বান্দার হক বা মানুষের অধিকার
১৮ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৮ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম
আরবী ‘হ্কুল ইবাদ’ মানে বান্দার হক। বান্দাহ মানে গোলাম, হক মানে অধিকার। বান্দার হক মানে মানুষের অধিকার (হিউম্যান রাইট)। মানবাধিকার বলতে বান্দার হককেই বুঝায়। বান্দার হক বলার কারণ হলো, সকল মানুষই আল্লাহর বান্দা বা গোলাম চাই কেউ তাঁকে মানুক আর না মানুক। এ জন্য আল্লাহর হক বলার পর বান্দার হক বলা হয়েছে। সাধারণভাবে বান্দার হক বলতে মানুষের অধিকারকে বুঝায়। মানুষের জীবনের দুটি দিক রয়েছে। যথা : (১) আকীদাগত বা বিশ্বাসগত ও (২) মুয়ামালাত তথা ব্যবহারিক জীবন। আকীগত জীবন একান্তই ব্যক্তিগত। এটি জীবনের মুলভিত্ত্বি। এ ভিত্তির ওপরই ব্যবহারিক জীবন গড়ে উঠে। বিশ্বাসের ধরন ব্যবহারিক জীবনকে দারুনভাবে প্রভাবিত করে থাকে। বিশ্বাস যদি এমনটি হয় যে, পৃথিবী নিতান্তই একটি খেলাঘর, আমরা প্রকৃতির জীব। পৃথিবী নামক এ খেলাঘরে নিজের যোগ্যতার বলে যা পাবো দু’হাতে লুটে নেবো, পেশী শক্তি বলে নিজের শ্রেষ্টত্ব কায়েম করবো, খাবো আর ঘরবো । খেল-তামাশার জীবন-যাপণ করে প্রকৃতির ডাকে এসেছিলাম আবার তারই ডাকে চলে যাবো ব্যস্ এই তো জীবন। অন্যের হক তথা অধিকারের প্রতি নজর দেয়ার সময় নেই। দুর্বলেরা মাথা ঠুকে মুরুক তাতে আমার কি ? মনে রাখবেন, এ ধরনের বিশ্বাসীর জীবন নামক সৌধটি এ ধরনের বিশ্বাসের ওপরই গড়ে উঠবে। তার চলা-ফেরা, খাওয়া-ধাওয়া, লেন-দেন, আচার-আচরণ এ বিশ্বাস অনুযায়ীই চলবে।
পক্ষান্তরে বিশ্বাস যদি এমন হয় যে, আমাদের সকলের একজন স্রষ্টা রয়েছেন। তিনি পৃথিবীসহ সকল কিছুই সৃষ্টি করেছেন। একমাত্র মানুষ ছাড়া পৃথিবীর সকল সৃষ্টি একটি নিয়মের অধীন চলছে। এটি প্রবল শক্তিশালীর বেঁেধ দেয়া নিয়ম। এ নিয়মের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। কিন্তু একমাত্র মানুষকে দান করা হয়েছে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি ও বিবেক। আবার স্বাধীন এ বিবেকের সামনে কিতাব ও নবী-রাসুল প্রেরণের মাধ্যমে পেশ করা হয়েছে হিদায়াত। এ হিদায়াতের মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিগত স্থান ও অধিকার চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রত্যেকের কর্মসীমা ও অধিকারের নিয়ম বেঁেধ দেয়া হয়েছে। যাতে কেউ কারো অধিকার হরণ করতে না পারে, কেউ তার নিজের সীমা লংঘন করে অন্যের সীমার মধ্যে ুপ্রবেশ করতে না পারে। যত্চ্ছোচার ও স্বেচ্ছাচারিতাকে আইনের মাধ্যমে সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। যাতে মানুষের পারস্পরিক জীবন সুন্দর ও সাবলীল হয়ে গড়ে উঠে। যাতে মানুষের যাবতীয় সমস্যার সার্থক সমাধান, তাদের পারস্পরিক বিরোধ-বিবাদের সুষ্ঠু মীমাংসা ও নিস্পত্তি হয়। পৃথিবীর একদিন পরিসমাপ্তি ঘটবে। তখন সকলকেই আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। প্রতিটি কৃতকর্মের জবাব দিতে হবে। জবাবদিহিতার এই অনুভূতিই ফলে তার জীবন সৌধটি এ বিশ্বাস অনুযায়ী গড়ে উঠবে।
মানুষ স্বভাবতই সামাজিক জীবনে-যাপনে অভ্যস্ত। সমাজের অন্যান্যদের সহযোগীতা ছাড়া ব্যক্তি সমাজে বেশীদিন টিকে থাকতে পারে না। তাই নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে হয়। এ জন্য কুরআন ও হাদীসে পারস্পরিক সম্পর্ক-সম্বন্ধ, অধিকারের সীমা নির্ধারণের জন্য বিধি-বিধান বেঁধে দিয়েছে। প্রত্যেক্যের স্বেচ্ছাচারিতাকে সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। কেননা মানুষ স্বভাবতই স্বার্থপর ও আত্মপূজারী। পারস্পরিক জুলুম-নির্যাতন-নিস্পেষণ, অধিকার হরণ এবং সামাজিক বিপর্যয় রোধ করার জন্য ইসলাম বিধি-বিধান দান করেছে। কুরআন ও হাদীসে তন্ন তন্ন করে বান্দার প্রতিটি হকের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এটি একটি বিস্তৃত ও শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট বিষয়।
হক বা অধিকার দুই প্রকার : এক, আচরণগত। এটি মানুষের আচার আচরণ, কথা-বার্তা ও ব্যবহারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। যেমন কাউকে অনর্থক বা বিনা কারণে কটু বাক্য প্রয়োগ, কারো বিরুদ্ধে হিংসা-বিদ্বেষ, গীবত, কুৎসা, কুটনামী করা বা কাউকে গাল-মন্দ করা বা কাউকে প্রহার করা ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হক বা অধিকার নষ্ট করার শামিল। কারণ ঐ ব্যক্তির অধিকার ছিল তার কাছ থেকে ভাল ও সুন্দর আচরণ পাওয়া এবং ভ্রাতৃত্বের দাবীদার হিসাবে সে তার কল্যাণ কামনা করবে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ“ যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।”(আহযাবঃ ৫৮) রাসুল সঃ বলেছেনঃ “ মুসলমান সে ব্যক্তি যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।” তদ্রুপ একজন সন্তানের কর্তব্য হচ্ছে পিতামাতার সাথে উত্তম আচরণ করা। তাদের সেবা করা, তাদের আদেশ শ্রবণ করা, তাদের যতœ করা, তাদের কোনো প্রকার কষ্ট না দেয়া। তাদের জন্য আল্লাহর শিখানো ভাষায় দোওয়া করা। পক্ষান্তরে পিতামাতার কর্তব্য হচ্ছে সন্তানের সুন্দর ইসলামী নাম রাখা, তাদের লালন পালন করা, তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি অবশ্যই দ্বীনি শিক্ষা ও দ্বীনি চরিত্র গঠন করা।
এ জন্য কুরআন, ঈমান আকীদা, ইবাদাত ইত্যাদি বিষয়ে প্রথমেই শিক্ষা দান করা। তাওহীদ, রেসালাত ও আখিরাত সম্পর্কে তাদের সুষ্পষ্ট ও নির্ভুল ধারণা দেয়া। মনে রাখা প্রয়োজন এ তিনটি বিষয় একজন মানুষের মৌলিক শিক্ষা। এ বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদের মধ্যে যদি কোন অস্পষ্টতা থেকে যায়, তবে তাদের সকল কর্মকান্ডই বৃথায় পর্যবশিত হবে। তাদের উত্তম নৈতিক চরিত্র গঠণ করতে হবে। ইসলামী আদব কায়দা ও আচার অনুষ্ঠান তাদের শিখাতে হবে। এ গুলো হলো একজন আদর্শ ও চরিত্রবান পিতামাতার জন্য সন্তানের অধিকার। কেউ যদি পিতামাতার সাথে খারাপ আচরণ করে তাতে পিতামাতার অধিকার নষ্ট করার দায়ে সন্তান যেমন দায়ী হবে। তদ্রুপ কোন পিতা-মাতা যদি সন্তানের উল্লেিখত অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত করেন, সন্তানের অধিকার নষ্ট করার দায়ে তারা দায়ী হবেন।
দুই. বৈষয়িক বা আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে উদ্ভব হয়ে থাকে। যেমন: কারো টাকা-পয়সা বা অন্যান্য জিনিসপত্র অবৈধভাবে ভোগ করা বা যার যা প্রাপ্য তা থেকে তাকে বঞ্চিত করা। যেমন স্ত্রীর জন্য স্বামীর ওপর বিয়ের দেনমোহর ফরজ করা হয়েছে। এটি স্ত্রীর হক। এ হক থেকে বঞ্চিত করা হলে বান্দার হক নষ্টের কারণে দায়ী হতে হবে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী শ্রমের যে মুল্য হওয়া প্রয়োজন, তা থেকে শ্রমিককে তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বঞ্চিত করা বান্দার হক নষ্ট করার দায়ে অবশ্যই আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। শ্রমিক বা কর্মীকে তার নির্ধারিত সময়ের বাইরে কাজ করিয়ে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা মানে মানবতার হক নষ্ট করা। (চলবে)
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে লুইস-অ্যাথানেজের 'আক্ষেপে' ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশে
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়