মাউন্টকে মুসলমানদের কাছে পরিচিত আল আকসা নামে। যেটি ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্র স্থান।

 

ধর্মযাজক তখন বলেন, “আমি মনে করি নেতানিয়াহু খুব জনপ্রিয়। এটিই মনে হয় বিক্ষোভকারীদের সবচেয়ে বড় ভয়। আমি মনে করি এই বিক্ষোভকারীরা এতদিন তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে আসছে, হয়তো নেতানিয়াহু এতদিন ধরে ক্ষমতায় আছে এই সত্য তারা মানতে চান না”।

 

বিক্ষোভকারীরা এবং অন্য দেশের যারা মি. নেতানিয়াহুর সমালোচক তারা মনে করেন, গণতন্ত্রের শত্রুরা নেতানিয়াহুর সরকারেই আছে। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিকের ধর্মীয় জায়োনিজম পার্টিও রয়েছে। তাদের দলের একজন সংসদ সদস্য ওহাদ তাল বলেন, “হামাসের উপর সামরিক চাপ ছাড়া তারা কখনো বন্দিদের মুক্তি দিবে না”।

“আপনি মনে করেন না যে হামাস একটি চুক্তিতে এত সহজে জিম্মিদের ফিরিয়ে দিবে, সবাইকে মুক্তি দিবে এটা এত সহজ নয়”।

 

তিনি বলছিলেন, “আপনার হাতে যদি একটি বোতাম থাকতো এবং এটি আপনি টিপ দিলেই সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা যেতো তাহলে ইসরাইল সেই বোতামই টিপতো। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা যত সহজ ভাবা হচ্ছে তত সহজ নয়”।

 

অনেক ইসরাইলি বিশ্বাস করেন, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুই একমাত্র ব্যক্তি যে তার দেশকে নিরাপদ রাখতে পারেন।

 

তিনি বলেছিলেন যে, নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনিদের পরিচালনা করতে পারেন, একটি রাষ্ট্রের জন্য ইহুদিদের দখলকৃত জমিতে বসতি স্থাপন করতে পারেন এবং ছাড় না দিয়ে এবং শান্তি চুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ত্যাগও স্বীকার না করে। গত বছরের ৭ অক্টোবরের সীমান্ত থেকে হামাস আক্রমণ করে তখন সব কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়।

 

তার নিরাপত্তা প্রধান এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন যে, বিক্ষোভকারীরা ভুল করেছে, মি. নেতানিয়াহু কখনোই কোনো দায় এড়াননি। এই বিজ্ঞপ্তিটি তখন জারি করা হয় যখন, জেরুজালেমের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিলো।

 

ইসরাইলিদের অবশ্যই ৪০ বছর আগের কথা মনে করতে হবে, যখন ইসরাইলি রাজনীতিতে নেতানিয়াহু প্রভাবশালী কেউ ছিলেন না।

 

জাতিসংঘে ইসরাইলের একজন বাকপটু মুখপাত্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার মেয়াদ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে অসলো শান্তি প্রক্রিয়ার বিরোধিতাকারী প্ল্যাটফর্মে একটি ছোট বিজয়ের মধ্য দিয়ে।

 

অসলো চুক্তি এই ধারণা তৈরি করেছিলো যে ইসরাইলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদান করা হবে। ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আরব এবং ইহুদিদের মধ্যে দীর্ঘ বিরোধ নিরসনের একমাত্র আশা ছিলো এই চুক্তি।

 

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বরাবরই বিরোধী ছিলেন মি. নেতানিয়াহু। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের পুনর্নির্মাণের জন্য একটি “বড় দর কষাকষির” অংশ হিসাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকে সমর্থনের জন্য মার্কিন কৌশলকে অবজ্ঞার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

 

এখন তার সমালোচকরা বলেছেন যে, যুদ্ধের পরে গাজায় শাসনের জন্য রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের পরিকল্পনার কঠোর প্রত্যাখ্যান ইসরাইলের চরম ডানপন্থীদের অব্যাহত সমর্থন নিশ্চিত করার একটি হাতিয়ার।

 

নেসেটের বাইরে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডেভিড অ্যাগমন। নেতানিয়াহু যখন প্রথম নির্বাচিত হন তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ছিলেন।

 

“এটি ১৯৪৮ সালের পরে একটি বড় সংকট। আমি ১৯৯৬ সালে যখন নেতানিয়াহুর প্রথম চিফ অফ স্টাফ ছিলাম, তখন থেকেই আমি তাকে চিনি। সেখানে তিন মাস পরে আমি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কারণ আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এই নেতা ইসরাইলের জন্য বিপদ”।

 

বিক্ষোভকারীরা যখন রাস্তায় তখনও, মি. নেতানিয়াহু আগাম নির্বাচনের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। একই সময় তিনি রাফায় হামাসের বিরুদ্ধে নতুন করে হামলা চালানোর পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন।

 

হামাসকে ধ্বংস করার ব্যাপারে ইসরাইলিরা বিভক্ত নয়। সেই যুদ্ধের লক্ষ্যে তাদের সমর্থনও রয়েছে। তবে, যেভাবে যুদ্ধ পরিচালনা হচ্ছে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ব্যর্থতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বেশ চাপে ফেলেছে। সূত্র: বিবিসি।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

তুরাগ থানা আ.লীগের সাবেক সহ-সভাপতি দেলোয়ার গ্রেফতার

তুরাগ থানা আ.লীগের সাবেক সহ-সভাপতি দেলোয়ার গ্রেফতার

স্যান্টনারের তোপে এবার ১৫৬ রানে গুটিয়ে গেল ভারত

স্যান্টনারের তোপে এবার ১৫৬ রানে গুটিয়ে গেল ভারত

কালিয়াকৈরে শশুরবাড়িতে জামাইকে হত্যার অভিযোগ

কালিয়াকৈরে শশুরবাড়িতে জামাইকে হত্যার অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেপ্তার বিজয়নগর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান'সহ আ:লীগ নেতা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেপ্তার বিজয়নগর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান'সহ আ:লীগ নেতা

এবার সউদী আরবে ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের

এবার সউদী আরবে ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের

ট্রাম্পকে জেতাতে ১৫ হাজার কোটি টাকা দিলেন ইলন মাস্ক

ট্রাম্পকে জেতাতে ১৫ হাজার কোটি টাকা দিলেন ইলন মাস্ক

খুবি কেন্দ্রে কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উপস্থিতি ৭১ দশমিক ৮১ শতাংশ

খুবি কেন্দ্রে কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উপস্থিতি ৭১ দশমিক ৮১ শতাংশ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও ৫ প্রসিকিউটর নিয়োগ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও ৫ প্রসিকিউটর নিয়োগ

সাভারে আন্দোলনে নিহতদের কবর জিয়ারত ও আহতদের খোঁজ নিলেন জাবির প্রো-ভিসি

সাভারে আন্দোলনে নিহতদের কবর জিয়ারত ও আহতদের খোঁজ নিলেন জাবির প্রো-ভিসি

দ.কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ভবনে উ.কোরিয়ার বেলুন থেকে আবর্জনা নিক্ষেপ

দ.কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ভবনে উ.কোরিয়ার বেলুন থেকে আবর্জনা নিক্ষেপ

গুলিস্তানে দুই বাসের চাপায় ট্রাভেল এজেন্সির মালিক নিহত

গুলিস্তানে দুই বাসের চাপায় ট্রাভেল এজেন্সির মালিক নিহত

বর্তমান সংবিধানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ সম্ভব না: মাহমুদুর রহমান

বর্তমান সংবিধানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ সম্ভব না: মাহমুদুর রহমান

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথে চুনতি অভয়ারণ্য এলাকায় হাতি মৃত্যুর ঘটনায় লোকোমাস্টার বরখাস্ত

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথে চুনতি অভয়ারণ্য এলাকায় হাতি মৃত্যুর ঘটনায় লোকোমাস্টার বরখাস্ত

রাজনৈতিক সমস্যার রাজনীতিবিদদেরই সমাধান করতে হবে : গয়েশ্বর

রাজনৈতিক সমস্যার রাজনীতিবিদদেরই সমাধান করতে হবে : গয়েশ্বর

হলে মেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে, বাইরে অপেক্ষারত মায়ের মৃত্যু

হলে মেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে, বাইরে অপেক্ষারত মায়ের মৃত্যু

মাদক সেবনরত অবস্থায় ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের ৭ নেতাকে সাজা

মাদক সেবনরত অবস্থায় ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের ৭ নেতাকে সাজা

ট্রামির প্রভাবে আকস্মিক বন্যায় ফিলিপাইনে নিহত ৪০, বাস্তুচ্যুত ১০ হাজার মানুষ

ট্রামির প্রভাবে আকস্মিক বন্যায় ফিলিপাইনে নিহত ৪০, বাস্তুচ্যুত ১০ হাজার মানুষ

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট সচল রাখতে ড্রেজিং শুরু

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট সচল রাখতে ড্রেজিং শুরু

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের পৃথক মামলায় গ্রেপ্তার-৪

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের পৃথক মামলায় গ্রেপ্তার-৪

রামগড়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ টাস্কফোর্সের অভিযান

রামগড়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ টাস্কফোর্সের অভিযান