আখেরাতে মানুষের তিনটি শ্রেণি-১

Daily Inqilab মাওলানা ফজলুদ্দীন মিকদাদ

২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৩ এএম

আল্লাহ তাআলা সূরা ওয়াকিয়ায় ইরশাদ করেনÑ ‘(হে মানুষ!) তোমরা (কিয়ামতের দিন) বিভক্ত হবে তিন শ্রেণিতে। ডান দিকের দল; কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! এবং বাম দিকের দল; কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! আর যারা অগ্রগামী, তারা তো অগ্রগামীই! তারাই আল্লাহর বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা।’ (সূরা ওয়াকিয়া : ৭-১১)
আল্লাহ তাআলা বলেছেনÑ ‘কিয়ামতের দিন মানুষকে তাদের দুনিয়ার কর্মের বিচারে তিন দলে বিভক্ত করা হবে। এক দল হলো ডান দিকের দল বা ডান হাতবিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অর্থাৎ যাদের আমলনামা তাদের ডান হাতে দেয়া হবে। এই দলে সাধারণ জান্নাতবাসী সকলে অন্তর্ভুক্ত। আরেক দল হলো বাম দিকের দল বা বাম হাতবিশিষ্টরা অর্থাৎ যাদের আমলনামা তাদের বাম হাতে দেয়া হবে। তারা হবে জাহান্নামবাসী।’

আরেক দল হলেন যারা মর্যাদায় ডান দিকের দলের চেয়েও অগ্রগামী, আল্লাহর আরো বেশি নৈকট্যপ্রাপ্ত। মূলত এই শ্রেণিটি প্রথোমক্ত ডান দিকের দল থেকেই বিশেষ ব্যক্তিগণের একটি শ্রেণি। তারা সাধারণ জান্নাতিদের চেয়ে উচ্চ স্তরের জান্নাতে থাকবেন। এ শ্রেণিতে থাকবেন নবীগণ, শহীদগণ, সত্যবাদীগণ ও আল্লাহর এমন নেক বান্দাগণ, দুনিয়ার জীবনে যাদের তাকওয়া-পরহেজগারি অনেক বেশি ছিল।

এই শ্রেণি-বিভক্তি উল্লেখ করার পরে আখেরাতে কোন্ দল কী অবস্থায় থাকবে, আল্লাহ তাআলা তাও উল্লেখ করেছেন। প্রথমে বিশেষ নৈকট্যশীল বান্দাদের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন : তারাই আল্লাহর বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা। তারা থাকবে নিয়ামতপূর্ণ উদ্যানে। বহুসংখ্যক হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে এবং অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের মধ্য হতে। সোনার তারে বোনা উঁচু আসনে তারা পরস্পর সামনা-সামনি হেলান দিয়ে থাকবে। তাদের সামনে (সেবার জন্য) ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা, এমন পান-পাত্র, জগ ও প্রস্রবণ-নিসৃত স্বচ্ছ সুরা-পাত্র নিয়ে, যা পানে তাদের মাথা ব্যথা হবে না এবং তারা চেতনা হারাবে না এবং তাদের পছন্দমতো ফল নিয়ে এবং তাদের চাহিদামতো পাখির গোশত নিয়ে।

এবং তাদের জন্য থাকবে আয়তলোচনা হুর, যেন তারা লুকিয়ে রাখা মুক্তা। তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ। তারা সে জান্নাতে শুনবে না কোনো অহেতুক কথা এবং না কোনো পাপের কথা। তবে সেখানে হবে কেবল শান্তিপূর্ণ কথা, কেবলই শান্তিপূর্ণ কথা। (সূরা ওয়াকিয়া : ১১-২৬)

আল্লাহ তাআলা এই অগ্রগামী দল, তাদের মহত্ত-মর্যাদা ও তারা পরকালে যেসকল নিয়ামত লাভ করবে, সে সম্পর্কে কুরআন কারিমে একাধিক জায়গায় বিভিন্ন আয়াত নাজিল করেছেন। এর মধ্যে উল্লিখিত আয়াতসমূহে তাদের সম্পর্কে বলছেন– তারা আল্লাহ তাআলার বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা। তারা পরকালে নিয়ামতপূর্ণ উদ্যানে থাকবেন। সেখানে তাদের জন্য স্বর্ণ দিয়ে বানানো আসন থাকবে। আরো থাকবে জান্নাতের প্রস্রবণ থেকে নিসৃত উপাদেয় পানীয়, পছন্দমতো ফলমূল, চাহিদামতো পাখির গোশত এবং সৌন্দর্যে মুক্তার মতো ঝলমলে তাদের স্ত্রীগণ।

তারা যখন যা চাবেন, অনায়াসে তা লাভ করবেন। সেখানে তারা কোনো রকম কষ্টদায়ক কিছু শুনবেন না। কেবল এমন কিছুই শুনবেন, যা চিত্ত প্রশান্তিকর। কুরআনে অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে যে, ফেরেশতাগণ তাদেরকে সর্বদিক থেকে সালাম দিয়ে সম্ভাষণ জানাবেন।

তারপরে ডান দিকের দল বা ডান হাতবিশিষ্টগণ পরকালে কী অবস্থায় থাকবে তা বর্ণনা করে বলেন : আর যারা ডান দিকের দল, আহা, কেমন যে সে ডান দিকের দল! (তারা আয়েশে থাকবে) কাঁটাবিহীন কুল গাছের মাঝে এবং কাঁদি ভরা কলা গাছ, সুদূর বিস্তৃত ছায়া, প্রবহমান পানি এবং প্রচুর ফলমূলের ভেতর। যা কখনো শেষ হবে না এবং যাতে কোনো বাধাও দেয়া হবে না। আর তারা থাকবে উঁচুতে রাখা ফরাশে। নিশ্চয়ই আমি সে নারীদেরকে দিয়েছি নবউত্থান। সুতরাং তাদেরকে বানিয়েছি কুমারী। (স্বামীদের পক্ষে) প্রেমময়ী ও সমবয়স্কা। সবই ডান দিকের দলের জন্য। (সূরা ওয়াকিয়া : ২৭-৩৮)

জান্নাতিরা জান্নাতে কী কী নিয়ামত লাভ করবে, তা কুরআন কারিমে বহু সূরায় শত শত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। আর এ মর্মে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহস্রাধিক হাদিস তো বর্ণিত আছেই। উল্লিখিত আয়াতসমূহে আল্লাহ তাআলা বিশেষ নৈকট্যশীলদের পর সাধারণ জান্নাতিদের সম্পর্কে বলছেন– তাদের জন্য থাকবে বিভিন্ন রকমের প্রচুর ফলমূল, সুদূর বিস্তৃত মনোরোম ও আরামদায়ক ছায়া এবং প্রবহমান পানি। এসব কিছুর কোনো ঘাটতি হবে না, কখনো শেষ হবে না এবং তাদেরকে তা ভোগ-উপভোগ করতে কখনোই কোনো প্রকার বাধা দেয়া হবে না। আর তাদের সঙ্গে থাকবেন তাদের প্রেমময়ী স্ত্রীগণ। অর্থাৎ তারাও জান্নাতে সব রকম আরাম-আয়েশের মধ্যে থাকবেন।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কিয়ামুল লাইল জান্নাত লাভ ও মর্যাদা বৃদ্ধির আমল
তাহাজ্জুদ : আল্লাহর প্রিয় হওয়ার আমল
যিলকদ মাসের করণীয় আমল
যিলকদ একটি সম্মানিত মহান মাস
ঘুম আল্লাহর রহমতের বহিঃপ্রকাশ-২
আরও
X
  

আরও পড়ুন

ভারত-পাকিস্তান সরাসরি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান

ভারত-পাকিস্তান সরাসরি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান

বাংলাদেশের বাজারে নেসলে নিয়ে এলো নিডো ৫+

বাংলাদেশের বাজারে নেসলে নিয়ে এলো নিডো ৫+

প্রায় এক দশক পর  লোগোতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে গুগল

প্রায় এক দশক পর লোগোতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে গুগল

ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার অপসারণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দের বন্যা

ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার অপসারণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দের বন্যা

কালুরঘাট সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন প্রধান উপদেষ্টার

কালুরঘাট সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন প্রধান উপদেষ্টার

সাম্য হত্যাকাণ্ড : ঢাবি উপাচার্য ও প্রক্টরের পাশে দাঁড়িয়ে যাদের দায়ী করলেন সারজিস

সাম্য হত্যাকাণ্ড : ঢাবি উপাচার্য ও প্রক্টরের পাশে দাঁড়িয়ে যাদের দায়ী করলেন সারজিস

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে বৃদ্ধাকে গলাকেটে হত্যা

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে বৃদ্ধাকে গলাকেটে হত্যা

চট্টগ্রাম বন্দর চালাতে হলে আমাদের লোকই চালাবে : ড. ইউনূস

চট্টগ্রাম বন্দর চালাতে হলে আমাদের লোকই চালাবে : ড. ইউনূস

আশুলিয়ায় নিখোঁজের ১২ ঘন্টা পর ২ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

আশুলিয়ায় নিখোঁজের ১২ ঘন্টা পর ২ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

বেনাপোল কাস্টমসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলমবিরতি শুরু

বেনাপোল কাস্টমসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলমবিরতি শুরু

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে চট্টগ্রাম বন্দর একমাত্র ভরসা: প্রধান উপদেষ্টা

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে চট্টগ্রাম বন্দর একমাত্র ভরসা: প্রধান উপদেষ্টা

দূষিত শহরের শীর্ষে কুয়েত সিটি, ঢাকা ১৭তম

দূষিত শহরের শীর্ষে কুয়েত সিটি, ঢাকা ১৭তম

রাজশাহীর পুঠিয়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাব্বির গ্রেফতার

রাজশাহীর পুঠিয়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাব্বির গ্রেফতার

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে পাকিস্তানি এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করল ভারত

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে পাকিস্তানি এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করল ভারত

ও কাঁপছিল, কাঁদছিল, চলতে পারছিল না— নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল'

ও কাঁপছিল, কাঁদছিল, চলতে পারছিল না— নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল'

মারা গেলেন বিশ্বের সবচেয়ে ‘গরিব প্রেসিডেন্ট’ হোসে মুজিকা

মারা গেলেন বিশ্বের সবচেয়ে ‘গরিব প্রেসিডেন্ট’ হোসে মুজিকা

'জনতার মেয়রকে পদে বসাতে রাস্তায় নেমেছে জনতা'

'জনতার মেয়রকে পদে বসাতে রাস্তায় নেমেছে জনতা'

বাহরাইনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

বাহরাইনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

দাউদকান্দিতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ২২ মামলার আসামি মামুন সম্রাট আটক

দাউদকান্দিতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ২২ মামলার আসামি মামুন সম্রাট আটক

আয়নাঘর পরিদর্শনে করেন আরএফকে সেন্টারের প্রধান কেরি কেনেডি

আয়নাঘর পরিদর্শনে করেন আরএফকে সেন্টারের প্রধান কেরি কেনেডি