ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

ভারতের মুসলমানদের কেন ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫০ পিএম | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫০ পিএম

 

 

ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি ভারতের মাটিতে তাদের ক্ষমতা সুরক্ষিত করেছে। 'হিন্দু-প্রথম' দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি গভীরভাবে নিবিষ্ট রয়েছেন মোদি। তার দলের সদস্যরা এমনকি সংসদেও নিয়মিতভাবে ঘৃণামূলক এবং বর্ণবিদ্বেষী ভাষা ব্যবহার করে চলেছে ভারতের ২০ কোটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে,

 

গত রোববার রাজস্থানের একটি সভায় গিয়ে মোদি বলেন, সরকারে থাকাকালীন কংগ্রেস বলেছিল দেশের সম্পদের উপর মুসলিমদের অধিকার সকলের আগে। অর্থাৎ দেশের সম্পদ বণ্টন করা হবে তাদের মধ্যে, যাদের পরিবারে বেশি সন্তান রয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের হাতে তুলে দেয়া হবে দেশের সম্পদ। কংগ্রেসের ইশতেহারেই বলা হয়েছে, মা-বোনদের সোনার গয়নার হিসেব করে সেই সম্পদ বিতরণ করা হবে। মনমোহন সিংয়ের সরকার তো বলেই দিয়েছে, দেশের সম্পদে অধিকার মুসলিমদেরই। আপনাদের মঙ্গলসূত্রটাও বাদ দেবে না।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের বিভাজনমূলক ধর্মীয় মতাদর্শের প্রতিফলনমূলক অভিব্যক্তি তার রাজনীতিতে শুরু থেকেই ইন্ধন জুগিয়েছে । দেশের নজরদারি সংস্থাগুলি মূলত তার ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি-র ইচ্ছার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। বিদেশে, অংশীদাররা ক্রমবর্ধমানভাবে মোদি ভারতে যা করছেন তার প্রতি চোখ বন্ধ রেখেছে কারণ তারা ভারতকে চীনের 'গণতান্ত্রিক কাউন্টারওয়েট’ হিসেবে গ্রহণ করেছে। ‘মোদি বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের একজন, তাই হয়তো তিনি এই দায়মুক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছেন’, বলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইনস্টিটিউট অফ পিস-এর দক্ষিণ এশিয়া প্রোগ্রামের সিনিয়র উপদেষ্টা ড্যানিয়েল মার্কি।

 

বিজেপির রাজনৈতিক শাখায় যোগদানের আগে মোদি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-এর একজন সৈনিক হিসেবে এক দশকেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন। ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর লক্ষ্যে ১৯২৫ সালে এই ডানপন্থী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। যখন স্বাধীন ভারত বিভাজনে সম্মত হয়েছিল এবং মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র পাকিস্তান তৈরি করেছিল তখন আরএসএস এটিকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখেছিলো। তখনি ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমস্ত নাগরিককে সমান অধিকারের চিন্তাধারা ধাক্কা খায়। ক্ষোভের শিকার হন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।

 

এক দশক ধরে জাতীয় ক্ষমতায় থাকাকালীন মোদি হিন্দু-ভাবধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সফল হয়েছেন। তিনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্তশাসন বাতিল করেন। তিনি একটি নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন করেছিলেন যা ব্যাপকভাবে মুসলমানবিরোধী হিসেবে দেখা হয়। তিনি বাবরি মসজিদের জায়গায় হিন্দু দেবতা রামের একটি বিশাল মন্দির নির্মাণে সাহায্য করেছেন। রাম মন্দির নির্মাণের এজেন্ডাকে সামনে রেখেই ক্ষমতায় এসেছিলেন মোদি। আরও গভীরভাবে বলতে গেলে, মোদি দেখিয়েছেন যে একটি হিন্দু রাষ্ট্রের বৃহত্তর লক্ষ্যগুলি মূলত ভারতের সংবিধানের সীমানার মধ্যেই অর্জন করা যেতে পারে- সাম্য রক্ষার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানগুলিকে কো-অপ্ট করার মাধ্যমে।

 

তার দলের কর্মকর্তারা যে কোনও অভিযোগ খণ্ডন করতে প্রস্তুত। তারা বলেন, মোদি কীভাবে কারও প্রতি বৈষম্য করতে পারেন? কারণ সমস্ত ভারতীয় নাগরিক তার সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম মারফত সমানভাবে উপকৃত হয় যেমন- শৌচাগার, মাথার উপর ছাদ, মাসিক রেশন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুক্তিটি দেখায় যে কীভাবে মোদি গণতান্ত্রিক শক্তিকে ভারসাম্যের মধ্যে রেখে, একজন শক্তিশালী উদার ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন। ভারতের বুকে একটি দ্বিতীয় শ্রেণি আছে তা স্পষ্ট করার জন্য তিনি বাস্তবে নাগরিকত্বকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করেছেন। মোদির অধীনে কর্মকর্তারা, প্রকাশ্যে প্রার্থনাকে রাজনীতির সঙ্গে মিশিয়ে দেন, তারা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে লঙ্ঘন করে অন্যান্য ধর্মের প্রকাশ্য অভিব্যক্তির উপর ক্র্যাক ডাউন করেন।

 

যদিও বিজেপির মুখপাত্র টম ভাদাক্কান বলেছেন, মুসলিমদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে, নয়াদিল্লিতে পশ্চিমা কূটনীতিকরা গণতান্ত্রিক মিত্র হিসেবে, সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা থেকে শুরু করে বিরোধী এবং ভিন্নমতের বিরুদ্ধে তার দমন-পীড়ন সংক্রান্ত মোদির কিছু পদক্ষেপ নিয়ে তাদের অস্বস্তি যথাসম্ভব আড়াল করার চেষ্টা করেন। তারা স্বীকার করেন যে মোদি বৈশ্বিক ব্যবস্থায় বর্তমান সময়কে বিশেষভাবে কাজে লাগাচ্ছেন। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক বিশ্লেষক মার্কি বলেছেন, মার্কিন সরকার চীনের অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিকূল হিসেবে ভারতকে কাজে লাগানোর জন্য তার জাতীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন কারণে প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করা থেকে বিরত থেকেছে। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্থায়ী শান্তির আশা তুরস্কের: এরদোগান
৩০ যুদ্ধবন্দির বিনিময়ে ২৪৬৬ সেনা ফেরত পেল রাশিয়া
বিদায়ী ভাষণে যা বললেন বাইডেন
চীনের আধিপত্য রুখতে ট্রাম্পের পদক্ষেপ
রোববার কার্যকর হবে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি, জানালেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী
আরও

আরও পড়ুন

বিএনপিকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে: ইঞ্জিনিয়ার সহিদুজ্জামান

বিএনপিকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে: ইঞ্জিনিয়ার সহিদুজ্জামান

যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ

যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ

নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন

ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন

গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা

গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা

ফরিদপুরে প্রিন্সিপালের ওপর অতর্কিত হামলা

ফরিদপুরে প্রিন্সিপালের ওপর অতর্কিত হামলা

প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা পুনর্মূল্যায়নে ১৭ সদস্যের কমিটি গঠিত

প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা পুনর্মূল্যায়নে ১৭ সদস্যের কমিটি গঠিত

‘সম্মিলিতভাবে কাজ করলে পুলিশের প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা ফিরে আসবে’

‘সম্মিলিতভাবে কাজ করলে পুলিশের প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা ফিরে আসবে’

অসহায় শীতার্তদের মাঝে রূপালী ব্যাংকের কম্বল বিতরণ

অসহায় শীতার্তদের মাঝে রূপালী ব্যাংকের কম্বল বিতরণ

জনগণের সেবক হয়ে কাজ করতে চাই: ফখরুল ইসলাম

জনগণের সেবক হয়ে কাজ করতে চাই: ফখরুল ইসলাম

মীরসরাইয়ে অবৈধ বেহুন্দি ও মশারি জাল জব্দ

মীরসরাইয়ে অবৈধ বেহুন্দি ও মশারি জাল জব্দ

গণঅভ্যুত্থানে সংবাদমাধ্যমের চিত্র প্রদর্শনী করছে তরুণ কলাম লেখক ফোরাম

গণঅভ্যুত্থানে সংবাদমাধ্যমের চিত্র প্রদর্শনী করছে তরুণ কলাম লেখক ফোরাম

মারা গেলেন আসামি ধরতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ এসআই মেহেদী

মারা গেলেন আসামি ধরতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ এসআই মেহেদী

নালিতাবাড়ীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড

নালিতাবাড়ীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড

ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর ১৩ হত্যার নির্দেশদাতা নাসিমের খুঁটির জোর কোথায়?

ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর ১৩ হত্যার নির্দেশদাতা নাসিমের খুঁটির জোর কোথায়?

যে কারণে ছাত্রদের ঘোষণাপত্র দিতে মানা করেছিলেন ড. ইউনূস

যে কারণে ছাত্রদের ঘোষণাপত্র দিতে মানা করেছিলেন ড. ইউনূস

মানিকগঞ্জে এলজিইডির উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ

মানিকগঞ্জে এলজিইডির উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ

বাংলাদেশে কখনো স্বৈরাচারের শাসন জনগণ মেনে নিবেনা: আমিনুল হক

বাংলাদেশে কখনো স্বৈরাচারের শাসন জনগণ মেনে নিবেনা: আমিনুল হক

প্রতিনিয়ত মোশাররফ করিমের থেকে শিখি: মম

প্রতিনিয়ত মোশাররফ করিমের থেকে শিখি: মম

অবৈধ ৭টি কয়লা তৈরির চুল্লি গুড়িয়ে দিয়েছে বরগুনার জেলা প্রশাসন

অবৈধ ৭টি কয়লা তৈরির চুল্লি গুড়িয়ে দিয়েছে বরগুনার জেলা প্রশাসন