ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৫ পৌষ ১৪৩১

হাসপাতাল যেন দুঃস্বপ্নের ভাগাড়

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ এএম | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ এএম

দামেস্কের মুজতাহিদ হাসপাতাল, সেখানে বেসমেন্টের সবচেয়ে দূরের একটি কক্ষের মেঝেতে বসে আছেন দুর্বল এক যুবক। কক্ষটির ভেতরে আসা-যাওয়ার সময় কাঁপা হাতে স্বজনহারা মানুষটি তার মুখ চেপে ধরেছে। মানুষ তার কাছে আসছে তাদের হারিয়ে যাওয়া আত্মীয় মনে করে। কিন্তু আসাদের কারাগারে অত্যাচারে তার আর কিছুই মনে নেই, হারিয়ে ফেলেছেন স্মৃতিশক্তি। ডাকলে শুধু শ‚ন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। হাসপাতালের অভ্যর্থনা ডেস্কে থাকা একজন তরুণ ডাক্তার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, এই যুবক কাউকে চিনতে পারছেন না। তিনি কেবল তার নামটা মনে রেখেছেন, কিন্তু কখনও কখনও ভুল নামও বলছেন। হতে পারে কারাগারে যাদের সঙ্গে বন্দি ছিলেন, তাদের কারো নাম। হাসপাতালের কর্মীরা বলছেন, এই যুবক সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনের সবচেয়ে নৃশংস এবং কুখ্যাত কারাগার সায়দনায়ায় আটক ছিলেন। সেখানে বন্দিদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হতো। ডাক্তারের মতে, তিনি এমন অনেকের মধ্যে একজন যারা নিজেদের পরিচয় ভুলে যাওয়ার মতো নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কর্মীরা আরো জানিয়েছেন, কখনও কখনও পরিবারগুলো এসে একজন বন্দিকে নিজেদের পরিবারের সদস্য হিসেবে দাবি করছে। আবার কখনও কখনও ১০ জন ভিন্ন ব্যক্তি একই রোগীকে তাদের আত্মীয় বা তাদের ছেলে হিসেবে দাবি করছেন। অনেকে নিজেদের আত্মীয় বলে ভুল করছেন, কারণ দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পরে বন্দিদের চেহারার পরিবর্তিত হয়েছে। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। পরিবারগুলো বন্দিদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার পরে আবিষ্কার করছে, তারা যে ব্যক্তিকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে সে তাদের আত্মীয় নয়। আবার হাসপাতালে ফিরিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন এই আশায় যে, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিরা তাদের প্রকৃত পরিবার খুঁজে পাবে। তবে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের ওপর এর কেমন প্রভাব পড়ছে তা বলা কঠিন। হাসপাতালের ওই কক্ষে থাকা যুবকটির নড়াচড়া মৃদু এবং ধীর। তিনি হিংসাত্মক বা আক্রমণাত্মক কোনো আচরণ দেখাননি। দর্শনার্থী বা হাসপাতালের কর্মীরা তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও বেশিরভাগ সময়ই তিনি সাড়া দেন না। মাঝে মাঝে এক কথায় উত্তর দেন। কখনও কখনও তিনি আকাশের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকন যেনো তিনি দিবাস্বপ্ন দেখছেন। বেশিরভাগ সময় তিনি তার দুই হাতের ভাঁজে মাথা গুঁজে রাখেন। বাশার আল-আসাদ যখন গত ৮ ডিসেম্বরের প্রথম দিকে সিরিয়া থেকে মস্কোতে পালিয়ে যান, তখন দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরের লাখ লাখ সিরীয়দের কাছ আনন্দ এবং স্বস্তির বর্ষণ হতে শুরু করে। কিন্তু অনেকের কাছেই সেই আনন্দ বেদনায় রূপ নেয়। আসাদ সরকারের অধীনে যারা তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন তাদের সন্ধান পাননি। আল-আসাদ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তাদের হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের সম্পর্কে উত্তর খুঁজতে শুরু করেছে। সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস অনুসারে, আসাদ সরকার ২০১১ সালের মার্চ থেকে অন্তত এক লাখ ৩৬ হাজার মানুষকে আটক বা জোরপূর্বক গুম করেছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৩১ হাজার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন, অর্থাৎ এক লাখ পাঁচ হাজার মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। আসাদের পতনের পর দামেস্কের উপকণ্ঠসহ সারা দেশে গণকবরগুলো উন্মোচিত হয়েছে এবং এ নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে নির্মম বিষয় হলো, এই গণকবরে করা আছেন তাদের খুঁজে বের করা। আল-আসাদের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পরে ১৪ ডিসেম্বর সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস-এর নির্বাহী পরিচালক ফাদেল আবদুলঘানি আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত গণকবরে থাকা মানুষগুলোর বেশিরভাগই নির্যাতনের কারণে দুঃখজনকভাবে মারা গিয়েছিলেন।’ আল-জাজিরা।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইন্দোনেশিয়ায় মৃত্যুদন্ড থেকে রেহাই পেয়ে ফিলিপিনে মেরি
ইদলিবের পরিস্থিতিতে বিদ্রোহী শাসনের সম্ভাব্য ভবিষ্যত
রুশ জেনারেল হত্যায় উজবেক যুবক আটক
ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত গাজার দুঃখের প্রতীক খালেদ
এখনও গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরাইল
আরও

আরও পড়ুন

বায়ার্ন ছাড়বেন জামাল মুসিয়ালা?

বায়ার্ন ছাড়বেন জামাল মুসিয়ালা?

আন্তঃমহাদেশীয় কাপ চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ

আন্তঃমহাদেশীয় কাপ চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ

জিয়াউল হাসানের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক টিম

জিয়াউল হাসানের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক টিম

বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাক্রাফট নির্বাচন পদ্ধতির অনিয়মের প্রতিবাদে নির্বাচন সম্মিলিত ফোরামের বর্জন

বাংলাক্রাফট নির্বাচন পদ্ধতির অনিয়মের প্রতিবাদে নির্বাচন সম্মিলিত ফোরামের বর্জন

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার সমিতির নতুন কমিটি গঠন

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার সমিতির নতুন কমিটি গঠন

কামরুল-সোলায়মান-এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রিমান্ডে

কামরুল-সোলায়মান-এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রিমান্ডে

ডিএসসিসির চলমান কাজ দ্রুত শেষ হবে

ডিএসসিসির চলমান কাজ দ্রুত শেষ হবে

হজযাত্রী কোটা সর্বনিম্ন ১শ’ জন নির্ধারণের দাবি : বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সি মালিকবৃন্দ

হজযাত্রী কোটা সর্বনিম্ন ১শ’ জন নির্ধারণের দাবি : বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সি মালিকবৃন্দ

নেজামে ইসলাম পার্টির নেতাদের সাথে জামায়াতের বৈঠক

নেজামে ইসলাম পার্টির নেতাদের সাথে জামায়াতের বৈঠক

যুগোপযোগী জনপ্রশাসন বিনির্মাণে সুপারিশ করাই আসল কাজ

যুগোপযোগী জনপ্রশাসন বিনির্মাণে সুপারিশ করাই আসল কাজ

সা’দপন্থিদের দুঃখ প্রকাশ করে ইজতেমা মাঠ ত্যাগ

সা’দপন্থিদের দুঃখ প্রকাশ করে ইজতেমা মাঠ ত্যাগ

পোস্টার মুছে দিতে চায় অনুভূতি, হবে কি মানুষের সুমতি?

পোস্টার মুছে দিতে চায় অনুভূতি, হবে কি মানুষের সুমতি?

মোদির বিতর্কিত পোস্ট, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরল সরকার

মোদির বিতর্কিত পোস্ট, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরল সরকার

দীর্ঘ ১৬ বছর পর আখাউড়ায় রাধামাধব মন্দিরের সম্মেলন

দীর্ঘ ১৬ বছর পর আখাউড়ায় রাধামাধব মন্দিরের সম্মেলন

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নতুন ডিজি আব্দুস সালাম খান

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নতুন ডিজি আব্দুস সালাম খান

রূপায়ণ প্রপার্টি এক্সপো-২০২৪ এর উদ্বোধন

রূপায়ণ প্রপার্টি এক্সপো-২০২৪ এর উদ্বোধন

হাসিনা ভোটে আস্থা রাখেননি, টিকে ছিলেন প্রশাসনে ভর করে: সারজিস আলম

হাসিনা ভোটে আস্থা রাখেননি, টিকে ছিলেন প্রশাসনে ভর করে: সারজিস আলম

টঙ্গির ইজতেমার  মাঠে সংঘর্ষে নিহত তিনজনের মধ্যে নিহত বিল্লালের বাড়ী ফরিদপুরে

টঙ্গির ইজতেমার  মাঠে সংঘর্ষে নিহত তিনজনের মধ্যে নিহত বিল্লালের বাড়ী ফরিদপুরে

নীলফামারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ইপিজেডের মহিলা কর্মী নিহত

নীলফামারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ইপিজেডের মহিলা কর্মী নিহত