কোরবানির তাৎপর্য ও শিক্ষা
১৫ জুন ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪, ১২:১৩ এএম
মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম কুরবানী হযরত আদম (আ.) এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল এর দেয়া কুরবানী থেকেই কুরবানীর ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়। যেমন- পবিত্র কুরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : হে রাসূল আপনি আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত আপনি তাদেরকে যথাযথভাবে শোনান। যখন তারা উভয়েই কুরবানী করেছিল। তাদের একজনের কুরবানী কবুল হলো। অন্যজনের কুরবানী কবুল হলো না। (সূরা মায়েদা, আয়াত-২৭)। অবশ্য আমাদের উপর যে কুরবানীর বিধান প্রচলিত হয়ে আসছে তা হযরত ইবরাহীম (আ.) এর আত্মত্যাগের ঘটনারই স্মৃতিবহ। ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর রাহে যে কুরবানী করেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে তা দৃষ্টান্তহীন। আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগের কথা। স্বপ্নাদৃষ্ট হলেন আল্লাহর প্রিয় খলিল হযরত ইবরাহীম (আ.) কুরবানী করতে। তিনি পশু কুরবানী করলেন একটির পর একটি। কিন্তু সে কুরবানী তার প্রতিপালকের নিকট গৃহীত হলো না। হযরত ইবরাহীম (আ.) নির্দেশ পেলেন এমন বস্তু কুরবানী করতে যা তার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়। কী সেই প্রিয় জিনিস? হযরত ইবরাহীম (আ.) এর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু তো স্বীয় পুত্র ইসমাঈল। তবে কি তার মহান প্রভু ইবরাহীম ও হাজেরার পরম আদরের সন্তান ইসমাইল এর কুরবানী চান? আল্লাহর আদেশ ছিল অতি স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন।
সন্দেহেরও কোন অবকাশ ছিল না তাতে। হযরত ইবরাহীম (আ.) স্তম্ভিত না হয়ে আল্লাহর আদেশের কথা পুত্র ইসমাইলকে জানালেন। জবাবে পুত্র ইসমাইল বললেন : হে আমার প্রিয় পিতা, আপনি যা আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট হয়েছেন তা সন্তুষ্টির জন্য আপনি তা পালন করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে সবরকারীদের মধ্যে পাবেন। (সূরা সাফ্ফাত : আয়াত-১০২)। হযরত ইবরাহীম (আ.) ও প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.) উভয়েই আল্লাহর হুকুম পালনে অবিচল সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন। মা হাজেরাও স্বেচ্ছায় আদরের সন্তানকে সাজিয়ে দিলেন। পিতামাতা পুত্রের আল্লাহর পথের কুরবানীর এ দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই প্রথম। বালক ইসমাইলকে হযরত ইবরাহীম (আ.) নিয়ে গেলেন মিনায় (বর্তমান হাজীদের কুরবানীর স্থান)। যখন প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কুরবানী করতে উদ্যত হলেন সাথে সাথে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রিয় নবীদ্বয়ের আনুগত্যে সন্তুষ্ট হয়ে তাদের কুরবানী কবুল করলেন। আনুগত্য ও কর্তব্য পরায়ণতার পুরস্কার স্বরূপ একটি মোটা তাজা পশু (দুম্বা) পাঠিয়ে পুত্রের পরিবর্তে জবাই করার হুকুম প্রদান করলেন। বস্তুতঃ ইবরাহীম (আ.) এর পুত্র কুরবানী দেয়ার এ অবিস্মরণীয় ঘটনাকে প্রাণবন্ত করে রাখার জন্যই উম্মতে মোহাম্মদীর উপর তা ওয়াজিব করা হয়। সেই থেকে সারা বিশ্বে ঈদুল আযহা- কুরবানীর ঈদ উদযাপিত হয়ে আসছে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে ঈদুল আযহা তথা কুরবানী এক ঐতিহ্যময় স্থান দখল করে আছে।
সামর্থ্যবান নর-নারীর উপর কুরবানী ওয়াজিব। এটি মৌলিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। আদম (আ.) থেকে সকল যুগে কুরবানী ছিল। তবে তা আদায়ের পন্থা এক ছিল না। শরীআতে মুহাম্মাদীর কুরবানী মিল্লাতে ইবরাহীমীর সুন্নত। সেখান থেকেই এসেছে এই কুরবানী। এটি শাআইরে ইসলাম তথা ইসলামের প্রতীকি বিধানাবলির অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এর মাধ্যমে শাআইরে ইসলামের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এছাড়া গরীব-দুঃখী ও পাড়া-প্রতিবেশীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শর্তহীন আনুগত্যের শিক্ষা রয়েছে কুরবানীতে। পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার জন্য ত্যাগ ও বিসর্জনের ছবকও আছে এতে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী আদায় করুন। (সূরা আল-কাওসার : আয়াত-২)। পশু জবাই করে কুরবানী করার মধ্যে এই হিকমত ও শিক্ষা রয়েছে যে, আল্লাহর মুহববতে নিজের সকল অবৈধ চাহিদা ও পশুত্বকে কুরবানী করা এবং ত্যাগ করা। সুতরাং কুরবানী থেকে কুপ্রবৃত্তির দমনের জযবা গ্রহণ করা উচিত। তাই কুরবানীর মধ্যে ইবাদতের মূল বিষয় তো আছেই, সেই সাথে তাকওয়ার অনুশীলন- অর্থাৎ আল্লাহর ভয়ভীতিও রয়েছে।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, কুরবানীর দিনের আমলসমূহের মধ্য থেকে পশু কুরবানী করার চেয়ে কোনো আমল আল্লাহ তাআলার নিকট অধিক প্রিয় নয়। কিয়ামতের দিন এই কুরবানীকে তার শিং, পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত করা হবে। আর কুরবানীর রক্ত জমিনে পড়ার পূর্বেই আল্লাহ তাআলার নিকট কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে কুরবানী কর। (জামে তিরমিযী : ১৪৯৩)। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠোর ধমকি এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : যার কুরবানীর সামর্থ্য আছে তবুও সে কুরবানী করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। (মুসনাদে আহমদ ২/৩২১)। ইবাদতের মূলকথা হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী সম্পাদন করা।
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন-অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বর্তমানে বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ী, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। যেমন কারো নিকট কিছু স্বর্ণ ও কিছু টাকা আছে, যা সর্বমোট সাড়ে বায়ান্ন তোলা চাঁদির মূল্য সমান হয় তাহলে তার উপরও কুরবানী ওয়াজিব।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে লুইস-অ্যাথানেজের 'আক্ষেপে' ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশে
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়