বড়দের দ্বীনী শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা-১
২১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম
মানুষের জীবন পরিবর্তনশীল। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে মানুষের জীবননদী নতুন বাঁক নেয়। পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে মনের মাঝে। তখন আমরা আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করি। পিছনের জীবনের হিসাব নিই। অসংখ্য মানুষ এমন আছেন, যাদের জীবনের দীর্ঘ একটা সময় জাগতিক জ্ঞান অর্জন, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি ইত্যাদিতে কেটে যায়। পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতার দরুন দ্বীনের মৌলিক জ্ঞানটুকুও অর্জন করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। পারিবারিক অসচেতনতা, দ্বীন শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ না পাওয়া, কিংবা নিজের অবহেলা এক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান কারণ।
জীবনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার পর নিজের মাঝে নতুন উপলব্ধি জাগে। অতীত জীবনের উপর অনুশোচনা হয়। হয়ত কোনো আল্লাহওয়ালার সোহবতে কিংবা কোনো দ্বীনী মেহনতের বরকতে অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে। তখন দ্বীনী ইলম না শেখার উপর আক্ষেপ হতে থাকে মনের গভীরে। এই উপলব্ধি, আক্ষেপ ও অনুশোচনা একটি ইতিবাচক দিক, যা ব্যক্তিকে নিজের জীবন নতুনভাবে গড়ার এবং আলোকিত পথের পথিক হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে। ভেতরে প্রেরণা যোগায়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে দুঃখজনক একটি বাস্তবতা হলো, মনের ভেতর উপলব্ধি ও অনুশোচনা জাগলেও এর উপর ভিত্তি করে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না। দ্বীনী জীবন গঠনে যতটুকু উৎসাহ দেখা যায় দ্বীনী শিক্ষা অর্জনে ততটুকু উৎসাহ দেখা যায় না।
এ পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সবচেয়ে সম্মানিত করে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : আমি বনী আদমকে সম্মানিত করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল : ৭০)। অন্যান্য প্রাণিজগত থেকে মানবজাতির রয়েছে স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য; যা মানুষকে মহিমান্বিত করে তুলেছে এবং অন্যান্যদের মাঝে বিশেষ মর্যাদা দান করেছে। অন্যান্য প্রাণি শুধু তাদের জীবন ও প্রাণ রক্ষার তাগিদে নিজের সমস্ত চেষ্টা ও শ্রম ব্যয় করে।
তাই আল্লাহর ইবাদত করা ও তাঁর হুকুম মেনে চলা মুমিন বান্দার মূল দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলার হুকুম জীবনের সমস্ত অঙ্গন জুড়ে পরিব্যাপ্ত। ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন সবকিছুতেই রয়েছে আল্লাহ তাআলার হুকুম। একজন প্রকৃত মুমিন জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই আল্লাহর হুকুম লংঘন করে না। তাই কোন্ ক্ষেত্রে আল্লাহর কী আদেশ ও কী নিষেধ তা জানা একজন মুমিনের অবশ্যকর্তব্য। বুঝা গেল, দ্বীনী ইলম শিক্ষা করা এমন কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়, যা না শিখলেও হয়। বরং আমাদের সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই এ শিক্ষা আমাদের অর্জন করতে হবে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন বহুগুণ। (সূরা মুজাদালা : ১১)। নবীজী (সা.) ইরশাদ করেছেন : তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে কুরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী : ৫০২৭)। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে : যে ব্যক্তি ইলম শিক্ষার জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। (সহীহ মুসলিম : ২৬৯৯)।
বয়স বেশি হওয়া এমনকি বৃদ্ধ হয়ে যাওয়াও দ্বীনী শিক্ষা অর্জনে প্রতিবন্ধকতা নয়। সাহাবায়ে কেরাম হলেন সর্বপ্রথম ইলমে ওহী শিক্ষা গ্রহণকারী। নবুওতের পাঠশালার সর্বপ্রথম ছাত্র। তাঁদের বক্তব্য ও শিক্ষার আলোকেই আমাদের কুরআন-সুন্নাহ্ বুঝতে হয়। অথচ তাঁদের অধিকাংশই বয়স অনেক হওয়ার পর ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং দ্বীন শিখেছেন। নবীজীর পর এ উম্মতের সবচেয়ে বড় জ্ঞানী হলেন আবু বকর (রা.)। অথচ তিনি যখন নবীজীর সংস্পর্শধন্য হয়ে ইলম শেখা শুরু করেছেন তখন তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৪০ বছর।
এমনিভাবে ওমর (রা.), আবু যর (রা.), আবুদ দারদা (রা.), প্রমুখ উম্মতের সবচেয়ে জ্ঞানী এ মহামানবগণ ইলম শিখেছেন বয়স অনেক হয়ে যাবার পর। ইমাম বুখারী (রাহ.) হযরত ওমর (রা.)-এর এ বক্তব্য উল্লেখ করেছেন : তোমরা বয়স অধিক হওয়ার আগেই ইলম শিখে নাও। সহীহ বুখারীতে ওমর (রা.)-এর এ বক্তব্য উল্লেখ করে ইমাম বুখারী (রাহ.)-এর ব্যাখ্যায় বলেন : বয়স বেশি হওয়ার পরও ইলম শিক্ষা কর। কারণ সাহাবায়ে কেরাম (অধিকাংশ) তো বয়স অধিক হওয়ার পরই দ্বীনী ইলম শিক্ষা করেছেন। (সহীহ বুখারী, পৃ. ৩৯)।
খোদ ওমর (রা.)-এর অবস্থাই দেখুন, বয়স হবার পরও কীভাবে তিনি দ্বীনী ইলম শিখেছেন। তিনি বলেন, আমি ও আমার এক আনসারী প্রতিবেশী পালাক্রমে নবীজীর কাছে যেতাম। সে একদিন থাকত। আমি একদিন থাকতাম। যেদিন আমি থাকতাম সেদিনকার ওহী ও অন্যান্য বিষয় আমি তাকে জানাতাম। আর যেদিন সে থাকত সেও অনুরূপ করত। (দ্র. সহীহ বুখারী, বর্ণনা ৮৯)। বড়দের দ্বীনী শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরাম হতে পারেন আমাদের প্রেরণার উৎস।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নাম ফলকে বাংলা না থাকলে ব্যবস্থা নেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি
অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান
মধুখালিতে দু’সহোদর শ্রমিক হত্যা সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল পালিত
ছেলের মৃত্যুর মাত্র ৪ দিন পর বাবার মৃত্যু!
অবশেষে কুমিল্লার রসমালাই জিআই পণ্যের স্বীকৃতির তালিকায়
দৌলতপুরে অগ্নিকান্ডে ১৪ বিঘা জমির পানবরজ পুড়ে ছাই
বিজয়নগরে জাল নোট তৈরির সরঞ্জাম সহ গ্রেপ্তার ৩
স্থানীয় সরকার নির্বাচনকেও তামাশায় রূপান্তরিত করেছে আওয়ামী লীগ : রিজভী
চিলমারীতে আনারস প্রতীক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা
খেলার শুরুর চার ওভার পর ফের বৃষ্টির হানা, ডিএল মেথডে এগিয়ে বাংলাদেশ
দেশে মুক্ত চিন্তার মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর আক্রমণ চলছে: মির্জা ফখরুল
চুয়াডাঙ্গার চিৎলা ইউনিয়নের হুদাপাড়ায় আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হলো ৭ পরিবার
‘এনবিআরের অভিযান’ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যাখ্যা
নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলেরা
অস্ট্রেলিয়ার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত
সৈয়দ আহমদ শহিদ বেরলভী (র.) ইসলামি আন্দোলনের আপোসহীন মডেল -আলহাজ হাফিজ সাব্বির আহমদ
নাইজারে মার্কিন বাহিনীর বিমান ঘাঁটিতে রুশ সেনা
২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার গান্ধী পরিবারের কোনো প্রার্থী নেই আমেথিতে
দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি ও ৫০-৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস আবহাওয়া অফিসের
বৃষ্টি বাঁধার আগে আউট লিটন,ধীরে শুরু বাংলাদেশের