ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম

সম্প্রতি ট্রান্সজেন্ডার নামে এক অদ্ভুত মতবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্নভাবে এ মতবাদ লালনকারীরা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে এবং ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আর মিডিয়াপাড়াও খুব পজিটিভলি জাতির সামনে এদের উপস্থাপন করছে।
ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ কী : ট্রান্সজেন্ডার বলতে মূলত বোঝায়, যাদের এমন একটি নিজস্ব যৌন পরিচয় বা যৌন অভিব্যক্তি রয়েছে, যা তাদের জন্মগত যৌনতা থেকে ভিন্ন। যার প্রবক্তারা পৃথিবীবাসীকে এমন এক পথের দিকে আহ্বান করছে , যেখানে শরীর নয়, মনই ব্যক্তির আসল লিঙ্গ-পরিচয়। অর্থাৎ একজন পুরুষের যদি মনে হয় সে নারী, তাহলে সে নারী। আবার একজন নারীর যদি মনে হয় সে পুরুষ, তাহলে সে পুরুষ।তাদের দাবী হলো ; তাদের বাহ্যিক লিঙ্গ আর বিকৃত চিন্তাগত লিঙ্গ দুটো ভিন্ন ভিন্ন। এরা আরও দাবি করে ;ডাক্তারের সাহায্যে তাদের মনের রূপকে বাস্তবেই রূপান্তর করা সম্ভব। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে; তথাকথিত লিঙ্গ পরিবর্তন তথা সার্জারির মাধ্যমে কেউ আসলে পুরুষ থেকে নারী বা নারী থেকে পুরুষ হয় না। মূলত এগুলো এক ধরনের কসমেটিক সার্জারি। এ ধরণের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেবল বাহ্যিকভাবে কিছু পরিবর্তন আনা যায়, সৃষ্টিগত লিঙ্গের কোনো পরিবর্তন করা যায় না।
ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে ইসলাম যা বলে : আল্লাহ তাআলা আমাদের শ্রেষ্ঠ উম্মত বানিয়েছেন এবং সুন্দর অবয়বে আমাদের সৃষ্টি করেছেন।এ সুন্দর অবয়ব আল্লাহ প্রদত্ত আমানত ও নেয়ামত। এতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা কিংবা শরয়ি বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে এ স্বাভাবিক অবয়বে কৃত্রিম উপায়ে বিকৃতি সাধন করা শয়তানি ফাঁদ এবং চরম ঘৃণ্য কাজ। শয়তানের এই জঘন্য ফাঁদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা আগেই আমাদের সতর্ক করেছেন। এবং আল্লাহর আদেশ মানার পরিবর্তে যে শয়তানি মিশন বাস্তবায়ন করবে, সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে মর্মে সাবধান করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাকে (শয়তানকে) অভিসম্পাত করেছেন এবং সে (শয়তান) বলেছে, আমি তোমার দাসদের এক নির্দিষ্ট অংশকে (নিজের দলে) গ্রহণ করবই। এবং তাদের পথভ্রষ্ট করবই; তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করবই, আমি তাদের নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করবেই এবং তাদের নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই। আর যে আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, নিশ্চয় সে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৮-১১৯)।
হাদিসেও এ ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি বাক্য উচ্চারণ করা হয়েছে এবং যারা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি ঘটায় তাদের অভিসম্পাত করা হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) এমন সব নারীর ওপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা অঙ্গে উল্কি আঁকে ও অন্যকে দিয়ে উল্কি আঁকায় এবং সৌন্দর্যের জন্য ভ্রুর চুল উপড়ে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে (তিরমিজি : ২৭৮২)। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ পুরুষদের মধ্যে নারীর বেশ ধারণকারীদের এবং নারীদের মধ্যে পুরুষের বেশ ধারণকারিণীদের অভিশাপ দিয়েছেন। ( মিশকাত: হাদীস নং ৪৪২৯)।
ট্রান্সজেন্ডার সামাজিকীকরণে হবে ভয়াবহ বিপর্যয় : ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে অনেকের কাছে মনে হতে পারে, এতে সমস্যা কী, সবাই তো আর এক রকম হয় না। ওদের সংখ্যাই বা আর কত। তারা তো আমাদের কোনো সমস্যা করছে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই মতাদর্শ পলিসি বাস্তবায়নের ফলে বিভিন্ন সামাজিক, স্বাস্থ্য এবং আইনগত সমস্যা গত কয়েক বছরে অনুধাবন করা যাচ্ছে। এটি হাজার হাজার বছরের প্রতিষ্ঠিত লিঙ্গভিত্তিক সিস্টেমকে ওলোট-পালট করে দিচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নানা বিতর্ক। এ মতবাদ সমাজের ভারসাম্যতা ও স্বাভাবিক রীতিকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিচ্ছে। উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক সামাজিক বিশৃঙ্খলা।
সাথে সাথে জেনা- ব্যভিচারের রাস্তাও আরও সুগম আরও সহজ হয়ে যাবে। কারণ ট্র্যান্সজেন্ডার মেয়েদের যদি মহিলা বিশেষায়িত স্থান তথা মহিলা হোষ্টেল ইত্যাদিতে প্রবেশের অবাধ অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে তা হবে সুকৌশলে ব্যভিচারের পথকে আরো সহজ করে দেওয়া । কারণ আমরা আগেও উল্লেখ করছি, অস্ত্রোপচার বা অন্য কোনো মাধ্যমে শরীরের কিছু পরিবর্তন আসলেও তাদের সৃষ্টিগত লিঙ্গের কোনো পরিবর্তন হয় না। সুতরাং এভাবে একজন ট্র্যান্সজেন্ডার মেয়েকে(যে কিনা বাস্তবে একজন পুরুষ) মহিলা বিশেষায়িত স্থানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া তার জন্য ধর্ষণের পথ খুলে দেওয়া নয়কি?
গবেষণায় দেখা গেছে ট্রান্সজেন্ডার স্বাভাবিক সুস্থ মানুষ হিসেবে নিজেদের মনে করলেও বা সমাজে উপস্থাপন করলেও তারা অনেক মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণ মানুষের তুলনায় ১৪ গুণ বেশি আত্মহত্যা চিন্তা এবং ২২ গুণ আত্মহত্যা প্রচেষ্টা নেয়। তাছাড়া মাঝে মাদকাসাক্ত, নিজে নিজের ক্ষতি করা (ংবষভ-যধৎস), ডিপ্রেশন, উদ্বিগ্নতা ইত্যাদির প্রবণতাও অনেক বেশি। সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন রাখতে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলো এলজিবিটির বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে। এমনকি উগান্ডা পশ্চিমা ভিসা নিষেধাজ্ঞা, বিশ্বের ব্যাংকের ঋণ স্থগিত করার মতো অর্থনৈতিক ব্যাপারকেও উপেক্ষা করেছে। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোও ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শে বিরুদ্ধে অবস্থা নিয়েছে। জেন্ডার আইডেন্টিটি ইস্যুতে ইতালির সরকার পরিবর্তন হয়। সম্প্রতি হ্যাংগেরি ট্রান্সজেন্ডাদের লিগালাইজেশন বন্ধ ঘোষণা করেছে।
সব ধরনের সমস্যাকে সামনে রেখে রাষ্ট্রের উচিত, এ ধরনের মতবাদ যারা লালন করে, এ মতবাদ বিস্তারে যারা সক্রিয় ভুমিকায় আছে তাদের চিহ্নিত করা, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া। নতুবা অদূর ভবিষ্যতে এমনসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে যার সমাধান বের করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই ঘৃণ্য কাজ থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ইইউর ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ, কঠিন হবে আশ্রয় পাওয়া

কর্তাব্যক্তির ইশারায় চলে উখিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতি-দূদক

ওয়াকফ আইন’ বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক আজ

যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের কবরস্থান ভাঙচুর, ৮৫টি কবর ভাঙচুর

ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ১৩ বছর আজ, সিলেটে বিএনপির নানা কর্মসূচি

বাংলাদেশকে ৭২৪ কোটি টাকার সহায়তা দেবে জার্মানি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ২৫ ফিলিস্তিনি

১৫ বছর পর বাংলাদেশ-পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবরা বৈঠকে বসছেন আজ

উখিয়ায় পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় ১ শিশু নিহত ও আহত ৬

আবারও নিষেধাজ্ঞা পেলেন জহির

সখিপুরে প্রবাসীর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার

আইপিএলে সন্দিপের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড

ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে নিষিদ্ধ ইংলিশ পেসার

আমিরাতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সম্মানে বাংলাদেশ দূতাবাসের জমকালো অনুষ্ঠান

সেই বার্নাব্যুতে রিয়ালকে হারিয়েই সেমিত আর্সেনাল

স্টার্কের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সুপার ওভার রোমাঞ্চ জিতল দিল্লী

সড়ক বিহীন সেতু,কাজে আসছেনা এলাকাবাসীর

দুর্নীতির অভিযোগে নওগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান

কলাপাড়ায় একটি ছাগলকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘর্ষে, আহত-৪