প্রত্যেকটি নাসরাল্লাহ হত্যা আরও বহুদের আবির্ভাব ঘটাবে
০১ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৫ পিএম | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৫ পিএম
সব অত্যাচারীদেরই এক সময় পতন ঘটে। এটা অনিবার্য। এই মুহুর্তে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বিনইয়াামিন নেতানিয়াহুর উন্মত্ততা ইসরায়েলের পতনের সব থেকে বড় নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় এক বছর আগে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যে কথিত আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তা লেবাননে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ এবং ৭শ’ জনেরও বেশি নিরীহ বেসামরিক নাগরিক হত্যার মধ্য দিয়ে একটি জটিল জগাখিচুড়িতে পরিণত হয়েছে। যেকোনও মতাদর্শ ব্যক্তি বিশেষের চেয়ে বেশি শাক্তিশালী হয়ে টিকে থাকে এবং প্রায়শই জাতি ও আন্দোলনগুলোর ভাগ্য নির্ধারণ করে। হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর ক্ষতি এই মুহুর্তে হজম করা কঠিন মনে হলেও, সুদূরপ্রসারীভাবে এটি আগ্রাসনবাদী ইসরাইলের দমন-পীড়নের হাত থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিরোধ শক্তিগুলোর চূড়ান্ত লক্ষ্যের পথে একটি সাময়িক বাধা মাত্র। তবে, ইতিহাসে এই ধরনের বাধা নতুন কিছু নয়।যুক্তরাষ্ট্রে যথাক্রমে ১৯৬৫ এবং ১৯৬৮ সালে ম্যালকম এক্স এবং মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকান্ড মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের জন্য একটি বড় আঘাত বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু তা আন্দোলনকে নির্মূল করতে পারেনি। যদিও বহু সময় লেগেছে, কিন্তু অবশেষে বারাক ওবামার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে এই আন্দোলনের সাফল্য নিশ্চিত হয়েছে। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে তাদের যুদ্ধে বেশ কয়েকজন তালেবান নেতা ও কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিল। কিন্তু ২০ বছরের দখলদারিত্বের সমাপ্তি ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে তার সৈন্যদের একটি কূটনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে প্রত্যাহার করতে হয়েছিল। মূল কথা হল, আগ্রাসনবাদী শক্তি কখনই ত্রাণকর্তা হতে পারে না। এটা একটা কঠিন সত্য, যেটা ইহুদিবাদী শাসকদের এখনো শেখার বাকি আছে।নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারের সর্বশেষ ধ্বংসযজ্ঞ ইসরায়েলকে চরম বিপর্যয় ছাড়া আর কিছুই এনে দেবে না। নাসরাল্লাহর শাহাদাত ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আরব প্রতিরোধের নতুন প্রেরণা যোগাচ্ছে। তার নাম বর্তমানে সামাজিক ও গণমাধ্যমগুলোতে আলোচিত হচ্ছে। সউদী আরব, জর্ডান, মিশর এবং ইরাক সহ আরব দেশগুলোতে আগ্রহের এই উত্থান বিশেষভাবে দৃশ্যমান। বৈরুতে ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে দেশগুলোতে বড় বিক্ষোভ হয়েছে।ইসরায়েলের প্রত্যাশার বিপরীতে, তাই হাসান নাসরাল্লার হত্যা প্রতিরোধ আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করছে। হামাস, হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুথিরা ইতিমধ্যেই প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। ইহুদিবাদী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বৈধ প্রতিরোধ এখন বিশ্বজুড়ে ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য সমর্থন উপলব্ধ করছে।নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদার করার নামে ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞ সময়ের সাথে সাথে তার হিসাবের ভুলে পরিণত হয়েছে। হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যা ফিলিস্তিনি সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং নাসরুল্লাহর হত্যা লেবাননেও একই কাজ করছে। এমনকি, ইরানও অবশ্যম্ভাবী জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। দখলদার রাষ্ট্রে শান্তি ও নিরাপত্তা আনার থেকে অনেক দূরে, নেতানিয়াহু এবং তার সহিংস কট্টোরবাদী শাসন এই অঞ্চলকে সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। ফলে, ইসরায়েলের তথাকথিত 'আত্মরক্ষার অধিকার'-এর দাবি সম্পর্কিত যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কর্মকান্ডগুলো ব্যাপকভাবে নিন্দিত হচ্ছে। ইরাক লেবাননে ইসরাইলের সাম্প্রতিক বিমান হামলাকে একটি লজ্জাজনক অপরাধ বলে অভিহিত করেছে। রাশিয়া ইতিমধ্যেই, পরবর্তী যে কোনও উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য তেলআবিবের ইহুদিবাদী সরকারকে দায়ী করেছে। গত সপ্তাহে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে নেতানিয়াহুর ভাষণে ইসরায়েলের কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতাগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।এছাড়া, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ইসরায়েল বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধুমাত্র গাজা-গণহত্যাই পরবর্তী দশকে দেশটির সম্ভাব্য অর্থনৈতিক কর্মকা-ে ৪০হাজার কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে, যেখানে ২০২৪ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে ইতিমধ্যেই ১৬শ’ কোটি ডলার ক্ষতি নথিবদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি, লেবাননে হামলা ইসরাইলের 'আব্রাহাম অ্যাকর্ডস' এবং আরব রাষ্ট্রগুলির সাথে তার সম্পর্ক স্বাভাবিককরণকে অনিশ্চিত করে দিয়েছে।ইসরাইল যত বেশি নিপীড়ন চালাবে, ততবেশি মুক্তিযোদ্ধাদের আবির্ভাব ঘটবে। ব্যক্তিকে হত্যা করা যায়, কিন্তু দখলদারিত্ব ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির ন্যায্য প্রচেষ্টার কখনো মৃত্যু হয় না। তাই, প্রত্যেক নাসরাল্লাহর মৃত্যুর সাথে সাথে আরও অনেক নাসরাল্লাহর উত্থান ঘটবে। আগ্রাসনবাদী ইসরায়েল সর্বদা হিজবুল্লাহ, হামাস এবং হুথিদের কাছ থেকে বিরোধিতার সম্মুখীন হতে থাকবে, যতক্ষণ না এটি সংলাপে জড়িত হয় এবং ফিলিস্তিন ও লেবাননের ভূখ-ে অবৈধ দখলের অবসান না ঘটায়। এ কারণেই নেতানিয়াহুকে ইসরায়েলের স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।গাজা এবং অন্যান্য আঞ্চলিক সঙ্ঘাত পরিচালনার কারণে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জনসাধারণের অসন্তোষ বাড়ছে। প্রায় ৭০ শতাংশ ইসরায়েলি বিশ্বাস করে যে তার পদত্যাগ করা উচিত। মানবিক উদ্বেগের উপর সামরিক নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় নেতানিয়াহুর অস্বীকৃতি, তার নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ইসরায়েলি এবং সেইসাথে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বলিদানের অভিযোগ ও প্রতিবাদ উস্কে দিয়েছে।মূলত, তাই, নেতানিয়াহুর অধীনে ইসরায়েল একটি আত্মঘাতী যাত্রায় রয়েছে, যা তার প্রচারকৃত উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে। ইসরায়েলের কর্মকা- এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনকে নির্মূল করেনি, বরং, বর্ণবাদী শাসনের নেতিবাচক আঞ্চলিক প্রভাব মোকাবেলা করতে এটিকে আরও দৃঢ় করেছে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ