ভারতের নির্বাচনে আধিপত্যকারী মুসলিম বিরোধী ৪ দাবি: সত্যিটা কী?
২৬ মে ২০২৪, ০৩:৪২ পিএম | আপডেট: ২৬ মে ২০২৪, ০৩:৪২ পিএম
এপ্রিলে, শুরু হওয়া ভারতের সাত-পর্যায়ের জাতীয় নির্বাচন ৪ জুন ফলাফলের সাথে সমাপ্ত হতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে ভোটারদের কাছে দেশটির ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব¡ এবং মুদ্রাস্ফীতি সর্বাধিক গূরুত্ব পেয়েছে। ভারতের কংগ্রেস দলের নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের লাগাতার সমালোচনার মুখে জনসাধারণের দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তাদের দশক-দীর্ঘ শাসন ধরে রাখার জন্য সর্বাত্মক কৌশল হিসেবে মুসলিম বিরোধী ঘৃণাত্মক প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারতের চলমান নির্বাচনের মধ্যে দেশটির নির্বাচন কমিশন বিজেপি দলের প্রধানকে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য সম্পর্কে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে, ভারতের কারণ নির্বাচনী আইন ভোট সংগ্রহের জন্য ধর্মের প্রকাশ্য ব্যবহারের অনুমতি দেয় না। আল জাজিরা ভারতের বৃহত্তম ধর্মীয় সংখ্যালঘু ২০ কোটি মুসলমানের বিরুদ্ধে বিজেপির চারটি দাবির সত্যতা পরীক্ষা করেছে, যা নিচে তুলে ধরা হল।
১. যাদের বেশি সন্তান রয়েছে: ২১ এপ্রিল ভারতের রাজস্থানে একটি নির্বাচনী সমাবেশে মোদি দাবি করেন, ‘যখন তারা শেষবার ক্ষমতায় ছিল, কংগ্রেস বলেছিল যে দেশের সম্পদের উপর মুসলমানদের প্রথম অধিকার রয়েছে। সেটার মানে কি? তার মানে হল, যদি তারা ক্ষমতায় আসে, তারা সব সম্পদ আদায় করে নেবে। এবং তারা কাকে দেবে? যাদের সন্তান বেশি রয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের কাছে।’
২০০২ সালে ভারতের গুজরাটে সহিংস মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার পর রাজ্যটির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদি ক্ষতিগ্রস্ত মুসলিমদের জন্য ত্রাণ শিবিরগুলিকে সমর্থন করতে তার সরকারের ব্যর্থতার বিষয়ে সমালোচনার সম্মুখীন হন, যেগুলির বেশিরভাগই অলাভজনক এবং মুসলিম গোষ্ঠীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সময়ে একটি প্রচার সমাবেশে মোদি বলেছিলেন যে, এই ধরনের ত্রাণ শিবিরগুলি শিশু উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
ভারতের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠরা তাদের মুসলিম বিরোধী ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা মুসলিম জনসংখ্যা বিস্ফোরণের ধারণাটি 'জনসংখ্যা জিহাদ' হিসাবে উল্লেখ করে। নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কমিটি ৭ মে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে ১৯৫০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ভারতে হিন্দুদের জনসংখ্যা ৭.৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং মুসলিমদের জনসংখ্যা ৪৩.২ শতাংশ বেড়েছে। বিজেপি নেতারা এই প্রেক্ষিতে দাবি করেন যে, বিরোধী দল ক্ষমতায় এলে দেশে হিন্দুরা বিপদে পড়বে।
তবে, প্রকৃত সত্য হল, হিন্দুদের তুলনায় মুসলমানদের জন্মহার বেশি হলেও ব্যবধানটি ক্রমশ কমছে। ভারতের জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য জরিপ বলছে যে, ১৯৯২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে হিন্দুদের ১.৩৬ শতাংশ হ্রাসের তুলনায় মুসলিমদের প্রজনন হার ২.০৫ শতাংশ কমেছে।
২. কংগ্রেস মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নিয়ে তাদের ভোট ব্যাঙ্ককে দেবে: ২৩ এপ্রিলের নির্বাচনী সমাবেশে মোদি সতর্ক করেন যে, কংগ্রেস হিন্দুদের বিয়ের চিহ্ন মঙ্গলসূত্রগুলি ছিনিয়ে নেবে (অর্থাৎ হিন্দু বিয়ের সুযোগগুলি কেড়ে নিয়ে মুসলিমদের সাথে বিয়ে সমর্থন করে তাদের দল ভারি করবে) এবং তাদের ভোট ব্যাংকে দেবে।
৩. কংগ্রেস সংরক্ষিত সুবিধা কেড়ে নেবে: নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি তাদের বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ভে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপগুলির সুবিধা কেড়ে নিয়ে মুসলমানদের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ করছে। বাস্তবতা হল, চাকরি এবং শিক্ষায় ভারতীয় সরকারের ইতিবাচক কর্মসূচীর সংরক্ষিত কোটা সুবিধাগুলি শুধুমাত্র বর্ণ শ্রেণী এবং আর্থ-সামাজিক মানদ-ের উপর ভিত্তি করে দেয়া হয়, ধর্মের ভিত্তিতে নয়। পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ধর্ম নির্বিশেষে প্রায় সমস্ত ভারতীয়ই বর্ণের ভিত্তিতে পরিচিত। প্রায় ৪৩ শতাংশ মুসলিম 'অন্যান্য/সবথেকে পশ্চাদপদ' বর্ণ শ্রেণীর অংশ হিসাবে চিহ্নিত।
শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য থেকে আয়ের স্তর পর্যন্ত মুসলিমরা ভারতে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে অনগ্রসর ধর্মীয় গোষ্ঠী। বিজেপি সরকারের সর্বশেষ তথ্য থেকে জানা যায় যে, ভারতের জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ হওয়ার পরেও দেশটির মুসলিমরা উচ্চ শিক্ষায় নথিভুক্ত শিক্ষার্থীদের মাত্র ৪.৬ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। ২০২৩ সালের জুনে হিন্দুস্তান টাইম্স মোদি সরকারের অল ইন্ডিয়া ডেট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সার্ভে (এআইডিআইএস) এবং পর্যায়ক্রমিক শ্রম বাহিনী সমীক্ষা (পিএলএফএস) বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিল যে, মুসলমানরা ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী।
৪. লাভ জিহাদ: বিজেপি দাবি করে যে, ভারতের মুসলিম পুরুষরা ইচ্ছাকৃতভাবে হিন্দু মহিলাদেরকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার জন্য ভালোবাসার নামে প্রলুব্ধ করে থাকে। ২০০০ সাল থেকে এই তত্ত্বটি দেশজুড়ে বিজেপি সরকারগুলি দ্বারা বিস্তার লাভ করে আসছে। এপর্যন্ত বেশ কয়েকটি রাজ্য ধর্মান্তর বিরোধী আইন প্রবর্তন করেছে এবং মুসলিম পুরুষ ও আন্ত:ধর্মীয় দম্পতিদের উপর পুলিশি দমন-পীড়ন জোরদার করেছে।
গত বছর মুক্তি পাওয়া মোদির প্রচারিত ‘কেরালা স্টোরি’ নামক একটি বলিউড চলচ্চিত্রেও 'লাভ জিহাদ'-এর অভিযোগ আনা হয়। ছবিটিতে দেখানো হয়েছে যে, দক্ষিণ কেরালা রাজ্যের মেয়েরা আইএসআইএল (আইএসআইএস) সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে নিয়োগ পাওয়ার জন্য ইসলাম গ্রহণ করছে। এতে আরও দাবি করা হয়েছে যে, আইএসআইএল-এ যোগ দিতে যেয়ে রাজ্যটি থেকে ৩২হাজার নারী নিখোঁজ হয়ে গেছে।
জর্জটাউন বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্প ‘ব্রিজ’ এটিকে বাস্তবতার পর্র্যালোচনায় ব্যাপকভাবে ভুয়া বলে অভিহিত করেছে। কেরালা স্টোরির দাবিগুলিকে সত্যতা পরীক্ষাকারী গোষ্ঠীগুলি এবং কেরালার স্থানীয় সম্প্রদায়গুলি চ্যালেঞ্জ করার পর চলচ্চিত্র নির্মাতারা স্বীকার করেন যে, ছবিতে ব্যবহৃত পরিসংখ্যানগুলি অপ্রমাণিত।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ব্যালন ডি’অর হয়তো ভিনিরই জেতা উচিত ছিল: গার্দিওলা
ভিনিসিয়ুসের ব্যালন ডি'অর না পাওয়ার কারণ জানাল ফ্রান্স ফুটবল
উত্তরা থেকে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ গ্রেপ্তার
ক্রাইম ধারার ফিল্মে মূল চরিত্রে রবার্ট প্যাটিনসন
ট্রোলিং মোকাবিলায় যা করেন অনন্যা
অ্যানিমেটর মাহেদী হাসানের কার্টুন সিরিজ
চুড়ান্ত ভর্তি শেষে ইবিতে আসন ফাঁকা ১০৩ টি
আবার শুরু হচ্ছে হা-শো
সাদিয়া আয়মান ও রনির প্রেমের গুঞ্জণ
জানুয়ারিতে হবে ফোক ফেস্ট
ভারতীয় বন্যহাতি প্রতিহত করেই আমাদের বাঁচতে হবে
শিক্ষার্থীদের মামলা প্রত্যাহার ও শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি
বরগুনায় স্কুলছাত্রীর হত্যাকারী বিচার দাবি
কয়লাখনির পাশের ক্ষতিগ্রস্ত ১২ গ্রামবাসীর ক্ষতিপূরণ দাবি
উপকূলীয় জনপদে শোভা পাচ্ছে কাশফুলের শুভ্রতা
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খুলে সমকামীদের প্রমোট করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিলে জনগণ রুখে দিবে
শেখ হাসিনার প্রত্যেক্ষ হুকুমে সংঘটিত দেশব্যাপী সেই নারকীয় হত্যাকাণ্ড!
ব্যবসা নয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে হাজীদের সেবা করা : ধর্ম উপদেষ্টা
গফরগাওয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি ও শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিল
ক্যাম্পাসকে র্যাগিং ও মাদকমুক্ত ঘোষণা নতুন ভিসির