ইখলাস : যা ছাড়া আমল অর্থহীন
০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : নিশ্চয়ই সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তটুকুই যা সে নিয়ত করে। (বুখারী ও মুসলিম)। এখানে ‘প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল’ এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে- এক. কাজের শুদ্ধতা নিয়তের উপর নির্ভরশীল। দুই. কাজের সওয়াব নিয়তের উপর নির্ভরশীল। তিন. কাজের পূর্ণতা নিয়তের উপর নির্ভরশীল। চার. কাজ কবুল হওয়া নিয়তের উপর নির্ভরশীল। কনকনে শীতের রাতে ঠান্ডা পানি দিয়ে ওযু করে পড়া তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল হবে না যদি নিয়ত শুদ্ধ না হয়।কষ্ট করে আদায় করা নামাজ, সারাদিন অভুক্ত থেকে রাখা রোজা, জীবন-যৌবন শেষ করে উপার্জিত অর্থের প্রধানকৃত যাকাত, রাত জেগে করা তেলাওয়াত, মসজিদে করা ইতিকাফ সব আমলই আমার বৃথা, সব কষ্টই ব্যর্থ যদি না আমার নিয়ত পরিশুদ্ধ হয়। যদি না আমার আমল হয় ইখলাসযুক্ত, হয় এক আল্লাহর জন্য।
কোন একটি আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট কবুল হওয়ার জন্য সেই আমলটা এক আল্লাহর জন্য হওয়া আবশ্যক। ইখলাসবিহীন আমল আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না। ইখলাস হচ্ছে, কোন আমল শুধুমাত্র এক আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য করা। মানুষের বা অন্য কারো সন্তুষ্টি, প্রশংসা, নৈকট্য লাভ বা অন্য কোন কারণে কোন কাজ না করা। শাইখ জুনাইদ বলেন- ইখলাস হচ্ছে আল্লাহ তাআলা ও বান্দার মধ্যে থাকা এমন গোপন আমল যেটা ফেরেশতা ও জানে না যে তা লিখে রাখবে, শয়তান ও জানেনা যে তা নষ্ট করবে, প্রবৃত্তি ও জানে না যে তাকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিবে। আমল কবুল হওয়ার জন্য শর্ত দুটি- এক. কাজটি রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ মোতাবেক হওয়া। দুই. কাজটি শুধুমাত্র এক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা।
কোন একটি কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিপূর্ন সুন্নাহ মোতাবেক হওয়া সত্ত্বেও সেই কাজটা পরিত্যাজ্য হতে পারে যদি সেটাতে ইখলাস না থাকে বা সেটা এক আল্লাহর জন্য করা না হয়। আবার বিপরীতক্রমে যে কাজ পরিপূর্ণ ইখলাসের সহিত করা হয়েছে তাও আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন না যদি না সেটা রাসুল (সা.) এর সুন্নাহ মোতাবেক হয়। তাই যে আমলে একই সাথে দুটি শর্তই বিদ্যমান থাকবে সে আমলটি আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন। আমলে ইখলাস গুরুত্বপূর্ণ। ইখলাস বিহীন আমল মূল্যহীন। তবে তার মানে এই না যে মুখলিস হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যক্তি আমল থেকে বিরত থাকবে। বরং সে আমল চালিয়ে যাবে পাশাপাশি ইখলাস অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমল বর্জন করা মনে শয়তানের উদ্দেশ্যকেই যেন বাস্তবায়ন করা। কেননা, শয়তান সবসময় এটাই চায় যে,মানুষ আমল থেকে দূরে থাক,আমল করা বন্ধ করে দিক।তাই রিয়া হয়ে যাবে এই ভয়ে আমল পরিত্যাগ করার কোন সুযোগ নেই।
ফুদ্বাইল ইবনু ইয়াদ (রহিঃ) বলেন- মানুষের জন্য কোন আমল ছেড়ে দেয়া রিয়া, আর মানুষের জন্য কোন আমল করা শিরক। আর আল্লাহ তাআলা তোমাকে উভয় থেকে রক্ষা করলে সেটাই ইখলাস। অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন আমল করার সংকল্প করার পরও মানুষ দেখবে এই ভয়ে ছেড়ে দেয় তাহলে সেটা রিয়া। তবে এই ছেড়ে দেয়া যদি হয় নির্জনে,লোকচক্ষুর অন্তরালে আদায়ের উদ্দেশ্যে তবে সেটা রিয়া হবে না বরং মুস্তাহাব হবে। ইখলাসের বিপরীত বিষয় হচ্ছে রিয়া। ইখলাস যেমন আমল কবুল হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তেমনি রিয়াও আমল বিনষ্টকারী একটি উপাদান। রিয়া হচ্ছে কোন একটা আমল আল্লাহ ব্যতিত অন্য কাউকে দেখানোর জন্য বা অন্য কারো সন্তুষ্টি, প্রশংসা বা নৈকট্য লাভের জন্য করা। রিয়া সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা এসেছে কুরআনে, নিষেধাজ্ঞা এসেছে সুন্নাহয়।
আমাদের সকলেরই রাসূল (সা.) এর সেই হাদিস জানার কথা যেখানে কেয়ামত দিবসে তিনজন ব্যক্তিকে হিসাব নেয়ার জন্য উপস্থিত করা হবে বলা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রথমজন যিনি আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় শহীদ হয়েছেন, অপরজন আলেম যিনি নিজে দ্বীনি জ্ঞান শিখেছেন, অন্যকে শিখিয়েছেন। আর সর্বশেষ জন এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন অঢেল সম্পদ যা থেকে তিনি আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় দান-সদাকা করেছেন। এতদসত্ত্বেও তাদের তিনজনকেই জাহান্নামে উপুড় করে নিক্ষেপ করা হবে। কারণ তারা এসব আল্লাহ তায়ালা কে সন্তুষ্ট করার জন্য করেনি, বরং করেছে মানুষের প্রশংসা পাওয়ার জন্য। প্রথমজন করেছে যাতে তাকে বীর বলা হয়,শহীদ বলা হয়। দ্বিতীয়জন জ্ঞান অর্জন করেছে মানুষ তাকে আলেম বলবে এই উদ্দেশ্যে। আর অপরজন বেশি বেশি দান করেছে দানশীল উপাধি পাওয়ার জন্য। বাস্তবেও দুনিয়াতে তাদের তাই বলা হয়েছে যা তারা কামনা করতো। সকলকেই তাদের কামনা পূর্ণ করানো হয়েছে। দুনিয়াতে চাওয়া তাদের প্রত্যাশা পূর্ণতা পেয়েছে। তাই আখেরাতে তাদের জন্য নেই কোন সওয়াব, নেই কোন প্রতিদান।
রিয়াকে বলা হয় ছোট শিরক। রিয়াকারী ব্যক্তি সওয়াব থেকে বঞ্চিত। তার বাহ্যিক আমল যতই সুন্দর হোক তার প্রতিদান সে পাবে না। যেমন আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : (যে ব্যক্তি তার আমলে শিরক করে (রিয়া করে), তাকে বলা হবে যার জন্য আমল করেছো তার থেকেই তোমার প্রতিদান নিয়ে নাও।) রিয়াযুক্ত আমল আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না। যে আমল একই সাথে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও মানুষের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয় সেই আমলও আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না। আল্লাহ তায়ালা তার জন্য করা নিরেট রিয়ামুক্ত আমলকেই কেবল কবুল করেন, অন্য আমল নয়। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন : আমি অংশীদার থেকে অমুখাপেক্ষী, অতঃপর যে ব্যক্তি কোন আমল করলো যাতে সে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করেছে তবে আমি সে আমল থেকে মুক্ত। (মুসলিম)। মানুষ মানুষের সাথে প্রতারণা করা বড় অপরাধ। সেই মানুষই যদি তার রবের সাথে প্রতারণা করে যিনি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সবকিছুই জানেন সেটার অপরাধের মাত্রা কত হবে!
এ কাজটাই তো রিয়াকারী ব্যক্তি করছে। সে মানুষের সন্তুষ্টির জন্য কোন একটা কাজ করছে কিন্তু সে দেখাতে চাচ্ছে সে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি চায়! কত বড় মিথ্যা ও ধোঁকা এটা! সে কার সাথে করছে এই প্রতারণা? যিনি অদৃশ্যের সবকিছুই জানেন, যিনি প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য সব কিছু সম্পর্কেই অবগত তিনি কি বান্দার এই উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানবেন না? এটা কি আল্লাহ তায়ালার সাথে উপহাস নয়? এর ভয়াবহতা বোঝানোর জন্যই কাতাদা (রহি.) বলেন : বান্দা যখন রিয়া করে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে বলেন, দেখো তারা আমার সাথে কিভাবে ঠাট্টা করছে। তাই আমাদের উচিত ইখলাস সহ আমল করা,আমলের মাধ্যমে এক আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশ করা। অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হতে পারে যদি তা ইখলাসের সহিত করা হয়। আবার উহুদ পাহাড় পরিমাণ আমলও বৃথা যেতে পারে যদি তা রিয়াযুক্ত হয়। তাইতো রাসূল (সা.) বলেন : ( ইখলাসের সাথে ইবাদত করো,অল্প আমলই (নাজাতের) জন্য যথেষ্ট হবে।) আল্লাহ তায়ালা আমাদের একমাত্র তার সন্তুষ্টির জন্যই আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

এসএমই ও মাইক্রোফাইন্যান্স খাতে সিটি ব্যাংকে দু’জন নতুন ডিএমডি

বাংলাদেশকে গুটিয়ে স্ট্রিকের পাশে মুজারাবানি

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও বিমান বাংলাদেশের যৌথভাবে চালু করলো প্রথম আঞ্চলিক ট্রেজারি সেন্টার

চলমান এসএসসি পরীক্ষায় সখিপুরে বাল্যবিবাহের শিকার ১৮৫ পরীক্ষার্থী

নারায়ণগঞ্জে ৫ লাখ টাকার চোরাই কাঁঠ উদ্ধার, গাড়ি জব্দ

তিতলী-রিমনের নেতৃত্বে ইবি রিপোর্টার্স ইউনিটি

মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন, ২৭ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ

কুয়েট ভিসির পদত্যাগের দাবি পাবিপ্রবি ইনকিলাব মঞ্চের

বাণিজ্য যুদ্ধ অবসানের ইঙ্গিত মার্কিন অর্থমন্ত্রীর

চীনের ৩ হাসপাতাল নিয়ে কেন এত কাড়াকাড়ি?

টাকা ছাড়া কাজ করে না কালীগঞ্জে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস

কুমিল্লায় গ্যাস ফিল্ডের ডিজিএমের বিরুদ্ধে মাটি গাছ ও যন্ত্রাংশ বিক্রির অভিযোগ

উপকূল ও নদী তীরবর্তী অঞ্চল এবং সুন্দরবনের সার্বিক নিরাপত্তায় অসামান্য অবদান রেখে চলছে কোস্ট গার্ড

ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে পাওয়া অসুস্থ শিশুটির দায়িত্ব নিলেন বিএনপি নেতা মোঃ খোরশেদ আলম

কুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানালো ইবি শিক্ষার্থীরা

রায়পুরে স্বেচ্ছাসেবকদল কর্মী জসিম হত্যা মামলার ১৪ আসামি গ্রেপ্তার

শার্শায় জমি নিয়ে বিরোধে বাড়িতে হামলা-ভাংচুর-মারপিট, নারীসহ আহত ২

ভারতীয় দূতাবাসের অভিমুখে খেলাফত মজলিসের গণমিছিল

পিরোজপুরে যুবক হত্যায় দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

আইপিএলে ওয়ার্নারের যে রেকর্ড ভাঙলেন রাহুল