মাতৃগর্ভে মানব সৃষ্টির স্তর ও বিভিন্ন অবস্থা

Daily Inqilab মাওলানা কাওসার আহমদ যাকারিয়া

০৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন : হে লোকসকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও, তবে (ভেবে দেখ-) আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপি- থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি, তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর! তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌঁছানো হয়, যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভূমিকে পতিত দেখতে পাও, অতঃপর আমি যখন তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা সতেজ ও স্ফীত হয়ে যায় এবং সর্বপ্রকার সুদৃশ্য উদ্ভিদ উৎপন্ন করে। (সূরা হজ্ব :আয়াত-৫)।

আলোচ্য আয়াতে মাতৃগর্ভে মানব সৃষ্টির বিভিন্ন স্তর বর্ণিত হয়েছে। সহীহ বুখারীর এক হাদীসে এর বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের বাচনিক এক রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, মানুষের বীর্য চল্লিশ দিন পর্যন্ত গর্ভাশয়ে সঞ্চিত থাকে। চল্লিশ দিন পর তা জমাট রক্তে পরিণত হয়। এরপর আরও চল্লিশ দিন অতিবাহিত হলে তা মাংসপি- হয়ে যায়। অতঃপর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা প্রেরিত হয়। সে তাতে রুহ ফুঁকে দেয়। এ সময়েই তার সম্পর্কে চারটি বিষয় লিখে দেয়া হয়: (১) তার বয়স কত হবে, (২) সে কি পরিমাণ রিযিক পাবে, (৩) সে কি কি কাজ করবে এবং (৪) পরিণামে সে ভাগ্যবান হবে, না হতভাগা। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদেরই বাচনিক এবং ইবনে আবী হাতেম ও ইবনে জরীর বর্ণিত অপর এক রেওয়ায়েতে আরও বলা হয়েছে যে, বীর্য যখন কয়েক স্তর অতিক্রম করে মাংসপি-ে পরিণত হয়, তখন মানব সৃষ্টির কাজে আদিষ্ট ফেরেশতা আল্লাহ তাআলাকে জিজ্ঞেস করে ‘হে আল্লাহ! এই মাংসপি- দ্বারা মানব সৃষ্টি আপনার কাছে অবধারিত কি না? যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তরে বলা হয়, পূর্ণ আকৃতিবিশিষ্ট হবে না।

তবে গর্ভাশয়ে সেই মাংসপি-কে পাত করে দেয়া হয় এবং তা সৃষ্টির অন্যান্য স্তর অতিক্রম করে না। পক্ষান্তরে যদি জওয়াবে পূর্ণ আকৃতিবিশিষ্ট বলা হয়, তবে ফেরেশতা জিজ্ঞেস করে, ছেলে না মেয়ে, হতভাগা, না ভাগ্যবান, বয়স কত, কি কর্ম করবে এবং কোথায় মৃত্যুবরণ করবে? এসব প্রশ্নের জওয়াব তখনই ফেরেশতাকে বলে দেয়া হয়। (ইবনে-কাসির)। তারপর আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘মাতৃগর্ভ থেকে তোমাদেরকে দুর্বল শিশুর আকারে বের করি।’ এ সময় শিশুর দেহ, শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, জ্ঞান, নড়াচড়া ও ধারণশক্তি ইত্যাদি সবই দুর্বল থাকে। অতঃপর পর্যায়ক্রমে এগুলোকে শক্তিদান করা হয় এবং পরিশেষে পূর্ণশক্তির স্তরে পৌঁছে যায়। তবে উন্নতির ধারা ততক্ষণ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে যতক্ষণ তোমাদের প্রত্যেকটি শক্তি পূর্ণতা লাভ না করে, যা যৌবনকালে প্রত্যক্ষ করা হয়। যে বয়সে মানুষের বুদ্ধি, চেতনা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতিতে ত্রুটি দেখা যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) এমন বয়স থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। যা উম্মতদের জন্য শিক্ষনীয়।

মানব সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ের পর তার বয়সের বিভিন্ন স্তর ও অবস্থা : মুসনাদে আহমাদ ও মুসনাদে আবু-ইয়ালায় বর্ণিত হযরত আনাস ইবনে মালেকের বাচনিক এক রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত সন্তানদের সৎকর্ম পিতা-মাতার আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা হয়। কোন সন্তান অসৎকর্ম করলে তা তার নিজের আমলনামায়ও লিখা হয় না এবং পিতা-মাতার আমলনামায়ও রক্ষিত হয় না। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে তার নিজের আমলনামা চালু হয়ে যায়। তখন তার হেফাজত ও তাকে শক্তি যোগানোর জন্যে সঙ্গীয় দুইজন ফেরেশতাকে আদেশ করা হয়। যখন সে মুসলমান অবস্থায় চল্লিশ বছর বয়সে পৌঁছে যায়, তখন আল্লাহ তাআলা তাকে উন্মাদ হওয়া, কুষ্ঠ ও ধবলকুষ্ঠ এই রোগত্রয় থেকে নিরাপদ করে দেন। যখন পঞ্চাশ বছর বয়সে পৌঁছে, তখন আল্লাহ তাআলা তার হিসাব হালকা করে দেন। ষাট বছর বয়সে পৌঁছলে সে আল্লাহর দিকে রুজুর তাওফীক প্রাপ্ত হয়।

সত্তর বছর বয়সে পৌঁছলে আসমানের অধিবাসী সব ফেরেশতা তাকে মহব্বত করতে থাকে। আশি বছর বয়সে উপনীত হলে আল্লাহ তাআলা তার সৎকর্ম সমূহ লিপিবদ্ধ করেন এবং অসৎকর্ম সমূহ মার্জনা করে দেন। নব্বই বছর বয়সে আল্লাহ তাআলা তার অগ্র-পশ্চাতের সব গোনাহ মাফ করে দেন এবং তাকে তার পরিবারের লোকদের ব্যাপারে শাফাআত করার অধিকার দান করেন ও শাফাআত কবুল করেন। তখন তার উপাধি হয়ে যায় ‘আমিনুল্লাহ ও আসিরুল্লাহ ফিল আরদ” অর্থাৎ, পৃথিবীতে আল্লাহর বন্দী। কেননা, এই বয়সে সাধারণত: মানুষের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়, কোন কিছুতে ঔৎসুক্য বাকী থাকে না। সে বন্দীর ন্যায় জীবন যাবন করে। অতঃপর মানুষ ‘আরযালে ওমর’ তথা নিষ্কর্মা বয়সে পৌঁছে যায়, তখন সুস্থ ও শক্তিবান অবস্থায় যেসব সৎকর্ম করত, তা অব্যাহতভাবে তার আমলনামায় লিখা হয় এবং কোন গোনাহ হয়ে গেলে তা লিপিবদ্ধ করা হয় না।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ছোট সময় কারো পকেট থেকে না বলে নেওয়া টাকা মসজিদে দান করে দেওয়া প্রসঙ্গে?
সংখ্যাগরিষ্ঠের আগ্রাসন : ভারতের মুসলমানদের অস্তিত্ব সঙ্কট
ফুলতলীতে অন্ধ-প্রতিবন্ধীদের মিলনমেলায় কিছু মুহূর্ত
মানুষের শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তির পরীক্ষা
ফিলিস্তিন ও আল আকসা : কোরআন-হাদিস কি বলে
আরও
X

আরও পড়ুন

মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন, ২৭ এপ্রিল  সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ

মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন, ২৭ এপ্রিল  সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ

কুয়েট ভিসির পদত্যাগের দাবি পাবিপ্রবি ইনকিলাব মঞ্চের

কুয়েট ভিসির পদত্যাগের দাবি পাবিপ্রবি ইনকিলাব মঞ্চের

বাণিজ্য যুদ্ধ অবসানের ইঙ্গিত মার্কিন অর্থমন্ত্রীর

বাণিজ্য যুদ্ধ অবসানের ইঙ্গিত মার্কিন অর্থমন্ত্রীর

চীনের ৩ হাসপাতাল নিয়ে কেন এত কাড়াকাড়ি?

চীনের ৩ হাসপাতাল নিয়ে কেন এত কাড়াকাড়ি?

টাকা ছাড়া কাজ করে না কালীগঞ্জে মাধ্যমিক শিক্ষা  অফিস

টাকা ছাড়া কাজ করে না কালীগঞ্জে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস

কুমিল্লায় গ্যাস ফিল্ডের ডিজিএমের বিরুদ্ধে মাটি গাছ ও যন্ত্রাংশ বিক্রির অভিযোগ

কুমিল্লায় গ্যাস ফিল্ডের ডিজিএমের বিরুদ্ধে মাটি গাছ ও যন্ত্রাংশ বিক্রির অভিযোগ

উপকূল ও নদী তীরবর্তী অঞ্চল এবং সুন্দরবনের সার্বিক নিরাপত্তায় অসামান্য অবদান রেখে চলছে কোস্ট গার্ড

উপকূল ও নদী তীরবর্তী অঞ্চল এবং সুন্দরবনের সার্বিক নিরাপত্তায় অসামান্য অবদান রেখে চলছে কোস্ট গার্ড

ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে পাওয়া অসুস্থ শিশুটির দায়িত্ব নিলেন বিএনপি নেতা মোঃ খোরশেদ আলম

ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে পাওয়া অসুস্থ শিশুটির দায়িত্ব নিলেন বিএনপি নেতা মোঃ খোরশেদ আলম

কুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানালো ইবি শিক্ষার্থীরা

কুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানালো ইবি শিক্ষার্থীরা

রায়পুরে স্বেচ্ছাসেবকদল কর্মী জসিম হত্যা মামলার ১৪ আসামি গ্রেপ্তার

রায়পুরে স্বেচ্ছাসেবকদল কর্মী জসিম হত্যা মামলার ১৪ আসামি গ্রেপ্তার

শার্শায় জমি নিয়ে বিরোধে বাড়িতে হামলা-ভাংচুর-মারপিট, নারীসহ আহত ২

শার্শায় জমি নিয়ে বিরোধে বাড়িতে হামলা-ভাংচুর-মারপিট, নারীসহ আহত ২

ভারতীয় দূতাবাসের অভিমুখে খেলাফত মজলিসের গণমিছিল

ভারতীয় দূতাবাসের অভিমুখে খেলাফত মজলিসের গণমিছিল

পিরোজপুরে যুবক হত্যায় দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

পিরোজপুরে যুবক হত্যায় দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

আইপিএলে ওয়ার্নারের যে রেকর্ড ভাঙলেন রাহুল

আইপিএলে ওয়ার্নারের যে রেকর্ড ভাঙলেন রাহুল

আনোয়ারায় বিভিন্ন মামলায়, গ্রেফতার ৪

আনোয়ারায় বিভিন্ন মামলায়, গ্রেফতার ৪

মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন, ২৭ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ

মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন, ২৭ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ

সিলেট টেস্ট চলাকালে হার্ট অ্যাটাকে বিসিবি কর্মকর্তার মৃত্যু

সিলেট টেস্ট চলাকালে হার্ট অ্যাটাকে বিসিবি কর্মকর্তার মৃত্যু

সাভারে নিজের স্ত্রীকে হত্যা করে ৯৯৯ কল দিলো স্বামী, লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ

সাভারে নিজের স্ত্রীকে হত্যা করে ৯৯৯ কল দিলো স্বামী, লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ

হারের চোখ রাঙানি নিয়ে চা বিরতিতে বাংলাদেশ

হারের চোখ রাঙানি নিয়ে চা বিরতিতে বাংলাদেশ

আন্দোলনের নামে ফ্যাসিস্টকে প্রমোট করছে অদৃশ্য সিন্ডিকেট, দাবি কুমিল্লার ক্রাফ্ট ইন্সট্রাক্টরদের

আন্দোলনের নামে ফ্যাসিস্টকে প্রমোট করছে অদৃশ্য সিন্ডিকেট, দাবি কুমিল্লার ক্রাফ্ট ইন্সট্রাক্টরদের