সালাম ইসলাম ধর্মের ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের প্রতীক
০৫ মে ২০২৩, ০৮:৩৫ পিএম | আপডেট: ০৬ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেহেশত লাভের জন্যেও পারস্পরিক এ ভালোবাসার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন- হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে তিনি বলেছেন, ‘তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর তোমাদের ঈমান ততক্ষণ পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ না তোমরা একে অন্যকে ভালোবাস। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি আমলের কথা বলব, যখন তোমরা তা করবে, তখন একে অন্যকে ভালোবাসবে। তোমরা তোমাদের মাঝে সালামের প্রচলন ঘটাও।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৪)।
সালামের প্রচলন কীভাবে ঘটানো যায় তার একটি রূপরেখাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন : তোমাদের কেউ যখন তার ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তখন যেন সে সালাম দেয়। এরপর কোনো গাছ কিংবা কোনো পাথর বা দেয়ালের আড়াল থেকে এসে যখন আবার তার সঙ্গে দেখা হয় তখনো যেন তাকে সালাম দেয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫২০০)।
শুধু পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতিই নয়, সালামের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয় আমাদের আমলনামাও। হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রা.-এর বর্ণনা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে এসে এক ব্যক্তি ‘আস্সালামু আলাইকুম’ বলে সালাম দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দিলেন। লোকটি তখন মজলিসে বসে পড়ল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দশ (অর্থাৎ তুমি দশ নেকি পেলে)। এরপর আরেকজন এসে ‘আস্সাালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দিলেন। লোকটি তখন মজলিসে বসে পড়ল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বিশ (অর্থাৎ তুমি বিশ নেকি পেলে)। এরপর তৃতীয় আরেকজন এসে ‘আস্সালামু আলাইকুুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’ বলে সালাম দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দিলেন। লোকটি তখন মজলিসে বসে পড়ল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ত্রিশ (অর্থাৎ তুমি ত্রিশ নেকি পেলে)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫১৯৫)।
সালামের আরেক সুফল সালাম মানুষকে অহংকার থেকে মুক্ত রাখে। তবে এজন্যে শর্ত হল আগে সালাম দেয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন :‘যে আগে সালাম দেয় সে অহংকার থকে মুক্ত’। (শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৮৪০৭)। মানুষ যখন বড় হয়, তা বয়সের বিবেচনায়ই হোক, কিংবা যশ-খ্যাতি সম্মান বা অর্থসম্পদের দিক দিয়েই হোক, আর পদমর্যাদা ও ক্ষমতা দিয়েই হোক, সে চায় তার অধীনস্তরা কিংবা তার চেয়ে ছোট যারা তারা তাকে সম্মান করুক। অন্যদের সম্মানে সে তৃপ্তি পায়। তাই কেউ বড় হয়ে গেলে ছোটদের নিয়ে এ মানসিকতা থাকা স্বাভাবিক আমি কেন তাকে সালাম দেব, বরং সে আমাকে সালাম দেবে! এ মানসিকতা থেকেই অহংকারের সূচনা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মানসিকতাকেই শেকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলেছেন। তাঁর বাণী ও শিক্ষা অনস্বীকার্য যে যত বড়ই হোক, সামাজিকভাবে যত উচ্চ মর্যাদার অধিকারীই হোক, আগে বেড়ে সে যখন অন্য কাউকে সালাম দেবে তখন তার মন থেকে অহংকার বিদায় নিতে বাধ্য।
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ছিলেন মদীনা মুনাওয়ারার বিদ্বান সাহাবীদের অন্যতম। তাকে কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে ওঠে হাদীস চর্চার পাঠশালা। অথচ তিনি হাদীসের মজলিস রেখে মাঝে মাঝেই বাজারে ঘুরে বেড়াতেন। উদ্দেশ্য- অধিক সংখ্যক মানুষকে সালাম দেয়া। তাঁর শিষ্য হযরত তুফায়েল ইবনে উবাই ইবনে কাবের বক্তব্য শুনুন ‘আমি একদিন আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর নিকট এলাম। তিনি তখন আমাকে নিয়ে বাজারের দিকে রওনা করলেন। আমি তাকে বললাম, বাজারে গিয়ে আপনি কী করবেন? আপনি তো কোনোকিছু কেনাবেচা করেন না, কোনো পণ্য সম্পর্কে কিছু জানতেও চান না, কোনোকিছু নিয়ে দামাদামিও করেন না, কারও সঙ্গে কোনো বৈঠকেও শরিক হন না, তবুও কেন আপনি বাজারে যাবেন? আপনি এখানে বসুন, আমরা হাদীস শুনব। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. তখন বললেন, আরে শোনো, আমরা তো কেবল সালাম দেয়ার জন্যেই বাজারে যাই। যার সঙ্গে দেখা হয় তাকেই আমরা সালাম দিয়ে থাকি।’ (মুয়াত্তা মালেক, হাদীস ১৭২৬)।
সালামকে যদি আমরা এভাবে আমাদের সমাজে ছড়িয়ে দিতে পারি, এবং যদি সালামের মর্ম আমরা আমাদের জীবনে ধারণ করতে পারি, তাহলে একদিকে যেমন আমাদের পরকালীন পুঁজি বৃদ্ধি পাবে, তেমনি সমাজে বয়ে যাবে আন্তরিকতা আর সম্প্রীতির স্নিগ্ধ হাওয়া। আমাদের পার্থিব জীবনও হয়ে ওঠবে শান্তি ও কল্যাণময়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক আমল করার তাওফিক দান করুন, আমীন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম