বিয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
০১ জুন ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০১ জুন ২০২৪, ১২:০৪ এএম
ধর্মীয় ও পার্থিব দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ে খুবই প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। ইসলাম ধর্মে তো বটেই, অন্য ধর্মেও বিয়ের সমানভাবে গুরুত্ব রয়েছে। বরং ইসলাম তো বিয়েকে ইবাদত হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে। পৃথিবী আবাদ রাখার সঠিক ও সুশৃঙ্খল বৈধ ব্যবস্থা হচ্ছে বিবাহ। মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে স্বভাবজাতভাবে তারা সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করতে অভ্যস্ত। একাকী জীবন যাপন করা তাদের পক্ষে অসম্ভবপ্রায়। তাই যাপিত জীবনে প্রয়োজন পড়ে এমন কিছুূ মানুষের, যারা হবে নিঃসঙ্গের একান্ত সঙ্গী। একাকীত্বের করবে নিরসন। তৈরী করবে মনপ্রাণ খুলে কথা বলার উপযুক্ত জায়গা। আর তা হয়ে ওঠে একমাত্র বিবাহত্তোর জীবনে।
অন্ন-বস্ত্র,বাসস্থান ও চিকিৎসা যেভাবে মানবজীবনে অতি প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন রয়েছে যৌবনদীপ্ত মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন অতিবাহিত করার লক্ষ্যে বৈবাহিক জীবনের। যেমনিভাবে মানুষের পেটের ক্ষুধা রয়েছে, তেমনি ভরা যৌবনের যুবকদের রয়েছে যৌন ক্ষুধা। যা নিবারনের একমাত্র মাধ্যম হলো বিবাহ। বিবাহ মানুষকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল একটি জীবন উপহার দেয়। হৃদয়ে স্থিরতা, মনে প্রফুল্লতা, চরিত্রে পবিত্রতা ও বংশে আভিজাত্য এবং যাপিত জীবনে অনাবিল সুখ বয়ে আনে। নারী-পুরুষের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার একমাত্র বিধিবদ্ধ শরীয়তসিদ্ধ সার্বজনীন ব্যবস্থা হলো বিয়ে। কুদৃষ্টি ও দূশ্চরিত্র থেকে মুক্ত রাখে নারী-পুরুষকে এ বিয়ে। প্রেমাষ্পদ বাড়তে থাকে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, পরষ্পর প্রীতির বন্ধন বিয়ে ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায় না। (সহীহুল জামে-২৫০০)।
একটা ছেলে-মেয়ে যখন যৌবনে পদার্পন করে নানান দিক তাদের মনে যৌবনের জোয়ার আসে। একটা ছেলে অন্য একটা মেয়েকে দেখলে তার মনে বিভিন্ন ধরনের তীব্র আকাঙ্খা সৃষ্টি হয়। তৈরী হয় কামভাবনা। এটি দোষের কিছু না বরং প্রকৃতিগত বিধানই এমন। এটি নারী-পুরুষের মাঝে আল্লাহ প্রদত্ত্ব স্বভাবজাত বিষয়। এ সমস্যা নিরসনের বৈধ মাধ্যম একমাত্র বিয়ে। এজন্যই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি পদ্ধতি বর্ণনা করে দিয়েছেন, একজন পুরুষের মনে যখন পরনারীর প্রতি কোনো প্রকারের আকর্ষণ সৃষ্টি হয় অথবা কামভাবনা জাগে, তার জন্য করণীয় হলো, সে যেন সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রীর নিকট গমন করে এবং তার চাহিদা বা প্রয়োজন পূর্ণ করে নেয়। কারণ সে নারীর যা আছে, তার স্ত্রীরও তা রয়েছে। (মুসলিম-১৪০৩)।
উপযুক্ত সময়ে বিয়ে না করার ক্ষতি : উপযুক্ত সময়ে বিয়ে না করার ফলে নারী-পুরুষ পরষ্পর অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে পুরুষ হারাচ্ছে নিজের মূল্যবান যৌবন আর নারী হারাচ্ছে তার সতীত্ব। বিয়ের পূবে প্রেম-ভালোবাসায় মত্ত থাকে আর ভালোবাসার দাবিতে প্রেমিকের আবদার রক্ষার্থে নিজেকে যথেচ্ছা ব্যবহার করতেও দ্বিধা করে না। ফলে দেখা যায় এধরনের লোকদের বিবাহত্তোর জীবনে নেমে আসে অমানিশার ঘোর। সার্বক্ষণিক ঝগড়া-বিবাদসহ নানান সমস্যা। যৌবিক চাহিদা পূরণে অক্ষম হওয়ায় ভেঙে পড়ছে হাজারো সুখের সংসার। এ সমস্যার মৌলিক কারণ হচ্ছে উপযুক্ত সময়ে ছেলে-মেয়েকে বিয়ে না দেয়া। এজন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যাদের সন্তান রয়েছে সে সামর্থ্যবান পিতা-মাতার দায়িত্ব হলো, সন্তান যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করা। কেউ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও বিয়ের ব্যবস্থা না করে আর ছেলে-মেয়ে কোনো পাপাচারে লিপ্ত হয় তবে তার দায়ভার পিতা-মাতার উপরই বর্তায়। (মিশকাত-৩১৩৮)।
সঠিক সময়ে বিয়ে না করার ফলে ছেলে-মেয়েরা নিজেদের শারীরিক ও মানষিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অনেক পরিবার এমন রয়েছে যে, ছেলের বয়স পঁচিশ-ত্রিশ বছর হলেও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সন্তানদের বিবাহ থেকে দূরে রাখে। বিবাহের জন্য যথেষ্ট পরিমান টাকা পয়সা থাকা সত্ত্বেও বিয়ের ব্যবস্থা করে না। অথচ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্য হতে যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে, সে যেন দ্রুত বিয়ে করে নেয়। কারণ বিয়ে কুদৃষ্টি থেকে চক্ষু অবনত রাখে, লজ্জাস্থান সংযত রাখে। (মুসলিম-১৪০০) তাই সাধ্যনুযায়ী মোহর এবং ভরণ-পোষণের সক্ষমতা থাকলে বিবাহে বিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব বিবাহের ব্যবস্থা করা উচিৎ।
বিবাহ ঈমানে পূর্ণতা আনে : অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা এবং পাপাচার থেকে বিরত রাখে একমাত্র বিয়ে। আজকের দুনিয়ার গোনাহের দরজার কোনো অভাব নেই। যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই শুধু পাপের ছড়াছড়ি। রাস্তায় বেরুলেই অশালীন পোষাকে ঘেরা আধুনিক নারীদের দেখা মেলে। স্বচ্চরিত্রবান পুরুষরা লজ্জ্বাবনত হতে বাধ্য হয়। অবিবাহিত যুবকরা শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে কুদৃষ্টির গোনাহে লিপ্ত হয়। বিবাহের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে এসব পাপাচার থেকে মুক্ত রাখেন। বিয়ে হলো অর্ধেক দ্বীন। বিয়ে করার মাধ্যমে বান্দার অর্ধেক ঈমান পূর্ণতা লাভ করে। বৈধ ভালোবাসা এবং প্রশান্তিময় জীবন উপভোগ করা যায়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যখন কোনো ব্যক্তি বিয়ে করে তার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণতা পায়, আর বাকি অর্ধেকে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে। (সুনানে বাইহাকী-৫৪৮৬)।
আর বিয়ে নবীদের সুন্নতও বটে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, বিবাহ আমার বিশেষ সুন্নত। সামর্থ্য থাকা অবস্থায় যদি কেউ বিয়ে থেকে দূরে থাকে সে আমার দলভুক্ত নয়। (সহীহ বোখারী-৫০৬৩)। অতএব সামর্থ্যবান যুবকদের জন্য যত দ্রুত সম্ভব বিবাহের ব্যবস্থা করা উচিৎ। এ ব্যাপারে পারিবারিক সাপোর্টও প্রয়োজন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে লুইস-অ্যাথানেজের 'আক্ষেপে' ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশে
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়