আসাদের পতনের প্রধান কারিগর আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১০ পিএম | আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ পিএম

দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় মাত্র ১২ দিনের মধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের নেতৃত্ব দেয়া প্রধান কারিগর হলেন আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। তিনি হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে শুধু সামরিক অভিযানগুলো পরিচালনাতেই নয়, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ঐক্য গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা দেখিয়েছেন। বাশার আল আসাদ সরকারের পতন নিয়ে যখন বিশ্বব্যাপী আলোচনা চলছে, তখন জোলানির পরিচয় ও তার কৌশল নিয়ে আগ্রহ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।

 

আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির পরিচয়
৪২ বছর বয়সী আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির প্রকৃত নাম আহমেদ হুসাইন আল-শারা। তিনি ১৯৮২ সালে সউদী আরবের রিয়াদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ৭ বছর বয়সে তিনি পরিবারের সঙ্গে সিরিয়া চলে আসেন। তার পূর্বপুরুষরা গোলান মালভূমিতে বসবাস করতেন, যা বর্তমানে দখল করেছে ইসরাইল। ১৯৮৯ সালে তার পরিবার সিরিয়ায় ফিরে এসে দামেস্কের উপকণ্ঠে বসবাস শুরু করে।

 

তরুণ বয়সে তার জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না, তবে ২০০৩ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালায়, তখন জুলানি ইরাকে গিয়ে আল-কায়েদায় যোগ দেন এবং মার্কিন বিরোধী প্রতিরোধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ২০০৬ সালে মার্কিন বাহিনী তাকে আটক করে এবং কারাবন্দি রাখে। পরবর্তীতে তাকে সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা আল-নুসরা ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠার জন্য পাঠানো হয়। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্ত হন এবং এরপর সিরিয়ার বিদ্রোহী আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।

 

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে ভূমিকা
২০১১ সালের মার্চে সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। এই অস্থিরতার সুযোগে আবু বকর আল-বাগদাদি তাকে সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা আল-নুসরা ফ্রন্ট গঠনের দায়িত্ব দেন। এর মাধ্যমে তিনি ব্যাপক পরিচিতি এবং ক্ষমতা অর্জন করেন। সিরিয়ার ইদলিব অঞ্চলে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে তার নেতৃত্বে আল-নুসরা ফ্রন্ট সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করে।

 

২০১৩ সালে বাগদাদির সঙ্গে মতবিরোধের পর, জুলানি আল-নুসরা ফ্রন্টকে নতুনভাবে সংগঠিত করে। ২০১৬ সালে যখন সিরিয়ার বিদ্রোহীরা দুর্বল হতে থাকে, তখন তিনি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। ফলস্বরূপ, আল-নুসরা ফ্রন্টের নাম পরিবর্তন করে তিনি জাবাহাত ফাতাহ আল-শাম রাখেন। পরে ছোট ছোট বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে একত্রিত করে প্রতিষ্ঠা করেন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)।

 

আসাদ সরকারের পতনে জুলানির ভূমিকা
সাম্প্রতিক বিদ্রোহী অভিযানে জোলানির নেতৃত্ব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্রোহীরা প্রথমে আলেপ্পো এবং হামা শহর দখল করে। এরপর মাত্র ১২ দিনের মধ্যে তারা দামেস্কে প্রবেশ করে এবং আসাদ সরকারের পতন ঘটায়। এই অভিযানে জুলানির কৌশল ছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা এবং তাদের একটি শক্তিশালী সামরিক ও রাজনৈতিক কাঠামোতে নিয়ে আসা। তার পরিকল্পনা এবং নেতৃত্ব বিদ্রোহী যোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধি করেছে এবং আসাদ বাহিনীর পতন ত্বরান্বিত করেছে।

 

এইচটিএসের শাসনব্যবস্থা
২০১৭ সালে জুলানির নেতৃত্বে সিরিয়ার ইদলিব অঞ্চলে ‘সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্ট’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা কার্যত এইচটিএস-এর প্রশাসনিক শাখা। তবে, তাদের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা রয়েছে। বিশেষ করে বিরোধীদের দমন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর বাধার অভিযোগ উঠেছে।

 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তবে জোলানি এখন সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একমাত্র গ্রহণযোগ্য নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তার সামরিক এবং রাজনৈতিক কৌশল সিরিয়ার নতুন যুগের ভিত গড়তে সক্ষম হবে কিনা, তা সময়ের উপর নির্ভর করবে।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

যশোরে চাকুরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের চাকুরি পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন

যশোরে চাকুরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের চাকুরি পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন

অপরাধী যদি আমার ভাই হয় তাকেও ছাড় দিবেন না সিরাজদিখানে- কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

অপরাধী যদি আমার ভাই হয় তাকেও ছাড় দিবেন না সিরাজদিখানে- কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আবারও সিলেটের নায়ক জাকির, খুলনার টানা দ্বিতীয় হার

আবারও সিলেটের নায়ক জাকির, খুলনার টানা দ্বিতীয় হার

মাগুরায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটর সাইকেল চালক নিহত

মাগুরায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটর সাইকেল চালক নিহত

কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে ইয়াবা সহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে ইয়াবা সহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

কুষ্টিয়ার আলফা মোড়ে সিএনজি স্ট্যান্ড’ নাম দিয়ে চাঁদাবাজি

কুষ্টিয়ার আলফা মোড়ে সিএনজি স্ট্যান্ড’ নাম দিয়ে চাঁদাবাজি

জুলাই আগস্টে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলা : বহিস্কার হলেন শাবির ২৯ শিক্ষার্থী

জুলাই আগস্টে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলা : বহিস্কার হলেন শাবির ২৯ শিক্ষার্থী

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বাড়লো ১৬ দিন

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বাড়লো ১৬ দিন

সাতক্ষীরা সীমান্তে ধান চাষে বিএসএফের বাধা, পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত

সাতক্ষীরা সীমান্তে ধান চাষে বিএসএফের বাধা, পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের নায়কদের শাস্তি ও ৩ দফা দাবিতে পটুয়াখালীতে মানববন্ধন

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের নায়কদের শাস্তি ও ৩ দফা দাবিতে পটুয়াখালীতে মানববন্ধন

ইরানের নতুন আত্মঘাতী ড্রোনে আতঙ্কে ইসরাইল!

ইরানের নতুন আত্মঘাতী ড্রোনে আতঙ্কে ইসরাইল!

চাকুরিচ্যুত বিডিআরদের চাকুরিতে পুনর্বহালের দাবি ডিসিকে স্মারক লিপি

চাকুরিচ্যুত বিডিআরদের চাকুরিতে পুনর্বহালের দাবি ডিসিকে স্মারক লিপি

গোপালগঞ্জে জেলা বিএনপি’র সংবাদ সম্মেলন

গোপালগঞ্জে জেলা বিএনপি’র সংবাদ সম্মেলন

পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের আহবায়ক কমিটিকে “আমরা -৮৪”-বন্ধুদের পক্ষ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা

পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের আহবায়ক কমিটিকে “আমরা -৮৪”-বন্ধুদের পক্ষ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা

বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সৌজন্যে সাক্ষাৎ

বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সৌজন্যে সাক্ষাৎ

কেরানীগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবকদল সভাপতির বিরুদ্ধে মার্কেট দখলের অভিযোগ

কেরানীগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবকদল সভাপতির বিরুদ্ধে মার্কেট দখলের অভিযোগ

সরকারী ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের সুবিধা নিচ্ছে বেসরকারি ট্রেন কোম্পানি

সরকারী ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের সুবিধা নিচ্ছে বেসরকারি ট্রেন কোম্পানি

একযুগ পর জাপান প্রবাসী দূলাল চৌধুরীকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করলো এলাকাবাসী

একযুগ পর জাপান প্রবাসী দূলাল চৌধুরীকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করলো এলাকাবাসী

কি‌শোরগ‌ঞ্জে দুই গ্রু‌পের সংঘ‌র্ষে ইউ‌নিয়ন বিএন‌পির সভাপ‌তি নিহত আহত ৫

কি‌শোরগ‌ঞ্জে দুই গ্রু‌পের সংঘ‌র্ষে ইউ‌নিয়ন বিএন‌পির সভাপ‌তি নিহত আহত ৫

নতুন করে ভ্যাট আরোপ হবে সরকারের নির্দয় সিদ্ধান্ত : জিএম কাদের

নতুন করে ভ্যাট আরোপ হবে সরকারের নির্দয় সিদ্ধান্ত : জিএম কাদের