প্রবাসজীবনে ধর্মীয় রীতিনীতি বাস্তবতা ও করণীয়

Daily Inqilab বশির ইবনে জাফর

১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

ধর্ম মানবজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোন স্থানভেদে পালনীয় কোন বিষয় নয়। বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান যা জীবনের প্রতিটি সময়ে, প্রতিটি মুহূর্তের জন্য নির্দেশক হিসেবে আমাদের পথ দেখাবে। বিভিন্ন সমস্যায় সমাধান হিসেবে প্রাধান্যের সর্বোচ্চ আসনে থাকবে। আর এভাবেই পরকালীন চিরন্তন জীবনের জন্য পাথেয় সংগ্রহে আমরা এই পার্থিব জীবনের ক্ষণিকের সময়গুলো ব্যয় করবো। পরকালীন জীবনের সাফলতাই আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্য। যেহেতু সেই সাফল্যলাভের কর্মক্ষেত্র হচ্ছে এই পার্থিব জীবন, সুতরাং এখানকার প্রতিটি কর্মই কিভাবে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে পরিচালিত হতে পারে সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক সচেতন থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে দেশের পরিচিত কালচার ও সংস্কৃতির বাইরে এসে প্রবাসের চাকচিক্যময় পরিবেশে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রবাসে পাড়ি জমানো মানুষগুলোর একটি বড় ও প্রধান উদ্দেশ্য থাকে নিজের পরিবারের সুখের জন্য অর্থ উপার্জন। প্রতিটি রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রমে শুধু এটি নিয়েই ব্যাস্ত থাকে। এক্ষেত্রে ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে শৈথিল্য আনা শয়তানের অন্যতম ফাঁদ। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে পবিত্র কুরআনের সুস্পষ্ট বাণী : নিশ্চয়ই যারা (আখেরাতে) আমার সঙ্গে সাক্ষাতের আশা রাখে না, পার্থিব জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট এবং তাতেই নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে এবং যারা আমার নিদর্শনাবলি সম্পর্কে উদাসীন, তাদের ঠিকানা জাহান্নাম- তাদেরই কৃতকর্মের কারণে। (সূরা ইউনুস : ৭-৮)।

সুতরাং যতো ব্যস্ততাই থাকুক না কেন অবশ্যই আখেরাতকে সামনে রেখে ধর্মীয় নির্দেশনা মান্য করে চলতে হবে। বিশেষ করে নামাজের প্রতি অবহেলা কোনভাবেই কাম্য নয়। এটি পালনে শৈথিল্য আসলে বাকি অন্যান্য বিধিবিধান এমনিতেই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই প্রবাসীদের উচিত যে সেক্টরের কাজেই নিমগ্ন থাকেন না কেন নামাজের সময় হলে নামাজটি আদায় করে নিতে হবে। প্রয়োজনে চাকরিতে যোগদানের সময়ই নামাজের বিরতি বিষয়ে আলোচনা করে নিতে হবে। আমার বিশ্বাস শুরুতে নিয়োগকর্তার সাথে এই বিষয়টি আলোচনা করে নিলে অবশ্যই তিনি এটি পালনে আপনাকে সময় দিবেন। আর আপনি যদি নিয়মিতিই এটি পালনে যতœশীল হোন তবে আপনার উসিলায় আপনার অন্যান্য সহকর্মীরাও উদ্ভুদ্ধ হবে।

নামাজ, সাধ্যানুযায়ী দান-সদকা করা, ভালো কাজে যতœশীল হওয়া ইত্যাদির পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা যেটি প্রবাসে অনেক কঠিন। কেন কঠিন কারণ হচ্ছে সকল দেশের ধর্মীয় কালচার এক না হওয়া, এবং তথাকথিত আধুনিকতার ভয়াল ছোবলে পরিবেশের শালীনতা হারিয়ে যাওয়া, নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশা সহ আরো নানান আয়োজন এখানে সর্বত্রই বিরাজমান। এই কঠিন পরিস্থিতিতে এসকল আয়োজন থেকে নিজেকে জাহান্নামের ভয়ে বিরত রাখতেই হবে। মনে রাখতে হবে অশ্লীলতা শয়তানের কাজ। মানুষের ওপর শয়তানের প্রথম আক্রমণ ছিল কাপড় খসিয়ে তাকে উলঙ্গ করে দেওয়া, যার বিবরণ সুরা আরাফে পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘’আল্লাহ ইনসাফ, ইহসান ও আত্মীয়-স্বজনকে দান করার নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎ কাজ ও সীমা লঙ্ঘন করতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যেন তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯০)।
প্রবাসের এই কর্মব্যস্ত এবং চাকচিক্যময় জীবনে একজন প্রবাসী কর্মজীবী কিংবা শিক্ষার্থী হিসেবে মূলত দুটি প্রধান জিনিস সবসময় মনে রাখতে হবে। এক. ভালো কাজ করা। দুই. খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা। এটি করতে গেলে আপনাকে একদিকে অসৎ মানুষ যারা পাপাচারে লিপ্ত থাকে হোক সহকর্মী কিংবা সহপাঠী তাদের সঙ্গ ছাড়তে হবে। অন্যথায় আপনারও পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একইসাথে যারা ভালো মানুষ ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে যতœশীল এমনসব মানুষদের সাহচার্য নিতে হবে। প্রবাসে দাওয়াতে তাবলীগের কাজ প্রায় সব দেশেই আছে। তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে এবং নিয়মিত দ্বীনের কাজে সময় দিতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন আছে যারা জামায়াতবদ্ধভাবে ধর্মীয় হুকুম আহকাম পালনে মানুষকে কল্যাণের পথে ডাকে তাদের সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে।

এতে করে আপনি প্রথমত আত্মিক এক প্রশান্তি লক্ষ্য করতে পারবেন। প্রবাসজীবনের একাকীত্ব ও অস্থিরতার বিপক্ষে এই আত্মিক প্রশান্তি একটি কার্যকরী ঔষধ হিসেবে কাজ করবে। দ্বিতীয়ত আপনি খুব অচিরেই বুঝতে সক্ষম হবেন যে আপনার পড়াশোনা ও কর্মে আল্লাহর বরকত ও রহমত বর্ষিত হচ্ছে। আর এটিই তো দুনিয়ার এই সংক্ষিপ্ত জীবনে আমাদের সকলের চাওয়া। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের প্রবাসজীবনকে আমাদের জন্য মঙ্গলময় করুন।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সিটির অমরত্বের রাত...

সিটির অমরত্বের রাত...

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার

ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত

যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত

রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক

রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক

স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান

স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী

খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ

খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা

সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট

মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট

বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন

কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন

শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল

শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল

কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।

কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।

মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে

মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে

কমিউনিটি ক্লিনিক দাঁড়িয়ে আছে দোরগোড়ায়

কমিউনিটি ক্লিনিক দাঁড়িয়ে আছে দোরগোড়ায়

ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বেপরোয়া লুটপাট

ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বেপরোয়া লুটপাট

বেগম সুফিয়া কামাল এবং কবি ও সাহিত্য সমালোচক আবদুল কাদির নানাভাবে দেশের শিল্প-সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন : সেলিনা হোসেন

বেগম সুফিয়া কামাল এবং কবি ও সাহিত্য সমালোচক আবদুল কাদির নানাভাবে দেশের শিল্প-সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন : সেলিনা হোসেন

নগরমুখী জনস্রোত রোধ করতে হবে

নগরমুখী জনস্রোত রোধ করতে হবে