ট্রাম্পের রানিং মেট কে এই জেডি ভ্যান্স?
২১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৭ এএম | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৭ এএম
আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওহাইও রাজ্যের সিনেটর জেডি ভ্যান্সকে রানিং মেট মনোনীত করেছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত (১৫ জুলাই) মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ৩৯ বছর বয়সী ভ্যান্সের নাম ঘোষণা করে সবাইকে চমকে দেন ট্রাম্প। কারণ একসময় ট্রাম্পের কট্টর সমালোচক ছিলেন ভান্স। কে এই ভ্যান্স? ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
জেডি ভ্যান্স ২০১৬ সালে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ও টুইটারে ট্রাম্পকে নিয়ে কঠিন সমালোচনা করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি কখনোই ট্রাম্পের লোক নই। আমি কখনোই তাকে পছন্দ করি না। তাকে নির্বোধ মনে করি।’
এমনকি ট্রাম্পকে আমেরিকার হিটলার উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছিলেন তিনি। পরে ধীরে ধীরে তার মানসিকতায় পরিবর্তন আসে।
ওই বছরই জেডি ভ্যান্সের একটি স্মৃতিকথামূলক বই প্রকাশিত হয়। নাম হিলবিলি এলিজি। এ বই তাকে দেশজুড়ে খ্যাতি এনে দেয়। বইটি নিউ ইয়র্ক টাইমসের সর্বোচ্চ বিক্রীত (বেস্ট সেলার) বই। পরবর্তীতে বইটি নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়।
ওই বই থেকে জানা যায়, ওহাইওর মিডলটাউনে তার জন্ম। পুরো নাম জেমস ডোনাল্ড বোম্যান ভ্যান্স। তার মা মাদকাসক্ত ছিলেন। ছোটবেলায় বাবা তাদেরকে ছেড়ে চলে যান। পরে নানা-নানির কাছে বড় হন ভ্যান্স। বর্তমানে তাদের পদবিটাই ব্যবহার করেন মি. ভান্স।
২০০৩ সালে হাই স্কুল পাশের পরই মার্কিন মেরিন সেনাবাহিনীতে কাজ শুরু করেন তিনি। ২০০৫ সালে শেষের দিকের ছয় মাস তিনি ইরাকে কাজ করেছেন। ২০০৯ সালে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক শেষ করেন। তখন থেকেই রিপাবলিকান রাজ্য সিনেটর বব শুলারের সঙ্গে কাজ করতেন তিনি। ২০১৩ সালে ইয়েল ল স্কুলে পড়াশোনা করেন তিনি।
আইন স্কুলে পড়াশোনা শেষ করেই তিনি সিনেটর জন কার্নির সঙ্গে কাজ শুরু করেন। এছাড়া এক বছর তিনি মার্কিন জেলা আদালতের বিচারক ডেভিড বানিংয়ের আইন ক্লার্ক হিসাবেও কাজ করেন। আইন সংস্থা সিডলি অস্টিনে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন। ২০১৬ সালে প্রযুক্তি শিল্পে পুঁজিবাদী উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করতে চলে আসনে সান ফ্রান্সিস্কো।
২০১৭ সালে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রেভেলোশন এলএলসিতে যোগ দিয়ে ওহাইতো ফিরে আসেন তিনি।
২০২২ সালে ওহাইওর সিনেট নির্বাচনে লড়াই না করার ঘোষণা দেন রিপাবলিকান সিনেটর রব পোর্টম্যান। তখন তরুণ রাজনীতিক হিসেবে ভ্যান্সের নাম সামনে আসে। রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো ওহাইও রাজ্যের সিনেটর নির্বাচিত হন ভ্যান্স।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইয়েল ল স্কুলে পড়ার সময় ‘শ্বেতাঙ্গ-অধ্যুষিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক অবক্ষয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রথম দেখা হয় তাদের। ২০১৪ সালে বিয়ে করেন এই যুগল। তারপর অনেকটা পথ একসঙ্গে পেরিয়ে এসেছেন তারা। বর্তমানে এই দম্পতির তিনজন সন্তান রয়েছে - ইভান, বিবেক ও মিরাবেল।
এককালে ট্রাম্পের ‘কড়া সমালোচক’ হিসাবে পরিচিত মি. ভান্স প্রচারাভিযানের সময় রিপাবলিকান প্রার্থী হিসাবে নিজেকে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন বিরোধীদের ‘আক্রমণাত্মক’ সমালোক হিসাবেও। ঐতিহ্যগতভাবে একজন ‘রানিং মেট’-এর ভূমিকা তিনি পালন করছেন। যদিও মি. ট্রাম্পের নিজস্ব বক্তৃতার ধরনের নিরিখে সেটাকে কখনো কখনো ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মনে হতে পারে।
তবে প্রচারাভিযানে তাকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেছে। নিয়মিতভাবে টেলিভিশন শো-তে অংশগ্রহণ করেছেন, বিতর্ক অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে তাকে।
নির্বাচনি সমাবেশগুলোতেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন যা অনেকাংশেই কমালা হ্যারিসের প্রচারাভিযান এবং তার সতর্কভাবে পরিকল্পিত মিডিয়া কৌশলের বিপরীত।
জেডি ভান্সের বেড়ে ওঠা এবং তার ব্যক্তিত্ব শ্রমজীবী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারে ভেবেই তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনীত করেছেন বলে মনে করা হয়।
লেখকের পাশাপাশি মি. ভান্স একজন জনপ্রিয় ভাষ্যকার হিসাবেও পরিচিত ছিলেন।
মি. ভান্সের লেখনীতে উঠে এসেছে অ্যাপেলেচিয়া অঞ্চলের কথা যেখানে তার বর্ধিত পরিবারের সদস্যরা থাকতেন। এই বিশাল পার্বত্য অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের বিরাণ এলাকা থেকে শিল্পন্নোত মধ্য-অঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বের প্রান্ত পর্যন্ত প্রসারিত। এই অংশে দেশের কয়েকটা দরিদ্রতম এলাকাও রয়েছে।
‘হিলবিলি এলেজি’-তে মি. ভান্সের বেড়ে ওঠা, তার চারপাশের পরিস্থিতি, বন্ধু ও পরিজনদের ভুল সিদ্ধান্ত আর অন্যান্য সমস্যা মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতার কথা ফুটে উঠেছে। রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তিনি বর্ণনা করেছেন কীভাবে তার পরিচিত মানুষেরা পরিশ্রম করার বদলে সরকারি অনুদানের উপর নির্ভর করতেন।
এই বইয়ের সাফল্য তাকে লেখক হিসাবে বিখ্যাত করে তোলার পাশাপাশি, ভাষ্যকার হিসাবেও পরিচিতি দিয়েছিল। বিভিন্ন নামকরা অনুষ্ঠানে ভাষ্যকার হিসাবে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হতো যেখানে তিনি মূলত শ্বেতাঙ্গ শ্রমজীবী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের বিষয়ে কথা বলতেন।
সেই সময়, তৎকালীন রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী মি. ট্রাম্পের সমালোচনা করার সুযোগ খুব কমই হাতছাড়া করতেন তিনি।
তার স্ত্রী ঊষা ভান্সও তার ক্যারিয়ারে সফল। তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের কেরানি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সম্প্রতি মুঙ্গার, টোলস অ্যান্ড ওলসন নামক শীর্ষস্থানীয় ল ফার্মের অংশ ছিলেন। তবে মি. ট্রাম্প জেডি ভান্সকে তার রানিং মেট হিসাবে মনোনীত করার পর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করেন। সূত্র : বিবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইম
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
লিভ টুগেদার ইস্যুতে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার লিগ্যাল নোটিশ অভিনেত্রীকে
ওলামায়ে কেরামকে গায়েবি মামলা দিয়ে হেনস্তা করেছে- ডঃ মাও সামিউল হক ফারুকী
কুলাউড়ায় পুলিশকে মারধর করে আসামি ছিনতাই
রোববার থেকে নগর ভবনে দাপ্তরিক কাজ করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
গণহত্যার টপ কমান্ডারদের বিচার এক বছরের মধ্যে শেষ হবে: চিফ প্রসিকিউটর
কনস্টাস কাণ্ডে কোহলির দোষ দেখছেন অস্ট্রেলিয়ার বোর্ড প্রধান
চরমোনাই মাদরাসা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্প: মাসুম বিল্লাহ
বগুড়ায় বালু ব্যবসায়ী হত্যা, লাশ নিয়ে বিক্ষোভ
মাগুরার শ্রীপুরে জোড়া শিশুর জন্ম
রিক্সা ভ্যানে চলন্ত ট্রাকের ধাক্কায় বাবা মেয়ে সহ নিহত ৩
পদ্মা নদীর ভয়ঙ্কর আগ্রাসনে হুমকির মুখে কুষ্টিয়া-রাজশাহী মহাসড়ক
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা: চালকসহ গ্রেপ্তার ২
গোপালগঞ্জ আড়াই শ’ বেডের আরএমও জেল -হাজতে
বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না, প্রয়োজনে আবারও মাঠে নামতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা
সাংবাদিক আনিসুর রহমানের মৃত্যু
নিউজিল্যান্ডের কাছে শ্রীলঙ্কার অবিশ্বাস্য পরাজয়
রাশিয়ার উপর আজারবাইজানের বিমান ভূপাতিতের অভিযোগ : যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিত
ফিরে দেখা ২০২৪: সংস্কারের বছরে মাঠের ক্রিকেটে হতাশা
মানুষ সুন্দর ও কল্যাণের অপেক্ষায় আছে : হাজী ইয়াছিন
সিএনজি স্টেশন খোলা রাখার সময় বাড়ছে