ঢাকা   শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৯ পৌষ ১৪৩১

নৈতিক অবক্ষয় রোধে করণীয়

Daily Inqilab ইসমাঈল সিদ্দিকী

০৪ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫১ পিএম | আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম

প্রযুক্তি যত সহজলভ্য হচ্ছে, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আর ভালোবাসা ততই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মানুষের আচরণ দেখে সমাজের ছোট-বড় পার্থক্য করা আজ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে । না আছে বড়দের সম্মান, না আছে শ্রদ্ধাবোধ। ফেসবুক খুললেই পুরো টাইমলাইন জুড়ে বড়দের নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি করতে দেখা যায়। ঠুনকো বিষয়কে কেন্দ্র করে যুগশ্রেষ্ঠ মনিষীদেরকেও নানারকম নেতিবাচক মন্তব্যে জর্জরিত করা হয়। ‘আমিই সঠিক বুঝেছি; আমার উস্তাযগণ ভুল বুঝেছেন বা আমার বড়রা দ্বীন বোঝেননি, দ্বীনের দাবিসমূহের ব্যাপারে তাদের খবর নেই, তাদের মধ্যে দ্বীনের দরদ নেই এরকম একগুঁয়ে একটা মনোভাব বর্তমান উঠতি বয়সী তরুণদের মাঝে চরমভাবে জেঁকে বসেছে। দ্বীন ও উম্মাহর জন্য তাঁদের যেসব খেদমত ও অবদান সেগুলো স্বীকার করতে তারা যেন সংকীর্ণতা বা কষ্ট অনুভব করছে।অথচ বড়দের অগ্রাধিকার দিতে, শ্রদ্ধাবোধ আর সম্মান প্রদশর্ন করতে আমাদের নবিজি আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) হতে বর্ণিত, নবি কারিম (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং বড়দেরকে সম্মান করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত না। (আবু দাউদ : ৪৮৪২)। নবি কারিম (সা.) বড়দের সম্মান প্রদশর্ন না করার ব্যাপারে হুশিয়ারি বার্তা উচ্চারণ করার পাশাপাশি কার্যক্ষেত্রেও বড়দের অগ্রাধিকার দিয়ে উম্মতকে দেখিয়ে গেছেন। বর্ণিত হয়েছে, ‘কয়েকজন লোক একবার একটি হত্যা মামলা নিয়ে নবিজির কাছে এসেছেন। নিহতের ছোট সন্তান আগ বেড়ে কথা বলতে চাইলে নবিজি (সা.) তাকে থামিয়ে বড় ভাইকে কথা বলার আদেশ দিলেন’ (সুনানে আবু দাউদ : ৬১৪২)

নৈতিক মূল্যবোধের প্রয়োজনীয়তা : জীবনে চলার পথে প্রত্যেক মানুষের সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হলো নৈতিক মূল্যবোধ। আর একটা সুশৃঙ্খল সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নৈতিক মূল্যবোধের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের ডাল-পালা মেললে অন্যায়, অপরাধ, অপসংস্কৃতি বেড়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। তখন আর এই কথা বললে চলবে না যে, ‘অবক্ষয়ের চোরা স্রোত বইয়ে যাচ্ছে আমাদের সমাজে’ বরং বলতে হবে ‘চোরা স্রোত নয়, রীতিমতো বন্যার মতো অবক্ষয় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের সমাজটাকে।’

নবীনদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করা করা : আজকের তরুণরাই জাতির আগামি দিনের কর্ণধার। বাস্তবিকভাবে পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তরুণদের অবদান অনস্বীকার্য। পরিবার গঠন, উন্নয়ন ও সমাজের কল্যাণে কর্মময় জীবন ব্যয় করে—একসময়ে তারা বার্ধক্যে উপনীত হন। তাদের বেড়ে ওঠা ও প্রাপ্ত শিক্ষার ওপর সংশিষ্ট রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা নির্ভর করে। তাই তরুণ প্রজন্মকে এবং তার ভবিষ্যৎ ও নীতি-নৈতিকতা নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের প্রবীণদেরই ভাবতে হবে। প্রবীণদের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা আর সযতœ পরিচর্যায় নবীনরা বেড়ে ওঠলে আশা করি বড়দের প্রতি নেতিবাচক ধারণা জন্মানোর এ প্রবণতা ধীরে ধীরে কমে যাবে। বিগত কয়েক দশক ধরে এই প্রচেষ্টা আর সযতœ পরিচর্যার অভাবেই সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক অবক্ষয়, নতুন প্রজন্ম ধাবিত হচ্ছে অধঃপতনের দিকে আর নানারকম একগুঁয়ে মনোভাব তাদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা যদি এখন থেকেই সচেতন না হই, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না গ্রহণ করি, তাহলে তরুণ প্রজন্মের ধ্বংস অনিবার্য, যা সমগ্র জাতির জন্য এক মহা সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর আমরা যারা ছোটো আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যদি বড়দের সম্মান না দেই, তা হলে ছোটরাও আমাদের সম্মান দেবে না, এটিই স্বাভাবিক নিয়ম। তাই সচেতন হতে হবে আপনাকে আমাকে। যার যার অবস্থান থেকে মানবিকতা, নৈতিকতা, নম্রতা, ভদ্রতা, শিষ্টাচার ও সৌজন্য প্রদর্শন এবং ভালো ব্যবহার করতে হবে। তবেই অন্যজন শিখবে। আমি অন্যের সাথে ভালো ব্যবহার করলে, তার বিনিময়ে আমিও ভালো ব্যবহার পাবো। তাই আগে নিজেকে সচেতন হতে হবে, তারপর অন্যকে সচেতন করার কথা ভাবতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুক।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নারীর সাজসজ্জা
ইসলামে সততার পুরস্কার
ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.)
কারো বাড়িতে প্রবেশ করার আদব
থার্টি ফাস্ট নাইট নিষিদ্ধ করতে হবে আইন করে জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান
আরও

আরও পড়ুন

আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ

আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ

যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ

যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ

এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার

শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার

মানুষের দুর্দশা মোচনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে

মানুষের দুর্দশা মোচনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে

সেনাবাহিনী ক্ষমতার বিকল্প সত্তা নয়

সেনাবাহিনী ক্ষমতার বিকল্প সত্তা নয়

লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ

লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ

ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইস্তাম্বুলে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ

ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইস্তাম্বুলে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ

ব্যাপক গোলাগুলিতে নিউইয়র্কে আহত ১০

ব্যাপক গোলাগুলিতে নিউইয়র্কে আহত ১০

গাজায় জনসংখ্যা কমেছে ৬ শতাংশ

গাজায় জনসংখ্যা কমেছে ৬ শতাংশ

আইএসের পতাকা উড়িয়ে হামলা, নিহত বেড়ে ১৫

আইএসের পতাকা উড়িয়ে হামলা, নিহত বেড়ে ১৫

নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

ইসরাইলি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করলেন ইয়োভ গ্যালান্ট

ইসরাইলি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করলেন ইয়োভ গ্যালান্ট

ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত

ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত

আশা জাগানিয়া প্রত্যাশা করা বড়ই কঠিন : গুতেরেস

আশা জাগানিয়া প্রত্যাশা করা বড়ই কঠিন : গুতেরেস

মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে উন

মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে উন

শেনজেন অঞ্চলের পূর্ণ সদস্য হলো রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া

শেনজেন অঞ্চলের পূর্ণ সদস্য হলো রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া

প্লাস্টিক দূষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে : পরিবেশ উপদেষ্টা

প্লাস্টিক দূষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে : পরিবেশ উপদেষ্টা

১৫% ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন: মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ

১৫% ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন: মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ