সালাম ইসলাম ধর্মের ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের প্রতীক
২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৫৬ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫৯ পিএম
ইসলামধর্মের একটি নিদর্শন হচ্ছে- সালাম। সালাম দেয়া প্রিয় নবীজী (সা.)-এর সুন্নাত। সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। সালাম-এর আদান-প্রদান একটি ইবাদত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা.। শুরুর জীবনে ছিলেন ইহুদি। থাকতেন মদীনায়। ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাত সম্পর্কে তার জানাশোনা ছিল প্রচুর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় হিজরতের পর তিনি ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। এক হাদীসে তিনি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন, বাঁধভাঙ্গা স্রোতের মতোই মানুষ তাঁর দিকে ছুটতে শুরু করল। তারা বলাবলি করতে লাগল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে এসেছেন; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে এসেছেন। তাঁকে দেখার জন্যে মানুষের ভিড়ের মাঝে আমিও গেলাম। আমি তাঁর চেহারা দেখেই তাঁকে চিনতে পারলাম আর তখনি বুঝতে পারলাম এ চেহারা কোনো মিথ্যুকের চেহারা নয়। সেদিন আমি তাঁকে প্রথম যে কথাটি বলতে শুনেছি তা হল- হে মানুষেরা! তোমরা সালামের বিস্তার ঘটাও, মানুষকে খাবার খাওয়াও এবং যখন অন্য মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়, তাহলে তোমরা শান্তিতে ও নির্বিঘেœ জান্নাতে যেতে পারবে। (জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪৮৫)।
হাদীসটির প্রেক্ষাপট ও উপস্থাপন আমাদের সামনে সালামের গুরুত্ব দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয় জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করে এসে মানুষদেরকে প্রথম উপদেশ দিচ্ছেন তোমরা সালামের অধিক প্রচলন কর! দেখা-সাক্ষাতে একে অন্যকে শুভেচ্ছা-অভিবাদন জানানো মানুষের একটি সহজাত গুণ। মানবসমাজে এ প্রথা চলে আসছে প্রাচীন কাল থেকেই। কোনো কোনো এলাকায় প্রচলন ছিল সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে মাথা নুইয়ে সম্মান জানানোর রীতি। ইসলামপূর্ব যুগে আরবের লোকেরা পরস্পর দেখা-সাক্ষাতে বলত- “আন’ইম সাবাহান” ‘তোমার সকাল সুন্দর হোক’। ‘আনআমাল্লাহু বিকা আইনান’ অর্থাৎ, আল্লাহ তোমার চোখ শীতল করুন’ এজাতীয় শব্দ। গুডমর্নিং বা শুভ সকাল তো একালের প্রচলিত অভিবাদন। কিন্তু ইসলাম আমাদেরকে দিয়েছে এক অভূতপূর্ব অভিবাদন-রীতি, যেমনটি কোনো ধর্মে কিংবা কোনো দেশে প্রচলিত ছিল না। মানের বিচারেও তা অন্যসব কিছু থেকে শ্রেষ্ঠ। ইসলাম আমাদেরকে শিখিয়েছে- দুই মুসলমান যখন মিলিত হয় তখন যেন একে অন্যকে সালাম দেয় অর্থাৎ একজন বলবে, আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ- তোমার ওপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক; অপরজন বলবে, ওয়া আলাইকুমুস সালামু ওয়ারাহমাতুল্লাহ তোমার ওপরও শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। এভাবে স্থান-কালের বন্ধন থেকে মুক্ত করে একে অন্যের জন্যে আল্লাহর রহমত ও শান্তি কামনা এর চেয়ে উত্তম শুভেচ্ছা আর কী হতে পারে! এ সালাম আমাদের অহংকার, আমাদের স্বকীয়তা।
সালাম যে কেবল অভিবাদন আর শুভ কামনা এমন নয়, কিংবা সালাম কেবল মহব্বত-ভালোবাসার প্রকাশই নয়, বরং এ সালামের মধ্য দিয়ে ভালোবাসার দাবিটুকুও আদায় করা হয়। একজন আরেকজনের জন্যে প্রার্থনা করে আল্লাহ তোমাকে শান্তি ও নিরাপদে রাখুন, তোমার ওপর বর্ষিত হোক পরম করুণাময়ের দয়া ও অনুগ্রহের বারিধারা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপে দয়াময় আল্লাহ তোমাকে সবরকমের বিপদ ও শঙ্কা থেকে মুক্ত রাখুন। সাক্ষাতের সঙ্গে সঙ্গে একে অন্যের জন্যে এ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে যেন একথাও মনে করিয়ে দেয়া হয় আমরা একে অপরের যে সহযোগিতা আর উপকার করতে চাই, তা কেবল আল্লাহর ইচ্ছায়ই হতে পারে। এভাবে সালামের মাধ্যমে একে অন্যকে আল্লাহর কথাও মনে করিয়ে দেয়। আর কেউ যখন অন্য কারও জন্যে শান্তি ও নিরাপত্তার প্রার্থনা করে, সে যেন এর ভেতর দিয়ে এ অঙ্গীকারও করে- আমার পক্ষ থেকেও কোনো অনিষ্টতায় তুমি আক্রান্ত হবে না। আমার দিক থেকে তুমি সম্পূর্ণ নিরাপদ। পারস্পরিক ভালোবাসার দাবি পূরণের চেয়ে সুন্দর পন্থা আর কী হতে পারে! কেউ যখন কাউকে সালাম দেয়, তখন এর উত্তর দেয়া ওয়াজিব। এ আদেশ সরাসরি আল্লাহ তাআলার। ‘যখন তোমাদের সালাম দেয়া হয় তখন তোমরা এর চেয়ে উত্তম পন্থায় সালামের উত্তর দাও কিংবা (অন্তত) ততটুকুই বলে দাও’। (সূরা নিসা (৪) : ৮৬)। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম দেয়াকে একজন মুসলমানের অন্যতম সেরা আমল হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা.-এর বর্ণনা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন- ইসলামের শ্রেষ্ঠ আমল কোনটি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি মানুষকে খাবার খাওয়াবে আর তোমার পরিচিত-অপরিচিত সকলকেই সালাম দেবে।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১২)। এ হাদীসে স্পষ্টভাবেই সালামকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে পরিচিত-অপরিচিত সবার মাঝে। পরিচিত কাউকে যখন সালাম দেয়া হয়, তা আত্মীয়তা, বন্ধুত্ব কিংবা অন্য যে কোনো সূত্রেই হোক, সালামের মাধ্যমে সেই পরিচয়ের সূত্র আরও ঘনিষ্ঠ হয়। আর অপরিচিত কাউকে যখন কেউ সালাম দেয় তখন এ সালামের মধ্য দিয়েই সূচিত হতে পারে গভীর আন্তরিকতার। জীবনে কখনো দেখা হয়নি এমন কারও সঙ্গেও যখন কথাবার্তার শুরুতে সালামের আদান-প্রদান হয় তখন অকৃত্রিম হৃদ্যতা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। এক অপার্থিব শান্তি ও নিরাপত্তা অনুভূত হয়। মোটকথা, সালাম বিনিময়ের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। হৃদ্যতা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। ভালোবাসা ও সম্প্রীতির এ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে সামাজিক বন্ধন যেমন সুদৃঢ় হয় তেমনি পরকালীন মুক্তিও এর সঙ্গে জড়িত। (চলবে)
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন