ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১
গত আলোচনার পর

অপচয়-অপব্যয়ে চরম অধঃপতন ও প্রতিকার

Daily Inqilab মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

০৫ মে ২০২৩, ০৮:৩৬ পিএম | আপডেট: ০৬ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

ইমাম মুহাম্মদ বিন হাসান আশ-শায়বানী রহ. অপচয় ও অপব্যয়ের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন এভাবে ‘তৃপ্ত হওয়ার পরে খাওয়া, বৈধ জিনিষ অতরঞ্জিত করা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার টেবিলে রাখা, রুটির সাইড বাদ দিয়ে শুধু মাঝখান থেকে খাওয়া, রুটির যে অংশ ফুলে উঠে শুধু সেই অংশটুকু খাওয়া যেমনটি অনেক মূর্খ ব্যক্তিরা করে থাকে কোন লোকমা হাত থেকে পড়ে গেলে তা না উঠানো ইত্যাদি। ইমাম আবুল হাসান আল- মাওয়াদী রহ. বলেন ‘অপচয় হল, দুনিয়াতে কোন উপকার পাওয়া যায় না, আখিরাতে ও কোন প্রতিদান পাওয়া যায় না, এমন কাজে সম্পদ ব্যয় করা। এর মাধ্যমে সে শুধু দুনিয়াতে অপমান ও আখিরাতে পাপের অংশীদার হয়। যেমন বিভিন্ন হারাম কাজে বিশেষ করে মদ পানের জন্য, অশ্লীল কাজে, নির্বোধ ব্যক্তিকে, গায়ক-গায়িকা, কৌতুক ও অভিনেতাকে টাকা-পয়সা দেওয়া। যা কবীরা গুনাহ।

অপচয় হলো প্রয়োজন ছাড়াই বাড়ী নির্মান করা। অথচ সে ঐ বাড়ীতে বসবাস করবে না। অপচয় হলো খুব দামী বিছনা ক্রয় করা, স্বর্ণ রৌপ্যের আসবাবপত্র ব্যবহার করা। বাড়ীতে বিনা প্রয়োজনে অতিরিক্ত আসবাপত্র রাখা ইত্যাদি। তিনি আরও বলেন, ‘তবে যে ব্যয়ের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট প্রতিদান পাওয়া যায়, জ্ঞানী লোকের নিকট প্রশংসা পাওয়া যায় তা দান হিসাবে গণ্য হবে, অপচয় নয়। এর পরিমান যথই বেশী হোক না কেন। পক্ষান্তরে ইসলাম বহির্ভূকাজে ব্যয় করা, যার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট পাপী হিসাবে আর জ্ঞানীর নিকট লাঞ্ছিত হিসাবে গণ্য হবে তাই অপচয় ও অপব্যয়, পরিমানে তা যতই কম হোক না কেন।’
নিঃসন্দেহে যেকোন প্রকার ধূমপান ও নেশা গ্রহন মানুষের জন্য বিধ্বংসী মারণাস্ত্র। কিন্তু ধূমপান ও নেশা জাতীয় দ্রব্যের বাজার এত সয়লাব হয়েছে, যে মুসলিম বিশ্বে ও মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ব্যবস্থা হচ্চে এই ধ্বংসাত্মক নেশা জাতীয় দ্রব্যের মাধ্যমে। যদিও ইদানিং স্বাস্থ্য সচেনতার কারণে কিছু দেশে ধূমপানের পরিমান কমে এসেছে, কিন্তু উন্নত দেশ গুলোতে এর পরিমান বেড়েই চলছে। মুসলিম বিশ্ব এর থেকে পিছিয়ে নেই। এক জরিপে দেখা গেছে, এশিয়ার ৩০% লোক ধূমপান করে। যা আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। আরব দেশগুলোতে প্রতি বছর মদের ব্যবসায় ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়।

মানুষ তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার গ্রহন করলে হজম করতে পারে না। ফলে সে বদহজমীতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অতিভোজনের ফলে ভুরি বেড়ে যায়, চর্বি বৃদ্ধি পায়। এতে শ্বাসকষ্ট হয়। হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা ও থাকে। ডায়রিয়া ও হয়ে থাকে অতিভোজন ফলে। আর এভাবে মানুষ তার রোগ প্রতিরাগ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। মানসিকভাবেও সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় মানুষ তার অব্যাসবশত অনেক জিনিষ ক্রয় করে থাকে, অথচ এগুলোতে তার কোন কাজ নেই। এর মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজ এমনকি রাষ্ট্রও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উদাহরনস্বরুপ বলা যায় অনেক মানুষ বোিশ দামে লাল আপেল ক্রয় করে অথচ পুষ্টির ক্ষেত্রে লাল আপেলের কোন বিশেষত্ব নেই। আবার বিভিন্ন কোম্পানী তাদের নতুন পণ্য বিক্রির জন্য বিভিন্ন ধোঁকার ও আশ্রয় নেয়, আর মানুষ ও বেশি দাম দিয়ে ক্রয় করে। এর মাধ্যমে ও অপচয় ও অপব্যয় হয়। বিভিন্ন বানিজ্যিক ঘোষনার মাধ্যমে ও মানুষকে ধোঁকায় নিমজ্জিত করা হয়।

যেমন ১০টি পন্য একসাথে কিনলে ২০০ টাকার প্রাইজবন্ড। এ ক্ষেত্রে যে ব্যক্তির দশটি পণ্যের প্রয়োজন নেই সেও দশটি পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে অপচয়ে লিপ্ত হয়ে পড়ে। দৈনন্দিন ফ্যাশনের পনিবর্তন ও বিভিন্ন পণ্যের উদ্ভোবনের মাধ্যমে মানুষ সবচেয়ে বেশি অপচয়ে লিপ্ত হচ্ছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এসব দৈনন্দিন পরিবর্তন ফ্যাশন তাদের মনে কোন বিরূপ প্রতিক্রয়া সৃষ্টি করছে না। বরং ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে তারা অংশগ্রহন করে যাচ্ছে। আর তাদের মনে এই বিষ ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, এই সব অত্যাধুনিক আসবাপত্র গ্রহন না করাটা আধুনিকায়ন ওপ্রগতিশীলতায় বিরোধিতা করে পিছনের দিবে ফিরে যাওয়ার নামান্তর। এই ফ্যাশন বেশি আক্রান্ত হয়েছে নারীরা। যেমন নিত্য নতুন গাড়ির চাহিদা, নিত্য নতুন মোবাইল, আরো বিভিন্ন উন্নত আসবাবপত্রের আবিষ্কার হচ্ছে। যার মাধ্যেমে মানুষ অপচয়ের নিমজ্জিত হচ্ছে। বিশেষ করে ধনী শ্রেনীরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য তারা প্রতিনিয়ত এসব জিনিস ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ার পূর্বেই পরিত্যাগ করছে। বস্তুত এগুলো একদিকে অপচয়, অন্যদিকে অবকাঠামো ধ্বংস করা। অপচয় ও অপব্যয়ের যে ক্ষতিকর দিকগুলো রয়েছে সেগুলো ব্যক্তি, পরিবার. সমাজ, রাষ্ট্র,এমনকি আর্ন্তজাতিক ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলে। অযথা খরচ দুনিয়ার ব্যবস্থাপনাকে যেমন বিশৃঙ্খল করে, তেমন ব্যক্তির আখিরাতকেও নষ্ট করে। নিম্নে অপব্যয় ও অপটয়ের কিছু ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হলো, অপচয়ের জন্য মানুষ উপরি ইনকামের প্রতিঝুকে পড়ে। এ জন্য মানুষ অবৈধ পন্থা অবলম্বন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। এর মাধ্যমে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র অর্থনৈাতকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নবী স. বলেছেন, ‘প্রত্যেক ঐ শরীর যা হারাম দ্বারা গঠিত, তারা জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত।

অপচয়ের মাধ্যমে মানুষ হঠাৎ করে যে কোন কাজ করে বসে, পরিণতির প্রতি চিন্তা করে না। মানুষ তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে না, আর এর পরিণতি হয় অত্যন্ত ভতয়াবহ, যা মানুষকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। আর হিংসাহ বদ্বেষে অন্তর পরিপূর্ণ হয়ে যায়। অপচয়ের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর অবাধ্যতায় ব্যবহার করে এবং তার আনুগত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। সে মনে মেনও অনেক পাপের বিষয় গোপন করে রাখে, করন মানুষ পেটপুরে খেলেই সেখানে শয়তান অবস্থান গ্রহন করে। এ জন্য নবী সা. কলেছেন: আদম সন্তান তার পেটের তুলনায় অন্য কোন খারাপ পাত্র ভর্তি করে না। মানুষের জন্য তো কয়েক লোকমা খাদ্যই যথেষ্ট, যা তার মেরুদ- সোজা করে রাখেন। আর যদি একান্তেই প্রয়োজন হয়, তাহলে পাকস্থলীর এক- তৃতীয়াংশ খাদ্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয় আর এক-তৃতীয়াংশ নিশ্বাসের জন্য রাখবে।’ পরিবেশের অবক্ষয়ের জন্য অপচয় অন্যতম প্রধান দায়ী। (চলবে)


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা