দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে কুরআনের পথনির্দেশ
২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

বিশ্বমানবতার মুক্তির সনদ ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, যদি কোন নারী স্বীয় স্বামীর পক্ষ থেকে অসদাচরণ কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে পরস্পর কোন মীমাংসা করে নিলে তাদের উভয়ের কোন গোনাহ নাই। মীমাংসা উত্তম। মনের সামনে লোভ বিদ্যমান আছে। যদি তোমরা উত্তম কাজ কর এবং খোদাভীরু হও, তবে, আল্লাহ তোমাদের সব কাজের খবর রাখেন। (সূরা আন-নিসা : ১২৮)। বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে দাম্পত্যজীবন ও পারিবারিক জীবনের সূচনা হয়। ইসলামী শরীয়তে এই সম্পর্ক কায়েম করতে হলে যেমন সুনির্ধারিত কিছু বিধান রয়েছে তেমনি প্রয়োজনে এই সম্পর্ক ছিন্ন করতে হলেও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। কুরআন-হাদীসে সেগুলো অনুসরণ করারও জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষের দাম্পত্য জীবনের এমন একটি জটিল দিক সম্পর্কে পথনির্দেশ করেছেন, সুদীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন সময়ের প্রত্যেকটি দম্পতিকেই যার সম্মুখীন হতে হয়। তা হলো স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক মনোমালিন্য ও মন কষাকষি। আর এটি এমন একটি জটিল সমস্যা, যার সুষ্ঠু সমাধান যথাসময়ে না হলে শুধু স্বামী-স্ত্রীর জীবনই দুর্বিসহ হয় না, বরং অনেক ক্ষেত্রে এহেন পারিবারিক মনোমালিন্যই গোত্র ও বংশগত কলহ-বিবাদ তথা হানাহানি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। কুরআনুল কারীম নরনারীর যাবতীয় অনুভূতি ও প্রেরণার প্রতি লক্ষ্য রেখে উভয় শ্রেণীকে এমন এক সার্থক জীবন ব্যবস্হা বাতলে দেয়ার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে, যার ফলে মানুষের পারিবারিক জীবন সুখময় হওয়া অবশ্যম্ভাবী। এর অনুসরণে পারস্পরিক তিক্ততা ও মর্মপীড়া, ভসলবাসা ও প্রশান্তিতে রুপান্তরিত হয়ে যায়। আর যদি অনিবার্য কারণে সম্পর্কচ্ছেদ করতে হয়, তবে তা করা হবে সম্মানজনক ও সৌজন্যমুলক পন্হায় যেন, তার পেছনে শত্রুতা, বিদ্বেষ বা উৎপীড়নের মনোভাব না থাকে।
সূরা-নিসা- এর ১২৮ তম আয়াতটি এমনি সমস্যা সম্পর্কিত, যাতে অনিচ্ছাকৃতভাবে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হয়। নিজ নিজ হিসাবে উভয়ে নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও পারস্পরিক মনের মিল না হওয়ার কারণে উভয়ে নিজ নিজ ন্যায্য অধিকার হতে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করে। যেমন, একজন সুদর্শন সুঠামদেহী স্বামীর স্ত্রী স্বাস্থ্যহীনা, অধিক বয়স্কা অথবা সুশ্রী না হওয়ার কারণে তার প্রতি স্বামীর মন আকৃষ্ট হচ্ছে না। আর এর প্রতিকার করাও স্ত্রীর সাধ্যাতীত। এমতাবস্থায় স্ত্রীকেও দোষারোপ করা যায় না, অন্যদিকে স্বামীকেও নিরপরাধ সাব্যস্ত করা যায়। এহেন পরিস্থিতিতে কুরআনের সাধারণ নীতি- অর্থাৎ, উক্ত স্ত্রীকে বহাল রাখতে চাইলে তার যাবতীয় ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পুরণ করে রাখতে হবে। আর তা যদি সম্ভব না হয়, তবে কল্যাণকর ও সৌজন্যমুলক পন্থায় তাকে বিদায় করবে এমতাবস্থায় স্ত্রীও যদি বিবাহ বিচ্ছেদে সম্মত হয়, তবে ভদ্রতা ও শালীনতার সাথেই বিচ্ছেদ সম্পন্ন হবে। পক্ষান্তরে স্ত্রী যদি তার সন্তানের খাতিরে অথবা নিজের অন্য কোন আশ্রয় না থাকার কারণে, বিবাহ বিচ্ছেদে অসম্মত হয়, তবে তার জন্য সঠিক পন্থা এই যে, নিজের প্রাপ্য মোহর বা খোর-পোষের ন্যায্য দাবী আংশিক বা পুরোপুরি প্রত্যাহার করে স্বামীকে বিবাহ বন্ধন অটুট রাখার জন্য সম্মত করাবে। দায়দায়িত্ব ও ব্যয় ভার লাঘব হওয়ার কারণে স্বামীও হয়তো এসমস্ত অধিকার থেকে মুক্ত হতে পেরে এপ্রস্তাব অনুমোদন করবে। এভাবে সমঝোতা হয়ে যেতে পারে।
স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া-কলহ বা সন্ধি সমঝোতার মধ্যে অহেতুক কোন তৃতীয় ব্যক্তি নাক গলাবে না। বরং তাদের নিজেদেরকে সমঝোতায় উপনীত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। কারণ, তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতির ফলে স্বামী-স্ত্রীর দোষ-ত্রুটি অন্য লোকের গোচরীভূত হয়, যা তাদের উভয়ের জন্যই লজ্জাজনক ও স্বার্থের পরিপন্থী। তদুপরি তৃতীয় পক্ষের কারণে সন্ধি-সমঝোতা দুষ্কর হয়ে পড়াও বিচিত্র নয়। আলোচ্য আয়াতের শেষের অংশে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যদি তোমরা কল্যাণ সাধন কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন।’ এখানে বুঝানো হয়েছে যে, অনিবার্য করণ বশত: স্বামীর অন্তরে যদি স্ত্রীর প্রতি কোন আকর্ষণ না থাকে এবং তার ন্যায্য অধিকার পুরণ করা অসম্ভব মনে করে তাকে বিদায় করতে চায়, তবে আইনের দৃষ্টিতে স্বামীকে সে অধিকার দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় স্ত্রীর পক্ষ থেকে কিছুটা স্বার্থ পরিত্যাগ করে সমঝোতা করাও জাযেয।
কিন্তু এতদসত্তেও স্বামী যদি সংযম ও খোদাভীতির পরিচয় দেয়, স্ত্রীর সাথে সহানুভূতিপূর্ণ ব্যবহার করে, মনের মিল না হওয়া সত্তেও তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ না করে বরং তার যাবতীয় অধিকার ও প্রয়োজন পুরণ করে, তবে তার এই ত্যাগ ও উদারতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ওয়াকিফহাল রয়েছেন। অতএব, তিনি এহেন ধৈর্য, উদারতা, সহনশীলতা ও মহানুভবতার এমন প্রদিদান দেবেন, যা কেউ কল্পনাও করতে পারে না। এখানে ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন’ বলেই ক্ষান্ত করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিদান কি দেবেন, তা উল্লেখ করা হয়নি। কারণ, এর প্রতিদান হবে কল্পনার ঊর্ধ্বে, ধারণার অতীত। মোটকথা, কুরআনুল কারীম উভয়পক্ষকে একদিকে স্বীয় অভাব-অভিযোগ দুর করা ও ন্যায্য অধিকার লাভ করার আইনতঃ অধিকার দিয়েছে। অপর দিকে ত্যাগ, ধৈর্য, সংযম ও উন্নত চরিত্র আয়ত্ব করার উপদেশ দিয়েছে। এখানে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, বিবাহবিচ্ছেদ হতে যথাসাধ্য বিরত থাকা কর্তব্য। বরং উভয়ের পক্ষেই কিছু কিছু ত্যাগ স্বীকার করে সমঝোতায় আসা বাঞ্ছনীয়।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

হারের চোখ রাঙানি নিয়ে চা বিরতিতে বাংলাদেশ

আন্দোলনের নামে ফ্যাসিস্টকে প্রমোট করছে অদৃশ্য সিন্ডিকেট, দাবি কুমিল্লার ক্রাফ্ট ইন্সট্রাক্টরদের

বকশীগঞ্জ উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের নেতাসহ আটক - ৯

হার্ট অ্যাটাকে সিলেট টেস্টের নিরাপত্তা কর্মকর্তার মৃত্যু

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.৩ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ারের সাক্ষাৎ

বন্ধ হচ্ছে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের শতাধিক অফিস

আতঙ্কে কাশ্মির ছাড়ছেন পর্যটকরা, বন্ধ দোকানপাট-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

ব্যাকডোর চাইলে ফ্রান্স ছাড়বে টেলিগ্রাম, দুরভের হুঁশিয়ারি

কুয়েটে ভয়হীন ক্যাম্পাস ও নিরাপদ একাডেমিক পরিবেশের দাবি ছাত্রদলের

হাসিনার আগে জামায়াত, জিয়া ও খালেদার বিচার করতে হবে: আদালতে শাজাহান খান

মহিপুরে দিনব্যাপী সিপিপির ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি সমাবেশ

দাউদকান্দিতে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে যুবককে কুপিয়ে জখম

৯৯৯ সহযোগীতা চাওয়ায় গৃহিণীকে মারধরের অভিযোগ

ফিলিস্তিনের পক্ষ নেওয়ায় হামজার ওপর আক্রমণ প্রতিপক্ষ সমর্থকদের?

আড়াইহাজারে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা, স্বামী আটক

‘ভিসি না গেলে আমরা উঠবো না’ - কুয়েটের দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীদের অনশন

কাশ্মীরে হামলা: ভারত-পাকিস্তান ফের সংঘাতের আশঙ্কা

কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে জনবল সঙ্কটে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা-৬মাসে ৩২ হাজার পাসপোর্ট প্রত্যাশী

সচিবালয়ে বসে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসররা : মির্জা আব্বাস