ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকটে আরব দেশগুলোর অবস্থান কী?

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৫ এএম | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৬ এএম

ইসরাইল ও ফিলিস্তিন সংকটে আরব দেশগুলোর অবস্থান প্রায়শই আলোচনার বিষয় হয়ে থাকে। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও অধিকার নিয়ে আরব দেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানালেও, নিরাপত্তা, আঞ্চলিক উত্তেজনা এবং গোষ্ঠীগত বিভেদ এসব সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে। আরব দেশগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনদের প্রতি সমর্থন একটি ঐতিহ্যবাহী নীতির অংশ হলেও, দেশগুলোর মধ্যে পরিস্থিতি, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আঞ্চলিক স্বার্থের কারণে সম্পর্কের প্রকৃতি নানা ধরনের হয়েছে।

 

এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের পটভূমিতে, ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর অন্তত সাত লাখ ফিলিস্তিনি তাদের ভূখণ্ড ছেড়ে তাদেরকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনিকে তখন আশ্রয় দিয়েছিল জর্ডান। ১৯৬৭ সালে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের পর প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) জর্ডানে আশ্রয় নেয় এবং পিএলও সীমান্ত পেরিয়ে ইসরাইলে হামলা চালাতে থাকে। এই হামলা ইসরাইলের বাদশাহ হুসাইনকে হুমকির মুখে ফেলে, ফলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয় এবং অনেক ফিলিস্তিনিকে লেবাননে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

 

১৯৯৪ সালে জর্ডান ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য একটি শান্তিচুক্তিতে সই করে, যা আরব দেশগুলোর মধ্যে প্রথম। তবে, এরপর ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে, যা ছিল আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ। এই চুক্তি ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে কোনো বড় পরিবর্তন আনেনি, তবে এটি মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন কূটনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

 

লেবাননেও পিএলও চলে আসার পর দেশটি নানা গোষ্ঠীর মধ্যে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এসব সংঘাতে ফিলিস্তিনিরা নিয়মিতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। ১৯৮২ সালে খ্রিষ্টান সশস্ত্র গোষ্ঠী সাবরা ও শাতিলা শরণার্থীশিবিরে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়। যদিও লেবানন ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার, তবে তাদের নাগরিক অধিকার দিতে অস্বীকৃতি জানায়। লেবাননের উদ্দেশ্য হলো, ফিলিস্তিনিরা যেন সেখানে স্থায়ী না হয়ে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারে।

 

মিসরও ফিলিস্তিনের বড় সমর্থক হিসেবে পরিচিত। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় চলা নৃশংসতা বন্ধ করতে মিসর ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতা করছে। ১৯৭৯ সালে মিসর ইসরাইলের সঙ্গে প্রথম আরব দেশ হিসেবে শান্তিচুক্তি করে। তবে, গাজা ও সিনাই উপদ্বীপের মধ্যে নিরাপত্তা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে মিসর ইসরাইলের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে, যা সময়ের সঙ্গে আরও কঠিন হয়ে উঠছে।

 

সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০২০ সালে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করলেও, দেশটি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রতি তার সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। এদিকে, সুদান ২০২০ সালে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে রাজি হয়, যদিও এটি আগে ‘থ্রি নো’ প্রস্তাবের মাধ্যমে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন থেকে বিরত ছিল।

 

এই পরিস্থিতিতে কুয়েত এবং ইরাকের মতো দেশগুলোও ফিলিস্তিনিদের সমর্থন জানিয়ে এসেছে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এসব দেশের ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে সম্পর্কের প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়েছে। ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলে ফিলিস্তিনিরা সুবিধা পেয়েছিল, কিন্তু সাদ্দামের পতনের পর তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বেড়ে যায়। কুয়েতও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়, বিশেষ করে ১৯৯০ সালে পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধের পর।

 

আরব দেশগুলোর ফিলিস্তিন প্রশ্নে অবস্থান বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হলেও, তাদের মধ্যেকার রাজনৈতিক এবং আঞ্চলিক সংকটের কারণে ফিলিস্তিনের মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য সমাধান আসতে অনেক সময় লাগবে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

গাজায় মানবিক সহায়তা নিষিদ্ধ ঘোষণা ইসরায়েলের, সংকট তীব্র
ইমরান খান-বুশরা বিবির বিয়ের অজানা অধ্যায় প্রকাশ
মোদীকে ড. ইউনূসের সঙ্গে চুক্তি করতে বললেন মমতা ব্যানার্জী
যে কারণে ভাইরাল গোবর
সাদা ফুলে ছাওয়া পশ্চিমের অরণ্য
আরও
X

আরও পড়ুন

সড়ক বিহীন সেতু,কাজে আসছেনা এলাকাবাসীর

সড়ক বিহীন সেতু,কাজে আসছেনা এলাকাবাসীর

দুর্নীতির অভিযোগে নওগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান

দুর্নীতির অভিযোগে নওগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান

কলাপাড়ায় একটি ছাগলকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘর্ষে, আহত-৪

কলাপাড়ায় একটি ছাগলকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘর্ষে, আহত-৪

ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে কিন্তু বিএনপি  নিয়ে ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে  -মিজান চৌধুরী

ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে কিন্তু বিএনপি  নিয়ে ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে  -মিজান চৌধুরী

উইন্ডিজকে হারালেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

উইন্ডিজকে হারালেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

গাজায় মানবিক সহায়তা নিষিদ্ধ ঘোষণা ইসরায়েলের, সংকট তীব্র

গাজায় মানবিক সহায়তা নিষিদ্ধ ঘোষণা ইসরায়েলের, সংকট তীব্র

টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ড. ইউনূস

টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ড. ইউনূস

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রজ্ঞাপন জারি

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রজ্ঞাপন জারি

সুন্নত নামাজে ভুল করে নামাজ শেষ করে ফেলা প্রসঙ্গে?

সুন্নত নামাজে ভুল করে নামাজ শেষ করে ফেলা প্রসঙ্গে?

কূট-কৌশলে ‌ভিআইপিদের টার্গেট করতেন মেঘনা আলম চক্র

কূট-কৌশলে ‌ভিআইপিদের টার্গেট করতেন মেঘনা আলম চক্র

সুন্দরবন রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা হোক

সুন্দরবন রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা হোক

ইউনূস-মোদি বৈঠক : একটি পর্যালোচনা

ইউনূস-মোদি বৈঠক : একটি পর্যালোচনা

উইন্ডিজের বিপক্ষে সেরাটা দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ: নিগার

উইন্ডিজের বিপক্ষে সেরাটা দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ: নিগার

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে সংক্ষুব্ধ ‘আমরা’ কারা?

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে সংক্ষুব্ধ ‘আমরা’ কারা?

জেনারেল এসির নামে প্রতারণা

জেনারেল এসির নামে প্রতারণা

ইমরান খান-বুশরা বিবির বিয়ের অজানা অধ্যায় প্রকাশ

ইমরান খান-বুশরা বিবির বিয়ের অজানা অধ্যায় প্রকাশ

নোয়াখালীতে ব্রা‌ন্ডের নকল বস্তায় চাউল প‌্যা‌কেট ক‌রে বি‌ক্রি ;ভোক্তা অ‌ধিকা‌রের ১ লক্ষ টাকা জরিমানা

নোয়াখালীতে ব্রা‌ন্ডের নকল বস্তায় চাউল প‌্যা‌কেট ক‌রে বি‌ক্রি ;ভোক্তা অ‌ধিকা‌রের ১ লক্ষ টাকা জরিমানা

মঞ্চে অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট

মঞ্চে অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট

মুক্তির অপেক্ষায় মিজানুর রহমান লাবুর সিনেমা আতরবিবিলেন

মুক্তির অপেক্ষায় মিজানুর রহমান লাবুর সিনেমা আতরবিবিলেন

সোস্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা আমাকে শান্তি দিয়েছে :বাঁধন

সোস্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা আমাকে শান্তি দিয়েছে :বাঁধন