যৌতুক একটি অভিশপ্ত সামাজিক ব্যাধি
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:২৭ পিএম | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
ভয়াবহ ভাইরাসের ন্যায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া এক অভিশপ্ত সামাজিক ব্যাধির নাম যৌতুক। যা ইতোমধ্যে সমাজদেহের ক্যানসারে রূপ নিয়েছে এবং এর বিষক্রিয়ায় গোটা সমাজ জর্জরিত হয়ে গেছে। নারীজীবনে এ প্রথা অভিশাপস্বরূপ। প্রতিনিয়ত অসংখ্য নারী অত্যাচারিত ও নিপীড়িত হচ্ছে যৌতুকের কারণে। অসংখ্য নারীর সুখের সংসার ভেঙে যাচ্ছে যৌতুকের অভিশাপে। পিতৃবিয়োগের পর পৈতৃক সম্পদ ভাই বোনদেরকে, দাদা লোকান্তরে তার ত্যাজ্য সম্পদ বাপ-চাচা ফুফুদেরকে, তাদের ন্যায্য প্রাপ্য হিসাবে দিয়ে দেওয়া দূরের কথা, নারীদের প্রাপ্য সম্পদে আজ তাদের কোন অধিকার আছে বলেও স্বীকার করা হচ্ছে না। ফলে একদিকে যেমন মেয়েরা আল্লাহ তাআলার বিধানগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে যৌতুকের জাঁতাকলে তারা আজ নিষ্পেষিত হচ্ছে।
যৌতুক মুশরিক সমাজের প্রথা : যৌতুক উপমহাদেশীয় কুসংস্কারের অংশ। বর্তমানে যৌতুক প্রথার ভয়াবহতা বাড়লেও এর প্রচলন প্রাচীনকাল থেকেই। এর সূচনা মূলত হিন্দু সমাজে হয়েছে। হিন্দু সমাজে নারীরা সম্পদের উত্তরাধিকারী হতো না। তাই তাদের বিয়ের সময় যৌতুক দেওয়ার প্রচলন ছিল। কিন্তু ইসলাম ধর্মে বিধানগতভাবেই নারীরা পৈতৃক সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়, তা সত্ত্বেও কালক্রমে মুসলিম সমাজে এই অভিশপ্ত প্রথার অনুপ্রবেশ ঘটে।
ভিন্ন ধর্মের সংস্কৃতি গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা : ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। তার রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি আর স্বকীয়তা। তাই তো ইসলাম ধর্মে ভিন্ন সংস্কৃতি গ্রহণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং কঠোর হুশিয়ারী বার্তাও প্রদান করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস ৪০৩১)।
যৌতুক নিপীড়নমূলক রেওয়াজ: যৌতুক একটি নিপীড়নমূলক রেওয়াজ। এখানে কনেপক্ষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অন্যায়ভাবে তার পরিবার থেকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা আদায় করা হয়। এটা শুধু জুলুম নয়, অনেক বড় জুলুম। আর তা শুধু ব্যক্তির উপর নয়, গোটা পরিবার ও বংশের উপর জুলুম। অথচ আল্লাহতায়ালা কাউকে জুলুম করে সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভক্ষণ কোরো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৮)।
যৌতুকের বিরূপ প্রভাব : যৌতুক প্রথা আমাদের সমাজ জীবনে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। দেখা যায়, যৌতুকের অর্থের পরিমাণ সামান্য কম হলেই দরিদ্র পরিবারের মেয়ের উপর নানারকম অসহনীয় অত্যাচার ও নির্যাতন করে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। মেয়েকে সুখে রাখার জন্য প্রতিনিয়ত স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির আবদার মেটাতে গিয়ে অনেক দরিদ্র মেয়ের বাবাই নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে যায়। যৌতুকের চাহিদা মেটাতে না পেরে অনেক নারীকেই স্বামীগৃহ ত্যাগ করে পিতৃগৃহে ফিরে আসতে হয়। আবার অনেকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যার পথও বেচে নেয়।
শুধু আর্থিক লেনদেনই যৌতুক নয়: সমাজে বিভিন্নভাবে যৌতুকের লেনদেন হয়ে থাকে। কখনো সরাসরি আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে, কখনোবা আসবাব-পত্র, বাহন, জমি-জমা, ফ্ল্যাট, বিদেশ পাঠানোর খরচ, ব্যবসার ব্যবস্থা করে দেওয়া ইত্যাদি। কিন্তু কিছু মানুষ আর্থিক লেনদেনকেই কেবল যৌতুক মনে করেন, আর্থিক লেনদেন ছাড়া অন্যান্য বিষয়কে যৌতুক মনে করেন না; বরং সেগুলোকে নিজেদের এক প্রকার হক ও প্রাপ্য মনে করেন, যদিও তা পূর্বশর্ত, সামাজিক চাপ বা প্রথার কারণে হয়ে থাকে। এটা তাদের নিতান্তই ভুল ধারণা।
যৌতুক গ্রহণ করা হারাম : কারো স্বপ্রণোদিত ও স্বতস্ফুর্ত সম্মতি ছাড়া প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চাপ প্রয়োগ করে কোনো কিছু গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম। নবি কারিম সা. ইরশাদ করেন, ‘সাবধান! কারো জন্য তার ভাইয়ের কিছুমাত্র সম্পদও বৈধ নয়, যদি তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি না থাকে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫৪৮৮)।
হারামের ব্যাপারে হুশিয়ারি বার্তা: নবি কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ঐ দেহ বেহেশতে যাবে না, যা হারাম (গিযা) থেকে উৎপন্ন হয়েছে। দোযখের আগুনই তার অধিক উপযোগী। (সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ১৭২৩, ৪৫১৪)।
যৌতুক ডাকাতি ও লুটতরাজ : যৌতুক নেওয়া কারো সামান্য জিনিস তুলে নেওয়ার মতো বিষয় নয়; বরং তা সরাসরি লুণ্ঠন ও ডাকাতি। পার্থক্য শুধু এই যে, এখানে ছুরি-চাকুর বদলে বাক্যবান ও চাপের অস্ত্র প্রয়োগ করা হয়।
যৌতুক কবিরা গুনাহ : আর অন্যের সম্পদ লুট বা ডাকাতি করা কবীরা গুনাহ! বড় কোনো সম্পদ নয়, যদি জোর করে কেউ কারো একটি ছড়িও নিয়ে যায় সেটাও গছব ও লুণ্ঠন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ যেন তার ভাইয়ের জিনিস উঠিয়ে না নেয়; না ইচ্ছা করে, না ঠাট্টাচ্ছলে। একটি ছড়িও যদি কেউ তুলে নেয় তা যেন অবশ্যই ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৭৯৪০)।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ছাগলনাইয়ায় দুই হাত কাটা যুবকের লাশ উদ্ধার
কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লিটন, সম্পাদক মামুন
খুবি কেন্দ্রে ঢাবি ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্নের লক্ষ্যে নানা সিদ্ধান্ত
ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের আদেশ স্থগিতে ১৮টি রাজ্যের মামলা
টেলিকমে অপ্রয়োজনীয় লাইসেন্স বাতিল করা হবে : বিটিআরসি চেয়ারম্যান
ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাইভেট কারচালক নিহত
খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য
আনিসুল হকের আয়কর নথি জব্দ
সাবেক ক্রিকেটার দুর্জয়ের সম্পদ জব্দ, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আদেশ
বন্দরে বকেয়া বেতন দাবিতে পারটেক্স শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচি
অবৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে ইস্ট এশিয়ান ইউনিভার্সিটি : ইউজিসি
ধামরাইয়ে ৩ দিনেও সন্ধান মেলেনি ইজিবাইক চালকের
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালিত
গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমুক্ত সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা -নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক
বিদ্যুৎ উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিল পবিস কর্মীরা
উত্তরা উলামা আইম্মা পরিষদের কমিটি গঠন
ডাকাতির ভিডিও ভাইরাল হলেও অধরা রূপগঞ্জের রুবেল
সিনিয়র-জুনিয়র সংঘাতের দায়ে অভিযুক্ত দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার
পদ্মা ব্যাংকের ১২২তম পরিষদ সভা অনুষ্ঠিত
ভারতের ছত্তিশগড়ে বন্দুকযুদ্ধে ২০ মাওবাদী নিহত