জুয়ামুক্ত সমাজের সন্ধানে
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৯ পিএম | আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
আল্লাহ প্রদত্ত মানবপ্রতিভার বড় নির্দয়ভাবে অপচয় হচ্ছে কিংবা হচ্ছে অপব্যবহার। জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই তা সঠিক খাতে পরিচালিত এবং সঠিক কাজে নিয়োজিত হচ্ছে না। মানুষের যাবতীয় মেধা ও প্রতিভা মানবজাতি ও মানবসভ্যতার কল্যাণ সাধনের পরিবর্তে ডেকে আনছে তার চরম সর্বনাশ। সাহস ও বীরত্বের প্রকাশ ঘটছে যুলুম অত্যাচারের পথে। দানশীলতা ও বদান্যতার প্রকাশ ঘটছে অপচয় ও অপব্যায়ের পথে। মেধা ও বুদ্ধির প্রকাশ ঘটছে অপরাধের নব নব কৌশল এবং প্রবৃত্তির চরিতার্থতার নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে। আল্লাহর দেয়া নেয়ামত-ধনসম্পদের অপব্যবহার হচ্ছে, জুয়া ফ্লাস, পাশা, বাজি রেখে ঘোড়দৌড়, তাসখেলা, চাকতি ঘোরানো ও রিং নিক্ষেপ ইত্যাদির পেছনে। ধীরে ধীরে সমাজদেহে এমনসব দুষ্ট ব্যাধি বাসা বাঁধতে শুরু করেছে, যা মানবতার ধ্বংসকেই শুধু তরান্বিত করছে এবং আশা ও আশ্বাসের সব আলো নিভিয়ে এমন অন্ধকার গহব্বরের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে যেখান থেকে উদ্ধারের কোনো উপায় থাকে না।
বর্তমান সামাজিক ব্যাধিগুলোর অন্যতম হচ্ছে জুয়া। একটা সময় গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন বাঁশঝাড়ে জুয়াড়িদের দেখা মিলত। লোকচক্ষুর অন্তরালে গিয়ে মানুষ এসব অসামাজিক কাজে জড়িত হত। কিন্তু সময় যত এগুচ্ছে জুয়াড়িদের দৌরাত্ম ততই বেড়ে যাচ্ছে। নতুন নামে অপরাধের ভিন্ন রূপ নিয়ে জুয়ার অভিনব সব পদ্ধতির আবিষ্কার হচ্ছে। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, বিভিন্ন অলিতেগলিতে, শহরে কিংবা গ্রামে নামে-বেনামে জুয়ার রমরমা ব্যবসা চলছে। কৃষক, তরুণ, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছেন মরণনেশা জুয়ায়। এসব আসরে উড়ছে লাখ লাখ টাকা। বর্তমানে জুয়াবাজির জন্য বিভিন্ন রকমের আসর বসে বিভিন্ন স্থানে। কোথাও হাউজি আবার কোথাও সবুজ টেবিল নামে। ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধুলার প্রতিযোগিতায়ও বাজি ধরা হয়।
জুয়ার আর্থিক ও পারিবারিক ক্ষতি :- জুয়ার খপ্পরে পড়ে নি¤œ আয়ের মানুষ আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। জুয়ার নেশায় পড়ে একজন বিত্তশালী মানুষ মুহূর্তেই ধনসম্পদ হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। গেম থিওরির সফল ব্যবহারের কারণে কোনো জুয়াড়ির পক্ষেই ক্রমাগত জিতে যাওয়া সম্ভব নয়। এরকম ক্ষেত্রে কিংবা ক্রমাগত হার স্বীকার করে দেউলিয়া হলে মানুষ হতাশায় পড়ে। ক্রমেই সে বিষণ্নতায় ভোগে এবং শান্তির পরিবারে অশান্তির আগুন প্রজ্জ্বলিত হতে থাকে। সম্পর্কের অবনতি ঘটে যা ডিভোর্স ও ছাড়াছাড়ি পর্যন্ত গড়ায়, আবার কেউ কেউ তো আত্মহত্যার সিদ্ধান্তও নেয়।
জুয়ার সামাজিক ক্ষতি:- জুয়া সমাজে অনাচার অস্থিরতা সৃষ্টি করে। জুয়ার প্রভাবে সমাজে দ্বন্দ্ব কলহ বাড়তে থাকে।
জুয়ার কারণে একটা সুন্দর সুশৃঙ্খল সমাজ ক্রমেই বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে। অনেকসময় দেখা যায়, জুয়াকে কেন্দ্র করে সমাজে মারামারি আর হতাহতের ঘটনাও ঘটে। জুয়া খেলতে গিয়ে পরস্পর মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়ে বহুদিনের সম্পর্কে ভাটা পড়ে।
জুয়ার রাষ্ট্রীয় ক্ষতি :- জুয়ার মাধ্যমে একই স্থানে অল্প সময়ের মধ্যে এত টাকার লেনদেনের কারণে দেশে অপরাধ বেড়ে যেতে পারে। নানা রকমের প্রতারণা, আন্ডারওয়ার্ল্ড গ্যাংয়ের উদ্ভব, বিভিন্ন রকমের অরাজকতার সৃষ্টি হতে পারে। জুয়া বিত্তবানদের আরও বিত্তশালী হওয়ার ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখে , যা সম্পদে বৈষম্য আছে এমন একটি দেশে বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
জুয়ার ধর্মীয় ক্ষতি :- জুয়া মানুষকে উন্মাদ করে দেয়, নীতিনৈতিকতা কেড়ে নেয়। ফলে তারা আল্লাহকে ভুলে এই শয়তানি মরীচিকায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দেয়। জুয়া মানব-সভ্যতার চরম শত্রু। এটা জীবন ও সম্ভাবনাকে নষ্ট করে। দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টাকে বরবাদ করে। জুয়ার কারণে সভ্যতা ও সম্ভাবনার চাকা পিছনের দিকে ঘুরতে থাকে। তাই কল্যাণের ধর্ম ইসলামে এর কোনো স্থান নেই। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা, নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদি ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা-বিদ্বেষ ঘটাতে এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে। তবে কি তোমরা বিরত হবে না?’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৯০-৯১)।
নবী কারিম সা.ও জুয়া থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। ভয় দেখিয়েছেন জুয়ার শাস্তির কথা বর্ণনা করে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মদ, জুয়া ও বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন। ’ (বায়হাকি, হাদিস: ৪৫০৩; মিশকাত, হাদিস: ৪৩০৪)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়ায় অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদাতা ও মদ্যপায়ী জান্নাতে যাবে না। ’ (দারেমি, হাদিস: ৩৬৫৩; মিশকাত, হাদিস: ৩৪৮৬)।
এসব খেলায় আসক্ত হওয়ার কারণ :- বস্তুত: মানুষের যখন আখেরাত ও অনন্ত জীবনের ব্যাপারে উদাসীনতা সৃষ্টি হয়, দুনিয়ার দু’দিনের জীবন ছাড়া আর সবকিছুই তার কাছে ফিকে মনে হয়, এ জগতের বাইরে কল্পনা- উর্ধ্ব আরেকটি জগত আছে, সময় ও সীমাহীন আরেকটি জীবন আছে বলে যার জানা নেই, সে কী আর করতে পারে, বরং কী না করতে পারে! ষাট সত্তর বছরই ত তার পুঁজি, তার আশা আকাঙ্ক্ষার শেষ সীমা, তার জ্ঞান ও চিন্তার শেষ সীমানা। কিসের আশায় কিসের ভরসায় বর্তমানের ভোগ-উপভোগ, স্বাদ আহ্লাদ ও আনন্দ ফূর্তির কোনো সুযোগ হাতছাড়া করবে সে? কোন জীবনের জন্য, কোন আনন্দের জন্য, কোন প্রাপ্তি ও তৃপ্তির জন্য ত্যাগ ও আত্মত্যাগ ক্ষুধা ও তৃষ্ণা এবং সাধনা ও সংযমের জীবন অবলম্বন করবে সে? এটাই হচ্ছে জীবন সম্পর্কে আজকের সভ্য মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। তাই তো হেসে খেলে, জুয়ার আড্ডায়, মদের বারে, আল্লাহর দেয়া জীবনটাকে হেসেখেলে নষ্ট করে দিচ্ছে। আল্লাহ পানাহ!
মুক্তির উপায় কোন পথে :-
আমরা যদি সামাজিক ব্যাধিগুলো থেকে মুক্তি পেতে চাই, তাহলে গোড়া থেকে সংস্কার শুরু করতে হবে। আবার আমাদের ইসলামের দিকে ফিরে আসতে হবে। ঈমানী পরিবেশে,ঈমানী তারবিয়াত গ্রহণ করতে হবে। মনস্তত্ত্ব ও নৈতিকতার ইতিহাস মানুষের মধ্যে মানবিক বিচ্যুতি ও নৈতিক স্খলনের পথে যতগুলো প্রতিরোধকের সাথে পরিচিত হয়েছে তন্মধ্যে ঈমানই হচ্ছে সবচে’ কার্যকর ও শক্তিশালী প্রতিরোধক। সেই ঈমানই সাহাবায়ে কেরাম অর্জন করেছিলেন নবীজির সোহবত ও তারবিয়াত থেকে। কত সজীব জীবন্ত ও আর জাগ্রত ঈমান! তাই তো দেখা যায়, মানবিক দুর্বলতার কোনো শিথিল মুহূর্তে যদি ভিতরের পশুপ্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠত এবং কোনো স্খলন ঘটে যেত তখন ঈমানই তাদের ভেতরটাকে এমনভাবে নাড়া দিত এবং অন্তরে অনুশোচনার এমন দহন ও বিবেকের দংশন সৃষ্টি করত যে, সাজা ও শাস্তির জন্য কানুনের হাতে নিজেকে তুলে না দিয়ে স্থির থাকা সম্ভব হত না।
এভাবে আল্লাহর গজব ও আখেরাতের আজাব থেকে বাঁচার জন্য দুনিয়ার কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি তারা অম্লান বদনে মাথা পেতে নিতেন। এটা কিসের ফল! আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান ও আত্মসমর্পণ এবং সর্বত্র- সংরক্ষণ আল্লাহ দেখছেন এ বিশ্বাসের ফল।
আমরাও যদি এরকম ঈমান অর্জন করতে পারি, গুনাহের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ফিরে আসতে সচেষ্ট থাকি, তাহলে ইনশাআল্লাহ শুধু জুয়া নয় সকল অনাচার থেকেই আমরা মুক্তি পাব। আর মুক্তি তো আমাদের পেতেই হবে। যেহেতু আখিরাত সত্য, জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য তাই সকল অনাচার আমাদের ছাড়তেই হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন। ইয়া রাববাল আলামীন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জুলাই বিপ্লবে আহত ১৪ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ পদে এখনো ভারতীয়রা
ভারতে নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশের সা¤প্রতিক ঘটনা হিসেবে প্রচার
দাদাবাড়ি বেড়াতে এসে খুন হলো শিশু সাফওয়ান, আটক ২
নরসিংদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে লক্ষ্য করে বালুদস্যুদের গুলিবর্ষণ
নরসিংদীতে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মানববন্ধন
রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার
রাজবাড়ীতে আ.লীগ দুই নেতা কারাগারে
কমলগঞ্জে ৮২ শতক সরকারি খাস জমি উদ্ধার
প্রিমিয়ার ভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন চসিক মেয়র
কুষ্টিয়ায় প্লাইউড বোর্ড কারখানায় আগুন
বিএনপি নেতা কায়কোবাদের দারুল উলূম হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদরাসা পরিদর্শন
মাদারীপুরে পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত
গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন
নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
নিজ বাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ
ট্রাভেল ব্যান্ড হ্যালির ধুমকেতুর দুই গান