চীনে ভোক্তাদের ব্যয় বাড়াতে নতুন পরিকল্পনা

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১৮ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৮ এএম | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০৭ পিএম

চীনের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে দেশটির সরকার। গত ১৬ মার্চ প্রকাশিত একটি ‘বিশেষ কর্মপরিকল্পনা’র মাধ্যমে ভোগব্যয় বাড়ানোর বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বহুতল ভবনে অতিরিক্ত লিফট স্থাপন, শিশুদের চিকিৎসা ক্লিনিকের সময়সীমা বাড়ানো এবং ক্যাম্পিংয়ের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করাসহ নানা পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

 

এই পরিকল্পনাটি বেশ প্রত্যাশিত ছিল। এর প্রকাশের সম্ভাবনার খবরেই গত ১৪ মার্চ চীনের প্রধান শেয়ারবাজার সূচক ২ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়।

 

অর্থনীতিবিদদের মতে, চীন যদি সরকার ঘোষিত পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করতে চায়, তবে মোট প্রবৃদ্ধির ৬০ শতাংশের বেশি আসতে হবে ভোগব্যয় থেকে। ২০২৪ সালে এই খাতের অবদান ছিল ৪৫ শতাংশের কম।

 

ভোক্তারা বছরটি কিছুটা ইতিবাচকভাবে শুরু করেছেন। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে খুচরা বিক্রি আগের বছরের তুলনায় চার শতাংশ বেড়েছে, যদিও এটি এখনো মহামারির আগের ধারা থেকে অনেক পিছিয়ে। বসন্ত উৎসবের আট দিনে ১৮ কোটি ৭০ লাখ মানুষ সিনেমা দেখেছে, যেখানে মূল আকর্ষণ ছিল অ্যানিমেটেড ছবি ‘নে ঝা ২’।

 

তবে চীনা পরিবারগুলোর আত্মবিশ্বাস এখনো পুরোপুরি ফিরে আসেনি। কঠোর কোভিড-১৯ বিধিনিষেধের পর তারা এখনো তুলনামূলক বেশি সঞ্চয় করছে। অধিকাংশ সঞ্চয় ব্যাংক জমা ও আর্থিক সম্পদে বিনিয়োগ করা হচ্ছে, নতুন বাড়ি কেনার পরিবর্তে। এই প্রবণতা ভোগব্যয় কমিয়ে দিচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থবিরতা তৈরি করছে।

 

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং গত ৫ মার্চ পার্লামেন্টে দেওয়া বার্ষিক ভাষণে ‘জোরালোভাবে ভোগব্যয় বৃদ্ধি’কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

 

সরকার পুরোনো গাড়ি, গৃহস্থালি সামগ্রী ও গ্যাজেট বদলে নতুন কেনার জন্য ভর্তুকি দ্বিগুণ করেছে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যবিমার জন্য সরকারি সহায়তা বাড়ানো এবং গ্রাম ও শহরের কর্মহীনদের মাসিক পেনশন ১২৩ ইউয়ান থেকে ১৪৩ ইউয়ানে উন্নীত করা হয়েছে। তবে দুই শতাংশ জিডিপির সমান এই অর্থনৈতিক উদ্দীপনা প্রত্যাশিত মাত্রার চেয়ে কম।

 

কীভাবে বাড়বে ভোগব্যয়?
সরকার তিনটি প্রধান উপায়ে ব্যয় বাড়ানোর চেষ্টা করবে—

১. আয় বৃদ্ধি: ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো, কর্মসংস্থানমূলক কর্মসূচি সম্প্রসারণ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি।

 

২. সঞ্চয়ের প্রবণতা কমানো: ভোক্তা ঋণে ভর্তুকি প্রদান, শেয়ারবাজার ও আবাসন খাত স্থিতিশীল করার প্রতিশ্রুতি।

 

৩. আয়ের পুনর্বণ্টন: নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের হাতে বেশি অর্থ সরবরাহ করা, যারা তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যয় করে।

 

এছাড়া, কর্মীদের অবকাশকালীন ছুটি নেওয়ার নিয়ম কঠোরভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা বেশি সময় ভোগ করতে পারে।

 

সফলতা কতটা সম্ভব?
এই পরিকল্পনায় কিছু উদ্ভট ও অস্পষ্ট বিষয়ও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ভোগব্যয় কীভাবে বাড়বে তা স্পষ্ট করা হয়নি। শিল্পীদের জন্য একক অনুমোদন ব্যবস্থা চালু করলেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অনিশ্চিত।

 

এছাড়া, ড্রোন শিল্প, প্রবীণদের অর্থনীতি ও শীতকালীন ক্রীড়া খাত নিয়ে সরকার আগেও পরিকল্পনা করেছিল, যা নতুন পরিকল্পনাতে পুনরাবৃত্তি হয়েছে। কিন্তু যথাযথ সরকারি ব্যয় বরাদ্দ ছাড়া এই পরিকল্পনাগুলো সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম।

 

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে উৎপাদন অনেক বেশি। কিন্তু ভোগব্যয় বাড়ানোর প্রচেষ্টাগুলো বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। নতুন এই ৩০ দফা পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

গাজায় ৫৯ জন জিম্মির মধ্যে অর্ধেকের বেশি নিহত!
প্রায় সমগ্র কুরস্ক অঞ্চল মুক্ত করা হয়েছে: রুশ কমান্ডার
ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে হিন্দু নিপীড়ন নিয়ে যা বলেছিলেন তুলসী গ্যাবার্ড
মুসলমানদের উপরে হিন্দুদের হামলায় উস্কানি দিলেন মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত বেড়ে ৪১৩, বিভিন্ন দেশের নিন্দা
আরও
X

আরও পড়ুন

নারায়ণগঞ্জে আটককৃত চার আসামীকে ছিনিয়ে নিয়েছে মাদকব্যবসায়ীরা, বিপুল মাদক উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জে আটককৃত চার আসামীকে ছিনিয়ে নিয়েছে মাদকব্যবসায়ীরা, বিপুল মাদক উদ্ধার

গাজায় ৫৯ জন জিম্মির মধ্যে অর্ধেকের বেশি নিহত!

গাজায় ৫৯ জন জিম্মির মধ্যে অর্ধেকের বেশি নিহত!

তারেক রহমানের নির্দেশ যারা অমান্য করবে তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে- অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম

তারেক রহমানের নির্দেশ যারা অমান্য করবে তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে- অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম

বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে প্রথম বারের মতো কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা

বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে প্রথম বারের মতো কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা

জিরো-টু জিরো-ফোর আমিরাত ফ্রেন্ডস টিমের‌ ইফতার ও দোয়া মাহফিল

জিরো-টু জিরো-ফোর আমিরাত ফ্রেন্ডস টিমের‌ ইফতার ও দোয়া মাহফিল

বিএনপির মহাসচিবের জনসভায় যাওয়ার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত ছাত্রদল কর্মীর মৃত্যু

বিএনপির মহাসচিবের জনসভায় যাওয়ার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত ছাত্রদল কর্মীর মৃত্যু

পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন শান্ত-মিরাজরা

পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন শান্ত-মিরাজরা

রাজনগরে ফাঁড়ি আছে, পুলিশ নেই সামাজিক আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি

রাজনগরে ফাঁড়ি আছে, পুলিশ নেই সামাজিক আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি

শামীমের ঝড়ো ফিফটিতে জয়ে ফিরল প্রাইম ব্যাংক

শামীমের ঝড়ো ফিফটিতে জয়ে ফিরল প্রাইম ব্যাংক

চুয়াডাঙ্গার জাফরপুরে মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার অপরাধে বাবা ইনামুল হক জনি গ্রেপ্তার

চুয়াডাঙ্গার জাফরপুরে মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার অপরাধে বাবা ইনামুল হক জনি গ্রেপ্তার

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ দিলেন তথ্য উপদেষ্টা

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ দিলেন তথ্য উপদেষ্টা

প্রায় সমগ্র কুরস্ক অঞ্চল মুক্ত করা হয়েছে: রুশ কমান্ডার

প্রায় সমগ্র কুরস্ক অঞ্চল মুক্ত করা হয়েছে: রুশ কমান্ডার

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বিদেশিরা যেভাবে বলছেন সেই মাত্রায় নেই: ধর্ম উপদেষ্টা

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বিদেশিরা যেভাবে বলছেন সেই মাত্রায় নেই: ধর্ম উপদেষ্টা

ভারতে মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাবিতে মানববন্ধন

ভারতে মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাবিতে মানববন্ধন

শিক্ষার্থী কম, এইচএসসির ১৩ কেন্দ্র বাতিল

শিক্ষার্থী কম, এইচএসসির ১৩ কেন্দ্র বাতিল

খুন-গুমের মদদদাতা দেড় শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা এখনও প্রভাবশালী

খুন-গুমের মদদদাতা দেড় শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা এখনও প্রভাবশালী

মির্জাপুরে ওষুধ রেস্তোরা ও ফলের দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

মির্জাপুরে ওষুধ রেস্তোরা ও ফলের দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

জাবিতে এবার চার হলের নাম পরিবর্তন

জাবিতে এবার চার হলের নাম পরিবর্তন

আইনি সেবা না দিতে নারী আইনজীবীকে হুমকি

আইনি সেবা না দিতে নারী আইনজীবীকে হুমকি

সোনারগাঁওয়ে দুই ডাকাত ও এক চোরকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

সোনারগাঁওয়ে দুই ডাকাত ও এক চোরকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ