নবী সাহাবীদের পদধন্য ফিলিস্তিন আজ রক্তাক্ত

Daily Inqilab মুফতি সফিউল্লাহ

০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

ফিলিস্তিন মধ্যপ্রাচ্যের দক্ষিণাংশের একটি ভূখণ্ড, যা ভূমধ্যসাগর ও জর্ডান নদীর মাঝে অবস্থিত। ফিলিস্তিন অন্য রাষ্ট্রগুলোর মত সাধারণ কোন রাষ্ট্র নয়। ফিলিস্তিন মুসলমানদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হযরত ইবরাহিম, ইসহাক, ইয়াকুব, মূসা, দাউদ, সুলাইমান ও ঈসা আলাইহিমুস সালাম সহ আরো অনেক নবীর অবস্থান ছিল ফিলিস্তিনে। ফিলিস্তিন মহান আল্লাহর কাছেও পছন্দনীয় ভূমি। । হাজারো সাহাবীদের পদধূলিত এক পূণ্যভূমি। অনেক নবী—রাসূলের সমাধিও রয়েছে। মুসলমানদের আবেগের ভূমি। ইসলামের দৃষ্টিতে মসজিদে আকসা এবং সমগ্র ফিলিস্তিনের মর্যাদা অনেক।

এই ফিলিস্তিনের জেরুসালেম নগরীতেই অবস্থিত বায়তুল মুকদিস । যা ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা মসজিদুল আকসার কথা তুলে ধরেছেন, এখান থেকেই সংঘটিত হয়েছিলো আল্লাহর রাসূল (সা.) এর পবিত্র মেরাজ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: পবিত্র ও মহিমাময় সেই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলা মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা ভ্রমণ করিয়েছেন, যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি। তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : ১)। পবিত্র কাবা শরিফের পর পৃথিবীতে নির্মিত দ্বিতীয় মসজিদ এটি। হজরত আবু জর গিফারি (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! দুনিয়াতে প্রথম কোন মসজিদটি নির্মিত হয়েছে? তিনি বললেন, মসজিদুল হারাম। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? প্রতিউত্তরে তিনি বললেন, তারপর হলো মসজিদুল আকসা। অতঃপর আমি জানতে চাইলাম যে, উভয়ের মধ্যে ব্যবধান কত বছরের? তিনি বললেন চল্লিশ বছরের ব্যবধান। (বুখারি : ৩১১৫)।

হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মসজিদুল হারামে এক রাকাত নামাজ এক লাখ নামাজের সমান। আমার মসজিদে (মসজিদে নববী) এক রাকাত নামাজ এক হাজার নামাজের সমান এবং বায়তুল মাকদিসে এক নামাজ পাঁচশ নামাজের সমান। (মাজমাউজ জাওয়াইদ : ৪/১১)। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো এ পুণ্যভূমি এখন ইহুদিদের কবজায়। ৬৪৮ সালে আমিরুল মুমিনিন হজরত উমর (রা.) এর খেলাফতকালে মুসলমানরা ফিলিস্তিন জয় করেন। ১০৯৬ সালে খ্রিস্টানরা তা পুনর্দখল করে নেয়। ১১৮৭ সালে সিপাহশালার সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী আবার জেরুজালেম শহর জয় করেন। এরপর থেকে খ্রিষ্টান ও ইহুদি চক্র ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এ অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ইহুদিরা তৎকালীন তুরস্কের শাসক সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে বসতির অনুমতি চায়; সুলতান অনুমতি দেননি। ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকার বেলফোর ঘোষণায় ফিলিস্তিনে ‘ইহুদিদের একটি জাতীয় বাসস্থান’ প্রতিষ্ঠায় সমর্থন জানায়। উসমানী খেলাফতের পতন হলে ফিলিস্তিনির ম্যানডেট পায় ব্রিটিশরা। ফিলিস্তিনে দলে দলে অভিবাসী ইহুদি আসতে থাকে। ১৯২০ থেকে ১৯৪০ দশকের মধ্যে ইউরোপ থেকে দলে দলে ইহুদীরা ফিলিস্তিনে যেতে শুরু করে এবং তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৩৩ সালে হিটলার জার্মানির ক্ষমতায় এলে ইহুদিদের ওপর নিপীড়ন শুরু হয়। সেখানকার ইহুদিরা পালিয়ে ফিলিস্তিনে আসে। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের সংখ্যা আরো বেড়ে যায় । ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে এক ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনকে ভাগ করে দেওয়া হয়।

বৃটিশরা ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ছাড়ে এবং ইহুদী নেতারা এরপর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। বহু ফিলিস্তিনি এর প্রতিবাদ জানালে শুরু হয় যুদ্ধ। যুদ্বে ইসরাইল বিজয়ী হয়। আরব-ইসরায়েলের মধ্যে ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালে আরও তিনটি যুদ্ধ হয়। এতে ফিলিস্তিনের ভাগ্যে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ব । ইসরায়েল বিপুলভাবে জয়ী হয় এই যুদ্ধে। এরপর থেকে গত ৫০ বছর ধরেই ইসরায়েল এসব দখলীকৃত জায়গায় ইহুদী বসতি স্থাপন করছে। আর মুসলমানদের প্রতি ইহুদিদের জুলুম-নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়তেই থাকে, যা আজও চলছে। তাই আমাদের উচিৎ ইহুদীদের নির্যাতনের ঘৃণাভরে প্রতিবাদ জানানো এবং মুসলিমদের জন্য দোয়া করা। মহান আল্লাহ বায়তুল মাকদিসকে ইহুদীদের থেকে মুক্ত করুন, আমীন!


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শাওয়াল মাসের ফজিলত ও আমল
অসংখ্য নবী রাসূলের স্মৃতি ধন্য ফিলিস্তিন
রক্তাক্ত ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলা
রমজান-পরবর্তী মুমিনের ক্যালেন্ডার
প্রশ্ন : মরণোত্তর চক্ষুদান বা অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান কি শরীয়ত সমর্থন করে?
আরও
X

আরও পড়ুন

ইইউর ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ, কঠিন হবে আশ্রয় পাওয়া

ইইউর ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ, কঠিন হবে আশ্রয় পাওয়া

কর্তাব্যক্তির ইশারায় চলে উখিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতি-দূদক

কর্তাব্যক্তির ইশারায় চলে উখিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতি-দূদক

ওয়াকফ আইন’ বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আজ

ওয়াকফ আইন’ বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক আজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক আজ

যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের কবরস্থান ভাঙচুর, ৮৫টি কবর ভাঙচুর

যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের কবরস্থান ভাঙচুর, ৮৫টি কবর ভাঙচুর

ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ১৩ বছর আজ, সিলেটে বিএনপির নানা কর্মসূচি

ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ১৩ বছর আজ, সিলেটে বিএনপির নানা কর্মসূচি

বাংলাদেশকে ৭২৪ কোটি টাকার সহায়তা দেবে জার্মানি

বাংলাদেশকে ৭২৪ কোটি টাকার সহায়তা দেবে জার্মানি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ২৫ ফিলিস্তিনি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ২৫ ফিলিস্তিনি

১৫ বছর পর বাংলাদেশ-পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবরা বৈঠকে বসছেন আজ

১৫ বছর পর বাংলাদেশ-পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবরা বৈঠকে বসছেন আজ

উখিয়ায় পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় ১ শিশু নিহত ও আহত ৬

উখিয়ায় পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় ১ শিশু নিহত ও আহত ৬

আবারও নিষেধাজ্ঞা পেলেন জহির

আবারও নিষেধাজ্ঞা পেলেন জহির

সখিপুরে প্রবাসীর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার

সখিপুরে প্রবাসীর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার

আইপিএলে সন্দিপের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড

আইপিএলে সন্দিপের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড

ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে নিষিদ্ধ ইংলিশ পেসার

ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে নিষিদ্ধ ইংলিশ পেসার

আমিরাতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সম্মানে বাংলাদেশ দূতাবাসের জমকালো অনুষ্ঠান

আমিরাতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সম্মানে বাংলাদেশ দূতাবাসের জমকালো অনুষ্ঠান

সেই বার্নাব্যুতে রিয়ালকে হারিয়েই সেমিত আর্সেনাল

সেই বার্নাব্যুতে রিয়ালকে হারিয়েই সেমিত আর্সেনাল

স্টার্কের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সুপার ওভার রোমাঞ্চ জিতল দিল্লী

স্টার্কের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সুপার ওভার রোমাঞ্চ জিতল দিল্লী

সড়ক বিহীন সেতু,কাজে আসছেনা এলাকাবাসীর

সড়ক বিহীন সেতু,কাজে আসছেনা এলাকাবাসীর

দুর্নীতির অভিযোগে নওগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান

দুর্নীতির অভিযোগে নওগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান

কলাপাড়ায় একটি ছাগলকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘর্ষে, আহত-৪

কলাপাড়ায় একটি ছাগলকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘর্ষে, আহত-৪