ইসলামে সংখ্যালঘুদের অধিকার
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:২৮ পিএম | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

জীবন ধারণের প্রধান উপকরণ হলো খাদ্য। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন খাদ্য গ্রহণ। কারণ আল্লাহ তাআ’লা মানুষকে এ চাহিদা দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। এ চাহিদা মুসলিম অমুসলিম সকলেই পূরণ করে। সকলেই খাবার খেয়ে থাকে।তবে অমুসলিমদের খাওয়া-দাওয়াটকে আল্লাহ তাআ’লা পশুপাখির খাবারের সাথে তুলনা করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর যারা কাফের, তারা উপভোগ করছে ও খাচ্ছে, যেমন গবাদি পশুরা খায়। (সূরা মুহাম্মাদ-১২)। কিন্ত মুসলমানের খাওয়া দাওয়া, ঘুম-বিশ্রাম, চাকরি ইতি ইত্যাদি সবকিছুই ইবাদত। প্রশ্ন জাগতে পারে, এগুলো তো আমাদের দৈনন্দিনের কাজ এবং সেটাও নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য করি। এগুলো ইবাদত হয় কীভাবে? হ্যাঁ, ইবাদত হবে যদি সে কাজগুলো সম্পাদিত হয় সুন্নত পদ্ধতিতে।
খাবারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একাধিক সুন্নত রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি সুন্নত এখানে উল্লেখ করছি। শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা। আবূ নু’আইম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সা.-এর কাছে একদা কিছু খাবার আনা হলো, তাঁর সঙ্গে ছিলেন তার পোষ্য ‘উমার ইবনু আবূ সালামা। তিনি বললেন, বিসমিল্লাহ বল এবং নিজের কাছের দিক থেকে খাও। (বুখারী-৫৩৭৮,ইবনে মাজাহ-৩২৬৫)। আমরা মাঝেমধ্যে খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে ভুলে যাই। কখনো মাঝে, কখনো একেবারে শেষে গিয়ে স্মরণ হয় যে, বিসমিল্লাহ পড়িনি।এ অবস্থায় করণীয় কী? এ সম্পর্কে হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি খাওয়া শুরু করে তখন যেন সে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে। সে খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে তবে যেন বলে, বিসমিল্লাহ ফী আওয়ালিহি ওয়া আখিরাহু (এর শুরু ও শেষ আল্লাহ তা’আলার নামে)। (তিরমিজি, ১৮৫৮,ইবনে মাজাহ,৩২৬৪)।
খাবারের একটি সুন্নত হলো ডান হাতে খাওয়া। বর্তমানে রেস্টুরেন্ট, দামী হোটেল বা বিভিন্ন ভোজ উৎসবে দেখা যায় যে,অনেকে আধুনিকতার নামে চামচ দিয়ে বা বাম হাতে খাবার খেয়ে থাকে। যা সুন্নত পরিপন্থী এবং শয়তানি কাজ। কারণ রাসূল সা. সবসময় ডান হাতে খাবার খেতেন। কখনো বাম হাতে খাবার খেতেন না।হযরত ইবনু উমার রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা.-বলেছেন, বাম হাতে যেন তোমাদের কেউ না খায় এবং পান না করে। কেননা বাম হাতে শাইতান পানাহার করে। (সুনানে তিরমিজি, ১৭৯৯)। অন্য বর্ণনায় হযরত সালিম (রহ.) হতে তার পিতা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,তোমাদের প্রত্যেকে যেন খাওয়ার সময় ডান হাতে খায় এবং ডান হাতে পান করে। কারণ বাম হাতে শাইতান পানাহার করে। (জামে আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৮০০)।দুটো হাদিসে একই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এখান থেকে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।
আমাদের মাঝে একটি বদ অভ্যাস সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। সেটা হলো খাবারের দোষ বর্ণনা করা। অথচ রাসূল সা.কখনো খাবারের দোষ বর্ণনা করতেন না। রুচিসম্মত হলে খেতেন আর রুচিসম্মত না হলে খেতেন না। আবূ হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা.কখনও খাদ্যসামগ্রীর ত্রুটি ধরতেন না। পছন্দ হলে তিনি আহার করতেন, অন্যথায় রেখে দিতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩২৫৯) এখানে লক্ষ রাখতে হবে যে, খাবারে লবণ কম হয়েছে। তরকারি ঝাল হয়নি এগুলো দোষ বর্ণনার পর্যায়ে নয়। দোষ হচ্ছে কোনো খাবারকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা। একথা বলা যে, ডিম আর ডাল এগুলো কোনো খাবার হলো? গোশত দিতে খেতে দেবে ইত্যাদি। পড়ে যাওয়া লোকমা তুলে খাওয়া সুন্নত। মাঝেমধ্যে থালা বা পাত্র থেকে খাবার নিচে পড়ে যায়। সেক্ষেত্রে উত্তম হলো, তা তুলে, ময়লা পরিস্কার করে খেয়ে ফেলা যদি সম্ভব হয়। তা না হলে কোনো প্রাণীকে দিয়ে দেবে।আরেকটি সুন্নত হলো খাবারের পাত্র চেটেপুটে খাওয়া এবং পাত্রে খাবার অবশিষ্ট না রাখা। হযরত আনাস ইবনু মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা.খাওয়া শেষ করে আঙ্গুল চাটতেন এবং বলতেন, তোমাদের কারো লোকমা পরে গেলে সে যেনো তার ময়লা দুর করে তা খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য ফেলে না রাখে। তিনি আমাদেরকে থালা পরিস্কার করে খেতে আদেশ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, তোমাদের কেউই জানে না খাদ্যের কোন অংশে তার জন্য বরকত রয়েছে। (সুনানে আবু দাউদ, ৩৮৪৫, তিরমিজি, ১৮০৩) ।
খাবারের আরো একটি সুন্নত হলো, পাত্রের একপার্শ্ব থেকে খাওয়া । মাঝখান থেকে না খাওয়া। তবে অনেকে অজ্ঞতাবশত পাত্রের মাঝখান থেকে খেতে শুরু করে। এতে খাবারের বরকত নষ্ট হয়। কারণ এক হাদিসে রাসূল সা. ইরশাদ করেন, খাবারের মাঝখানে বরকত নাযিল হয়। ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা.বলেছেন, খাদ্যের মাঝখানে বারকাত নাযিল হয়, অতএব তোমরা এর কিনারা হতে খাওয়া আরম্ভ কর, মাঝখান হতে খেও না। (সুনানে তিরমিজি, ১৮০৫)। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হলো, খাবারের সময় কোনো কিছুতে হেলান দেওয়া বা ঠেক না লাগানো। এটা সুন্নত পরিপন্থি এবং বর্জনীয় কাজ। কারণ এটি অহংকারের আলামত। রাসূল সা. নিজে কখনো হেলান দিয়ে খাবার খাননি। আবূ জুহাইফাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা. বলেছেন, আমি হেলান দিয়ে খাদ্য গ্রহন করি না। (সহিহ বুখারী, ৫৩৯৮-৫৩৯৯,সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩২৬২,সুনানে আবু দাউদ,৩৭৬৯)।
রাসূল সা. তেমনিভাবে ছিলেন উম্মতের রুহানি চিকিৎসক ঠিক তেমনিভাবে তিনি ছিলেন শারীরিক রোগেরও চিকিৎসক। হেলান দিয়ে খাবার খেলে বহু ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এজন্যই মূলত রাসূল সা. হেলান দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। নি¤েœ কিছু ক্ষতির দিক উল্লেখ করা হলো। ১. সঠিকভাবে খাবার চিবানো যায় না, ফলে যে পরিমাণ লালা খাদ্যের সাথে মিশ্রিত হওয়ার কথা ছিল তা হয় না, যার কারণে পাকস্থলীতে মাড় বিশিষ্ট খাবার হজম হয় না, ফলে হজম প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ২. হেলান দিয়ে বসলে পাকস্থলি প্রশস্ত হয়ে যায়। যার ফলে অপ্রয়োজনীয় খাবার পেটে গিয়ে হজম প্রক্রিয়াতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ৩. হেলান দিয়ে খাবারের ফলে অন্ত্র এবং যকৃতের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। একথা অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণিত। সুন্নাতে রসূল সা.ও আধুনিক বিজ্ঞান- ডাঃ মুহাম্মাদ তারেক মাহমুদ।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

র্যাংগস ই-মার্টে শুরু হলো এসি কার্নিভাল

ঈদুল ফিতরে ২১ হাজার উদ্যোক্তাকে ডিজিটাল রূপান্তরে সহায়তা করলো জাতিকইজি

‘মঙ্গল’ নাম বদলে ক্ষোভ, ব্যাখ্যা চান চারুকলার শিক্ষার্থীরা

এক হাজার শয্যার আধুনিক হাসপাতাল উপহার দিচ্ছে চীন

২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রিজার্ভ

বৈশাখের কালো ঘোড়া

কালবৈশাখী

বৈশাখ

আচানক এইসব দৃশ্য

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

নারায়ণগঞ্জে আরসা প্রদানসহ ছয় জনের ফের আট দিনের রিমান্ডে

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ সরদার বকুলের বিরুদ্ধে

ভারতীয় আধিপত্যবাদের হুমকিভারতীয় আধিপত্যবাদের হুমকি

কবিতায় বৈশাখ

দ্রুত সময়ে ময়মনসিংহে বিভাগীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু হবে: বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ

নববর্ষ ও বিজাতীয় আগ্রাসন

নানার বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে পুকুরে ডুবে প্রাণ গেলো শিশুর

বাংলা সন ও সাংস্কৃতিক লড়াই

মাগুরার চাঞ্চল্যকর আছিয়া ধর্ষন মামলার চার্জশিট দাখিল

‘জয় শ্রীরাম’ শ্লোগান দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বিতর্কে তামিলনাডুর রাজ্যপাল