গাজায় ইসরায়েলের অভিযান ‘অত্যন্ত সফল’ : বিদায় অনুষ্ঠানে বাইডেন

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২৬ এএম | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২৬ এএম

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) গত ১৫ মাসের ধরে যে ভয়াবহ অভিযানকে ‘অত্যন্ত সফল’ বলে উল্লেখ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই অভিযানের জেরে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ‘আমূল পরিবর্তন’ আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।

 

গতকাল রোববার ছিল প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শেষ পূর্ণ কার্যদিবস। এ দিন সাউথ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের নিউ চার্লসটন শহরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাইডেন বলেন, “সীমাহীন যন্ত্রণা, ধ্বংস ও প্রাণহানির পর আজ থেকে গাজায় কামান-বন্দুকের শব্দ বন্ধ হলো। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান অত্যন্ত সফল। কারণ এ অভিযানের জেরে হামাস একদিকে নিজের শীর্ষ নেতাদের হারিয়েছে, অন্যদিকে হামাসকে যারা অর্থ ও অস্ত্রসহায়তা দিয়ে টিকিয়ে রেখেছে, তাদেরও প্রায় কোমরভাঙা অবস্থা।”

 

“হামাসের সবচেয়ে বড় সমর্থক ও সহায়তাকারী গোষ্ঠী ছিল হিজবুল্লাহ। এই যুদ্ধে হিজবুল্লাহ তার শীর্ষ নেতৃত্বকে হারিয়ে প্রায় তছনছ হয়ে গেছে। গোষ্ঠীটি আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে হামাসকে আর তারা সহায়তা করবে না।”

 

“লেবাননে আমরা বহু বছর ধরে একটি কূটনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছাতে চাইছি। সেই চেষ্টা আমাদের এখনও রয়েছে, কিন্তু এটিও সত্য যে লেবাননে সামরিক অভিযানে আমরা ইসরায়েলকে সহায়তা করেছি।”

 

“আর সেই অভিযানের ফলাফল দেখুন- আজ লেবানন হিজবুল্লাহর কব্জা থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনভাবে পথ চলা শুরু করেছে। কয়েকদিন আগে একজন নতুন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে দেশটি। আমি লেবানেনে সাফল্য কামনা করছি।”

 

“সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের নেতৃত্বাধীন সরকার, যেটি বছরের পর বছর ধরে হামাস-হিজবুল্লাহকে সমর্থন দিয়ে আসছিল- তার পতন ঘটেছে। আর হামাস-হিজবুল্লাহর সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক ইরান এখন গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।”

 

“এ অভিযানের জেরে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি আমূল বদলে যাবে। আপনারা আরও কিছু সময় অপেক্ষা করলেই ব্যাপারটি অনুভব করতে পারবেন।”

 

“অবশ্য এ যুদ্ধ যদি পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তো, তাহলে সত্যিই খুব বিপদ ঘটত। মধ্যস্থতাকারী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবিরাম তৎপরতার কারণে সেই বিপদ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। আমি নিজে গত কয়েক দশক ধরে কূটনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। সেই আমিই বলছি- আমার কূটনৈতিক ক্যারিয়ারে যেসব কঠিনতম চ্যালেঞ্জ এসেছে, সেগুলোর মধ্যে এই যুদ্ধ শীর্ষে রয়েছে।”

 

২০২৩ সালে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে নজিরবিহীন হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। হামলায় ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে যায় যোদ্ধারা।

হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের উদ্ধার করতে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। সেই অভিযানে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় ৪৭ হাজার জন, আহত হয়েছেন ১ লাখ ১১ হাজারের বেশি এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১১ হাজার ফিলিস্তিনি।

 

এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর বিরামহীন বোমাবর্ষণে গাজার ৬০ শতাংশ ভবন ধসে গেছে, পানি-বিদ্যুৎ ও জরুরি পরিষেবা কাঠামো ভেঙে পুরো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা।

 

যুদ্ধের শুরু থেকেই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ছিল যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার— এই তিন দেশ। এ তিন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক প্রচেষ্টায় গতকাল রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে গাজা উপত্যকায়। সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

গাজা পুনর্গঠনে কার হাতে থাকবে প্রশাসনিক দায়িত্ব ?
মুক্ত তিন ইসরাইলি জিম্মিকে যে ‘উপহারের ব্যাগ’ দিলো হামাস
গাজার ধ্বংসস্তূপে নতুন স্বপ্ন বুনছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ
গাজা চুক্তিকে যেকারণে ‘হামাসের জয়’ বলছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম
গাজায় ব্যাংক সেবা পুনরায় চালুর প্রস্তুতি শুরু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের
আরও

আরও পড়ুন

‘জুলাই বিপ্লবের’ মাধ্যমে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে : সিইসি

‘জুলাই বিপ্লবের’ মাধ্যমে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে : সিইসি

ছাগলনাইয়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির কমিটি গঠন

ছাগলনাইয়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির কমিটি গঠন

বাগেরহাটে এ্যাথলেটিক প্রতিযোগীতা ও গ্রামীন খেলা অনুষ্ঠিত

বাগেরহাটে এ্যাথলেটিক প্রতিযোগীতা ও গ্রামীন খেলা অনুষ্ঠিত

গাজা পুনর্গঠনে কার হাতে থাকবে প্রশাসনিক দায়িত্ব ?

গাজা পুনর্গঠনে কার হাতে থাকবে প্রশাসনিক দায়িত্ব ?

রামগড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ৫টি ইটভাটায় জরিমানা

রামগড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ৫টি ইটভাটায় জরিমানা

এখনো দেশে সাড়ে ৩৩ হাজার অবৈধ বিদেশি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এখনো দেশে সাড়ে ৩৩ হাজার অবৈধ বিদেশি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কম মূল্যে জমি বিক্রি না করায় দাউদকান্দিতে ছাত্রদলের নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ

কম মূল্যে জমি বিক্রি না করায় দাউদকান্দিতে ছাত্রদলের নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ

মুক্ত তিন ইসরাইলি জিম্মিকে যে ‘উপহারের ব্যাগ’ দিলো হামাস

মুক্ত তিন ইসরাইলি জিম্মিকে যে ‘উপহারের ব্যাগ’ দিলো হামাস

জেরায় অবশেষে দোষ স্বীকার সাইফের হামলাকারীর

জেরায় অবশেষে দোষ স্বীকার সাইফের হামলাকারীর

ঈশ্বরগঞ্জে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা

ঈশ্বরগঞ্জে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা

বনানীতে সড়কে সিএনজি চালকদের বিক্ষোভ, রাস্তা বন্ধ

বনানীতে সড়কে সিএনজি চালকদের বিক্ষোভ, রাস্তা বন্ধ

বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া কোরের ৪৪তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন সেনা প্রধান

বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া কোরের ৪৪তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন সেনা প্রধান

গাজীপুরে এ্যাপারেলস্ কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে আহত ১২

গাজীপুরে এ্যাপারেলস্ কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে আহত ১২

ব্যবহারকারীদের আশ্বাস ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রে ফের চালু টিকটক

ব্যবহারকারীদের আশ্বাস ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রে ফের চালু টিকটক

পদ্মায় ধরা পড়লো ৪২ কেজির মহা বিপন্ন বাঘাইড় মাছ

পদ্মায় ধরা পড়লো ৪২ কেজির মহা বিপন্ন বাঘাইড় মাছ

আরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রিয়ালের প্রেসিডেন্ট পেরেজ

আরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রিয়ালের প্রেসিডেন্ট পেরেজ

সিলেটে প্রখ্যাত আলেম ইসহাক আল মাদানির ইন্তেকাল!

সিলেটে প্রখ্যাত আলেম ইসহাক আল মাদানির ইন্তেকাল!

গাজার ধ্বংসস্তূপে নতুন স্বপ্ন বুনছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ

গাজার ধ্বংসস্তূপে নতুন স্বপ্ন বুনছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ

গাজা চুক্তিকে যেকারণে ‘হামাসের জয়’ বলছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম

গাজা চুক্তিকে যেকারণে ‘হামাসের জয়’ বলছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম

সত্যিকারের সুখী হওয়া অনেক কঠিনঃ মিশা

সত্যিকারের সুখী হওয়া অনেক কঠিনঃ মিশা