জাহান্নাম থেকে মুক্তির পয়গাম
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন ‘প্রত্যেক প্রাণিই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে।’ (সুরা আলে-ইমরান: ১৮৫) আর মৃত্যুর মাধ্যমেই দুনিয়ার জীবনের সমাপনী আসে এবং আখিরাতের অনন্ত অসীম জীবনের সূচনা হয়। এ জীবনের দুটি অবস্থান। একটি জান্নাত, আরেকটি জাহান্নাম। তারাই হবে জান্নাতি যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ-নিষেধ মেনে কোরআন ও হাদিসের আলোকে দুনিয়ার বুকে জীবন যাপন করেছে। আর যারা তা অমান্য করেছে তারাই জাহান্নামি। আর জাহান্নাম জাহান্নামিদের শাস্তির জায়গা ও দু:খের কারাগার। তবে এমন কিছু আমল আছে, যা মানুষকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তির সন্ধান দিতে পারে।
জাহান্নামের আগুন থেকে নিজে বাঁচুন এবং পরিবারকে বাঁচান। আল্লাহ তায়ালার আদেশও অনুরূপ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর। সেখানে রূঢ় স্বভাব ও কঠিন হৃদয়ের ফেরেশতাগণ নিয়োজিত থাকবে, যারা কখনো আল্লাহর কোনো নির্দেশ অমান্য করে না। তাদেরকে যে নির্দেশ দেওয়া হয় তাই পালন করে।’ (সুরা আত-তাহরীম : ৬) এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পিতা-মাতা বা পরিবার প্রধানের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করা। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ-নিষেধ মেনে দুনিয়ার জীবন পরিচালনা করলে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। অত:পর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে তার পরিবার-পরিজনকেও জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করা।
সিমাক ইবনু হারব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একবার নু’মান ইবনু বাশীর (রা.) জুমুআর খুতবায় বললেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমি তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি। শোনো, জাহান্নাম থেকে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করছি।’ এমনকি কোনো ব্যক্তি যদি দূরের বাজারেও অবস্থান করত, তাহলে এই কথাগুলো সে শুনতে পেত। আর এই পরিস্থিতিতে রাসুল (সা.)-এর চাদর কাঁধ থেকে নিচে তাঁর দুই পায়ের কাছে পড়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৮৩৯৮)। আদি ইবনু হাতেম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মসলিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; এরপর তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তারপর আবার বললেন,‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো।’ এরপর অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং অস্বস্তি প্রকাশ করলেন। এরকম তিন বার করলেন তিনি। তখন আমাদের মনে হলো, যেন তিনি জাহান্নাম দেখছেন। তারপর বললেন, ‘অর্ধেক খেজুর সাদকা করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করো। কেউ তা-ও না পারলে সে যেন উত্তম কথা বলার দ্বারা জাহান্নাম থেকে বাঁচে।’ (বুখারি : ১৪১৭; মুসলিম : ১০১৬)।
ইসলাম এমন একটি জীবন-দর্শন, যার অন্যতম সৌন্দর্য হলো দান-সাদকা ও মানব কল্যাণ। দান-সাদকা মানুষের উত্তম বিনিয়োগ। নিয়মিত দান-সাদকা করলে জাহান্নাম দূর হয়, জান্নাতের নিশ্চয়তা লাভ হয়। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, দানশীল মানুষ আল্লাহর অতিশয় নিকটে থাকেন, মানুষেরও নিকটবর্তী ও জান্নাতেরও কাছে থাকেন। জাহান্নাম তার থেকে দূরে থাকে।’ (তিরমিজি : ৬৯৪)। আল্লাহ তায়ালার ভয়ে দু’ফোটা চোখের পানি ফেলতে পারা গোটা পৃথিবীর প্রশান্তি, পরিতৃপ্তি ও মুগ্ধতার চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। যার মূল্য হচ্ছে কিয়ামতের দিনে আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া লাভ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি। চোখের পানির কতো মূল্য! এই চোখের পানি আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। দুধ দোহন করার পর তা যেমন আর গাভীর ওলানে ফিরিয়ে নেওয়া অসম্ভব। আল্লাহর পথে জিহাদের ধুলোবালি এবং জাহান্নামের আগুন কখনো একত্রিত হবে না।’ (তিরমিজি: ১৬৩৩; মুসনাদে আহমাদ: ১০৫৬৭; মিশকাত: ৩৮২৮)।
মানুষের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করলে মানুষ যেমন খুশি হয়, তেমনি মহান আল্লাহও খুশি হন এবং পুরস্কৃত করেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো না যে, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম ? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি থাকে, সহজ-সরল স্বভাবের, ন¤্রভাষী ও সদাচারী গুণে গুণান্বিত হয়।’ (তিরমিজি : ২৪৮৮)।
নামাজ শ্রেষ্ঠ ইবাদত। হযরত হানজালা উসাঈদী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথ পাবন্দির সাথে আদায় করে, উত্তমরূপে অজু করে, সময়ের প্রতি খেয়াল রাখে, রুকু-সিজদা ঠিকমতো আদায় করে এবং এভাবে নামাজ আদায় নিজের ওপর আল্লাহতায়ালার হক মনে করে, তবে জাহান্নামের আগুন তার জন্য হারাম করে দেয়া হবে।’ (আহমাদ ঃ ৪/২৬৭)।
পবিত্র কোরআনের শ্রেষ্ঠতম আয়াত হলো আয়াতুল কুরসি। এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠ নাম ও গুণাবলিসমূহ আলোচিত হয়েছে। এই আয়াতটি খুবই ফজিলতপূর্ণ। আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে মানব জাতির অনেক কল্যাণ সাধিত হয় এবং বিভিন্ন বিপদ-আপদ থেকে বাঁচা যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতবাসী হবে। (সুনানে নাসাঈঃ ৫/৩৩৯)। রোজা একটি কল্যাণকর ইবাদত। রোজা ইহকাল ও পরকালে মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। ওসমান (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যুদ্ধের মাঠে ঢাল যেমন তোমাদের রক্ষাকারী, রোজাও তদ্রƒপ জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল।’ (নাসায়ি: ২২৩০)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তায়ালা ওই একদিনের বিনিময়ে তার থেকে জাহান্নামকে ৭০ বছর (পরিমাণ পথ) দূরে রাখবেন। (বুখারি: ২৮৪০)।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

হারের চোখ রাঙানি নিয়ে চা বিরতিতে বাংলাদেশ

আন্দোলনের নামে ফ্যাসিস্টকে প্রমোট করছে অদৃশ্য সিন্ডিকেট, দাবি কুমিল্লার ক্রাফ্ট ইন্সট্রাক্টরদের

বকশীগঞ্জ উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের নেতাসহ আটক - ৯

হার্ট অ্যাটাকে সিলেট টেস্টের নিরাপত্তা কর্মকর্তার মৃত্যু

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.৩ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ারের সাক্ষাৎ

বন্ধ হচ্ছে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের শতাধিক অফিস

আতঙ্কে কাশ্মির ছাড়ছেন পর্যটকরা, বন্ধ দোকানপাট-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

ব্যাকডোর চাইলে ফ্রান্স ছাড়বে টেলিগ্রাম, দুরভের হুঁশিয়ারি

কুয়েটে ভয়হীন ক্যাম্পাস ও নিরাপদ একাডেমিক পরিবেশের দাবি ছাত্রদলের

হাসিনার আগে জামায়াত, জিয়া ও খালেদার বিচার করতে হবে: আদালতে শাজাহান খান

মহিপুরে দিনব্যাপী সিপিপির ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি সমাবেশ

দাউদকান্দিতে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে যুবককে কুপিয়ে জখম

৯৯৯ সহযোগীতা চাওয়ায় গৃহিণীকে মারধরের অভিযোগ

ফিলিস্তিনের পক্ষ নেওয়ায় হামজার ওপর আক্রমণ প্রতিপক্ষ সমর্থকদের?

আড়াইহাজারে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা, স্বামী আটক

‘ভিসি না গেলে আমরা উঠবো না’ - কুয়েটের দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীদের অনশন

কাশ্মীরে হামলা: ভারত-পাকিস্তান ফের সংঘাতের আশঙ্কা

কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে জনবল সঙ্কটে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা-৬মাসে ৩২ হাজার পাসপোর্ট প্রত্যাশী

সচিবালয়ে বসে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসররা : মির্জা আব্বাস