ইসলামে সংখ্যালঘুদের অধিকার
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৭ পিএম | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম

অর্থনৈতিক আবাদি : ইসলাম প্রতিটি সংখ্যালঘুদের বৈধ অর্থনৈতিক আবাদি এবং মালিকানার অধিকার দান করেছে। এমনকি যেসব পথে উপার্জন করা একজন মুসলমানদের জন্য হারাম অনেক ক্ষেত্রে সেসব পথে তাদেরকে উপার্জনের অধিকার দিয়েছে। যেমন মদ ও শূকরের ব্যবসায় এবং এর পালন ইত্যাদি ক্ষেত্রে একজন সংখ্যালঘুর পূর্ণ অধিকার রয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমাদের জন্য শির্কা যেমন তাদের জন্য মদ তেমন, আমাদের জন্য বকরি যেমন তাদের জন্য শূকর তেমন’।
রাজনৈতিক অধিকার : দেশের সার্বিক কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রেখে আপন মতামত ব্যক্ত করা এবং এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করার অধিকার প্রতিটি নাগরিকেরই রয়েছে। এ সম্পর্কে ইসলাম সংখ্যালঘুদের যেসব অধিকার দিয়েছে-(১) সাধারণ প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের গঠনমূলক মতামত একজন মুসলমানের মতামতের মতই গণ্য। (২) তাদের নিজস্ব ব্যাপারে ইসলামী সরকার তাদের সাথে পরামর্শ করে কাজ করবে। হযরত উমর (রা.) সংখ্যালঘুদের সম্পর্কীয় বিষয়ে তাদের পরামর্শ এবং মতামত না নিয়ে কিছুই করতেন না। (৩) তাদের ধর্মীয় বিষয়াদিতে শুধু তাদের মতামতই গ্রহণযোগ্য। এ ব্যাপারে তারা যে ব্যাখ্যা দিবেন তাই মানা হবে-অন্য কারো মতামত গ্রহণ করা হবে না।
প্রতিরক্ষা বিভাগ : প্রতিটি সংখ্যালঘুর জানমাল, ইজ্জত আবরুর দায়িত্ব ইসলামী সরকার গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু তাদেরকে কোনো জিহাদে অংশগ্রহণ করতে হয় না। কিন্তু এর বিনিময়ে ইসলামী রাষ্ট্র সংখ্যালঘুদের নিকট হতে প্রতিরক্ষা কর নিয়ে থাকে। আর এ কারণেই এটা শুধু যুদ্ধক্ষম ব্যক্তির উপরই অর্পিত হয়ে তাকে। শিশু, বৃদ্ধ, মেয়ে, অন্ধ প্রমুখের উপর এ কর ধার্য করা হয় না। এমনকি মুসলমান সরকার যদি তাদের জানমাল হেফাজতে কোনো কারণে অপারগ হয়ে পড়ে, তবে তাদের কাছ থেকে আদায়কৃত ওই কর সরকারের পক্ষ থেকে ফেরত দিতে হবে।
চাকুরি লাভের অধিকার : ইসলামী রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু নাগরিকদের রাষ্ট্রপ্রধান, সেনাপতি, বিচারপতি প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ পদ ছাড়া অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি চাকরি লাভের অধিকার রয়েছে। এ ব্যাপারে উপযুক্ততা, রাষ্ট্রীয় আনুগত্য, আমানতদারি ও দক্ষতা একমাত্র বিচার্য বিষয় বলে গণ্য হবে।
সাম্য : মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সাম্য স্বীকৃত। এ ক্ষেত্রে মুসলিম এবং অমুসলিম নাগরিকের মধ্যে বৈষম্য করা যাবে না।
নিজস্ব আইন প্রয়োগের স্বাধীনতা : নিজেদের উপর নিজস্ব আইন প্রয়োগ করার স্বাধীনতা সংখ্যালঘুদের দিয়েছে ইসলাম। এক্ষেত্রে ইসলামী সরকারের হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। এমনকি এ ব্যাপারে বিচারের জন্য ইসলামী আদালতে আসতে তারা বাধ্য নয়।
সংখ্যালঘুদের উপদেষ্টা বোর্ড : ইসলামী সরকার সংখ্যালঘুদের থেকে তাদের ভোট অনুয়ায়ী নির্বাচন করে একটি উপদেষ্টা বোর্ড গঠন করতে পারেন যারা সংখ্যালঘুদের অভাব অভিযোগ সম্পর্কে তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি পালনে কোনোরূপ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে কিনা ইত্যাদির দিকে লক্ষ্য রাখবেন এবং প্রয়োজনবোধে তাদের নিজস্ব আইন এর আওতায় আইন বানানোর সুপারিশ করবেন।
সমান বিচার পাবার অধিকার : বিচারের ক্ষেত্রে ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতে মুসলিম নাগরিক এবং সংখ্যালঘুদের মধ্যে কোন পার্থক্য সৃষ্টি করা হয় না। এ ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু নাগরিক সঠিক বিচার পেয়ে থাকে। কোনো মুসলিম একজন সংখ্যালঘুকে হত্যা করলে তার যে শাস্তি হবে, কোনো সংখ্যালঘু একজন মুসলিমকে হত্যা করলে তাকেও একই শাস্তি দেওয়া হবে।
ভূসম্পতিতে মালিকানার অধিকার : ইসলামী রাষ্ট্রে সন্ধিবদ্ধ সংখ্যালঘু নাগরিক নিজ নিজ ভূসম্পত্তির মালিক থাকবেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম মালিক (র.) বলেছেন, ‘যেসব দেশ সন্ধিসূত্রে অধিকার করা হয়েছে, সেসব দেশের ভূমির মালিক সে দেশের অধিবাসী।
জীবনযাত্রার মৌলিক প্রয়োজনে সাহায্য লাভের অধিকার : ইসলামী রাষ্ট্রে মুসলমান নাগরিকের মত সংখ্যালঘু নাগরিকদেরও জীবনযাত্রার মৌলিক প্রয়োজনে সাহায্য লাভের অধিকার রয়েছে। জীবনযাত্রার মৌলিক প্রয়োজন হতে তাদেরকে বঞ্চিত করা হয় না। ইসলামী রাষ্ট্রে কোনো সংখ্যালঘু নাগরিককে অন্নহীন, বস্ত্রহীন ও আশ্রয়হীন থাকতে দেওয়া হয় না। এ প্রসঙ্গে আমরা হযরত উমর (রা.)-এর ঘটনা উল্লেখ করতে পারি। হযরত উমর (রা.) একজন বৃদ্ধ ইহুদীকে দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করতে দেখে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তোমার এ অবস্থা কেন? সে বলল, জিযিয়া দেওয়ার বাধ্যবাধকতা, অভাব এবং বার্ধক্য। খলিফা তার হাত ধরে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন এবং নিজের ভা-ার থেকেই তার প্রাথমিক প্রয়োজন পূরণ করে দিলেন এবং বায়তুল মাল পরিচালককে ওই ব্যক্তির অবস্থানুযায়ী মাসিক ভাতা প্রদানের নির্দেশ দিয়ে বললেন, ‘এ ব্যক্তির যৌবনকাল তো সমাজের কাজে অতিবাহিত হয়েছে। আর এখন এই বৃদ্ধকালে তাকে অসহায় করে ছেড়ে দেব-এটা কখনই ইনসাফ হতে পারে না।’ একদা হযরত আলী (রা.) এক বৃদ্ধ খ্রিস্টানকে ভিক্ষা করতে দেখে বলেছেন-‘সে যখন শক্তিমান ছিল তখন তোমরা তাকে কাজে লাগিয়েছ, এখন সে বৃদ্ধ ও অক্ষম, এমতাবস্থায় সে ভিক্ষা করবে-এটা কখনও হতে পারে না। তোমরা বায়তুলমাল থেকে তার প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা কর।’ ইসলাম শুধু জীবিত অমুসলিমদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নীতি অবলম্বন করেনি; বরং মৃত অমুসলিমদের প্রতিও সম্মান প্রদর্শনের নীতি অবলম্বন করেছে। এ প্রসঙ্গে আমি রাসূল (সা.)-এর একটি ঘটনা উল্লেখ করতে পারি। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একবার আমাদের কাছে দিয়ে এক জানাযা অতিক্রম করল। এটার জন্য রাসূল (সা.) দাঁড়িয়ে গেলেন, আর তাঁর সাথে আমরাও দাঁড়িয়ে গেলাম। অতঃপর তাঁকে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটি তো ইহুদীর লাশ। রাসূল (সা.) বললেন, (কেন, ইহুদী কী মানুষ নয়?) মৃত্যু একটি ভয়াবহ ব্যাপার। সুতরাং যখনই তোমরা কোনো লাশ দেখবে তখনই তোমরা দাঁড়িয়ে যাবে’ (বুখারী ১ম খ- : পৃষ্ঠা-১৭৫, মুসলিম ১ম খ- : পৃষ্ঠা-৩১০, মিশকাত : পৃষ্ঠা-১৪৪)।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

‘মিশন কমপ্লিট’ লিখে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার স্ট্যাটাস

আলোর মুখ দেখেনি যেসব ঢাকাই সিনেমা

হার্ভার্ড বামপন্থীদের আখড়া, শিক্ষার জন্য উপযুক্ত নয় : ট্রাম্প

ইইউর ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ, কঠিন হবে আশ্রয় পাওয়া

কর্তাব্যক্তির ইশারায় চলে উখিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতি-দূদক

ওয়াকফ আইন’ বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক আজ

যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের কবরস্থান ভাঙচুর, ৮৫টি কবর ভাঙচুর

ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ১৩ বছর আজ, সিলেটে বিএনপির নানা কর্মসূচি

বাংলাদেশকে ৭২৪ কোটি টাকার সহায়তা দেবে জার্মানি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ২৫ ফিলিস্তিনি

১৫ বছর পর বাংলাদেশ-পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবরা বৈঠকে বসছেন আজ

উখিয়ায় পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় ১ শিশু নিহত ও আহত ৬

আবারও নিষেধাজ্ঞা পেলেন জহির

সখিপুরে প্রবাসীর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার

আইপিএলে সন্দিপের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড

ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে নিষিদ্ধ ইংলিশ পেসার

আমিরাতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সম্মানে বাংলাদেশ দূতাবাসের জমকালো অনুষ্ঠান

সেই বার্নাব্যুতে রিয়ালকে হারিয়েই সেমিত আর্সেনাল

স্টার্কের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সুপার ওভার রোমাঞ্চ জিতল দিল্লী