ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে ২২টি রাজ্যের মামলা

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৭ এএম | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫১ এএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই বিতর্কিত নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে, অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা আর জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাবে না। এই আদেশের বিরুদ্ধে ২২টি রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলরা আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের সংবিধানগত নীতির বিরোধিতা করেছে এবং এটি নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

ট্রাম্প তার দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই এই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শিশুদের নাগরিকত্ব স্বীকৃতির ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়েছে। এই আদেশে বলা হয়, অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানরা আর নাগরিকত্ব পাবে না। এমনকি যারা আইনসম্মতভাবে অস্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন, যেমন শিক্ষার্থী বা পর্যটক, তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রেও এই আদেশ কার্যকর হবে। ট্রাম্পের দাবি, ১৪তম সংশোধনীতে বলা "যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্থ" শব্দগুচ্ছ এসব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

 

এই আদেশের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার(২১জানুয়ারি) ২২টি রাজ্য দুইটি পৃথক ফেডারেল আদালতে মামলা করেছে। ম্যাসাচুসেটসে দায়েরকৃত মামলায় ১৮টি রাজ্য এবং সান ফ্রান্সিসকো ও ওয়াশিংটন ডিসি যুক্ত হয়েছে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর প্রথম বাক্যেই ‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের’ নীতির বিষয়টি বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া বা নাগরিক অধিকার পাওয়া সব ব্যক্তিই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং রাষ্ট্রের যেখানেই তারা বাস করুন না কেন।এখানে দাবি করা হয়েছে যে, ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া যে কোনো শিশু জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পায় এবং এটি বদলানোর ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট বা কংগ্রেসের নেই।

 

ওয়াশিংটনের অ্যাটর্নি জেনারেল নিক ব্রাউন বলেন, এই আদেশ প্রতি বছর ১,৫০,০০০ নবজাতককে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করবে। শুধু ক্যালিফোর্নিয়াতেই প্রতিবছর ২০,০০০ শিশু নাগরিকত্ব হারাবে। ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বন্টা বলেন, "আমরা আইন রক্ষার প্রতিশ্রুতি রাখতে চাই।"

 

উল্লেখ্য, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সব ব্যক্তিই মার্কিন নাগরিক। যদিও ট্রাম্প এই সুযোগ বন্ধ করতে সোচ্চার হয়েছেন। কিন্তু তার এই উদ্যোগকে উল্লেখযোগ্য আইনি বাধা অতিক্রম করতে হবে। দ্য আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন এবং অন্য গ্রুপগুলো তাৎক্ষণিকভাবে এই নির্বাহী আদেশের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

 

আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আদেশ ১৪তম সংশোধনীর দীর্ঘকালীন আইনি ব্যাখ্যার বিরোধিতা করেছে এবং আদালতে এটি টিকবে না। ইয়েল ল স্কুলের অধ্যাপক আখিল রিড আমর বলেছেন, “এই আদেশ এতটাই চরম ও অবাস্তব যে আদালত এটি বাতিল করবে।”

 

ট্রাম্পের সমর্থিত কিছু বিচারপতি এই বিষয়ে সহানুভূতিশীল হতে পারেন, তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের মতে, আদালত এই ধরনের সাংবিধানিক পরিবর্তন প্রেসিডেন্টের একতরফা ক্ষমতার বাইরে বলে রায় দেবে।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই আদেশ সংবিধানের দীর্ঘদিনের ব্যাখ্যা এবং নীতি লঙ্ঘন করেছে বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞ এবং আইনজীবীরা। রাজ্যগুলো আদালতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এই আদেশকে অকার্যকর করতে। নাগরিকত্ব প্রশ্নে এই আইনি লড়াই ভবিষ্যতের অভিবাসন নীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। তথ্যসূত্র : দ্য নিউইয়র্ক টাইমস


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনুসের সঙ্গে পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনুসের সঙ্গে পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ

আন্দোলনকারী মালয়েশিয়াগামীদের সরিয়ে দিলো পুলিশ

আন্দোলনকারী মালয়েশিয়াগামীদের সরিয়ে দিলো পুলিশ

গান গাইতে গিয়ে হাসপাতালে মোনালী ঠাকুর

গান গাইতে গিয়ে হাসপাতালে মোনালী ঠাকুর

সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা থেকে অস্ত্র ককটেলসহ ২ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীকে আটক করেছে মোংলা কোস্ট গার্ড

সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা থেকে অস্ত্র ককটেলসহ ২ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীকে আটক করেছে মোংলা কোস্ট গার্ড

ট্রাম্পের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের ‘স্টারগেট’ প্রকল্প, এআই প্রযুক্তিতে বিপ্লব

ট্রাম্পের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের ‘স্টারগেট’ প্রকল্প, এআই প্রযুক্তিতে বিপ্লব

এবার যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড প্রধানকে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প

এবার যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড প্রধানকে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প

টেকনাফে বিজিবির অভিযানে ৪লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার

টেকনাফে বিজিবির অভিযানে ৪লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার

মার্কিন রাজনীতিতে উত্তরসূরির জন্য রেখে যাওয়া চিঠিতে ট্রাম্পকে যে বার্তা দিলেন বাইডেন

মার্কিন রাজনীতিতে উত্তরসূরির জন্য রেখে যাওয়া চিঠিতে ট্রাম্পকে যে বার্তা দিলেন বাইডেন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের বৈঠক

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের বৈঠক

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব ছাড়লেন সারজিস আলম

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব ছাড়লেন সারজিস আলম

নাটোরে অবৈধ কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল মৎস্য ঔষধ উদ্ধার

নাটোরে অবৈধ কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল মৎস্য ঔষধ উদ্ধার

আরিচা-কাজিরহাট ৮ ঘন্টা এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ পথে ৬ ঘন্টা পর ফেরি চলাচল শুরু

আরিচা-কাজিরহাট ৮ ঘন্টা এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ পথে ৬ ঘন্টা পর ফেরি চলাচল শুরু

তীব্র শীতে কাহিল কুড়িগ্রাম অঞ্চলের মানুষ

তীব্র শীতে কাহিল কুড়িগ্রাম অঞ্চলের মানুষ

বিমানের ফ্লাইটে বোমা হামলার হুমকি, শাহজালালে সতর্কতা জারি

বিমানের ফ্লাইটে বোমা হামলার হুমকি, শাহজালালে সতর্কতা জারি

ঢাকার বাতাস আজ খুবই দুর্যোগপূর্ণ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নগরবাসী

ঢাকার বাতাস আজ খুবই দুর্যোগপূর্ণ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নগরবাসী

ফরিদপুরে অভিযানকালে জুয়ারীদের হামলায় ডিবি পুলিশের তিন সদস্য আহত

ফরিদপুরে অভিযানকালে জুয়ারীদের হামলায় ডিবি পুলিশের তিন সদস্য আহত

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে বাংলাদেশের সাথে কাজ করবে ইউএনএইচসিআর

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে বাংলাদেশের সাথে কাজ করবে ইউএনএইচসিআর

হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারির উদ্যোগ

হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারির উদ্যোগ

ট্রাম্পের সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা নীতিতে অভিবাসীদের মধ্যে হতাশা

ট্রাম্পের সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা নীতিতে অভিবাসীদের মধ্যে হতাশা

শিশুদেরও আটক রাখা হতো হাসিনার গোপন কারাগারে, খেতে দেয়া হতো না মায়ের দুধ

শিশুদেরও আটক রাখা হতো হাসিনার গোপন কারাগারে, খেতে দেয়া হতো না মায়ের দুধ