রমযান, কুরআন ও বদর যুদ্ধ
০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম

(গত দিনের পর) মানব জীবনের প্রতিদিনকার কথা ও কাজগুলো হয় সত্য অথবা মিথ্যার ওপর পরিচালিত হয়। যাদের নফসের উপর বিবেক শক্তিশালী তারা সত্য কথা ও কাজের উপর টিকে থাকতে পারে। পক্ষান্তরে যাদের বিবেকের উপর নফস শক্তিশালী বা বিজয়ী তারা মিথ্যার বেসাতি ছড়ায়। তাই আল্লাহ রাব্বুল দয়া করে আমাদের বিবেককে শক্তিশালী করার জন্য অনেকগুলো কর্মসূচী প্রণয়ণ করেছেন। যেই কর্মসূচিগুলো আল্লাহ তা’আলা আল কুরআনের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। সবগুলো আনুষ্ঠানিক ইবাদাত সামষ্টিকভাবে এ কাজ করে থাকে। আমরা যদি ইসলামের প্রতিটি ইবাদাতের দিকে গভীর মনযোগ নিবিষ্ট করি তবে বুঝতে পারবো, মানুষের বিবেককে শক্তিশালী ও জাগ্রত করে পরিপূর্ণ মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মহান আল্লাহর এক একটি কর্মসূচী কতটুকু কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
ঈমান, নামায, যাকাত ও হজ্জের ন্যায় রোযা একজন ব্যক্তিকে সারা দিনের ক্ষুধা-পিপাসার দুঃসহ জ্বালা নিবারণের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ‘আল্লাহ আলীম অর্থাৎ মহাজ্ঞানী, অতিশয় জ্ঞাত বা বাছির অর্থ্যাৎ মহাদ্রষ্টা, গভীর ও প্রখর দৃষ্টি সম্পন্ন’ এ সমস্ত নামের ভয়ে সে সুযোগ গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখে। অবিরত ও ক্রমাগত একটি মাস-এ ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে তার হৃদয়ের গভীরে আল্লাহর এমন এক ভয় অঙ্কিত হয়, যার ফলে বাকি ১১টি মাস সকল প্রকার মিথ্যা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। এটি এমন এক জিনিষ, এমন একটা শক্তি ও সত্য মিথ্যা পার্থক্য নিরুপণের এমন মানসিকতা, যার সাহায্যে বা যার উপর ভিত্তি করে মানুষ অন্যায় থেকে বিরত থাকতে পারে, ন্যায় কাজের জন্য অগ্রসর হতে পারে। এ শক্তির উপর ভর করে এবং আল-কুরআনের জ্ঞানকে পূঁজি করে মিথ্যা কথা ও কাজ পরিহার করে সত্য কথা ও কাজ করার জন্য এগুতে পারে।
উল্লেখিত হাদীসের অর্থ সুস্পষ্ট। এটির দ্বারা বুঝা যায় যে, শুধু ক্ষুধার্ত ও পিপাসা থাকাই ইবাদাত নয়, বরং এটা আসল ইবাদাতের অবলম্বন মাত্র। প্রকৃত ইবাদাত হলো আল্লাহর ভয়ে সকল প্রকার মিথ্যা কথা ও কাজ পরিহার করে সত্যের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া, সত্যের সাক্ষ্য হওয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর জন্যে সত্যের সাক্ষী হয়ে দাড়াও।’ (সুরা নিসা : ১৩৫)। যে ব্যক্তি মিথ্যার বিরুদ্ধে এবং সত্যের পক্ষে দাঁড়াবে না আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে বড় জালিম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘যার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন সাক্ষ্য বর্তমান রয়েছে, সে যদি তা গোপন রাখে, তবে তার চেয়ে বড় জালিম আর কে হতে পারে?’ (সুরা বাকারা : ১৪০)। বড় জালেম বলা হয়েছে এজন্য যে, প্রকৃতপক্ষে সত্যের স্বাক্ষ্যকে গোপন করার দরুণ দুনিয়াবাসী সত্যের আলো বা সত্য পথের দিশা থেকে বঞ্চিত হলো। অথচ আমাদের আবির্ভাবের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে সত্যের সাক্ষ্য দান করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘আমি তোমাদেরকে এক মধ্যমপন্থী জাতি বানিয়েছি যাতে করে তোমরা লোকদের জন্যে সাক্ষী হও আর রাসুলও যেন তোমাদের জন্যে সাক্ষী হন।’ (সুরা বাকারা : ১৪৩)। মিথ্যা কথা ও কাজ পরিত্যাগ না করা মানে সত্য গোপণ এবং মিথ্যার পক্ষাবলম্বন করা বুঝায়। সেই ব্যক্তি সামগ্রীকভাবে সত্যের পরিবর্তে বাতিলের সাক্ষীতে পরিণত হয়ে গেল। এজন্যই সারা বিশ্বময় আল্লাহর গযব ইহুদী জাতিগোষ্ঠির ন্যায় আমাদেরকেও ক্রমান্বয়ে ঘিরে ফেলছে। ইহুদী জাতির প্রচ- আঘাত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অপমান, অধ:পতন ও দূরাবস্থা তাদের উপর চেপে বসলো এবং তারা আল্লাহর গযবে পরিবেষ্টিত হয়ে পড়লো।’ (সুরা বাকারা : ৬১)।
সত্যের সাক্ষ্য দুই প্রকার, এক: মৌখিক সাক্ষ্য বলতে বুঝায় আমাদের কাছে আল-কুরআনের মাধ্যমে যে সত্য পৌঁছেছে, রমাদানের রোয়ার মাধ্যমে মিথ্যা কথাকে পরিহার করে সত্যকে গ্রহণ করার যে শিক্ষা পেলাম, তা বক্তৃতা ও লেখনীর মাধ্যমে মানুষের চিন্তায়, বিশ্বাসে, নৈতিকতায়, তাহযীব-তামাদ্দুনে, সামাজিক রীতি-নীতিতে, রুজি-রোযগারে, লেনদেনে ও আইন-আদালতে, রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এবং মানবীয় বিষয়াদির অন্যান্য সকল দিক ও বিভাগে সত্যতার প্রমাণ অত্যন্ত খোলাখুলিভাবে বিবৃত করা। এবং যুক্তি সহকারে মিথ্যার অসারতা এবং দোষত্রুটি নির্দেশ করা। বাস্তব সাক্ষ্যদানের অর্থ হচ্ছে রমাদানের রোযার মাধ্যমে মিথ্যাকে পরিহার করে সত্যকে গ্রহণ করার যে শিক্ষা পেলাম, তা প্রথমে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন ও রূপদান করে নিজেকে দুনিয়াবাসীর সামনে উপস্থাপণ করা। যে কোন স্থানে, যে কোন অবস্থায়, যে কোন ব্যক্তি বা জাতির সাথেই আমাদের সাক্ষাৎ হোক না কেন, আমাদের সুন্দর ও উন্নত চরিত্র দেখে যেন মুহিত হয়। এবং চারিত্রিক দাওয়াত পেয়ে দুনিয়াবাসী যেন ইসলামের খুব কাছাকাছি চলে আসে।
সত্যিই যদি আমরা মিথ্যা কথা ও কাজকে পরিহার করে সত্যের উপলব্ধি করতে পারি তবেই আমাদের খানাপিনা পরিত্যাগ করা কাজে আসবে।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

হাসিনার আগে জামায়াত, জিয়া ও খালেদার বিচার করতে হবে: আদালতে শাজাহান খান

মহিপুরে দিনব্যাপী সিপিপির ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি সমাবেশ

দাউদকান্দিতে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে যুবককে কুপিয়ে জখম

৯৯৯ সহযোগীতা চাওয়ায় গৃহিণীকে মারধরের অভিযোগ

ফিলিস্তিনের পক্ষ নেওয়ায় হামজার ওপর আক্রমণ প্রতিপক্ষ সমর্থকদের?

আড়াইহাজারে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা, স্বামী আটক

‘ভিসি না গেলে আমরা উঠবো না’ - কুয়েটের দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীদের অনশন

কাশ্মীরে হামলা: ভারত-পাকিস্তান ফের সংঘাতের আশঙ্কা

কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে জনবল সঙ্কটে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা-৬মাসে ৩২ হাজার পাসপোর্ট প্রত্যাশী

সচিবালয়ে বসে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসররা : মির্জা আব্বাস

মহেশখালীর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে জাইকার সাথে চুক্তি সম্পন্ন

শেরপুরে পাহাড়ি অঞ্চলে বন্যহাতি খেয়ে যাচ্ছে কৃষকের আবাদি আধাপাকা ধান

ঘাটাইলে বিলুপ্তির পথে জনপ্রিয় দেশিফল ‘আনাই’

আনোয়ারায় বিশেষ অভিযানে মাদক ও হামলা মামলার চার আসামি গ্রেফতার

শেরপুরে কোনভাবেই থামছে না অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, জরিমানা

মার্কিন সহায়তা হ্রাসে রোহিঙ্গা সংকট আরও জটিল হয়েছে : প্রধান উপদেষ্টা

পঞ্চগড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল ছাত্রের মৃত্যু

মাদক সেবনই কাল হল বুড়িচংয়ের ৩ যুবকের

রাজনগরে হাওরে ধান কাটার ধুম, বৃষ্টির বাগড়া: কৃষকদের চরম দূর্ভোগ

তিন মাসের জন্য এসেছিলাম,হয়ে গেছে পঁচিশ বছর