ইসলামে সংখ্যালঘুদের অধিকার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৯ পিএম | আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিভিন্ন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংখ্যালঘুদের অবস্থান সব সময়ই সংশ্লিষ্ট জাতির জন্য একটি জটিলতার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কোনো রাষ্ট্রব্যবস্থাই এ থেকে মুক্তি পায়নি। প্রাচীনকালের রাজতন্ত্রবাদ ও আজকের গণতান্ত্রিক সেকুলারিজম কোনটাই সংখ্যালঘুদের সার্বিক কল্যাণ এবং তাদের ন্যূনতম মানব অধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। অন্যদিকে ইসলাম যেহেতু মানুষের সার্বিক কল্যাণের জন্য আবির্ভাব হয়েছে আর আল্লাহপাকের সকল সৃষ্ট জীব তার একান্ত আপনজন। তাই ইসলাম অকপটে ঘোষণা করেছে-‘সকল সৃষ্ট জীবই আল্লাহর বৃহত্তর পরিবার’। শক্তিমানের জুলুমকে শক্তিহীনের উপর, সংখ্যাগুরুর জুলুমকে সংখ্যালঘুর উপর কোনোক্রমেই ইসলাম সমর্থন করে না।
ইসলামে সংখ্যালঘুদের অধিকার : ইসলাম সংখ্যালঘুদের জানমাল ও ইজ্জত আবরুকে আল্লাহ ও রাসূলের পরম আমানত বলেই মনে করে এবং প্রতিটি সংখ্যাগুরুর মন মগজে কার্যকরীভাবে এ মানসিকতা প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পায়। আল্লাহ ও রাসূলের জিম্মাতেই তারা সংখ্যালঘুদের গ্রহণ করে। তাই তারা বিশ্বাস করে, যে এ জিম্মা অন্যায়ভাবে ভোগ করবে, তাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের সামনে কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, শত্রু পক্ষকে সাহায্য করেছে কিন্তু সংখ্যাগুরু মুসলমানরা তাদের প্রতি কখনও অবিচার করেনি। হযরত উমর (রা.), উমর ইবনে আব্দুল আজিজ, গাজী সালাউদ্দিন আইয়ুবী প্রমুখের ইতিহাস আজও এর উজ্জল সাক্ষ্য বহন করে। ইসলামী রাষ্ট্র একটি সর্বজনীন-আদর্শবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে এ রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুদের যেসব মানবিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক অধিকার রয়েছে, পৃথিবীর আর কোনো রাষ্ট্রেই এরূপ অধিকার নেই। নি¤েœ সংখ্যালঘুদের অধিকার সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হলো :
প্রাণ রক্ষার অধিকার : সমস্ত মানবাধিকারের মধ্যে প্রাণ রক্ষার অধিকার সর্বপ্রধান। ইসলামী রাষ্ট্রে একজন সংখ্যালঘু নাগরিকের প্রাণ একজন মুসলিম নাগরিকের প্রাণতুল্য। রাসূল (সা.)-এর সময় অমুসলিম মুআহিদকে একজন মুসলমান হত্যা করলে রাসূল (সা.) সে হত্যাকারীকে হত্যার নির্দেশ দেন। এসব প্রসঙ্গে আল্লাহপাক এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো একজনকে হত্যা করল সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করলো। আর যে ব্যক্তি কারো প্রাণ রক্ষা করল সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো’ (সূরা মায়িদা : ৩২)
সম্পদ রক্ষার অধিকার : ইসলামের রাষ্ট্রীয় সীমানায় বসবাসকারী আনুগত্যশীল প্রতিটি নাগরিকের সম্পদের হেফাজত করা ইসলামী সরকারের ও প্রতিটি মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তাদের রক্ত আমাদের রক্তের মত, তাদের সম্পদ আমাদের সম্পদের মত, তাদের ইজ্জত-আবরু আমাদের ইজ্জত-আবরুর মত’। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোন সংখ্যালঘুকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরের রাস্তা হতেও পাওয়া যায়’ (বুখারী)। রাসূল (সা.) আরও ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো চুক্তিবদ্ধ নাগরিকের উপর জুলুম করবে ও তার সামর্থ্যরে অতিরিক্ত কাজের চাপ দিবে বা করতে বাধ্য করবে, কিয়ামতের দিন আমি তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী হয়ে দাঁড়াব’ (আবু দাউদ)।
ইজ্জত-আবরুর হেফাজত : ইসলামের দৃষ্টিতে সংখ্যালঘুদের ইজ্জত আবরু একজন মুসলমানের ইজ্জত আবরুর মতই গণ্য। এমনকি যুদ্ধরত শত্রুদের মা, বোন ও ধর্মীয় নেতাদের ইজ্জত আবরুর হেফাজতের নিশ্চয়তা দিয়েছে ইসলাম। শুধু তাই নয়; এমনকি তাদের ব্যাপারে অনর্থক অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করাও পছন্দের নজরে দেখেনি ইসলাম। এ প্রসঙ্গে আমরা হযরত উমর (রা.) এর আমলের একটি ঘটনা উল্লেখ করতে পারি। হযরত ওমর (রা.) এর আমলে হিমসের গভর্নর উমাইয়া ইবনে সাদ-এর জবান থেকে একদিন কোন এক সংখ্যালঘু সম্পর্কে বের হয়ে গিয়েছিল-‘আখযাকাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছিত করুন। এ বাক্যের পর তিনি অত্যন্ত অনুতপ্ত হয়ে পদত্যাগ করেছিলেন এবং বলেছিলেন এ পদের গর্বেই আমার দ্বারা এমন হয়ে গেছে। তাই এটা ইনসাফের পরিপস্থি যে, আমি পদে আসীন থাকি।
ধর্ম ও সাংস্কৃতিক নিরাপত্তার অধিকার : ইসলামী রাষ্ট্র একটি আদর্শবাদী রাষ্ট্র হওয়ার জন্যই সংখ্যালঘুদের ধর্ম ও সাংস্কৃতিক ব্যাপারে নজিরবিহীন উদারতা ও সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে। সংখ্যালঘুদের পূর্ণ স্বাধীনতার সাথে নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে বসবাস করার নিশ্চয়তা দিয়েছে ইসলাম। রাসূলে পাক (সা.) নাজরানবাসীদের সাথে যে সন্ধি করেছিলেন তাতে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, ‘তাদের ধর্মীয় ব্যাপারে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করা হবে না। তাদের কোনো পাদ্রীকে তার পদ থেকে সরানো যাবে না। তাদের ধর্মীয় সন্নাসীদেরকে উত্যক্ত এবং গির্জার চাবি রক্ষককে তার কাজ হতে পদচ্যুত করা হবে না।’ সেই সাথে তারা যাতে করে নিশ্চিন্তে নিজেদের ধর্ম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করতে পারে, তার ব্যাপারে সহযোগিতা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা (মুসলমানরা) আহলে কিতাব লোকদের সাথে ঝগড়া-ফাসাদ, বাকবিত-া করো না। যদি করতে বাধ্য হও, তবে উত্তমভাবে করবে। তবে যারা জালিম তাদের প্রসঙ্গে এ নির্দেশ নয়। তোমরা বরং বল আমরা ঈমান এনেছি যা আমাদের জন্য নাজিল হয়েছে তার প্রতি, আর যা তোমাদের প্রতি নাজিল হয়েছে, তার প্রতিও’ (সূরা আনকাবুত : আয়াত-৪৬)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘ধর্মের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই’ (সূরা বাকারা : আয়াত-২৫৬)। আরও ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্যে এবং আমার ধর্ম আমার জন্যে’ (সূরা কাফিরুন : আয়াত-৬)। (চলবে)
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জুলাই বিপ্লবে আহত ১৪ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ পদে এখনো ভারতীয়রা
ভারতে নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশের সা¤প্রতিক ঘটনা হিসেবে প্রচার
দাদাবাড়ি বেড়াতে এসে খুন হলো শিশু সাফওয়ান, আটক ২
নরসিংদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে লক্ষ্য করে বালুদস্যুদের গুলিবর্ষণ
নরসিংদীতে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মানববন্ধন
রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার
রাজবাড়ীতে আ.লীগ দুই নেতা কারাগারে
কমলগঞ্জে ৮২ শতক সরকারি খাস জমি উদ্ধার
প্রিমিয়ার ভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন চসিক মেয়র
কুষ্টিয়ায় প্লাইউড বোর্ড কারখানায় আগুন
বিএনপি নেতা কায়কোবাদের দারুল উলূম হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদরাসা পরিদর্শন
মাদারীপুরে পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত
গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন
নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
নিজ বাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ
ট্রাভেল ব্যান্ড হ্যালির ধুমকেতুর দুই গান