ঈদ পরবর্তী করণীয় এবং শাওয়ালের ছয় রোজা
২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম
অতুলনীয় ফজিলতের মাস রমজান। পুরো মাসজুড়েই সিয়াম-সাধনায় মগ্ন ছিলেন আল্লাহ প্রেমিক মুমিন বান্দাগণ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি অন্যতম স্তম্ভ রোজা। বছরে একটি মাত্র মাসই রমজানের রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে। বিরামহীন এক মাসের কঠোর সিয়াম -সাধনার পর যখন আকাশে নতুন চাঁদ ওঠে,রোজাদার মুসলমানগণ তখন তাদের সিয়াম-সাধনার একটি পুরস্কার লাভ করে। রমজানের পরবর্তী মাসটি হচ্ছে শাওয়াল আর শাওয়ালের প্রথম তারিখই হচ্ছে ঈদুল ফিতর। রমজানের প্রতিটি দিন যেমন রোজা রাখা ফরজ, নারী-পুরুষ ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলের জন্য ফরজ । তেমনি এ ঈদুল ফিতরের আনন্দও সর্বজনীন, এদিন সকলের জন্যেই রোজা রাখা হারাম। রমজানের ফরজ রোজাকে এভাবেই অন্যান্য দিনের রোজা থেকে পৃথক করা হয়েছে। ঈদুল ফিতরের দিনটি রোজাদারের জন্যে পুরস্কার স্বরূপ। পাশাপাশি এ বিধানের মাধ্যমে ফরজ ও নফল রোজা মিশে যাওয়ার আশংকাও দূর হয়েছে।
শাওয়ালের ৬ রোজার ফজিলত : যে অনন্য মহিমায় ভাস্বর হয়ে থাকে পবিত্র মাহে রমজান, অতুলনীয় যে ফজিলতকে ধারণ করে রাখে, পরের মাস শাওয়ালের চাঁদ ওঠার সাথে সাথেই কি তা একেবারে শেষ হয়ে যাবে? মহামহিম আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অনুগত বান্দাদের জন্যে ব্যবস্থা ঠিক এরকম নয়। শাওয়ালের প্রথম তারিখ ঈদুল ফিতরের দিন রোজাকে নিষিদ্ধ করে রমজানের অনন্যতা কে একদিকে অধিক স্পষ্ট করা হয়েছে, অপরদিকে ঈদের পরদিন থেকেই পুরো মাসজুড়ে ঐচ্ছিকভাবে আরেকটি ফজিলতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখবে অতঃপর শাওয়ালের সুন্নতের সাথে তা পালন করবে, তা হবে সারাজীবন রোজা রাখার মত’। ‘যে রমজান মাসের রোজা রাখল, এরপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন পুরো বছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম : হাদীস নং ১১৬৪)। যে কোনো ভালো কাজ করলে দশগুণ নেকি পাওয়া যায়-এটি কোরআনের ঘোষণা। সুরা আনআমে আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ- ‘যে একটি নেকী নিয়ে আসবে তার দশগুণ হবে’।‘যে কেউ কোনো ভালো কাজ করবে, সে এর দশগুণ নেকি লাভ করবে।’ (আয়াত: ১৬০)
রমজানের ত্রিশটি রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখলে মোট রোজার সংখ্যা দাঁড়ায় ছত্রিশটি। আর ছত্রিশটি রোজার দশগুণ হচ্ছে তিনশ ষাটটি রোজা। এ অর্থেই শাওয়ালের ছয় রোজার মাধ্যমে পুরো বছরের রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়। হাদীসের ভাষ্য থেকে এটাও স্পষ্ট, শাওয়ালের ছয় রোজা দিয়ে পুরো বছরের রোজার নেকি হাসিল করতে হলে অবশ্যই রমজানের পুরো মাস রোজা রাখতে হবে। রমজানের রোজা না রেখে, কিংবা কিছু রেখে কিছু না রেখে শাওয়ালের রোজা রাখলে ফজিলত পাওয়া যাবে না। রমজান মাস যদি উনত্রিশ দিনে শেষ হয়ে যায়, তবু এ সওয়াব প্রাপ্তির জন্যে শাওয়ালের ছয়টি রোজাই যথেষ্ট। এক্ষেত্রে এমনটি মনে করার অবকাশ নেই, রমজান মাস উনত্রিশ দিনে শেষ হলে হয়তো শাওয়াল মাসে সাতটি রোজা রাখতে হবে। কারণ হাদীসে স্পষ্টভাবেই রমজান মাসের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। রমজান মাস ত্রিশ দিনে শেষ হল, না উনত্রিশ দিনে-তা এক্ষেত্রে বিবেচ্য নয়।
শাওয়ালের ৬ রোজা রাখার নিয়ম : এ ছয়টি রোজা কীভাবে রাখতে হবে-বিরতিহীনভাবে, না বিরতি দিয়ে? ঈদুল ফিতরের পর পর, না মাসের শেষ দিকে? না মাসের মাঝের দিনগুলোতে? এসব বিষয়ে হাদীস বিশারদ মনীষীগণের পক্ষ থেকে সবরকম মতই বর্ণিত হয়েছে। কেউ বলেছেন, মাসের শুরুর দিকে বিরতিহীনভাবে এ ছয় রোজা রাখা উত্তম। কারণ এতে একটি কল্যাণকর কাজ দ্রুত সম্পাদিত হবে। আবার কেউ বলেছেন, শেষ দিকে কিংবা বিরতি দিয়ে দিয়ে রোজাগুলো রাখা উত্তম হবে। কেননা এতে রমজানের ফরজ রোজার সাথে এ নফল রোজার একটি পার্থক্য স্পষ্ট রূপে ফুটে উঠবে। একটা কথা, এ রোজাগুলো যেভাবেই রাখা হোক, মাসের যে সময়েই রাখা হোক, হাদীসে বর্ণিত এ সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। অনেকে অবশ্য বিরতিহীনভাবে এ ছয় রোজা রাখাকে জরুরি মনে করে থাকে, এ ধারণাটি ঠিক নয়।
শাওয়ালের ৬ রোজা : ১. রমজানের রোজা কাজা থাকলে আগে সেগুলো রেখে এরপর শাওয়ালের নফলগুলো রাখা ভালো। তবে কাজা রোজা আগে রাখলে যদি শাওয়ালের ৬টি রোজা রাখা না যায়। তাহলে চাইলে শাওয়ালের ৬টি নফল রোজা আগে রাখতে পারবে। এরপর পরবর্তীতে রমজানের কাজাগুলো আদায় করতে হবে। শাওয়ালের রোজাগুলো নফল আর রমজানের কাজা রোজা আদায় করা ফরজ। তাই নফল রাখতে গিয়ে কোনো ক্রমেই যেন রমজানের কাজা রোজা ছুটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ২. রমজানের রোজার মত এ রোজার ক্ষেত্রেও সাহরি খাওয়া সুন্নত। আমাদের উচিত সাহরি খাওয়া। কিন্তু কোনো কারণে সাহরি খেতে না পারলেও রোজা হয়ে যাবে। ৩. শাওয়ালের ৬ রোজার জন্য তারাবীহ নামাজ আদায় করতে হয় না। অবশ্য তারাবীর নামাজের সাথে রমজানের রোজারও কোনো সম্পর্ক নেই। রমজানের রোজা একটি স্বতন্ত্র ইবাদত এবং তারাবীহ নামাজ আরেকটি ভিন্ন ইবাদত।
৪. শাওয়ালের রোজার জন্য বিশেষ কোনো নিয়ত নাই। শুধু নফল রোজার নিয়ত করবেন। আর নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে পড়াও জরুরি নয়। মনে থাকাই যথেষ্ট। ৫. অজ্ঞতা বশত অনেকে এই রোজাকে ‘সাক্ষী রোজা’ বলে থাকেন। তারা মনে করেন এই ৬টি রোজা রাখলে এগুলো রমজানের রোজার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে সাক্ষ্য দিবে। এটাও পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট একটি বিশ্বাস। তাই শাওয়ালের ৬ রোজাকে আমরা সাক্ষী রোজা বলব না। ৬. ফজরের আযানের সাথে সাহরির শেষ সময়ের কোনো সম্পর্ক নাই। রমজান মাসের তুলনায় অন্য সময়ে ফজরের আযান দেয়া হয় সাহরির সময় শেষ হওয়ারও প্রায় আধা ঘন্টা পর। তাই ফজরের আযান পর্যন্ত সাহরি খেতে থাকলে রোজা হবে না এটা শতভাগ নিশ্চিত। (চলবে)
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে লুইস-অ্যাথানেজের 'আক্ষেপে' ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশে
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়