দক্ষিণ গাজা থেকে সেনা কমালেও অভিযান চালিয়ে যাবে ইসরাইল
০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৭ পিএম | আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৭ পিএম
দক্ষিণ গাজায় মাত্র একটি ব্রিগেড রেখে বাকি সৈন্যদের সরিয়ে নিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। দেশটির সামরিক বাহিনী রোববার এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। অবশ্য গাজায় ‘উল্লেখযোগ্য সামরিক উপস্থিতি’ থাকবে বলে জোর দিয়ে জানিয়েছে তারা।
ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিটার লার্নার বিবিসিকে বলেছেন, "এটি যুদ্ধের তৎপরতার আরেকটি পর্যায়।" সৈন্য ফিরিয়ে নেয়াকে যুদ্ধ শেষের ইঙ্গিত মনে করার কারণ নেই। বরং এটিকে কৌশলগত দিক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে, ইসরাইল এবং হামাস উভয়ের পক্ষ থেকেই জানানো হয়েছে, নতুন করে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় যোগ দিতে কায়রোতে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে তারা।
কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিআইএ ডিরেক্টর বিল বার্নস এবং কাতারি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মেদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি মিসর, ইসরাইল এবং হামাস থেকে আসা আলোচকদের সাথে বসবেন। হামাস গত বছরের সাতই অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামলা চালায়। দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তের অধিবাসীদের ওপর চালানো সেই হামলায় ১২০০ জন নিহত হন। জিম্মি করা হয় ২৫০ জনকে। রোববার সেই ঘটনার ছয় মাস পার হলো।
জিম্মিদের অন্তত ১৩০ জনকে হামাসের হাত থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ইসরাইল বলছে, এর মধ্যে অন্তত ৩৪ জন মারা গেছেন। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য গত ছয় মাসে ৩৩ হাজারের বেশি গাজাবাসী নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ।
'যুদ্ধ শেষ হয়নি'
লেফটেন্যান্ট কর্নেল লার্নার বলেন, খান ইউনিসে সামরিক বাহিনী তার মিশন সম্পন্ন করেছে বলে সৈন্যদের সরানো হচ্ছে। খান ইউনিস কয়েক মাস ধরে ইসরাইলি বোমাবর্ষণ চলেছে। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে শহর এবং আশেপাশের এলাকা।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল লার্নার বলেন: "যুদ্ধ শেষ হয়নি। যুদ্ধ তখনই শেষ হতে পারে যখন তারা (জিম্মি) বাড়ি ফিরে আসবে এবং হামাস নিঃশেষ হয়ে যাবে।" "এতে বাহিনীর উপস্থিত হ্রাস পেলো ঠিকই, তবে আরও অনেক অভিযান পরিচালনা করার আছে। রাফাহ স্পষ্টতই একটি শক্তিশালী ঘাঁটি। যেখানেই থাকুক, হামাসের সক্ষমতা ধ্বংস করতে হবে।"
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি বলেছেন, এটি একটি "রেস্ট অ্যান্ড রিফিট" (বিশ্রাম এবং পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠা) বলে মনে হচ্ছে। এবং "নিশ্চিত করে বলা যায় না যে... এই সৈন্যদের দিয়ে নতুন কোনো অভিযানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে"।
কিন্তু পরে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, সৈন্যরা তাদের “ফলোআপ মিশন”- এর জন্য প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, খান ইউনিসে তাদের কৃতিত্ব ছিল "অনন্য"। “এর ফলে গাজা জুড়ে একটি সামরিক সংগঠন হিসেবে কাজ করা বন্ধ করে দিতে হয়েছে হামাসকে,” যোগ করেন তিনি।
ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে একটি পরিকল্পিত স্থল আক্রমণের হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিল। রাফাহতে দশ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। ইসরাইলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং শক্তিশালী মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সপ্তাহের শুরুতে কিছু সতর্কবার্তাও দিয়েছে।
তারা বলেছে, গাজা যুদ্ধের জন্য তাদের চলমান সমর্থন ত্রাণ বিতরণ বৃদ্ধি এবং বেসামরিক মৃত্যু রোধে ইসরাইল কি পদক্ষেপ নেয় তার ওপর নির্ভর করবে। যুদ্ধের ছয় মাস উপলক্ষ্যে দেয়া বক্তব্যে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু’র দাবি, ইসরাইল "জয় থেকে এক ধাপ দূরে"। কিন্তু ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি ছাড়া যুদ্ধবিরতি হবে না বলে মন্তব্য তার।
"যুদ্ধের সাফল্য উল্লেখ করার মতো। আমরা সিনিয়র কমান্ডার সহ হামাসের ২৪ ব্যাটালিয়নের মধ্যে ১৯ টিকে নির্মূল করেছি," মি. নেতানিয়াহু বলছিলেন। শনিবার হাজার হাজার ইসরাইলি গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্ত করতে চুক্তি করার দাবিতে মি. নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সমাবেশ করেছেন। সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরাও যোগ দিয়েছেন।
শনিবার ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জিম্মি ইলাদ কাতজিরের মৃতদেহ উদ্ধার করে। এর কয়েক ঘণ্টা পর তেল আবিব এবং অন্যান্য শহরে মিছিল হয়েছে। আয়োজকরা জানান, তেল আবিবের বিক্ষোভে এক লাখ লোক সমবেত হয়েছিলেন। তবে, অন্যান্য হিসাব অনুযায়ী উপস্থিতি ছিল প্রায় ৪৫ হাজার। স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ‘এখনই নির্বাচন’ এবং 'ইলাদ, আমরা দুঃখিত’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলো। পরে পুলিশ জোরপূর্বক তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি পোস্টে মি. কাতজিরের বোন, কারমিত পালতি কাতজির তার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য ইসরাইলি কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, “কাতজির জীবিত ফিরে আসতো যদি তারা একটি নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হতো”। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “আমাদের নেতৃত্ব কাপুরুষোচিত এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালিত, এই কারণেই এই চুক্তি এখনো হয়নি”। “প্রধানমন্ত্রী, যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা, জোটের সদস্যরা আপনারা আয়নায় নিজেদের দেখুন এবং বলুন যে আপনাদের হাত থেকে রক্ত ঝরেছে কি না”।
রোববার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। জেরুজালেমে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে সরকারবিরোধী ধারাবাহিক সমাবেশগুলো থেকে এই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় যে, তিনি হয়তো বাকি জিম্মিদের আর মুক্ত করতে পারবেন না। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সালথা উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক নাসির উদ্দিন বহিষ্কার
হোক না সবার সুপারনিউমেরারি পদোন্নতি, কর্মক্ষেত্রে আসুক গতি
জামিনে এসে হত্যা মামলার সাক্ষীসহ ৫ জনকে কুপিয়েছে প্রধান আসামি
সীমান্তে ভারত উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে: ইসলামী আন্দোলন
কলম্বিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৬০
প্রতিযোগিতায় যারা টিকে থাকবে তারাই গ্রহণযোগ্য সাংবাদিক হবে
কাঁটাতার পেরিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে কুড়িগ্রামে ভারতীয় গৃহবধূ
জাতির সংকট উত্তরণে সর্বদা মানুষের আস্থা ও ভরসাস্থল জিয়া পরিবার : মীর হেলাল
স্বৈরাচার মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে বিএনপি সবকিছু নতুনভাবে শুরু করতে চায়: আমিনুল হক
গুলি করা পুলিশের শাস্তি নয়, চিকিৎসকের গ্রেফতার ফ্যাসিবাদের উদাহরণ - ডা. রফিকুল
ফেনীতে সিক্সার্স ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে ছাগলনাইয়া উপজেলা দল চ্যাম্পিয়ন
দৌলতপুর সরকারি প্রমোদা সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
গোপালগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করণে জেলা প্রশাসকের ব্যতিক্রম আয়োজন
সৈয়দপুরে শহিদ জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালন
বিশ্বনাথের চাউলধনী হাওরে সীমানা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত
স্বভাবী চোরের শাস্তি ইসলামেই নির্ধারিত - পীর সাহেব চরমোনাই
‘সীমান্তে গন্ডগোল শুরু হয়েছে, জীবন বিপন্ন হলেও দেশের সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখবো’
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী: সরকারের নতুন পদক্ষেপে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ সম্ভাবনাময়
আলজেরিয়ায় কুরআন প্রতিযোগিতায় হাফেজ তাওহিদুলের দেশত্যাগ
লামায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষীকি পালিত