যানবাহনের গতি ও স্থিতি আল্লাহর কুদরতের অধীন
২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৭ এএম
সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ আসমানী কিতাব মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন : আর তিনি বললেন, তোমরা এতে আরোহণ কর। আল্লাহর নামেই এর গতি ও স্থিতি। আমার পালনকর্তা অতি ক্ষমাপরায়ণ, মেহেরবান। (সূরা হুদ : ৪১)। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে : এবং যিনি সবকিছুর যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং নৌকা ও চতুষ্পদ জন্তুকে তোমাদের জন্যে যানবাহনে পরিণত করেছেন, যাতে তোমরা তাদের পিঠের উপর আরোহণ কর। তোমাদের পালনকর্তার নেয়ামত স্বরণ কর এবং বল পবিত্র তিনি, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন এবং আমরা এদেরকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আমরা অবশ্যই আমাদের পালনকর্তার দিকে ফিরে যাব। (সূরা আয-যুখরুক : ১২-১৪)।
মানুষের যানবাহন দু’প্রকার। (এক) যা মানুষ নিজের শিল্পকৌশল দ্বারা নিজেই তৈরী করে। (দুই) যার সৃষ্টিতে মানুষের শিল্পকৌশলের কোন দখল নেই। ‘নৌকা’ বলে প্রথম প্রকার যানবাহন এবং চতুষ্পদ জন্তু বলে দ্বিতীয় প্রকার যানবাহন বোঝানো হয়েছে। সর্বাবস্থায় উদ্দেশ্য এই যে, মানুষের ব্যবহারের যাবতীয় যানবাহন আল্লাহ তাআলার মহা অবদান। চতুষ্পদ জন্তু যে অবদান, তা বর্ণনা সাপেক্ষ নয়। এগুলো মানুষের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী শক্তিশালী হয়ে থাকে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এগুলোকে মানুষের এমন বশীভূত করে দিয়েছেন যে, একজন বালকও ওদের মুখে লাগাম অথবা নাকে রশি লাগিয়ে যথা ইচ্ছা নিয়ে যেতে পারে। এমনিভাবে যেসব যানবাহন তৈরীতে মানুষের শিল্পকৌশলের দখল আছে, সেগুলোও আল্লাহ তাআলারই অবদান। উড়োজাহাজ থেকে শুরু করে মামুলী সাইকেল পর্যন্ত যদিও মানুষ নির্মাণ করে, কিন্তু এগুলো নির্মাণের কৌশল আল্লাহ ব্যতীত কে শিক্ষা দিয়েছে? সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলাই মানুষের মস্তিষ্কে এমন শক্তি দান করেছেন যে, লোহাকেও মোমে পরিণত করে ছাড়ে। এছাড়া এগুলোর নির্মাণে যে কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়, তা এবং তার বৈশিষ্ট্য ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সরাসরি আল্লাহর সৃষ্টি।
সামান্য চিন্তা করলেই মানুষ উপলব্ধি করতে পারত যে, জলযান, স্হলযান, ও শুন্যযান অথবা কোন জানদার সওয়ারী হোক, তা সৃষ্টি বা নির্মাণ করা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের সাধ্যাতীত ব্যাপার। স্হুলদৃষ্টিতে মানুষ হয়তো এই বলে আস্ফালন করতে পারে যে, আমরা তা তৈরী করেছি, আমরা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করছি। অথচ প্রকৃতপক্ষে তার লোহালক্কড়, তামা-পিতল, এলুমিনিয়াম ইত্যাদি মূল উপাদান ও কাঁচামাল তারা সৃষ্টি করে না। এক তোলা লোহা বা এক ইঞ্চি কাঠ তৈরী করার ক্ষমতাও তাদের নেই। অধিকন্তু উক্ত কাঁচামাল দ্বারা রকমারি যন্ত্রাংশ তৈরী করার কলাকৌশল তাদের মস্তিষ্কে কে দান করেছেন? মানুষ শুধু নিজ বুদ্ধির জোরে যদি তা উদ্ভাবন ও আবিষ্কার করতে পারত, তাহলে দুনিয়ায় কোন নির্বোধ লোক থাকত না। সবাই এরিস্টটল, প্লেটো, এডিসন বনে যেত। কোথাকার কাঠ, কোন খনির লোহা, আর কোন দেশের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে যানবাহনের কাঠামো তৈরী হয়। অতঃপর শত শত টন, হাজার হাজার মণ মালামাল বহন করে যমীনের উপর দৌড়ানো বা হাওয়ার উপর উড়ার জন্য যে শক্তি অপরিহার্য তা পানি ও বায়ুর ঘর্ষণে বিদ্যুতরুপে হোক বা জ্বালানী তেল ইত্যাদি হোক সর্বাবস্থায় চিন্তা করে দেখুন, তন্মধ্যে কোনটি মানুষ সৃষ্টি করেছে? বায়ু বা পানি কি সে সৃষ্টি করেছে? তৈল বা পেট্রোল কি সে সৃষ্টি করেছে? তার অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন শক্তি কি মানুষ সৃষ্টি করেছে?
কুরআন ও হাদীসে বিভিন্ন কাজ আনজাম দেয়ার সময় সবর ও শোকরের বিষয়বস্তুসম্বলিত বিভিন্ন দুআ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। মানুষ যদি দৈনন্দিন জীবনে উঠাবসা ও চলাফেরায় এসব দুআ নিয়মিত পাঠ করে তবে তার প্রত্যেক বৈধ কাজই ইবাদত হয়ে যেতে পারে। এসব দুআ আল্লামা জযরীর কিতাব ‘হিসনে হাসীনে’ এবং হাকীমুল উম্মাহ হযরত আশরাফ আলী থানভী (রহ.)-এর কিতাব মোনাজাতে মকবুলে উল্লেখ করেছেন। সূরা হুদ-এর ৪১তম আয়াতে নৌকা-জাহাজ ইত্যাদি জলযানে আরোহণ করার আদব শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, ‘বিসমিল্লাহি মাজরেহা ওয়ামুরসাহা ইন্না রাব্বি লা গাফুরুর রাহিম’ বলে আরোহণ করবে।
একমাত্র আল্লাহর নামেই এর গতি ও স্থিতি বলে মৌল সত্যকে চোখের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এটি মাত্র দুই শব্দবিশিষ্ট একটি বাক্য হলেও এটা এমন একটা ধারণার প্রতি পথনির্দেশ করে, যা দ্বারা মানুষ বাস্তুজগতে বসবাস করেও ভাবজগতের অধিবাসীতে পরিণত হয় এবং সৃষ্টিজগতের প্রতিটি অণু-পরমাণুতে সৃষ্টিকর্তার বাস্তব উপস্থিতি অবলোকন করতে হয়।
সাওয়ারীতে আরোহণককালে এই দুয়া পড়তে হয়। উচ্চারণ- ‘সুবহানাল্লাযি সাখখারা লানা হাযা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনিন ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুনকলিবুন।’ অর্থ : মহান আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, যিনি একে (বাহন) আমাদের অধীন করে দিয়েছেন, অথচ আমরা একে অধীন করতে সক্ষম ছিলাম না। আমরা আমাদের প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তনকারী। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) সফরের উদ্দেশে বের হয়ে সওয়ারির ওপর পা রেখে তিনবার তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলতেন। তারপর এই দুআ পড়তেন। (সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস : ১৩৪২)।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাবি শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে জোরপূর্বক হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ
ইতিহাস গড়ার পর সিটি ছাড়ার ইঙ্গিত দিলেন গুয়ার্দিওলা
সৌদি পৌঁছেছেন ৩০ হাজার ৮১০ হজযাত্রী
ইরানের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি
বিধ্বস্তের সময় রাইসির হেলিকপ্টারে ছিলেন ৯ জন
আফ্রিকার থেকে কি সোমালিয়ান প্লেট আলাদা হয়ে জুড়তে পারে ভারতে?
আজ থেকে ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ
রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ‘সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে’, কোনও আরোহী বেঁচে নেই
মহাকাশ ঘুরে আসা উপকরণ নিয়ে গবেষণা করবে চীন
পঞ্চম দফায় ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে
ভিডিও বানানো ছেড়ে দিলেন পাকিস্তানি ক্ষুদে ব্লগার সিরাজ
রইসির হেলিকপ্টারটির সন্ধান পেয়েছে উদ্ধারকারীরা
রিলের নেশায় ফের দিল্লি মেট্রোয় ‘অশ্লীল’ নাচ তরুণীর
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আন্ডারসি টানেল নির্মাণ করছে চায়না রেলওয়ে
৩২ দিনে ৮ বার বাড়ল স্বর্ণের দাম
রাইসির মৃত্যু হলে কে হবেন ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট
ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করুন : বাইডেনকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী
হেলিকপ্টার খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ ৩ উদ্ধারকারী
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: বৈরী আবহাওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত
ঘুষের দর-কষাকষির অডিও ভাইরাল