জ্বলছে ফিলিস্তিন : আমাদের নীরবতার শেষ কোথায়
২১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম

আরবদের গৌরবময় ইতিহাস এবং গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে অবশ্যই আরব জাহান এখনো বিশ্বনেতৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করে সমগ্র পৃথিবীকে প্রভাবিত করার পূর্ণ যোগ্যতা রাখে। নতুন বিশ্ব-বিপ্লব, ইসলামের উত্থান ও নবজাগরণের জন্য আরবজাহান ও মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে অধিক উপযোগী আর কোনো জনপদ হতে পারে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে , আরববিশ্ব ও আরবজাতিই আজ হীনমন্যতা ও আত্মবিস্মৃতির সবচে বড় শিকার।
মুসলিম উম্মাহর এ চরম সঙ্কটাপন্ন সময়ে তাদের পরিবেশই সবচে বেশি নিরব, নির্বিকার। তাদের জীবন-সমুদ্রই সবচে বেশি নিস্তরঙ্গ। কোথাও কোনো দ্বীনি তড়প ও অস্থিরতা এবং হিম্মত ও চঞ্চলতার চিহ্নমাত্র নেই। অথচ এখান থেকেই একসময় মানুষ নতুন জীবন, নতুন ইমান লাভ করেছে। এখান থেকেই অর্ধ পৃথিবীর নেতৃত্ব দেয়া হয়েছে। আর আজ তাদের উত্তরসূরিরাই দুর্বল, পশ্চাৎপদ, পরাধীন, যুগের দুর্যোগ ও বিপ্লব - প্রতিবিপ্লবের সামনে অসহায় এক জাতিতে পরিণত হয়েছে।
চুপ থাকার প্রধান কারণ : রাসুল সা. বলেন, এমন এক যামানা আসবে যে, কাফেরের সামনে তোমরা তুফানের বুদবুদের ন্যায় ভেসে যাবে। সাহাবারা প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেসময় কি মুসলমানদের সংখ্যা কম হবে? রাসুল (সা.) বললেন: না! তোমাদের সংখ্যা অধিক হবে কিন্তু তোমাদের অন্তরে ওহান ঢেলে দেয়া হবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ওহান কি? উত্তরে বললেন, দুনিয়ার মহব্বত ও মৃত্যুর ভয়। নবি কারিম সা. এর বাণী আজ অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হচ্ছে। স্বার্থের তাগিদে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যে নিজেদের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে আজ আরব প্রধানরা পশ্চিমাদের পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে। বিশ্লেষকরা তো তা-ই বলছে।
বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, মুসলিম বিশ্বে প্রভাবশালী আরব দেশগুলোর কেউ কেউ ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে আবার কেউ কেউ স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়ায় আছে। ‘নিজেদের ক্ষমতাকে তারা চিরস্থায়ী করে রাখতে চায়। সংগত কারণেই তারা হয়তো মনে করে পপুলার সেন্টিমেন্ট যাই হোক ইসরায়েলকে ঘাঁটানো তাদের ঠিক হবে না। এ কারণেই তাদের কণ্ঠ উচ্চকিত দেখা যায় না।’ (সূত্র, বিবিসি বাংলা)। সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলছেন মুসলিম দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ জটিল রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং পাশ্চাত্য নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ার কারণেই ফিলিস্তিনের পক্ষে শক্তভাবে দাঁড়াতে পারছে না। (প্রাগুক্ত)। প্রাচ্যের কবি আল্লামা ইকবাল আরবজনপদের বর্তমান ও অতীতের মধ্যে তুলনা করে দরদ-ব্যথায় একাকার হয়ে কাতর কণ্ঠে বলেছিলেন, হেজাযের কাফেলায় আজ নেই কোনো হোসাইন, যদিও দজলা ফোরাত আগের ন্যায় বয়ে যায় বিরামহীন।
সমাধান যে পথে : কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া সেই সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে হলে, বিশ্বমঞ্চে আবারও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাইলে নিশ্চয় আমাদের গোড়া থেকে সংস্কার শুরু করতে হবে। আবারও ইসলামের দিকে ফিরে আসতে হবে। ইমানি পরিবেশে, ইমানি তারবিয়াত গ্রহণ করে ইমানি শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ ইমানই মুসলিম জাতির মূল শক্তি। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা হীনবল হয়ো না, চিন্তিতও হয়ো না, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা ইমানদার হও। (আলে ইমরান : ১৩৯)। এ আয়াতটি উহুদ যুদ্ধ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়।
যখন মুসলিম মুজাহিদগণ আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হচ্ছিল, তাঁদের বড় বড় বীরপুরুষদের লাশগুলো চোখের সামনে নাক-কান কর্তিত অবস্থায় পড়েছিল, নবি কারিম সা. কে-ও পাষণ্ডরা আহত করে দিয়েছিল, বাহ্যত মুসলমানদের চূড়ান্ত পরাজয়ের আয়োজন দেখা যাচ্ছিল- এমন নৈরাশ্যজনক পরিস্থিতিতে আল্লাহ তাআলার আশ্বাসবাণী শুনিয়ে দেয়া হল : শুনে রাখ! যুদ্ধের ভয়াবহতা ও নিমর্মতায় ঘাবড়ে গিয়ে আল্লাহর দুশমনদের মোকাবিলায় কোনো ধরনের কাপুরুষতা ও দুর্বলতা প্রদর্শন করো না। বিপদাপদে পড়ে, দুঃখ-চিন্তায় ভারাক্রান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেয়া মুমিনের জন্য শোভা পায় না। মনে রেখো! আজো তোমরাই বিজয়ী ও সম্মানিত। কেননা, দ্বীনকে সমুন্নত করার জন্য তোমরা প্রাণান্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছো। তাই চূড়ান্ত বিজয় তোমাদের জন্যই। তবে শর্ত এই যে, ইমান ও বিশ্বাসের উপর অবিচল থাকতে হবে এবং আল্লাহ তাআলার প্রতিশ্রুতিসমূহের উপর পূর্ণ আস্থা রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। খোদায়ী এই আওয়াজ মুসলমানদের ভগ্ন হৃদয়কে শক্তিশালী করল এবং মৃতদেহে নবজীবন সঞ্চার করল। ফলে, বাহ্যদৃষ্টিতে ইতিপূর্বের বিজয়ী কাফেররা আঘাতপ্রাপ্ত মুজাহিদদের প্রতি-আক্রমণ সামলিয়ে উঠতে পারল না বরং রণাঙ্গন থেকে দিশাহারা হয়ে পালাতে বাধ্য হল। (তাফসিরে উসমানী)। ইমানের উপর অবিচল থাকলে সময়ের পালাবদলে ফিলিস্তিনিরাও স্বীয় মাতৃভূমিকে ফিরে পাবে। একদিন নিশ্চয়ই দখলদারেরা পরাভূত হবে। গাজা, রামাল্লা, নাবলুস বা পশ্চিম তীরের রণাঙ্গনগুলো সম্পূর্ণ শান্ত হয়ে আসবে। ইতিহাস তো তা-ই বলে। এই ফিলিস্তিনের ভূমিতেই একদা কিশোর ডেভিড পাথর ছুড়ে মহাপরাক্রমশালী অত্যাচারী শাসকের যোদ্ধা গোলাইয়াথকে বধ করেছিল। সেই ডেভিড আজ হাজারো ডেভিডে পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিনে হাজারো ডেভিড পাথর ছুড়ে যাচ্ছে। কিশোর ডেভিডের মতোই ফিলিস্তিনের শিশু-কিশোরেরা ইসরায়েল নামক গোলাইয়াথকে বধ করবে। ফিলিস্তিনিরা আকাশ সেদিন ‘আযাদ ফিলিস্তিন, আযাদ ফিলিস্তিন’ শব্দে প্রকম্পিত হবে। কালের গর্ভে কী লুকিয়ে আছে, সময়ই তা বলে দিবে ইনশাআল্লাহ।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ২৫ ফিলিস্তিনি

১৫ বছর পর বাংলাদেশ-পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবরা বৈঠকে বসছেন আজ

উখিয়ায় পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় ১ শিশু নিহত ও আহত ৬

আবারও নিষেধাজ্ঞা পেলেন জহির

সখিপুরে প্রবাসীর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার

আইপিএলে সন্দিপের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড

ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে নিষিদ্ধ ইংলিশ পেসার

আমিরাতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সম্মানে বাংলাদেশ দূতাবাসের জমকালো অনুষ্ঠান

সেই বার্নাব্যুতে রিয়ালকে হারিয়েই সেমিত আর্সেনাল

স্টার্কের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সুপার ওভার রোমাঞ্চ জিতল দিল্লী

সড়ক বিহীন সেতু,কাজে আসছেনা এলাকাবাসীর

দুর্নীতির অভিযোগে নওগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান

কলাপাড়ায় একটি ছাগলকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘর্ষে, আহত-৪

ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে কিন্তু বিএনপি নিয়ে ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে -মিজান চৌধুরী

উইন্ডিজকে হারালেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

গাজায় মানবিক সহায়তা নিষিদ্ধ ঘোষণা ইসরায়েলের, সংকট তীব্র

টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ড. ইউনূস

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রজ্ঞাপন জারি

সুন্নত নামাজে ভুল করে নামাজ শেষ করে ফেলা প্রসঙ্গে?

কূট-কৌশলে ভিআইপিদের টার্গেট করতেন মেঘনা আলম চক্র