ঢাকা   শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৬ পৌষ ১৪৩১

ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ভারত যেসব ক্ষেত্রে ‘সমস্যায়’ পড়তে পারে

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ এএম | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার ফলে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়তে পারে।প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ভারতকে তার বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন এবং মোদি সরকারের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়েছিলেন।

 

তবে, তিনি কিছু ক্ষেত্রে ভারতের নীতির সমালোচনাও করেছেন, যেমন বাণিজ্যিক বিষয়ে বা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের কিছু অবস্থান নিয়ে।এ বার্তা, বিশেষ করে ট্রাম্পের পূর্ববর্তী প্রশাসনের বাণিজ্য ও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি,ভারতের জন্য আরও চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।ট্রাম্পের নীতি বাইডেন প্রশাসনের তুলনায় আরও রূঢ় হতে পারে, যেখানে ভারতকে একাধিক ক্ষেত্রে চাপের সম্মুখীন হতে হবে।

 

তবে,ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মূল ভিত্তি আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা,যা সম্ভবত অপরিবর্তিত থাকবে।বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ট্রাম্পের আগের নীতির ভিত্তিতে ভারতের প্রতি সম্পর্কের স্বার্থপরতা অব্যাহত থাকতে পারে,তবে তার প্রশাসনের অগ্রাধিকারের ওপর নির্ভর করে তা আরও দৃঢ় বা চাপপূর্ণ হতে পারে।

 

ভারতের সঙ্গে আর্থিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতিতে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ দৃষ্টিভঙ্গিই প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে আমেরিকান শিল্প সংরক্ষণের নীতি গ্রহণ করেছিলেন।তিনি চীন ও ভারতসহ একাধিক দেশ থেকে আমদানির উপরে চড়া শুল্ক আরোপ করেছিলেন।

 

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর স্লোগান দিয়ে আসছেন।উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ভারতকে আমেরিকান হার্লে ডেভিডসন মোটরসাইকেলের উপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার বা কমানোর কথা বলা হয়েছিল।যেসব দেশ মার্কিন পণ্য বা পরিষেবা আমদানির ক্ষেত্রে উচ্চ শুল্ক আরোপ করে,তাদের বিরুদ্ধে তিনি কড়া অবস্থান নিতে পারেন।ভারতও কিন্তু এই তালিকায় আসতে পারে।

 

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি

পর্যবেক্ষণকারী সাংবাদিক শশাঙ্ক মট্টু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটারে) লিখেছেন, ‘ট্রাম্পের চোখে ভারত বাণিজ্য সংক্রান্ত নিয়ম খুব বেশি লঙ্ঘন করে।তিনি চান না যে ভারত মার্কিন পণ্যের উপর খুব বেশি পরিমাণ শুল্ক আরোপ করুক।ট্রাম্প চান তার দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হোক।’

 

মট্টু ব্যাখ্যা করেছেন যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কবিধি সত্যিই বাস্তবায়িত হয় তাহলে তার প্রভাব ভারতে কেমন পড়তে পারে।তিনি লিখেছেন, ‘কিছু অর্থনীতিবিদের অনুমান অনুযায়ী,যদি ট্রাম্পের শুল্ক বিধি বাস্তবায়িত হয় তাহলে ২০২৮ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি ০.১% পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ২০ হাজার কোটি ডলার।

 

ট্রাম্প যদি শুল্কের হার আরও বাড়ান, তাহলে ভারতকে অনেকটাই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি ভারতের আমদানিকে ব্যয়বহুল করে তুলতে পারে। এর ফলে মূল্যস্ফীতির হার বাড়বে এবং সুদের হার খুব বেশি কমানো সম্ভব হবে না। এতে বিশেষত মধ্যবিত্ত গ্রাহকদের সমস্যা বাড়তে পারে কারণ তাদের ইএমআই বেড়ে যাবে।

 

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সম্পর্ক

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চীনের কট্টর বিরোধী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।তার প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের বেশ অবনতি দেখা গিয়েছিল।এই পরিস্থিতিতে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলেই আশা করা যায়।

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার প্রথম মেয়াদে, কোয়াডকে শক্তিশালী করার বিষয়ে খুব সক্রিয় ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের জোট হলো কোয়াড।ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের সঙ্গে অস্ত্র রফতানি, যৌথ সামরিক মহড়া ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে আরও মজবুত সমন্বয় হতে পারে।এর ফলে চীন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান শক্তিশালী হবে।

 

মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘র‍্যান্ড কর্পোরেশন’-এর ইন্দো-প্যাসিফিক বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন,‘ট্রাম্পের জয় ভারত ও আমেরিকার বর্তমান কৌশল অব্যাহত রাখবে।মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেওয়া ছাড়াই ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদারিত্বের ধারাবাহিকতা দেখা যাবে বলে অনুমান করা যায়।মোটের উপর ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি হওয়ায় ভারত লাভবান হবে।’

 

সাংবাদিক শশাঙ্ক মট্টু লিখেছেন, ‘ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্বে থাকাকালীন ভারতের সঙ্গে বড় ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন এবং চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন।’

 

ট্রাম্পের ভিসা নীতি

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি অভিবাসীদের জন্য বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে অভিবাসন একটা বড় ইস্যু এবং ট্রাম্প এই বিষয়ে বেশ সোচ্চারও।অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ তুলেছেন,অবৈধ অভিবাসীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের চাকরিতে ‘ভাগ বসাচ্ছে’।

 

বিপুল সংখ্যক ভারতীয় মার্কিন প্রযুক্তি সেক্টরে কাজ করেন এবং তারা ‘এইচ-১বি’ ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন।ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ‘এইচ-১বি’ ভিসা সংক্রান্ত নিয়মের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন।এর প্রভাব দেখা গিয়েছিল ভারতীয় পেশাদার ও প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর উপরে।

 

তার দ্বিতীয় মেয়াদেও এই একই নীতি অব্যাহত থাকলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয়দের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতি অবশ্য ভারতীয় প্রযুক্তি সংস্থাগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অন্যান্য দেশে বিনিয়োগের বিষয়ে উৎসাহ দিতে পারে।

 

মানবাধিকার

ভারতের মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো কিছু বলেননি।এটা মোদী সরকারের পক্ষে ‘অনুকূল পরিস্থিতি’ বলে মনে করা হয়।কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলার সময়ও ট্রাম্প ভারতের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’-এর বিষয়কে সমর্থন করেছিলেন।অন্যদিকে, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রসঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার হতে দেখা গিয়েছিল বাইডেন প্রশাসনকে।

 

 

কমালা হ্যারিস ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বলেছিলেন, ‘আমাদের নিজের নিজের দেশের গণতান্ত্রিক নীতি ও প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করতে হবে।এটা গুরুত্বপূর্ণ।’ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালীন গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার ইস্যুতে আরও জোর দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের তুলনায় ডেমোক্র্যাটদের কাছে এই ইস্যুগুলো বেশ বড়।সূত্র : বিবিসি বাংলা

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

চীনের অবিশ্বাস্য সামরিক উত্থানে টনক নড়েছে ভারতের

চীনের অবিশ্বাস্য সামরিক উত্থানে টনক নড়েছে ভারতের

পারমাণবিক বোমা সজ্জিত নতুন যুদ্ধজাহাজে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন কিম

পারমাণবিক বোমা সজ্জিত নতুন যুদ্ধজাহাজে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন কিম

ধর্ষণের প্রতিশোধে বাবাকে হত্যা, গ্রেফতার ২ কিশোরী

ধর্ষণের প্রতিশোধে বাবাকে হত্যা, গ্রেফতার ২ কিশোরী

আমাকে ধর্ষণ করার ভিডিও দেখে স্বামী

আমাকে ধর্ষণ করার ভিডিও দেখে স্বামী

হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই

হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই

ফিলিপাইনে ৪০০ বিদেশি অনলাইন প্রতারক গ্রেফতার

ফিলিপাইনে ৪০০ বিদেশি অনলাইন প্রতারক গ্রেফতার

ইসরাইলি ৪শ’ সেনা নিহত গাজায় স্থল অভিযানে

ইসরাইলি ৪শ’ সেনা নিহত গাজায় স্থল অভিযানে

কুষ্টিয়ায় কৃষি যন্ত্র বিতরণে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক

কুষ্টিয়ায় কৃষি যন্ত্র বিতরণে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক

জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা করতে হবে

জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা করতে হবে

শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজ ড্র করল বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজ ড্র করল বাংলাদেশ

ভোলায় শীতার্তদের মাঝে জেলা প্রশাসকের কম্বল বিতরণ

ভোলায় শীতার্তদের মাঝে জেলা প্রশাসকের কম্বল বিতরণ

গাজীপুরে বিএনপি নেতার উপর  হামলা

গাজীপুরে বিএনপি নেতার উপর হামলা

চাঁদপুরে হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা জসিম গ্রেপ্তার

চাঁদপুরে হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা জসিম গ্রেপ্তার

বিভিন্ন বিভাগ ছোট হচ্ছে পাকিস্তানে

বিভিন্ন বিভাগ ছোট হচ্ছে পাকিস্তানে

আশুলিয়ায় চাঁদার দাবিতে প্রকাশ্যে দিবালোকে দোকানীকে গুলি

আশুলিয়ায় চাঁদার দাবিতে প্রকাশ্যে দিবালোকে দোকানীকে গুলি

গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি নিয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক করল জার্মানি-ফ্রান্স

গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি নিয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক করল জার্মানি-ফ্রান্স

৪ ভূখ-কে অন্তর্ভুক্ত করে ইসরাইলি মানচিত্র প্রকাশ

৪ ভূখ-কে অন্তর্ভুক্ত করে ইসরাইলি মানচিত্র প্রকাশ

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

চলতি বছর বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমার পূর্বাভাস

চলতি বছর বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমার পূর্বাভাস

যুক্তরাষ্ট্রের নাম মেক্সিকান আমেরিকা রাখার পরামর্শ

যুক্তরাষ্ট্রের নাম মেক্সিকান আমেরিকা রাখার পরামর্শ