সম্মানিত জিলহজ মাস
১৫ জুন ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪, ১২:১৩ এএম

‘নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধানে মাস গণনায় বারোটি। তন্মধ্যে বিশেষরূপে চারটি মাস হচ্ছে সম্মানিত। এটাই হচ্ছে সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৩৬ এর ১ম অংশ)। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে আরবি বারোটি মাসের কথা উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে চারটি মাসকে সম্মানিত বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সম্মানিত মাসগুলো হচ্ছে- ১) জিলক্বদ ২) জিলহজ্জ ৩) মুহাররম ৪) রজব। আরবি মাসের সর্বশেষ এবং সর্বাধিক সম্মানিত মাস হচ্ছে জিলহজ্জ। রমজানের পরেই আমলের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৌসুম হচ্ছে জিলহজ্জের ১ম দশক। আর পবিত্র কুরআন ও হাদিস দ্বারা এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ রাতের ইবাদত বন্দেগি কদরের রাতের ইবাদত বন্দেগির সমতূল্য। জিলহজ্জ মাসের ১ম দশদিনের ফজিলত ও তাৎপর্য এতো বেশি যে, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা ফজরের ২ নং আয়াতে এই মাসের ১ম দশ রাত্রির শপথ করেছেন।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘সকল দিনের মধ্যে কোন দিনও বান্দার ইবাদত করা আল্লাহ তায়ালার কাছে ততটুকু প্রিয় নয়, যতটুকু জিলহজ্জের ১ম ১০ দিন ইবাদত করা প্রিয়।’ হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তায়ালার কাছে খুবই পছন্দনীয় এই ১০ দিনের আমলগুলো। এমনকি জিহাদের চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হাফসাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, চারটি জিনিস রাসূল (সা.) কখনও ছাড়তেন না। ১) আশুরার দিনে রোজা রাখা (মুহাররমের ১০ম দিন)। ২) জিলহজ্জের ১ম দশ দিনের রোজা। ৩) আইয়ামে বীজের রোজা (প্রত্যেক চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ)। ৪) ফজরের ফরয নামাজের আগে এর আগে দু রাকাআত সুন্নাত নামাজ। (সুনান আন-নাসাঈ: হাদিস নং- ২৪১৬)।
ইসলামের মৌলিক ইবাদত পাঁচটি। যেমন- ঈমান, নামাজ, যাকাত, রোজা ও হজ্জ ইত্যাদি। এই সবগুলোর সাথে কুরবানী, দান-সদাকা ও আরাফার দিনের ফজিলতপূর্ণ আমলের একটা পরিপূর্ণ সমন্বয় ঘটে জিলহজ্জ মাসের ১ম দশ দিনে। যা বছরের অন্য কোনো সময় পাওয়া যায় না। তাই এই ১০ দিন আল্লাহর নিকট অতি পছন্দনীয় এবং মু’মিনদের জন্য আমল করার একটি বিশেষ সময়।
জিলহজ্জ মাসের ১ম দশকের গুরুত্বপূর্ণ আমলসমূহ : ১) আল্লাহর জিকির বেশি বেশি করা। ২) সাধারণ রুটিনের নেক আমলগুলো বিশেষ গুরুত্বের সাথে করা। যেমন- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ; বিশেষ করে জামায়াতে আদায়, কুরআন তিলাওয়াত, তাওবা-ইস্তেগফার, তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদি। ৩) নফল নামাজের প্রতি মনোনিবেশ করা। যেমন- তাহাজ্জুদ, তাহিয়্যাতুল ওজু, ইসরাক, চাশতের নামাজ ইত্যাদি আদায় করা। ৪) পাপকাজ থেকে কঠোরভাবে বেঁচে থাকা। ৫) দানের হাত প্রসারিত করা। ৬) সামর্থ্য থাকলে হজ্জ করা। ৭) পশু কুরবানী করা। ১০, ১১ ও ১২ই জিলহজ্জের যে কোন একদিন, কোন ব্যক্তির মালিকানায় যদি নিত্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। পুরুষ-মহিলা সকলের জন্য এ বিধান প্রযোজ্য।
৮) যারা পশু কুরবানী করবেন তাদের জন্য জিলহজ্জের চাঁদ উঠা থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত নখ, চুল কাটা যাবে না। এটি মুস্তাহাব। ৯) তাকবীর দেওয়া (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ)। ১০) আইয়ামে তাশরীক (আরাফার দিন অর্থাৎ ৯ জিলহজ্জের ফজর থেকে ১৩ জিলহজ্জ আসর পর্যন্ত) এই দিনগুলোতে নারী-পুরুষ সকলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর একবার তাকবীর দেওয়া ওয়াজিব। পুরুষদের জন্য আওয়াজ করে আর মহিলাদের জন্য নীরবে। ১১) আরাফার দিন নফল রোজা রাখা। হযরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে, আল্লাহ তায়ালা তার (রোজাদারের) বিগত এক বছরের ও সামনের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দিবেন। (তিরমিজী)। ৮ ও ৯ জিলহজ্জ উভয় দিন রোজা রাখাই উত্তম। কেননা এখানে আরাফার দিন বলতে আরাফায় হাজিদের অবস্থানের দিন বোঝানো হয়েছে এক বর্ণনায়। এছাড়া একটা রোজা না রাখাই ভালো, এক্ষেত্রে রোজা রাখলে ৮ ও ৯ জিলহজ্জ রাখাই উত্তম।
১২) আরাফার দিনের দোয়া পড়া। দোয়াটি হলো : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর’। তিরমিজী শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম দোয়া আরাফার দিনের দোয়া এবং সর্বোত্তম দোয়া যা আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণ করেছেন।’ ১৩) ১ থেকে ৯ জিলহজ্জ নফল রোজা রাখা ও রাতে ইবাদত করা। এটার বিশেষ ফজিলত হাদিসে বর্ণিত আছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘জিলহজ্জের ১ম দশকের প্রত্যেক দিনের রোজা (১০ই জিলহজ্জ কুরবানীর দিন ব্যতীত) সারা বছরের রোজার সমান এবং এর প্রত্যেক রাত্রির ইবাদত শবে ক্বদরের নফল ইবাদতের সমান।’ (তিরমিজী)।
১৪) ঈদের রাতে ইবাদত করা। কুরবানী ঈদের রাত বলতে ৯ জিলহজ্জ দিবাগত রাতকে বুঝায়। ঈদের রাত জাগরণ ও ইবাদত করার বিশেষ ফজিলত হাদিসে বর্নিত আছে। হযরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উভয় ঈদের রাত সওয়াবের আশায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে ইবাদতের মাধ্যমে কাটাবে, তার অন্তর সেদিন মৃত্যুবরণ করবে না, যেদিন মানুষের অন্তর মৃত হয়ে যাবে। (অর্থাৎ কিয়ামত দিবসে ভীতসন্ত্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।) ১৫) ঈদের দিনের সুন্নাহগুলো আদায় করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে সম্মানিত জিলহজ্জ মাসে বেশি বেশি আমল করার তাওফিক দান করুন আমিন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ২৫ ফিলিস্তিনি

১৫ বছর পর বাংলাদেশ-পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবরা বৈঠকে বসছেন আজ

উখিয়ায় পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় ১ শিশু নিহত ও আহত ৬

আবারও নিষেধাজ্ঞা পেলেন জহির

সখিপুরে প্রবাসীর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার

আইপিএলে সন্দিপের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড

ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে নিষিদ্ধ ইংলিশ পেসার

আমিরাতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সম্মানে বাংলাদেশ দূতাবাসের জমকালো অনুষ্ঠান

সেই বার্নাব্যুতে রিয়ালকে হারিয়েই সেমিত আর্সেনাল

স্টার্কের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সুপার ওভার রোমাঞ্চ জিতল দিল্লী

সড়ক বিহীন সেতু,কাজে আসছেনা এলাকাবাসীর

দুর্নীতির অভিযোগে নওগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান

কলাপাড়ায় একটি ছাগলকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘর্ষে, আহত-৪

ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে কিন্তু বিএনপি নিয়ে ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে -মিজান চৌধুরী

উইন্ডিজকে হারালেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

গাজায় মানবিক সহায়তা নিষিদ্ধ ঘোষণা ইসরায়েলের, সংকট তীব্র

টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ড. ইউনূস

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রজ্ঞাপন জারি

সুন্নত নামাজে ভুল করে নামাজ শেষ করে ফেলা প্রসঙ্গে?

কূট-কৌশলে ভিআইপিদের টার্গেট করতেন মেঘনা আলম চক্র