ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

ইউনূসের নেতৃত্ব বাংলাদেশকে অন্ধকার যুগ থেকে বের করে আনবে?

Daily Inqilab আল জাজিরা

১০ আগস্ট ২০২৪, ০৩:২৮ পিএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৪, ০৩:২৮ পিএম

ছাত্র-জনতার হাতে বিধ্বস্ত হাসিনার একটি প্রতিকৃতি। -সংগৃহীত

 

বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে পাওয়ার তিন দিন পর দেশে শান্তি ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার রাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার মধ্যে অনেকেই ভাবছেন যে হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অন্ধকার যুগ থেকে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষকে তারা বের করে আনতে পারবেন কিনা।অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকার ড. ইউনূস ক্ষদ্র ঋণের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনার প্রচেষ্টার জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। তার নেতৃত¦াধীন এই অন্তর্র্বতীকালীন সরকারে অভিজ্ঞতা এবং তরুণ্য উভয়ের মিশ্রণ ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নাহিদ ইসলামকে টেলিযোগাযোগ এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞানের ছাত্র আসিফ মাহমুদকে ক্রিড়া মন্ত্রণালয় দেয়া হয়েছে। ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, ‘যদি বাংলাদেশ তার তরুণদের নেতৃত্বে থাকে, তাহলে দেশ তার লক্ষ্যে সত্য থাকবে।’সাবেক সেনা কর্মকর্তা এম সাখাওয়াত হোসেনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। হাসিনার আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ থাকলেও তিনি সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ২০০১ থেকে ২০০৬ শাসনামলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনাকারী সালেহ উদ্দিন আহমেদ অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সাবেক কূটনীতিক ও কলামিস্ট তৌহিদ হোসেন রয়েছেন পররাষ্ট্রের দায়িত্বে।নতুন সরকারের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী হয়েছেন পরিবেশগত কাজের জন্য এশিয়ার নোবেল পুরস্কার হিসেবে খ্যাত র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার বিজয়ী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। অধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খান শিল্প এবং নির্বাচনী সংস্কার কর্মী শারমিন মুরশিদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।নারী অধিকার কর্মী ও জীববৈচিত্র্যভিত্তিক পরিবেশগত কৃষি বিষয়ক আইনজীবী ফরিদা আক্তার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ স্থানীয় সরকার বিষয়ক, ইউনূসের দীর্ঘদিনের সহযোগী নুরজাহান বেগম স্বাস্থ্য এবং মুসলিম নেতা ও শিক্ষাবিদ খালিদ হোসেন ধর্র্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।তবে, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বিধান রঞ্জন রায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী চাকমা সম্প্রদায়ের সাবেক কূটনীতিক সুপ্রদীপ চাকমা এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী ফারুক-ই-আজমের দায়িত্ব এখনও ঘোষণা করা হয়নি।আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘নতুন প্রশাসনের সামনে সবচেয়ে জটিল কাজ হবে হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের অবশিষ্টাংশ ভেঙে ফেলা। এতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগের প্রায় সব পদে নতুন নিয়োগ দেয়া হবে।’ খান বলেন, ‘নতুন সরকার হাসিনার আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমস্ত ঘটনা তদন্ত করবে। মানবাধিকার সমুন্নত রাখা হবে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান লক্ষ্য।’এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকারের বিশিষ্ট অধ্যাপক আলী রিয়াজ আল জাজিরাকে অন্তর্র্বতী সরকারের সামনে তিনটি তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন। প্রথমটি হল, ভবিষ্যতের জন্য একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রতিষ্ঠা করা। জনগণের ভিন্ন ভিন্ন প্রত্যাশা রয়েছে এবং কেউ কেউ অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি করতে পারে, আবার কেউ কেউ কাঠামোগত সংস্কারের আহ্বান জানাতে পারে।রিয়াজ বলেন, ‘দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো অর্থনীতি। সরকারের উচিত এমন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা যা সাধারণ জনগণের উপকারে আসে এবং প্রমাণ করে যে এই সরকার তার পূর্বসূরিদের থেকে আলাদা।’রিয়াজ বলেন, ‘এবং তৃতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করা। গত ১৫ বছরে, এই সম্পর্কগুলি, বিশেষ করে ভারতের সাথে এমনভাবে গঠন করা হয়েছিল যা দেশের জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে।’যদিও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তাৎক্ষণিক নির্বাচন চায়, যা আগামীতে একটি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে, এশিয়া প্রোগ্রামের উপ-পরিচালক এবং যুক্তরাষ্ট্রের উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে দক্ষিণ এশিয়ার জেষ্ঠ্য সহযোগী মাইকেল কুগেলম্যান আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘মূল প্রশ্ন হল, তার আকার ও প্রভাবের কারণে হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হিসাবে বিএনপি একটি নতুন বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে নেবে কিনা, যা আবশ্যকভাবে বিএনপির ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করবে না।এছাড়া, কুগেলম্যান অন্তর্র্বতী সরকার এবং এমনকি একটি নতুন দলের উত্থানের জন্য দীর্ঘ যাত্রার অনুমাণও করেছেন। তবে অন্তর্র্বতী সরকারকে দায়িত্ব নেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে কিনা, তা নিয়েও অস্পষ্টতা রয়েছে।সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী শাহদীন মালিক আল জাজিরাকে বলেন, ‘অসাধারণ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে একটি অসাধারণ সরকার গঠিত হয়েছে। এটাকে অন্তর্র্বতী সরকার বলা হয়, কেউ কেউ এটাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারও বলেন, যার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। কিন্তু বাস্তবতা হল, আমাদের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর এ ধরনের সরকার গঠনের আর কোনো বিধান নেই।’২০১১ সালের জুনে তার টানা চার মেয়াদের প্রথমদিকে, হাসিনার সরকার সংবিধানে ১৫ তম সংশোধনী প্রবর্তন করে। মালিক বলেন, ‘যেহেতু সাংবিধানিক কোনো বিধান নেই, তাই ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতী সরকার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে বাধ্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধানে আরেকটি সংশোধনীর মাধ্যমে নতুন সরকারের কার্যকারীতাকে বৈধ করা যেতে পারে।’


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
আরও

আরও পড়ুন

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

শুধু নারীদের জন্য

শুধু নারীদের জন্য

নিথর দেহ

নিথর দেহ

আত্মহননে

আত্মহননে

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম